কাঠ বাদামের উপকারিতা সীমাহীন। এটা কে ঠিক
বাদাম বলা যাবে না, এটা এক ধরনের খাদ্য বীজ। ভালো মানের কাঠবাদাম পাওয়া
যায় উত্তর আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়াতে। কাঠ বাদাম ভিটামিন এবং মিনারেলে ভরপুর।
তাছাড়া কাঠ বাদামে আছে ডায়েট ফাইবার যেটা হার্ট কে সুস্থ রাখতে সাহায্য
করে। কাঠ বাদাম শরীরের কলেস্ট্রল কমায়, ক্যানসার রোধ করে, শক্তি সঞ্চার
করে, ত্বক কে উজ্জ্বল রাখে। আজকে জেনে নিই ত্বক, চুল এবং স্বাস্থের জন্য
কাঠ বাদামের উপকারিতা -
ত্বকের যত্নে কাঠবাদামঃ
১। কাঠবাদামে আছে ভারী ময়েশ্চারাইজার।
ভারী হলেও এটি মুখের ব্ল্যাকহেডস, ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে
তৈলাক্ত ত্বক এ যারা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারে না, তাদের জন্য অনেক
উপকারী।
২। কাঠবাদামে আছে ভিটামিন ই। তাই এটি
ত্বকের উজ্জলতা বাড়ায়। ত্বকে এ নিয়মমিত তেল দ্বারা মাসাজ করলে ত্বকে রক্ত
সঞ্চালন বারে, তাতে করে ত্বক সুস্থ থাকে।
৩। কাঠ বাদামে আছে ভিটামিন ডি। ছোট শিশুদের এই তেল দিয়ে পুরা দেহ মাসাজ করলে, হাড় মজবুত হয়।
৪। কাঠ বাদামে ভিটামিন ই আছে। ভিটামিন ই
ত্বকের জন্য অতান্ত কার্যকারী। এটি ত্বক কে সূর্যের হাত থেকে বাঁচায় এবং
ত্বক কে ড্যামেজ এর হাত থেকে রক্ষা করে। যাদের ত্বকে সান বার্ন আছে, তারা
এটি থেকে পরিত্রাণ পেতে কাঠ বাদাম তেল ব্যবহার করতে পারেন।
৫। কাঠ বাদাম তেল খুব তাড়াতাড়ি শরীর শুষে নেয়। তাই যেকোনো সিজনে কাঠবাদাম তেল শরীরে লোশনের পরিবর্তে দেওয়া যাবে।
৬। কাঠ বাদাম তেল হল প্রাকৃতিক
ময়েশচারাইজার। এতে কোন কেমিক্যাল অথবা প্রিজেরভেটিভ নেই। তাই এই তেল কে
সিরাম হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। মুখ পরিষ্কার করে চোখ সহ ,পুরা মুখ
ঘড়ির কাটার উলটো দিকে মাসাজ করুন। ফলাফল সরূপ নমনীয় এবং তুলতুলে ত্বক
পাবেন। তাছাড়া এটি মুখের লোমগ্রন্থি বন্ধ করে না। তাই ব্রণ হবারও ভয় থাকে
না।
৭। কাঠ বাদাম তেলে আছে ফ্যাটি অ্যাসিড। তাই এটি স্কিন এর যেকোনো চর্ম সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
৮। কাঠ বাদাম তেল চোখের নীচে কালো দাগ দূর
করে। তাছাড়া কাঠ বাদাম বেটে, ওই পেস্ট রাতে ঘুমানোর সময় চোখে দিয়ে ঘুমালে,
চোখের নীচের কালো দাগ চলে যায়। চোখের বলিরেখা, চোখ ফুলা ভাবও কমে যায়। কাঠ
বাদাম চোখের নীচের দাগ দূর করতে যেকোনো ভালো আই ক্রিম এর থেকে ভালো।
৯। কাঠ বাদাম ত্বকের বলিরেখা দূর করতে
সাহায্য করে। প্রতিদিন কাঠ বাদামের তেল দিয়ে ত্বক মাসাজ করলে , ত্বকের বলি
রেখা কমবে। তাছাড়া মধু, লেবু, কাঠ বাদাম তেল মিশিয়ে মুখে মাস্ক হিসাবে
ব্যবহার করলে ত্বক হয়ে উঠবে দীপ্তিময় এবং মুখের বয়সের ছাপ কমে যাবে।
১০। কাঠ বাদাম স্ক্রাব হিসেবেও কাজ করে।
কাঠ বাদাম দানা দানা রেখে গুড়ি করে, তার সাথে মধু, এবং টক দই দিয়ে মুখ আলতো
আলতো করে মাসাজ করলে, স্ক্রাব এর কাজ হয়ে যাবে।
১১। ভারী মেকাপ তুলতে কাঠ বাদাম তেল সামান্য একটু নিয়ে পুরা মেকাপ পরিষ্কার করা যাবে।
স্বাস্থ্যের যত্নে কাঠ বাদাম তেলঃ
প্রতিদিন ১০ গ্রাম কাঠ বাদাম খেলে, আমরা অনেক অসুখ থেকেই নিজেকে সুস্থ রাখতে পারি।
১। কাঠ বাদামে আছে মনসেচুরেটেড ফ্যাট। এটি
শরীরে কলেস্ট্রল এর পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কাঠ বাদাম খেলে
শরীরে HDL কলেস্ট্রল অথবা ভালো কলেস্ট্রল বাড়াতে সাহায্য করে। একটি রিসার্চ
এ দেখা গিয়েছে যারা প্রতিদিন ১ টি করে কাঠবাদাম খেয়েছে তাদের কলেস্ট্রল
৪.৪% কমেছে এবং যারা প্রতিদিন দুটি করে খেয়েছে তাদের কমেছে ৯.৪% ।
২। কাঠ বাদামে এমন ফাইবার আছে যেটি কলন
ক্যানসার রোধে সহায়ক। তাছাড়া কাঠ বাদামে ভিটামিন ই, Phytochemicals এবং
flavonoi আছে যেটি ব্রেস্ট ক্যানসার রোধে সহায়তা করে।
৩। কাঠ বাদাম শরীরে ব্লাড সুগার এর ব্যালেন্স রাখে। তাই ডায়বেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী।
৪। কাঠ বাদাম তেল শরীরের শক্তি সঞ্চালন করে। এতে আছে রিবফ্লাবিন, ফসফরাস, কপার, যেটা শরীরে শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
৫। কাঠ বাদামে আছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস,
ভিটামিন ডি। এটি শরীরে হাড় এবং দাঁত মসবুত করে। তাছাড়া যাদের হাড় ক্ষয়,
আরথাইটিস রোগ আছে, তাদের জন্য কাঠবাদাম তেলের মালিশ অনেক ভালো।
৬। এছাড়াও কাঠ বাদাম এনিমিয়া, জন্ম গত ত্রুটি, মস্তিষ্ক এর শক্তি বাড়াতে সহায়ক।
চুলের যত্নে কাঠ বাদামঃ
১। কাঠ বাদামে রয়েছে চুল বান্ধব মনো
ফ্যাটি অ্যাসিড, তার সাথে ভিটামিন এ, ডি, ই, বি১, বি২ এবং বি৬। এরা চুল কে
পুষ্টি দেয়, চুল কে শক্ত করে। ফ্যাটি অ্যাসিড চুল কে সফট, সোজা এবং সিল্কি
রাখে।
২। কাঠ বাদামে রয়েছে উচ্চ পরিমাণের
ফসফরাস। যেটি ভালো চুল গজাতে সাহায্য করে। তাছাড়া চুল পড়ে প্রধানত ফসফরাস
এর অভাবে। রেগুলার কাঠ বাদাম খেলে ফসফরাসের অভাব মিটবে। শরীর এর ফাংশন থেকে
শুরু করে চুলও প্রোটিন পাবে।
৩। যারা চুল এর খুশকি নিয়ে চিন্তিত, তারা
১:১ অনুপাতে কাঠ বাদাম তেল + নিম তেল মিশিয়ে চুলে লাগান। সারারাত রেখে দিন।
সকালে উঠে শ্যাম্পু করে ফেলেন। আশা করি খুশকির সমস্যা থাকবে না।
৪। কাঠ বাদাম তেল এর সাথে রস্মারি এবং ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে মাথার তালু মাসাজ করলে চুল পড়া কমবে।
৫। কাঠ বাদাম তেল, মেথি গুঁড়া, ক্যাস্টর
অয়েল, নারিকেল তেল মিশিয়ে চুলে লাগালে চুল এর আগা শক্ত হবে, চুল পড়া কমবে,
চুল তাড়াতাড়ি বাড়বে।
কাঠ বাদাম মোটামুটি সব জায়গায় পাওয়া যায়।
ভালো মানের কাঠ বাদাম পাবেন মোস্তফা মার্ট, ইউনি মার্ট, আগরা ইত্যাদি। দেশি
কাঠ বাদাম দাম পড়বে ৫০-১৫০ আর বিদেশি গুলো ৫০০-৭৫০। বিদেশি গুলো কেনা ভালো
এবং এক প্যাকেটে ১ কেজির মত থাকে।
কাঠ বাদাম নিজে ভাঙ্গিয়ে তেল করে নিলে
অনেক ভালো হয়। কোন কেমিক্যাল থাকে না। তাছাড়া অনলাইন পেজ izdihar ১০০% খাটি
কাঠ বাদাম তেল বিক্তি করে। দাম ১০০ গ্রাম ৪০০ টাকা। এছারা রয়েছে ওয়েলস এর
কাঠ বাদাম তেল, দাম ১৪০-১৬০। চুলের জন্য ডাবার কাঠ বাদাম তেল অনেক ভালো।
দাম ১৫০-২৫০।
No comments:
Post a Comment