Pages

Saturday, January 9, 2016

জ্যামি শ্যু’র একগুচ্ছ কবিতা

জ্যামি শ্যু’র একগুচ্ছ কবিতা


jami-shu.jpgজ্যামি শ্যু একাধারে চীনা ও ইংরেজি ভাষার কবি, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে বেড়ে ওঠেন জ্যামি। অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটির চাইনিজ স্টাডি বিষয়ে গ্রাজুয়েশন ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি চীনা সাহিত্য ও নারীবাদের তত্ত্ব নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, বার্কলে থেকে আরেকটি গ্রাজুয়েশন করেন। এই দুই ইউনিভার্সিটিতেই চীনা ভাষা-সাহিত্য পড়িয়েছেন কবি জ্যামি শ্যু। চাইনিজ একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্স-এর ভিজিটিং স্কলার হিসেবে দুই বছর কাজ করাসহ একটানা ছয় বছর বসবাস করেন চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের জার্নাল এবং কবিতাসংকলন-এ তার কবিতা ও অনুবাদ নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। এসবের মধ্যে চাইনিজ লিটারেচার টুডে, লেফ্ট কার্ভ, অ্যাম্বুশ রিভিউ, কালেকশন অব ওয়ার্ল্ড পোয়েট্রি প্রভৃতি প্রধান। অয্ত্নসজ্জিত অপার প্রকৃতি আর মানবহৃদয়ের অলৌকিক আনন্দ-বেদনা অনবরত কথা বলে তার কবিতায়।
সমসাময়িক চীনা কবিতায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে ঝাজিয়াং কবিতা পুরস্কার লাভ করেন। এ বছর কবি জ্যামি শ্যু-এর নিজের ইংরেজি কবিতাসংগ্রহ, চীনা কবি জিদি মাজিয়া, সঙ লিন ও ঝাই ইয়াংমিঙ-এর কবিতার ইংরেজি অনুবাদ এবং চীনের কবি ঝউ জ্যান ও জ্যামি শ্যু-এর সঙ্গে যৌথ সম্পাদনায় কবি সিলভিয়া প্লাথ-এর চীনা অনুবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। বর্তমানে স্বামী প্রক্টর শ্যু এবং একমাত্র পুত্র ডিলানকে নিয়ে শ্বশুড়বাড়ি চীন ও নিজের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে সময় ভাগাভাগি করে বসবাস করছেন। ২০১৪ সালে প্রকাশিত কবি জ্যামি শ্যু-এর কাব্যগ্রন্থ হামিংবার্ড ইগনাইটস অ্যা স্টার থেকে তার পাঁচটি কবিতা বাংলাভাষার পাঠকদের জন্য পরিবেশিত হলো [অনুবাদক]।

বৃষ্টি

Rain
বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি
রাতভর বৃষ্টি– বৃষ্টি সবটা সকাল জুড়ে
সিক্ত ঘাস থেকে পায়ের পাতায় ঠাণ্ডা ঝরে
বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি
পৃথিবী বৃষ্টির স্পর্শে আবার শীতল হয়
আর নম্রতায় ওঠে ভরে।

খঞ্জনা পাখি

Hummingbird
আমি জ্বলজ্বলে নক্ষত্রের মতো একটি খঞ্জনা
পাখি দেখলাম। খঞ্জনাটি অন্ধকার থেকে
উড়ে এসেছিলো; এবং যখন তার তীক্ষ্ণ ঠোঁট
ছোট্ট লাল একটি বিন্দুকে স্পর্শ করলো–
বিন্দুটি তখন কম্পমান আলোকরশ্মির
উজ্জ্বলতা নিয়ে ছড়িয়ে পড়লো চতুর্দিকে।

টিলার ওপরে

On the Mesa
তুমি নতমুখে তৃতীয়বারের মতো
জেগে ওঠো; সূর্যালোক
বালুকারাশিকে অবারিত করে দেয়;
বাহু স্পর্শ করে
জঙ্ঘা স্পর্শ করে– কোমরের হাড়গুলো
প্রসারিত হয়ে পাথরে রূপান্তরিত হয়।
বাতাসের স্মৃতি রোমন্থন করে
কোনো একজন তোমার হৃদয় জুড়ে
তোমার শিড়দাঁড়ায়
তপ্ত গ্রীষ্মের বাহুলতায়–
সারাক্ষণ দমকা বাতাসে গভীর নিশ্বাস নেয়।
হাওয়ায় ঐকতান বেজে ওঠে
সূর্যালোক করুণ বালুকারাশি
আমরা সবাই পড়ে যাই
মুখ থুবড়ে পতিত হই;
বালুকারশিতে হাঁটু গেড়ে
যতক্ষণ না তোমার অশ্রু
গ্রীষ্মের দাবদাহে বৃষ্টি ডেকে আনে–
ততক্ষণ করতলে বালি তুলে নিয়ে
চোখে-মুখে তা ছিটিয়ে
বাহুতে বাহুতে ঘষে
প্রার্থনা করতে হয়;
এখন সবই বৃষ্টিস্নাত–
তুমি আবার কপোলে কাদা মেখে নাও
তুমি আবার বাহুতে কাদা মেখে নাও।
সে তোমাকে অতিক্রম করে বাতাসে নিশ্বাস নিচ্ছে
টিলার সকল রঙ নিশ্বাসের মধ্যে দিয়ে
তার সারা গায়ে ছড়িয়ে পড়ছে।

প্রকৃতির কোলে

Refuge
এখানটা এক অনন্য জায়গা
নীল নতুন সকালে–
এখানে ফড়িঙের
দোয়েলের ওড়াওড়ি,
ডানার ঝাঁপট; আর
ভুট্টা ফুলের নীলাভ সন্ধ্যা।
আমরা একত্রে নেচে যাচ্ছি–
সমস্বরে উচ্চারিত অনেক বিচিত্র
কথার ওপর দিয়ে;
এখানে বজ্রের ঝংকার
আগুনের উৎসাহ
নম্র-নমিত চাঞ্চল্য আর
রঙের অপূর্ব সমাহার।
আমি তুমি
অলৌকিক জ্যোতি
গানের আলোকধারা
ভ্রমরের গুনগুনের ভিতর
কালো দুইখণ্ড নীলাকাশ।

অর্ধেক চাঁদ

Half Moons
সে তার কেকের খানিকটা খেয়ে
গর্বের ভঙ্গিতে বলে: মা দেখো–
এটা একটা অর্ধেক চাঁদ!
আমরা মধ্যরাতের নীলাকাশে
অর্ধাকার হলুদ চাঁদের জোসনায়
বসে দোল খাচ্ছিলাম, সে জিগ্যেস করেছিলো–
কেনো সূর্যকে ঘুমাতে হয়?
কেনো সূর্য আর চাঁদ একসাথে ঘুমাতে পারেনা?
আজ রাতে, যত দ্রুত সম্ভব তার গল্পের ভাজ গুটিয়ে
সে তার চোখ বন্ধ করলো।
বাতাসের ওপারে নিকষ অন্ধকারে
চাবুকের ঢেউ খেলানো ফিতার ওপর
আমি ছোটো দুইখন্ড চাঁদকে বিশ্রাম নিতে দেখলাম;
আজ রাতে আমি মরতে পারি না, তাই
আমি নিশ্বাস নিলাম; কারণ–
সে এখনো অনেক ছোটো।
আমি দেখলাম তার বুক ওঠা-নামা করছিলো;
তারারা আলোর সাথে নিজেদের যেমন বদলে ফেলে
তেমনিই তার হাড়গুলো প্রসারিত আর সঙ্কুচিত হয়ে চলছিলো ।

No comments:

Post a Comment