Pages

Sunday, January 10, 2016

কাজু বাদাম

কাজু বাদাম অত্যন্ত সুস্সাদু একটি বাদাম। কাজু গাছ (বৈজ্ঞানিক নাম Anacardium occidentale; প্রতিশব্দ Anacardium curatellifolium A.St.-Hil.) সপুষ্পক অ্যানাকার্ডিয়েসি পরিবারের বৃক্ষ।এটি একটি অর্থকরি ফসল। বীজ থেকে চারা তৈরি করা হয়। বেলে দো আশঁ মাটি অথবা পাহাড়ের ঢালে ভাল জন্মে। এদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় কাজু বাদামের চাষ বেশি হয়।
'অ্যানাকার্ডিয়াম অক্সিডেন্টালে', কহ্লারের মেডিসিনাল প্লান্টস (১৮৮৭) থেকে'

পরিচ্ছেদসমূহ

উৎপত্তিস্থল

কাজুবাদামের উৎপত্তিস্থল ব্রাজিল। বর্তমানে প্রধানত ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, কেনিয়া, মোজাম্বিক, তানজানিয়া, মাদাগাস্কার প্রভৃতি দেশে কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে কাজু বাদাম

কাজু বাদাম
খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, হর্টিকালচার সেন্টার খেজুরবাগান, সেনানিবাস, হর্টিকালচার সেন্টার নারানখাইয়া, পানখাইয়া পাড়া, কমলছড়ি ও জামতলী এলাকায় কাজুবাদামের গাছ চোখে পড়ে। এ ছাড়া, রামগড় উপজেলার হর্টিকালচার সেন্টারেও রয়েছে কাজুবাদামের বাগান। পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজুবাদাম চাষ সম্প্রসারণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে মাঝারি আকারে কাজুবাদামের চাষ হচ্ছে। অনাবাদি জমিতে পরিকল্পিতভাবে কাজুবাদাম চাষের যথেষ্ট সুযোগ আছে। ভবিষ্যতে খাগড়াছড়ির কৃষিপণ্যের মধ্যে কাজুবাদামও একটি বিশেষ স্থান করে নিতে পারে।

খাবার পদ্ধতি

কাজু বাদাম
কাজুবাদাম সাধারণত ভেজে খাওয়া হয়। পাহাড়ি এলাকায় সাধারণত কাজুবাদামকে দা দিয়ে কেটে খুঁচিয়ে শাঁস বের করা হয়। তারপর রোদে শুকিয়ে বীজের আবরণ তুলে ফেলা হয়। লবণ-পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে তারপর ভাজা হয়। এতে লবণাক্ত স্বাদের কাজুবাদাম পাওয়া যায়। আর মিষ্টি স্বাদের কাজুবাদামের জন্য বাদাম ভাজার পর চিনির শিরায় ডুবিয়ে নেওয়া হয়। বিভিন্ন খাদ্যের স্বাদ বাড়ানোর জন্যও কাজুবাদাম ব্যবহার করা হয়।

খাদ্য প্রাণ

কাজু বাদাম
প্রতি ১০০ গ্রাম কাজুবাদামে ৩০.১৯ গ্রাম শর্করা, ১৮.২২ গ্রাম আমিষ, ৪৩.৮৫ গ্রাম চর্বি থাকে। কাজুবাদামে বিভিন্ন ভিটামিন, লৌহ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, জিঙ্ক খনিজ উপাদান রয়েছে।

আকার

কাজু বাদামের গাছ
পূর্ণবয়স্ক গাছ ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতা অর্ধডিম্বাকার, দেখতে কাঁঠালের পাতার মতো। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি ফুল ফোটার সময়। এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফল সংগ্রহ করা হয়। কাজুবাদামের দৈর্ঘ্য ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার। এর ওজন ৫ থেকে ২০ গ্রাম হয়ে থাকে।[১]

চাষ পদ্ধতি

রোপন

বীজ এবং কলম উভয় পদ্ধতিতেই কাজু বাদামের বংশ বিস্তার করা যায়। কলমের মধ্যে গুটি কলম, জোড় কলম, চোখ কলম ইত্যাদি প্রধান। কাজু বাদাম গাছ ৬০-৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচে এবং ৫০-৬০ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। বীজ থেকে পলি ব্যাগে চারা তৈরি করে কিংবা কলম প্রস্তুত করে জমিতে রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের আগে ৭-৮ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে ১ ঘনমিটার আয়তনের গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তে সবুজ সার এবং পরিমাণমত ইউরিয়া ও টিএসপি সার মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে ১৫ দিন পর চারা লাগাতে হবে। চারা গজালে একটি সতেজ চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হয়। বীজের পরিবর্তে চারা তৈরি করে নিয়েও রোপণ করা যায়। হেক্টর প্রতি প্র্রয়োজনীয় চারার সংখ্যা ২৪৫-৩৩৫ টি।

সার

কাজু বাদাম গাছে খুব একটা সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না। ভাল ফলনের জন্য প্রতি ফলন্ত গাছে গোবর-৪০কেজি, ইউরিয়া-১কেজি, টি.এস.পি.-১কেজি এবং এম.পি.সার ১কেজি প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া পাতা শোষক পোকা ও পাতা কাটা পোকা প্রভৃতি কাজু বাদামের ক্ষতি সাধন করে। তাই পরিমিত পরিমাণে কীটনাশক প্রয়োগ করে কীটপতঙ্গ দমন করা যায়।

পরিচর্যা

আগাছা পরিষ্কার করা, মরা অপ্রয়োজনীয় ডাল ছাটাই করা এবং সাথী ফসল চাষ করা প্রয়োজন।

ফলন

চারা রোপণের পর গাছের বয়স তিন বছর হলে প্রথম ফুল এবং ফল আসে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি ফুল ফোটার সময়। এপ্রিল থেকে জুন (বৈশাখ-আষাঢ় মাস ) মাস কাজু বাদাম সংগ্রহকাল। গাছ থেকে সুস্থ ফল সংগ্রহ করে খোষ ছাড়িয়ে বাদাম সংগ্রহ করে তারপর ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে ভেজে প্যাকেট-জাত করা হয়। সাধারণত একটি গাছ থেকে ৫০-৬০ কেজি ফলন পাওয়া যায়। ১ কেজি ফল প্রক্রিয়াজাত করে তা থেকে গড়ে ২৫০ গ্রাম কাজু বাদাম পাওয়া যায়। জাতভেদে ফলনের তারতম্য হয়ে থাকে।[২]

No comments:

Post a Comment