নিশ্চয়ই
মানবজাতির কল্যাণের জন্য পৃথিবীর প্রথম যে ঘরটি নির্মিত হয়েছিল তা মক্কায়
অবস্থিত। এ ঘর জগতের জন্য হেদায়েত এবং বরকতময়। স্পষ্ট নিদর্শনাবলী রয়েছে এ
ঘরে, হজরত ইবরাহিমের মর্যাদাপূর্ণ এ ঘরে যে প্রবেশ করে সে
নিরাপত্তাপ্রাপ্ত। সামর্থ্যবানদের জন্য এ ঘর প্রদক্ষিণ করা অবশ্য কর্তব্য।
হাদিসে হজ : হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য হজব্রত পালন করল এবং কোনো অশ্লীল কাজ করল না, সীমালংঘন করল না, সে সদ্যজাত শিশুর মতোই নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরল। (মিশকাত ১/২২১)
জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার ভিত্তিতে এবারের হজব্রত উদযাপিত হতে পারে ২২ বা ২৩ সেপ্টেম্বর। লাব্বাইক লাব্বাইক, আমি হাজির হে আল্লা আমি হাজরি বলতে বলতে কালো ঘরের প্রেমিকেরা সাদা পোশাকে এগিয়ে যাবে কাবার দিকে, পেয়ারা নবীর রওজার দিকে, সবুজ গম্বুজের ছায়া, কালো পাথরে চুমু আর কাবার গিলাফ জড়িয়ে আল্লাহর প্রেমে ডুবে যাবে লাখো মুসলিমের কাফেলা। কাবার মুসাফিরদের জন্য জানাচ্ছি হজে যাওয়ার বিস্তারিত তথ্য।
সবার আগে নিয়ত : সর্ব প্রথম নিয়ত নিখুঁত করুন। রাসূল (সা.) বলেন, নিশ্চয় নিয়তের ওপর আমল নির্ভরশীল।
নিয়তের পর : জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তির জন্য আল্লাহর কাছে খাঁটি মনে তওবা করে নিন। সেই সঙ্গে আগামী জীবনে হজব্রতে স্থির থকার দৃঢ় সংকল্প করুন।
মনকে সাজিয়ে নিন : এবার মানসিক প্রস্তুতি নিন। শরীরের সঙ্গে মনকেও বলুন-আল্লাহতায়ালার সামনে হাজির হচ্ছি। হে মন খোদার আনন্দ ধরে রাখতে প্রস্তুত হও। মনের পবিত্রতার প্রয়োজন এ সময় সবচেয়ে বেশি।
হজ প্রশিক্ষণ : সারা দেশেই সরকারি বেসরকারিভাবে হজ প্রশিক্ষণ হয়। সুবিধামতো কোথাও অংশ নিন। হজ কর্তৃপক্ষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হজযাত্রার তিন দিন আগে হজ ক্যাম্প, বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে বা ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে হজেরও প্রশিক্ষণ হয়। এসব আয়োজনে আন্তরিকতার সঙ্গে অংশগ্রহণ করা জরুরি।
মেডিকেল চেকআপ রিপোর্ট : বৈরী আবহাওয়াতেও হাজিদের সুস্থ রাখতে প্রয়োজন স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও মেনিনজাইটিস-ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধক টিকা। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকার পর মেডিকেল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে ভুলবেন না। জেলা শহরেও স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা গ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে। মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ হজে যেতে পারবেন না।
ব্যাগে যা রাখা যাবে : বিমানে যাওয়ার সময় ব্যাগে ছুরি, কাঁচি, দড়ি নেয়া যাবে না। বিমান কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা অনুযায়ী বিমানে কোনো হজযাত্রী সর্বোচ্চ ৩০ কেজির বেশি মালামাল বহন করতে পারবেন না। নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধ নিতে পারবেন না। চাল, ডাল, শুঁটকি, গুড় ইত্যাদিসহ পচনশীল খাদ্যদ্রব্য যেমন : রান্না করা খাবার, তরিতরকারি, ফলমূল, পান, সুপারি ইত্যাদি সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
সঙ্গে যা কিছু রাখবেন : হজের সফরে ব্যক্তিগত মালামাল কী কী লাগতে পারে অভিজ্ঞজনদের কাছ থেকে জেনে নিন। মালামাল নেয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকুন। আপনার প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন- পাসপোর্ট, ভিসা, টাকা রাখার জন্য গলায় ঝোলানো ছোট ব্যাগ, বৈদেশিক মুদ্রা কেনা, ইহরামের কাপড় কমপক্ষে দুই সেট (প্রতি সেটে শরীরের নিচের অংশে পরার জন্য আড়াই হাত বহরের আড়াই গজ এক টুকরা কাপড় আর গায়ের চাদরের জন্য একই বহরের তিন গজ কাপড়। ইহরামের কাপড় হবে সাদা। সুতি হলে ভালো হয়। নারীদের জন্য সেলাইযুক্ত স্বাভাবিক পোশাকই ইহরামের কাপড়), নরম ফিতাওয়ালা স্পঞ্জের স্যান্ডেল, ইহরাম পরার কাজে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হলে কটিবন্ধনী (বেল্ট), গামছা, তোয়ালে, যেমন আরামদায়ক পোশাক লুঙ্গি, গেঞ্জি, পায়জামা, পাঞ্জাবি সঙ্গে নিতে পারেন, সাবান, টুথপেস্ট, টয়লেট পেপার, ব্রাশ, মিসওয়াক, নখ কাটার যন্ত্র, সুই-সুতা, থালা, বাটি, গ্লাস, হজের বই, কোরআন শরিফ, ধর্মীয় পুস্তক, কাগজ-কলম, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, চশমা ব্যবহার করলে অতিরিক্ত এক সেট চশমা, বাংলাদেশী টাকা, নারীদের জন্য বোরকা, মালপত্র নেয়ার জন্য ব্যাগ অথবা স্যুটকেস, মোবাইল সেট (সৌদি সিম কিনে ব্যবহার করতে পারবেন) ও এর বাইরে আরও কিছু প্রয়োজনীয় মনে হলে তা নিয়ম মেনে সঙ্গে নিতে হবে।
হাজী ক্যাম্পে যখন যাবেন : হাজী ক্যাম্প হযযাত্রার প্রথম ঠিকানা। সতর্কতার সঙ্গে জিকিরে-ফিকিরে ক্যাম্পে অবস্থান করুন। মালামালের প্রতি যত্নশীল হোন। প্রয়োজনীয় কিছু বাকি থাকলে সেখানে অবস্থান করেই সম্পন্ন করে নিন। হজ ক্যাম্পে নিষিদ্ধ বস্তু এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহের জন্য রয়েছে ক্যান্টিন। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসার কোনো প্রয়োজন নেই।
ইহরামে যেসব নিষেধ : ইহরামের কাপড়ে নিজেকে বাঁধার আগে জেনে নিন ইহরামের বিস্তারিত তথ্য। মক্কার কাছে নির্দিষ্ট স্থানে বিধি মেনে হজ করার সংকল্প করাকে ইহরাম বলে। আপনার গন্তব্য ঢাকা থেকে মক্কায়, নাকি মদিনায় তা জেনে নিন প্রথম। যদি মদিনায় হয়, তাহলে এখনই ইহরাম বাঁধা নয়; যখন মদিনা থেকে মক্কায় যাবেন, তখন ইহরাম বাঁধতে হবে। বেশিরভাগ হজযাত্রী আগে মক্কায় যান। যদি মক্কা যেতে হয়, তাহলে ঢাকা থেকে বিমানে উঠার আগেই ইহরাম বাঁধা ভালো। কারণ জেদ্দা পৌঁছানোর আগেই মিকাত বা ইহরাম বাঁধার নির্দিষ্ট স্থান। বিমানে যদিও ইহরাম বাঁধার কথা বলা হয়, কিন্তু ওই সময় অনেকে ঘুমিয়ে থাকেন; আর বিমানে পোশাক পরিবর্তন করাটাও দৃষ্টিকটু। বিনা ইহরামে মিকাত পার হলে এ জন্য দম বা কাফফারা দিতে হবে। তদুপরি গুনাহ হবে। ইহরাম গ্রহণের পর সাংসারিক কাজকর্ম তথা দুনিয়াদারি নিষেধ, যেমন- সহবাস করা যাবে না, পুরুষদের জন্য সেলাই করা জামা, পায়জামা ইত্যাদি বৈধ নয়, কথা ও কাজে কাউকে কষ্ট না দেয়া, নখ, চুল, দাড়ি-গোঁফ ও শরীরের একটি পশমও কাটা বা ছেঁড়া যাবে না, সুগন্ধি লাগানো যাবে না, শিকার করা যাবে না। তবে ক্ষতিকারক সব প্রাণী মারা যাবে, ক্ষতি করে না এমন কোনো প্রাণী মারা যাবে না।
যখন ঢাকা বিমানবন্দরে : বিমানবন্দরে পৌঁছান সঠিক সময়ে। লাগেজে যেসব মালপত্র নেবেন তা ঠিকমতো বাঁধা হয়েছে কি না, অবশ্যই দেখে নিন। বিমানে মালপত্র রাখার টোকেন দিলে যত্ন করে রাখুন। জেদ্দা বিমানবন্দরে ওই টোকেন ছাড়া ব্যাগ আপনাকে ফেরত দেবে না। ইমিগ্রেশন, চেকিংয়ের পর মালামাল যত্নে রাখুন। বাংলাদেশী সরকারি পরিচয়পত্র, বিমানের টিকিট, টিকা দেয়ার কার্ড, যাবতীয় কাগজপত্র এবং টাকা সাবধানে রাখুন। নির্ধারিত আসনে বসে জিকির-ফিকিরে নিয়োজিত থাকুন।
বিমানের কাগজপত্রে যেন ভুল না থাকে : প্রস্তুতি পর্বের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট। সঙ্গে রাখুন প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা। হজের নিয়ম জানার জন্য একাধিক বই পড়তে পারেন। প্রয়োজনীয় বিষয়ে হজ বিশেষজ্ঞ আলেম মুফতি এবং হজ ক্যাম্পের পরামর্শ নিন। কমপক্ষে ১০ কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি, স্ট্যাম্প আকারের ৬ কপি ছবি, পাসপোর্টের ২-৩ পাতার সত্যায়িত ফটোকপি কয়েক সেট, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ, টিকা কার্ড সযত্নে সঙ্গে রাখুন। নারী হজযাত্রীর ক্ষেত্রে শরিয়তসম্মত মাহরামের সঙ্গে সম্পর্কের সনদ, ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার রসিদ সঙ্গে নিতে হবে। প্রত্যেক হজযাত্রীর ৭ সংখ্যার একটি পরিচিতি নম্বর থাকে। এর প্রথম ৪ সংখ্যা এজেন্সির নম্বর আর শেষ ৩ সংখ্যা হজযাত্রীর পরিচিতি নম্বর। এ নম্বরটি জানা থাকলে হজযাত্রী ও তার আত্মীয়স্বজন ওয়েবসাইটে ওই হাজীর তথ্য পেতে পারেন সহজে। বাড়তি সতর্কতার জন্য নিজের নাম, পাসপোর্ট নম্বর, হজ এজেন্সির নাম এবং সৌদি আরবে সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির প্রতিনিধির মোবাইল নম্বরসহ ঠিকানা ইংরেজিতে লিখে রাখুন। সৌদি আরবে থাকার সময় বাসস্থানের বাইরে গেলে হজযাত্রীকে পরিচয়পত্র, মোয়াল্লেম কার্ড ও হোটেলের কার্ড অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে।
জেদ্দায় যখন নামবেন : বিমান থেকে দেখবেন, একটি হলঘরে বসার ব্যবস্থা করা আছে। ল্যান্ড কার্ড, হেলথ কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদি কাগজপত্র হাতে রাখুন। ইমিগ্রেশন পুলিশ ভিসা দেখে (ছবি ও আঙুলের ছাপ নিয়ে) পাসপোর্টের নির্দিষ্ট পাতায় সিল মেরে দিলে বিমানের বেল্টে মালামাল খুঁজে নিরাপত্তা-তল্লাশির জন্য মালামাল দিন। তারপর মোয়াল্লেমের কাউন্টার। লাল-সবুজ পতাকা অনুসরণ করে বাংলাদেশ প্লাজায় পৌঁছে যাবেন।
হজ টার্মিনালে পৌঁছে : হজ টার্মিনালের বাংলাদেশ প্লাজায় গিয়ে দীর্ঘ সময় লাগলে ধৈর্য হারাবেন না। সেখানে অজু এবং নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। বসার জন্য চেয়ারও রয়েছে। প্রতি ৪৫ জনের জন্য একটি বাসের ব্যবস্থা আছে। মোয়াল্লেমের গাড়ি আপনাকে জেদ্দা থেকে মক্কায় যে বাড়িতে থাকবেন, সেখানে নামিয়ে দেবে। মোয়াল্লেমের নম্বর যা আরবিতে লেখা কবজি বেল্ট দেয়া হবে আপনাকে, এটি হাতে পরে নেবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের দেয়া পরিচয়পত্র এটিতে পিলগ্রিম নম্বর, নাম, ট্রাভেল এজেন্টের নাম ইত্যাদি গলায় ঝুলিয়ে রাখুন।
যখন মক্কা পৌঁছে যাবেন : মালপত্র রেখে একটু বিশ্রাম করুন, নামাজের ওয়াক্ত হলে নামাজ আদায় করে নিন। ওমরাহর নিয়ত করে থাকলে ওমরাহ পালন করে নিন।
হজ স্থানগুলোর দূরত্ব : কোনো কোনো হজযাত্রী হেঁটে হজের আমলগুলো করে থাকেন। যেমন- মক্কা থেকে মিনার দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। আরাফাত থেকে মুজদালিফার দূরত্ব প্রায় ৯ কিলোমিটার। মুজদালিফা থেকে মিনার দূরত্ব প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার। এসব স্থানবিশেষে হেঁটে যেতে এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। মক্কায় বাসার দূরত্ব নির্ধারিত হয় কাবা শরিফ থেকে। আর মদিনায় মসজিদে নববী থেকে। বাসস্থান কত দূর, তার ওপর নির্ভর করে হজের ব্যয়ের টাকা। অর্থাৎ কাবা শরিফ থেকে বাসার দূরত্ব কম হলে খরচ বেড়ে যাবে। যত বেশি দূরত্ব হবে, খরচও তত কম হবে।
মদিনা থেকে মক্কায় এলে : মদিনা থেকে যদি মক্কায় আসেন, তাহলে ইহরামের কাপড় সঙ্গে নিন। মিনায় মোয়াল্লেম নম্বর বা তাঁবু নম্বর জানা না থাকলে যে কেউ হারিয়ে যেতে পারেন। মোয়াল্লেম অফিস থেকে তাঁবুর নম্বরসহ কার্ড দেয়া হয়। তা যত্নসহকারে রাখতে হবে। বাইরে বের হওয়ার সময়ও কার্ডটি সঙ্গে রাখুন। সমস্যা এড়ানোর জন্য যে তাঁবুতে অবস্থান করবেন, সেই তাঁবু চিহ্নিত করে নিন। মিনায় জামারা থেকে আপনার তাঁবুর অবস্থান, তাঁবু থেকে মসজিদুল হারামে যাওয়া-আসার পথ সম্পর্কে ধারণা নিন। ভিড় এড়াতে কেউ কেউ হেঁটে সুড়ঙ্গপথ দিয়ে মসজিদুল হারামে পৌঁছান। হাঁটার পথ চিনতে স্থানীয় কোনো বাংলাদেশীকে বললে দেখিয়ে দেবেন।
বিনামূল্যে খাবার : আরাফাতের ময়দানে অনেক প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে খাবার, জুস, ফল ইত্যাদি দিয়ে থাকে। ওই সব খাবার আনতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কির মধ্যে পড়তে হয়। তাই এ ব্যাপারে সাবধান থাকবেন। মুজদালিফায় রাতে থাকার জন্য প্লাস্টিকের পাটি ব্যবহার করতে পারেন। মক্কাসহ বিভিন্ন জায়গায় পাটি কিনতে পাওয়া যায়। মিনায় চুল কাটার লোক পাওয়া যায়। নিজেরা নিজেদের চুল কাটতে গিয়ে মাথা কেটে ফেলবেন না। মিনায় কোনো সমস্যা হলে বাংলাদেশ হজ মিশনের তাঁবুতে যোগাযোগ করুন।
মক্কায় বাঙালি খাবার : মক্কা-মদিনায় প্রচুর বাংলাদেশী হোটেল আছে। মক্কার হোটেলগুলোর নাম ঢাকা, এশিয়া, চট্টগ্রাম, জমজম ইত্যাদি। এসব হোটেলে ভাত, মাছ, মাংস, সবজি, ডাল- সব ধরনের বাঙালি খাবার পাওয়া যায়। হোটেল থেকে পার্সেলে একজনের খাবার কিনলে বাড়িতে বসে অনায়াসে দুজন খেতে পারেন। মক্কা-মদিনায় প্রচুর ফলমূল ও ফলের রস পাওয়া যায়। এগুলো কিনে খেয়ে নিন।
মক্কা শরিফে ঢোকার নিয়ম : মসজিদুল হারামে বেশ কয়েকটি প্রবেশপথ। সবকটি দেখতে একই রকম। কিন্তু প্রতিটি প্রবেশপথে আরবি ও ইংরেজিতে ১, ২, ৩ নম্বর প্রবেশপথের নাম আছে, যেমন বাদশা আবদুল আজিজ প্রবেশপথ। আপনি আগে থেকে ঠিক করবেন, কোন প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকবেন বা বের হবেন। আপনার সফরসঙ্গীকেও স্থান চিনিয়ে দিন। তিনি যদি হারিয়ে যান, তাহলে নির্দিষ্ট নম্বরের গেটের সামনে থাকবেন। এতে ভেতরের ভিড়ে হারিয়ে গেলেও নির্দিষ্ট স্থানে এসে সঙ্গীকে খুঁজে পাবেন। মসজিদের ভেতরে-বাইরে জমজমের পানি রাখা আছে। প্রাণ ভরে পানি পান করতে পারেন। কাবা ঘরের চারটি কোণের আলাদা নাম আছে। যেমন- হাজরে আসওয়াদ, রকনে ইরাকি, রকনে শামি ও রকনে ইয়ামেনি। হাজরে আসওয়াদ বরাবর কোণ থেকে শুরু হয়ে কাবাঘরের পরবর্তী কোণ রকনে ইরাকি, (দুই কোণের মাঝামাঝি স্থান মিজাবে রহমত ও হাতিম)। তারপর যথাক্রমে রকনে শামি ও রকনে ইয়ামেনি। এটা ঘুরে আবার হাজরে আসওয়াদ বরাবর এলে তাওয়াফের এক চক্কর পূর্ণ হয়। এভাবে একে একে সাত চক্কর দিতে হয়।
ওমরাহ কাকে বলে? : হিল (কাবা শরিফের সীমানার বাইরে মিকাতের ভেতরের স্থান) থেকে অথবা মিকাত থেকে ইহরাম বেঁধে বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়া সায়ী করা এবং মাথার চুল ফেলে দেয়া বা ছোট করাকে ওমরাহ বলে।
ওমরাহ করার নিয়ম : ওমরাহর নিয়ম-কানুন আগে জেনে নেবেন, যেমন- সাতবার তাওয়াফ করা, জমজমের পানি পান করা, নামাজ আদায় করা, সায়ী করা (সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সাতবার দৌড়ানো), মাথা মুণ্ডানো অথবা চুল ছোট করা এসব কাজ ধারাবাহিকভাবে করা। ওয়াক্তিয়া নামাজের সময় হলে যতটুকু হয়েছে ওই সময় নামাজ পড়ে আবার বাকিটুকু শেষ করা।
মক্কা-মদিনার রাস্তার নাম : রাস্তার নাম ও নম্বর জানা থাকলে মিনায় চলাচল সহজ হয়। পথ হারানোর সুযোগ কম থাকে। বড় রাস্তাগুলো হল- কিং ফয়সাল রোড ৫০ নম্বর রাস্তা, আল জাওহারাত রোড ৫৬ নম্বর রাস্তা, সুক্কল আরব রোড ৬২ নম্বর রাস্তা, কিং ফাহাদ রোড ৬৮ নম্বর রাস্তা। মিনায় রেলস্টেশন ৩টি। মুজদালিফায় রেলস্টেশন ৩টি। এ ছাড়া রয়েছে সুড়ঙ্গপথ, টানেল, পায়ে চলার রাস্তা, হাসপাতাল, মসজিদ, পোস্ট অফিস, মিনার বাদশাহর বাড়ি, রয়েল গেস্টহাউস রাজকীয় অতিথি ভবন মোয়াচ্ছাফা কার্যালয়। মনে রাখবেন, মসজিদে নববী ও মসজিদুল হারামের সীমানার মধ্যে ধূমপান সম্পূর্ণ নিষেধ।
দোয়া কবুল হয় যেখানে যেখানে : মাতাফ (তাওয়াফ করার স্থান), মুলতাযাম (হাজরে আসওয়াদ থেকে বায়তুল্লাহর দরজা পর্যন্ত), হাতিমের মধ্যে, মিযাবে রহমতের মধ্যে, কাবাঘরের ভেতরে, জমজম কূপের কাছে (যদিও কূপ এখন বেজমেন্টের নিচে, চাইলেও এখন দেখা যায় না), মাকামে ইবরাহিমের কাছে, সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের ওপর, সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে, বায়তুল্লাহর দিকে যখন নজর পড়ে, রকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মাঝখানে, আরাফাতের ময়দানে, মুজদালিফার ময়দানে, মিনার ময়দানে এবং মিনার মসজিদে খায়েফে, কংকর মারার স্থানে।
হজের নিয়মগুলো : ইহরাম বাঁধা, ৭-৮ জিলহজ মিনায় অবস্থান, ৯ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফাতে অবস্থান, সূর্যাস্তের পরে মুজদালিফায় যাওয়া, ৯ জিলহজ মুজদালিফায় রাত যাপন, ১০ জিলহজ মিনায় বড় জামারাকে (শয়তান) কংকর মারা, কোরবানি করা, মাথার চুল ফেলে দেয়া, ১২ জিলহজের মধ্যে তাওয়াফ জিয়ারত, সায়ী করা, ১১, ১২ জিলহজ মিনায় জামারাকে (শয়তান) কংকর মারা, বিদায়ী তাওয়াফ।
হজের ফরজ : ইহরাম বাঁধা, আরাফায় অবস্থান করা, তাওয়াফ করা।
হজের ওয়াজিব : সায়ী, মাথা মুণ্ডন করা বা চুল খাটো করা, মুজদালিফায় অবস্থান, কংকর মারা, বিদায়ী তাওয়াফ, কোরবানি করা।
হজের সুন্নত : তাওয়াফে কুদুম, রমল করা, মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ও সেখানে রাত যাপন, ৯ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর আরাফার দিকে রওনা করা, আরাফায় অবস্থান করে সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার দিকে রওনা করা, আরাফার ময়দানে জোহরের আগে গোসল করা, ১০, ১১, ১২ জিলহজ দিবাগত রাতে মিনা বাজারে থাকা।
হজের দোয়া : হজের প্রত্যেকটি বিধান পালনের সময় গুরুত্বপূর্ণ দোয়া রয়েছে। যেমন- ইহরাম বাঁধার দোয়া, জেদ্দা শহর দেখে দোয়া, হেরেমে প্রবেশের সময় দোয়া, মক্কা শরিফে প্রবেশের সময় দোয়া, বাইতুল্লাহ শরিফ দর্শনের দোয়া, তাওয়াফ করার সময় দোয়া, প্রত্যেকটি চক্করের সময় দোয়া, জমজমের পানি পানের সময় দোয়া, সাফা-মারওয়ায় সায়ীর সময় দোয়া করা। এসব দোয়া হাক্কানি আলেমের কাছে শিখে নিন।
হজের তালবিয়া : লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা, ওয়ান্নিমাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাকা।
প্রযুক্তির ভাষায় হজ : বর্তমান যুগকে বিনা দ্বিধায় প্রযুক্তির যুগ বলা হয়। বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্য ও মাধ্যম আবিস্কৃত হয়ে গোটা পৃথিবী এখন একটি প্লাটফর্ম। মুহূর্তের মাঝে এক দেশের খবর চলে আসে অন্য দেশে। হাজার হাজর মাইল দুরের মানুষের সাথে কথা বলা যায় অনায়েশে। পৃথিবীর এই তাবৎ আবিস্কার, প্রযুক্তিরগত উন্নয়ন সবই ইসলাম ও মুসলমনাদের জন্য মহান আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ নেয়ামত। এমন কোনো প্রযুক্তি পণ্য বা প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নেই, সেটা ইসলামের খেদমেত ব্যবহারযোগ্য নয়।
ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম হজ। হজ যেহেতু একটি ঈমানি সফর, একটি নূরানি যাত্রা- তাই এর প্রস্তুতির ধরনও ভিন্ন। শারীরিক প্রস্তুতির সঙ্গে নিতে হয় আত্মিক ও জ্ঞানের প্রস্তুতি। দূরবর্তী দেশের সফর, অচেনা-অপরিচিত স্থান, হজের বিভিন্ন আমল পালন করা এবং দীর্ঘ সময় অবস্থান করা- সব মিলিয়ে প্রত্যেক হাজির ভালো একটি পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। আর হজের জন্য এই প্রস্তুতি গ্রহণকে আরো সহজলভ্য করে দিয়েছে প্রযুক্তি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রত্যেক হাজির দুয়ারে পৌছে গেছে হজ বিষয়ক নানা ওয়েসাইট, বিভিন্ন মোবাইল আ্যাপ্লিকেশন। কষ্ট করে এখন আর কোনো বই কিংবা মলাটআবৃত কোনো হজ গাইড টেনে সৌদি আরব নেওয়ার প্রয়োজন নেই। একটি ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষার হজ বিষয়ক ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন হাজিরা অথবা একটি মুঠোফোনে হজ বিষয়ক বিভিন্ন আ্যাপস ডাউনলোড করে নিয়ে যেতে পারেন খুব সহজেই। বাংলাদেশি হাজিদের জন্য নিন্মে হজের তথ্যসমৃদ্ধ কয়েকটি ওয়েবসাইট ও মোবাইল আ্যাপলিকেশনে পরিচয় তুলে ধরা হলো-
হজ বিষয়ক উল্লেখ্যেযোগ কিছু ওয়েবসাইট : ১. হজ.গভ.বিডি - হজ.গভ.বিডি- গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিচালিত হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টাল এটি। সংবাদ ও তথ্য, হজ টিপস ও পরিসংখ্যান মেনুর পাশাপাশি এই ওয়েবসাইটে রয়েছে হজযাত্রী অনুসন্ধান, হজযাত্রী সংবাদ, হজ এজেন্সী সংবাদ, হজ এজেন্সী লগইন (HMIS), ফটো গ্যালারী, গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক, হজযাত্রী ডকুমেন্টারী, ডিসক্লেইমার, ফ্লাইট সময়সূচি বিষয়ক নানান সুবিধামূলক আয়োজন। এছাড়া রয়েছে ঢাকা এবং মক্কার আবহাওয়া ও সময়সূচি জানার অপশন। রিসোর্স হিসেবে আরো রয়েছে হজ ফরম, হজ প্যাকেজ, মিনার মানচিত্র, আরাফাতর মানচিত্র, ম্যাপে এলাকা ভিত্তিক হজযাত্রী, পুরানো সংবাদ ও তথ্য, eHajj Registration (KSA), লাগেজের নিয়মাবলী ও হজ নীতিমালা। ওয়েবসাইটটির ঠিকানা হলো- http://www.hajj.gov.bd/
দুই. হাববিডি.কম : হজ এজেন্সীজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট হাববিডি.কম। হাবের সদস্য হজ এজেন্সীগুলোর তালিকার পাশাপাশি এই ওয়েবসাইটে রয়েছে হজ তথ্য, হজের নিয়মাবলীসহ হজ বিষয়ক সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটের লিঙ্ক। এছাড়া রয়েছে হাবের ইতিহাস, হাব পরিচিতি এবং বর্তমান হাব সভাপতি ও সেক্রেটারির বানী। এই ওয়েবসাইটটির ঠিকানা হলো- http://www.haab-bd.com/
তিন. হজনিউজবিডি.কম : হজনিউজবিডি.কম মূলত হজ বিষয়ক একটি নিউজ পোর্টল। দেশ-বিদেশের হজ বিষয়ক সংবাদ পরিবেশন করাই এই পোর্টালটির মূল উদ্দেশ্য। এর পাশাপাশি হজ সম্পর্কিত নানান তথ্য রয়েছে এই ওয়েবসাইটে। হজ গাইড, হজ মেনুয়াল, হজ প্রস্তুতি, ওমরাহ গাইড, ওমরাহ মেনুয়াল, ওমরাহ প্রস্তুতি, মাসলা মাসায়েল, ভ্রমন, ভ্রমন গাইড, টুর প্রতিষ্ঠান ও প্রবন্ধ ইত্যাদি মেনুতে সমৃদ্ধ একটি হজ পোর্টাল হজনিউজবিডি.কম। এই ওয়েবসাইটটির ঠিকানা হলো- http://www.hajjnewsbd.com/
এছাড়া বাংলা ভাষায় পরিচালিত বেশ কিছু ইসলামিক ওয়েবসাইটে হজ বিষয়ক আলাদা আয়োজন-বিভাগ রয়েছে এবং সে বিভাগগুলো বেশ সমৃদ্ধ ও নিয়মিত আপেডট। তন্মধ্যে প্রিয় ইসলাম, কোরআনের আলো, ইসলাম হাউজ এবং হাদিসবিডি.কম -এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য।
হজ বিষয়ক উল্লেখ্যেযোগ কিছু মোবাইল আ্যাপলিকেশন : ওয়েবসাইটের পাশাপাশি বাংলা ভাষায় হজ বিষয়ক বিভিন্ন মোবাইল আ্যাপসও নির্মিত হয়েছে। ইংরেজি ও আরবি ভাষার হজ বিষয়ক মোবাইল আ্যাপসের তুলনায় বাংলাতে এ বিষয়ক নির্মাণ খুব একটা বেশি নয়। তবুও কাজ হচ্ছে এটাই আশার কথা। ধারাবাজিকভাবে কোনো প্রকার ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহারের ঝামেলা ছাড়া শুধু একবার ডাউনলোড করে মোবাইলে ব্যবহার করা যায় প্রতিটি আ্যাপস। বাংলা ভাষায় নির্মিত হজ বিষয়ক ভালো কিছু আ্যাপসের পরিচিতি নিন্মে প্রদান করা হলো-
এক. ধাপে ধাপে হজ : ধাপে ধাপে হজ- অ্যান্ড্রয়েড চালিত মোবাইল ফোনের জন্য আকর্ষণীয় একটি অ্যাপ। এতে হজের যাবতীয় কার্যাবলি ছবির সাহায্যে ধাপে ধাপে প্রাদন করা হয়েছে। অ্যাপটি তৈরি করেছে ইসলাম-লাইট ফাউন্ডেশন। এই অ্যাপটির বিশেষ আকর্ষণ হলো- প্রতিটি বর্ণনার সাথে সাথে সৌদি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তুতকৃত বাংলা ভিডিও লেকচার যুক্ত রয়েছে। একজন বাংলা ভাষি হাজি হজের আমল-ইবাদত সম্পর্কিত প্রবন্ধগুলো পড়ার পাশাপাশি ভিডিওর মাধ্যেম বাস্তাবে আদায় করার গাইড পাবেন এখানে। গুগল প্লে থেকে আ্যাপটি এই লিঙ্ক https://play.google.com/store/apps/details?id=com.Nitaaj.HajjStepByStep.... থেকে ডাউনলোড করা যাবে।
দুই. হজ্জ ও মাসায়েল : এটি মূলত হজ বিষয়ক একটি বইয়ের আ্যাপ। হজ্জ ও মাসায়েল বইটি হজ্জ যাত্রীদের সফরের যাবতীয় মাসায়েল ও আবশ্যকীয় বিষয় এবং সহজ-সরল যাত্রার জন্য এক অনন্য কিতাব। এই বইয়ের মূল লেখক হলেন মাদ্রাসা-ই-মাযাহিরুল উলুম, সাহারানপুর, ভারতের মুফতি -ই-আযম হযরত মাওলানা আলহাজ সায়ীদ আহমদ। বইটি বাংলাতে অনুবাদক করেছেন মাওলানা আবুল কালাম মোঃ আব্দুল লতিফ চৌধুরী। আ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে এই লিঙ্ক থেকে https://play.google.com/store/apps/details?id=com.alhikmah.hajjomasayel
তিন. হজ টিপস ইন বাংলা : হজ টিপস ইন বাংলা- হজ বিষয়ক বাংলাতে নির্মিত আরেকটি মোবাইল আ্যাপ। যেখানে হজের বিভিন্ন আমল-আহকামগুলোকে সংক্ষিপ্তভাবে টিপস আকার উপস্থাপন করা হয়েছে। হজের নিয়ত থেকে শুরু করে সব আমলগুলোকে পয়েন্ট পয়েন্ট আকারে সাজানো আয়োজনটিই এই আ্যাপের বিশেষ দিক। গুগল প্লের https://play.google.com/store/apps/details?id=com.nahid.hajjtips এই লিঙ্ক থেকে আ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে।
চার. হজ গাইড : হজ বিষয়ক তথ্যসমৃদ্ধ একটি বাংলা আ্যাপ হজ গাইড। হজের ইতাহাস, বানী, প্রস্তুতি, হজের বিবরণ, মহিলাদের হজ, হজের ধাপসমূহ, তাওয়াফ, সায়ী, এহরামের বিধি-নিষেধ এমন সব শিরোনামে সাজানো হয়েছে এই আ্যাপটির বিষয়গুলোকে। এছাড়া এই আ্যাপটিতে সৌদি আরবে থাকাকালীন হাজীরা হারিয়ে গেলে কী করবেন এমন কিছু দিক-নির্দেশনাও সংযুক্ত করা হয়েছে। https://play.google.com/store/apps/details?id=app.hellotech.hajjguide গুগল প্লের এই লিঙ্ক থেকে আ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে।
একটি কথা মনে রাখা দরকার, পয়সার এপিট ওপিটের মতো প্রতিটি প্রযুক্তি পণ্য বা প্রযুক্তিগত উন্নয়নের এপিট ওপিট রয়েছে। দোষ কিন্তু জিনিসের বা প্রযুক্তির নয় মূল বিষয় হচ্ছে, প্রযুক্তিকে আমরা কোন কাজে ব্যবহার করছি। আমরা যদি প্রযুক্তিকে ইসলাম প্রচারের কাজে ব্যবহার করি তাহলে সব ধরনের প্রযুক্তিই কল্যাণের মাধ্যম হবে। সব নবী-রাসূলই তাদের জমানায় তৎকালীন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছেন এবং নিজস্ব ধর্মের প্রচার-প্রসার করেছেন। তারা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করেছেন। আমরাও যদি প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করি তাহলে তা হবে ইসলাম ও মুসলমানের জন্য কল্যাণকর।
হজের জরুরি পরামর্শ : সারা দুনিয়া থেকে লাখ লাখ হজযাত্রী মক্কা-মদিনায় যাবেন। তাদের কারও কাশি, সর্দি, জ্বর, ঠাণ্ডা ইত্যাদি অসুবিধা থাকতে পারে। এ ধরনের অসুখ খুব সহজে ছড়ায়। সাধারণত হাতের ছোঁয়া বাতাস কিংবা পানির মাধ্যমে এদের জীবাণু ছড়িয়ে থাকে। তাই খুব সাবধান থাকবেন। কারণ ওখানে একবার ঠাণ্ডা লেগে গেলে সহজে সারতে চায় না। ঠাণ্ডা পানি বা ঠাণ্ডা জুস খাবেন না। জমজমের পানি যেসব পাত্রে রাখা থাকে সেগুলোর কয়েকটিতে নট কোল্ড লেখা থাকে। ওই পাত্রগুলো থেকে জমজমের পানি পান করবেন। সঙ্গে হ্যান্ড সানিটাইজার রাখুন। ঢাকার যে কোনো সুপার শপে এগুলো পাওয়া যায়। বাইরে থাকলে কিছু খাওয়ার আগে হাত ধুয়ে নিন। না পারলে অন্তত হ্যান্ড সানিটাইজার ব্যবহার করুন। হজ একটি পরিশ্রমসাধ্য ইবাদত। অনেক হাঁটাহাঁটি করতে হবে বলে যথেষ্ট ক্ষুধাও পেতে পারে। তাই সঙ্গে কয়েকটি খেজুর রাখুন। খেজুর একটি চমৎকার শক্তিবর্ধক ফল। দুগ্ধজাত খাবারে অসুবিধা না থাকলে প্রচুর লাবান খেতে পারেন। লাবান একটি পানীয়, খেতে অনেকটা আমাদের দেশের মাঠার মতো। হজের মূল দিনগুলোতে অনেকেই বাথরুমের ভয়ে খাবার কম খান। মনে রাখবেন খাবার না খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে আপনার হজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে। তাই বেশি করে প্রোটিনজাতীয় খাবার খাবেন এবং আঁশজাতীয় খাবার কম খাবেন। এতে আপনার শরীরে শক্তি থাকবে, তবে বাথরুমের প্রয়োজন কম হবে।
আপনার পাসপোর্ট জেদ্দা বিমানবন্দর থেকে আপনার মোয়াল্লিম রেখে দেবেন, যেদিন আপনি ফিরবেন, সেদিন জেদ্দা বিমানবন্দরেই আপনার পাসপোর্ট আপনাকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। আপনাকে একটি আইডি কার্ড দেয়া হবে। এটি গলা থেকে খুলবেন না। আপনার যদি পথেঘাটে কোথাও মৃত্যু হয়, বা অসুস্থ হয়ে পড়েন, কিংবা হারিয়ে যান, তাহলে এ আইডি কার্ড ছাড়া আপনাকে কিংবা আপনার লাশ শনাক্ত করে জায়গা মতো পৌঁছে দেয়া অসম্ভব। ওখানে বাতাসের আর্দ্রতা কম, তাই পা ফাটে বেশি। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তাই পায়ে ভালোভাবে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম মাখিয়ে নেবেন। মনে রাখবেন : পা গেল তো হজ ও অর্ধেক গেল। নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ২ ঘণ্টা আগে থেকে গিয়ে বসে না থাকলে মসজিদের ভেতর জায়গা পাবেন না। বিশেষ করে জুমার নামাজ শুরু হওয়ার ৩ ঘণ্টা আগে গেলে মসজিদের ভেতর ভালো জায়গা পাবেন। অনেক মহিলা জামাতে নামাজ পড়তে পারেন না। যাওয়ার আগে শিখে নেবেন। পুরুষদের দায়িত্ব তাদের মহিলা আত্মীয়দের জামাতে নামাজ পড়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়া। কারণ আমাদের দেশের মহিলারা মসজিদে নামাজ পড়তে অভ্যস্ত নন।
কখনই মসজিদের বাইরে স্যান্ডেল রাখার জায়গায় স্যান্ডেল রাখবেন না। স্যান্ডেলের জন্য আলাদা ব্যাগ সঙ্গে রাখবেন। প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখবেন। বিশেষ করে মুভ, প্যারাসিটামল, স্যালাইন ইত্যাদি। তাছাড়া নিয়মিত কেউ যদি কোনো ওষুধ খান সেগুলো কত দিনের প্যাকেজের জন্য যাচ্ছেন সেই হিসেবে সঙ্গে রাখবেন। মদিনায় রাসূল (সা.) এর রওজা শরিফে মহিলাদের সব সময় ঢুকতে দেয়া হয় না। ফজর, জোহর ও এশার নামাজের পর একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঢুকতে দেয়া হয়। মহিলাদের জন্য ২৫ নং গেট দিয়ে ঢোকা সব চেয়ে ভালো। আপনি মক্কা বা মদিনা যেখানেই থাকুন না কেন, সেখানে একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে রাখবেন। কোনো কারণে আপনার সঙ্গী বা আপনি হারিয়ে গেলে সেই জায়গায় চলে আসবেন। সঙ্গীদের ফোন নম্বর সঙ্গে রাখবেন। ফরজ তাওয়াফের সময় প্রচণ্ড ভিড় হবে। ফরজ তাওয়াফ দোতলায় করলে ভিড় একটু কম পাওয়া যায়। কারণ সবাই চায় নিচে তাওয়াফ করতে। ফরজ তাওয়াফের পর সায়ী করার সময় অনেক ভিড় হবে। তবে চারতলাতে একটা সায়ী করার জায়গা আছে। সেখানে ভিড় কম হয়। জায়গাটা আগে থেকে দেখে রাখবেন। কারণ জায়গাটার সিঁড়ি পেতে কষ্ট হয়। তাই অনেকেই এর খবর জানেন না।
যা কিছু জরুরি : সৌদি আরবে অবশ্যই ট্রাফিক আইন মেনে চলবেন। সিগন্যাল পড়লে রাস্তা পার হতে হবে। রাস্তা পার হওয়ার সময় অবশ্যই ডানে-বাঁয়ে দেখে-শুনে সাবধানে পার হতে হবে। কখনও দৌড়ে রাস্তা পারাপার হবেন না। কাবা শরিফ ও মসজিদে নববীর ভেতরে কিছুদূর পরপর পবিত্র কোরআন মজিদ রাখা আছে। আর পাশে জমজম পানি স্বাভাবিক ও ঠাণ্ডা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো ধরনের অসুস্থতা কিংবা দুর্ঘটনায় পড়লে বাংলাদেশ হজ মিশনের মেডিকেল দলের চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। হজযাত্রীদের তথ্য, হারানো হজযাত্রীদের খুঁজে পাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশ হজ মিশনে অবস্থিত আইটি হেল্প ডেস্ক সাহায্য করে। মিনার ম্যাপ সঙ্গে থাকলে হারানোর ভয় নেই। মিনার কিছু অবস্থান চিনে নিজের মতো করে আয়ত্তে আনলে এখানে চলাচল করা সহজ হয়। যেমন জামারা শয়তানকে কংকর নিক্ষেপের স্থান, মসজিদে খায়েফ, মিনায় তিনটি ব্রিজ কিং খালেদ ব্রিজ ১৫ নম্বর, বাদশাহ আবদুল্লাহ ব্রিজ ২৫ নম্বর ও বাদশাহ ফয়সাল ব্রিজ ৩৫ নম্বর। হাঁটার পথ টিনশেড নামে পরিচিত। এখানে সাতটি জোন রয়েছে। মিনার বড় রাস্তাগুলোর ভিন্ন ভিন্ন নাম ও নম্বর রয়েছে।
হজ প্রতিজ্ঞা অটুট থাকুক : বাৎসরিক বিশ্ব মুসলিম সমাবেশে ইহরামের কাপড় গায়ে মৃতের ভান করে লাব্বাইকা অর্থাৎ হাজির বলে যেসব প্রতিজ্ঞা করা হয়, তারই নাম হজ। বায়তুল্লাহর সাত চক্কর দেয়ার মতো করে জীবনভর আল্লাহর দেয়া কোরআনিক বিধানে জীবন পরিচালনা করতে পারলে হাজী তখন নিষ্পাপ শিশুর জীবনে ফিরে যাবে। এরকম বান্দাদের জন্যই কোরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ইয়া আইয়াতুনহান নাফছুল মুতমা ইন্না তুরজিই ইলা রব্বিকী রাদিয়াতাম মারদিইয়া, ফাদখুলি ফি ইবাদিই ওয়াদখুলি জান্নাতি। সূরা ফজরের শেষ চার আয়াত। অর্থ- হে প্রশান্ত আত্মা তোমার প্রতিপালকের কাছে সন্তুষ্ট চিত্তে ফিরে আস। তুমি আমার প্রেমময় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রবেশ কর আমার প্রেম মনোহর বেহেশতে।
No comments:
Post a Comment