Pages

Sunday, January 10, 2016

কাজু বাদাম ~ কিছু কথা এবং কিছু ছবি ~

কাজুবাদাম অত্যন্ত সুস্সাদু একটি বাদামকাজুগাছ (বৈজ্ঞানিক নামAnacardium occidentale; প্রতিশব্দ Anacardium curatellifolium A.St.-Hil.) সপুষ্পক অ্যানা কার্ডিয়েসি পরিবারের বৃক্ষএটি একটি অর্থকরি ফসলবীজ থেকে চারা তৈরি করা হয়বেলে দোআশঁ মাটি অথবা পাহাড়ের ঢালে ভাল জন্মেএ দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় কাজু বাদামের চাষ বেশি হয়
উৎপত্তিস্থল কাজুবাদামের উৎপত্তিস্থল ব্রাজিল। বর্তমানে প্রধানত ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, কেনিয়া, মোজাম্বিক, তানজানিয়া, মাদাগাস্কার প্রভৃতি দেশে কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে কাজু বাদাম খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণাকেন্দ্র, হর্টিকালচার সেন্টার খেজুরবাগান, সেনানিবাস, হর্টিকালচার সেন্টার নারানখাইয়া, পানখাইয়া পাড়া, কমলছড়ি জামতলী এলাকায় কাজু বাদামের গাছ চোখে পড়েছাড়া, রামগড় উপজেলার হর্টি কালচার সেন্টারে ও রয়েছে কাজু বাদামের বাগানপার্বত্য চট্টগ্রামে কাজু বাদাম চাষ সম্প্রসারণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছেবর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে মাঝারি আকারে কাজু বাদামের চাষ হচ্ছে অনাবাদি জমিতে পরিকল্পিত ভাবে কাজু বাদাম চাষের যথেষ্ট সুযোগ আছেভবিষ্যতে খাগড়াছড়ির কৃষি পণ্যের মধ্যে কাজু বাদাম ও একটি বিশেষ স্থান করে নিতে পারে
খাবার পদ্ধতি কাজু বাদাম সাধারণত ভেজে খাওয়া হয়পাহাড়ি এলাকায় সাধারণত কাজু বাদাম কে দা দিয়ে কেটে খুঁচিয়ে শাঁস বের করা হয়তারপর রোদে শুকিয়ে বীজের আবরণ তুলে ফেলা হয়লবণ-পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে তারপর ভাজা হয়এতে লবণাক্ত স্বাদের কাজু বাদাম পাওয়া যায়আর মিষ্টি স্বাদের কাজু বাদামের জন্য বাদাম ভাজার পর চিনির শিরায় ডুবিয়ে নেওয়া হয়বিভিন্ন খাদ্যের স্বাদ বাড়ানোর জন্য ও কাজু বাদাম ব্যবহার করা হয়
খাদ্য প্রাণ প্রতি ১০০ গ্রাম কাজু বাদামে ৩০. ১৯ গ্রাম শর্করা, ১৮.২২ গ্রাম আমিষ, ৪৩.৮৫ গ্রাম চর্বি থাকেকাজু বাদামে বিভিন্ন ভিটামিন, লৌহ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, জিঙ্কখ নিজ উপাদান রয়েছে
আকার পূর্ণ বয়স্ক গাছ ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকেপাতা অর্ধ ডিম্বাকার, দেখতে কাঁঠালের পাতার মতোনভেম্বর থেকে জানুয়ারি ফুল ফোটার সময়এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফল সংগ্রহ করা হয়কাজু বাদামের দৈর্ঘ্য থেকে সেন্টিমিটারএর ওজন থেকে ২০ গ্রাম হয়ে থাকে
চাষ পদ্ধতি
রোপন বীজ এবং কলম উভয় পদ্ধতিতেই কাজু বাদামের বংশ বিস্তার করা যায়কলমের মধ্যে গুটি কলম, জোড় কলম, চোখ কলম ইত্যাদি প্রধানকাজু বাদাম গাছ ৬০-৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচে এবং ৫০-৬০ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়বীজ থেকে পলিব্যাগে চারা তৈরি করে কিংবা কলম প্রস্তুত করে জমিতে রোপণ করতে হবেচারা রোপণের আগে -মিটার দূরত্ব বজায় রেখে ঘন মিটার আয়তনের গর্ত তৈরি করতে হবেগর্তে সবুজ সার এবং পরিমাণ মতই উরিয়া টিএস পিসার মাটির সঙ্গে ভালো ভাবে মিশিয়ে ১৫ দিনপর চারা লাগাতে হবেচারা গজালেএকটি সতেজ চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হয়বীজের পরিবর্তে চারা তৈরি করে নিয়েও রোপণ করা যায়হেক্টর প্রতি প্র্রয়োজনীয় চারার সংখ্যা ২৪৫-৩৩৫ টি
সার কাজু বাদাম গাছে খুব একটা সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না। ভাল ফলনের জন্য প্রতি ফলন্ত গাছে গোবর-৪০কেজি, ইউরিয়া-১কেজি, টি.এস.পি.-১কেজি এবং এম.পি.সার ১কেজি প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া পাতা শোষক পোকা ও পাতা কাটা পোকা প্রভৃতি কাজু বাদামের ক্ষতি সাধন করে। তাই পরিমিত পরিমাণে কীটনাশক প্রয়োগ করে কীটপতঙ্গ দমন করা যায়।
পরিচর্যা আগাছা পরিষ্কার করা, মরা অপ্রয়োজনীয় ডাল ছাটাই করা এবং সাথী ফসল চাষ করা প্রয়োজন।
ফলন চারা রোপণের পর গাছের বয়স তিন বছর হলে প্রথম ফুল এবং ফল আসে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি ফুল ফোটার সময়। এপ্রিল থেকে জুন (বৈশাখ-আষাঢ় মাস ) মাস কাজু বাদাম সংগ্রহকাল। গাছ থেকে সুস্থ ফল সংগ্রহ করে খোষ ছাড়িয়ে বাদাম সংগ্রহ করে তারপর ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে ভেজে প্যাকেট-জাত করা হয়। সাধারণত একটি গাছ থেকে ৫০-৬০ কেজি ফলন পাওয়া যায়। ১ কেজি ফল প্রক্রিয়াজাত করে তা থেকে গড়ে ২৫০ গ্রাম কাজু বাদাম পাওয়া যায়। জাতভেদে ফলনের তারতম্য হয়ে থাকে।

No comments:

Post a Comment