বাঙালি ও বিনোদন
সকলেই অবগত যে বাঙালি আমোদ প্রমোদ প্রিয় জাতি। কমিউনিটিতে ইহার বন্দোবস্ত দীর্ঘদিন ধরিয়াই চালু । উদাহরণস্বরূপ রাজনৈতিক বক্তৃতাবাজি, দলীয় কোন্দল, আঞ্চলিক খিস্তি-খেউর ও মারামারি, বনভোজন, নাচ গানের অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এই ধরনের চালু বিনোদনে কিছু বৈচিত্রের ঘাটতি পরিলক্ষন হইতেছে । দীর্ঘ সময় বাঙালি জাতির সাথে অবস্থানের অভিজ্ঞতায় আমার মনের মধ্যে একটু নতুন চমকপ্রদ বিনোদন ব্যবস্থার আইডিয়া বেশ কিছুদিন ধরিয়া উসখুস করিতেছে ।
বাঙালি আগমনের ঠেলায় ফ্রান্সে বিভিন্ন অনুবাদের অফিস এবং অনুবাদকের সংখ্যা রীতিমত বাড়িয়াছে । ভুতুড়ে গল্পের ধুমধুমাক্কার অনুবাদের ঠেলায় পুরনো যাহারা তাহারা শঙ্কিত বোধ করিতেছেন যে অনুবাদের মান যাহাতে না পড়িয়া যায় । কিন্তু আবার নতুনেরা পুরানোদের গ্রাহ্য করেন না । ইহা বাঙ্গালির চিরকালীন স্বভাব – গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব । যখন এই দুই দলের দ্বন্দ্বের অবসানের কোন সম্ভাবনা নাই , তখন আমার মনে আইডিয়াটির উদ্রেক হইয়াছে। একটি অনুবাদ প্রতিযোগিতার আয়োজন করিলে কেমন হয় ? প্রথমত : বাঙালি কাগজের অনুবাদই একটি বিনোদনমূলক ব্যাপার । কারন ইহাতে সহজে টু পাইস ইনকাম হয় যাহার মাধ্যমে মাছ-ভাত–মদ-ধর্ম সহ অন্যান্য সকল জাগতিক প্রয়োজন সহজেই মিটানো যায় । দ্বিতীয়ত : সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার ছায়া পড়িলেও, বাংলা-ফরাসী অনুবাদের বাজারে মন্দার কোন আশু সংকেত পরিভূত হইতেছে না। উক্ত পরিপ্রেক্ষিতে অনুবাদকদের ব্যস্ততার বিরাম নাই। সেইজন্য তাহাদের বিনোদনের বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করা একটি আবশ্যিক কর্তব্য। তবে এই বিষয়ে বিশেষ লক্ষ্য রাখার দরকার যে, অনুবাদকগন একটি বিশেষ শ্রেণীর প্রাণী । শারীরিক পরিশ্রম তাহাদের খুব একটা পছন্দের বিষয় নহে । তাহা না হইলে উহাদিগকে লইয়া একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা যাইতো, যেমন – বস্তা দৌড়, কুস্তি, প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ইত্যাদি। যাহা হউক, যেহেতু তাহারা এই ধরনের পরিশ্রমে আদৌ উৎসাহিত হইবেন না আশংকা করি, সেইজন্য অনুবাদ প্রতিযোগিতাই সর্বগ্রহণযোগ্য হইবে বলিয়া আমার বিশ্বাস।
এই প্রতিযোগিতা সকল ধরনের অনুবাদকের জন্য উন্মুক্ত, নারী- পুরুষ , স্ট্রেট-হোমো, আস্তিক-নাস্তিক, কাঁচা –পাকা, বৃদ্ধ –তরুন-প্রৌঢ়, লম্বা –বেঁটে –মাঝারি –মোটা –শুঁটকা, জুলফিদার -টাক মাথা –লম্বা চুল, দাড়িওয়ালা-মাকুন্দ, চশমাধারী–চশমাহীন, সৎ-ভণ্ড, মৌন–বাচাল, ভদ্র–ছ্যাঁচরা, সাধু–চোর, ডানহাতি–বাঁহাতি, খুচরো-পাইকারি, অমুক দাদা–তমুক ভাই, ধর্মনিরপেক্ষ–মৌলবাদী, মাতাল–দাঁতাল-লম্পট, নবাগত- অবসরপ্রাপ্ত ইত্যাদি ইত্যাদি ।
প্রতিযোগিতার ফলাফল নির্ধারণের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হইবে এবং শ্রেষ্ঠ অনুবাদক হিসেবে নির্বাচিতকে আমাদিগের দুই শিংওয়ালা বহুরূপী অনুবাদক দাদাভাই স্বহস্তে বাংলাদেশের দুই টাকার স্ট্যাম্পের উপর প্রতিষ্ঠিত সার্টিফিকেট তুলিয়া দেবেন ।
আশা করি এই বিনোদন প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করিবার জন্য উদ্যোগী মানুষের অভাব হইবে না।
No comments:
Post a Comment