Pages

Wednesday, January 6, 2016

ধর্ম সাগরের ইতিহাস ধর্ম সাগরের ইতিহাস

ধর্মসাগর কুমিল্লা শহরে অবস্থিত একটি বিশাল জলাধার। এটি একটি প্রাচীন দিঘী। এটি কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। ধর্মসাগরের আয়তন ২৩.১৮ একর। ত্রিপুরার অধিপতি মহারাজা প্রথম ধর্মমাণিক্য ১৪৫৮ সালে ধর্মসাগর খনন করেন। এই অঞ্চলের মানুষের জলের কষ্ট নিবারণ করাই ছিল রাজার মূল উদ্দেশ্য। “রাজমালা” গ্রন্থ আনুসারে মহারাজা সুদীর্ঘ ৩২ বৎসর রাজত্ব করেন (১৪৩১-৬২ খ্রি:)। মহারাজা ধর্মমাণিক্যের নামানুসারে এর নাম রাখা হয় ধর্মসাগর। ধর্মসাগর নিয়ে প্রচলিত আছে বহু উপাখ্যান ও উপকথা।
কুমিল্লার ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে রয়েছে ধর্ম সাগরের প্রায় পৌনে ছয়শত বছরের ইতিহাস। প্রকৃতি আর মানুষের সমন্বয়ে গড়া এই সুদর্শন স্থানটি বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এই সৌন্দর্যপূর্ণ স্থানকে আরো সৌন্দর্য করে তুলতে তাঁর উত্তর পাশে যোগ করা হয়েছে নগর উদ্যান।
ধর্মসাগরের উত্তর কোণে রয়েছে রাণীর কুঠির, পৌরপার্ক। পূর্ব দিকে কুমিল্লা জিলা স্কুল, কুমিল্লা স্টেডিয়াম আর পশ্চিম পাড়ে বসার ব্যবস্থা আছে। স্থানীয় অধিবাসী ছাড়াও পর্যটকের আগমন ঘটে। দিঘিপাড়ের সবুজ বড় বড় গাছের সারি ধর্মসাগরকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। তাছাড়াও শীতকালে ধর্মসাগরে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটে।
ধর্মসাগর শুধু ঐতিহাসিক দীঘি নয়, এটি প্রকৃতির শোভা ও সৌন্দের্যের লীলাভূমি। দীঘির উত্তরপাড়ে টিলার উপর রয়েছে রাণীর কুঠির ও ধর্মসাগরকে আরো সাজিয়ে তুলতে এর উত্তর পাশে তৈরী করা হয়েছে নগর উদ্যান (পার্ক)। ধর্মসাগরে দু’টি নৌকা রয়েছে যাতে করে ভ্রমণ বিলাসী মানুষরা নৌকা চড়ে আনন্দ উপভোগ করতে পারে। যেখানে শুধু কর্মময় জীবনে হাঁপিয়ে উঠা মানুষেরা প্রকৃতির খুব কাছা-কাছি থেকে একটু স্বস্থি পাওয়ার জন্য রোজই এখানে ছুটে আসেন। শরীর সচেতন ও স্বাস্থ্য সচেতন লোকজন সকালে ও সন্ধ্যায় ধর্মসাগরের পশ্চিমপাড় সংলগ্ন সড়কটিতে হেঁটে বেড়ান নির্মল বায়ূ সেবনের প্রত্যাশায়। এখানে এলে নাগরিক জীবনের যাবতীয় ক্লান্তি ও যন্ত্রণা মুর্হুতেই মুছে যায়।
১৯৬৪সালে দীঘিটির পশ্চিম ও উত্তর পাড়টি তদানিন্তন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সৈয়দ হাসান আহমেদ এর উদ্যোগে পাঁকা করা হয়। দীঘিটি বর্তমানে মৎস বিভাগের অধীনে। তবে দীঘির পশ্চিম উত্তর পাড় সংলগ্ন ৫একরের উদ্যানটি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের। শুধু কুমিল্লা নয় বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রাচীন কয়েকটি দীঘির মধ্যে কুমিল্লা ধর্মসাগর ঐতিহাসিক দীঘি। স্ফটিকতুল্য স্বচ্ছ ও নির্মল পানির জন্যে দীঘিটি অতুলনীয়।
ঐতিহাসিক কুমিল্লা ধর্মসাগর দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসেন স্কুল-কলেজে পড়–য়া শিক্ষার্থীরা। এখানে চাকুরি ও কাজের ফাঁকে অবসর সময় কাটাতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ছুটে আসেন সকল বয়সের মানুষ। এখানে বনভোজনের জন্য রয়েছে স্পট। যেমন, দেশী-বিদেশী পর্যটকদের নিকট প্রতিনিয়ত স্বর্ণালী আকর্ষণ তেমনি প্রমোদ বিহার আর নিভৃত অবকাশ যাপনের নিকেতন। এছাড়াও রয়েছে এখানে শিশুদের জন্য নগর উদ্যান (পার্ক)। প্রতিবছর ১৪ ফেব্র“য়ারি বিশ্বভালবাসা দিবস, বাংলা নববর্ষ, ঈদের দিনে মানুষের ঢল নামে সাগরের দু’পাড়ে। ঐদিন গুলোতে মানুষের উপস্থিতি মিলন মেলায় পরিণত হয় কুমিল্লা ধর্মসাগর এর দু’পাড়। তাছাড়াও শীত এলেই অতিথি পাখিরা কুমিল্লা ধর্মসাগরে বেড়াতে আসেন।

No comments:

Post a Comment