এতগুলো বছর কিভাবে কেটে গেল সে হিসেব সৌরভের জানা নেই। প্রেমিক হিসেবে সে ছিল রোবট টাইপের। প্রেমের সময় কত ছেলে কত দুরন্তপনা করে, আহ্লাদি করে, হাত-পা কাটাকাটি, রাগারাগি, মান অভিমান কতকিছু... সে কিছুই করেনি। গভীর রাতে ফোনের ওপাশে থাকা তূর্ণাকে কখনও কবিতা গান শোনায়নি। উল্টো যেদিন তূর্ণা অনেক শখ করে গান গেয়ে শুনাচ্ছিল সেদিন বিশাল এক হাই তুলে তাকে থামতে বলেছিল সে। বৃষ্টির দিনে এইসব ম্যাজম্যাজা গান শুনলে নাকি সৌরভের ঘুম আসে। ভাগ্য ভাল ফোনের আড়ালে ছিল...
নাইলে বোধহয় থাপ্পড় একটাও মাটিতে পড়তো না।
"ভালোবাসি" কথাটি কখনও সে নিজে থেকে বলেছে বলে মনে পড়ে না। টেবিল কিংবা ফোনের ওপাশ থেকে তূর্ণা ধমকের সুর এখনও কানে বাজে, "কি ব্যাপার? কিছু বলতে পারো না? বল... আই লাভ ইউ। আরেহ আমার লাজুক প্রেমিক রে!! এখনই বল! নাইলে সবার সামনে এক থাপ্পড় দিয়ে চাপা বাঁকা করে দিব!" ধমক শুনে বিড়ালের মতন মিউমিউ করে বলা হত "ভালোবাসি।" শুনে তূর্ণা মুখ ভেংচি দিত। তারপর অন্যদিকে তাকিয়ে সুন্দর করে হাসি দিত।
মাঝে মাঝে আফসোস করে বলা হত, "প্রেমিক তো পাইনি, পেয়েছি এক বলদামার্কা দাস! এই এক ছেলে দেখলাম প্রেমিকাকে যমের মতন ভয় পায়। আমি বললে উঠে, আমি বললে বসে। ছেড়ে দিলে কি করবা? নাহ থাক! উত্তর দেয়া লাগবে না। ছাড়বো না তোমাকে। আমি ছেড়ে দিলে তোমার আর গতি হবে না, অথৈ সাগরে ডুবে মরবা তখন। এরচেয়ে আমার দাস হয়ে থাক।"
কিভাবে কিভাবে বিয়ে হয়ে গেল। মরা মরা ছেলেটার ভাগ্যে কিভাবে এত চঞ্চল এক মেয়ে পড়লো সেই রহস্য আজও কেউ ভেদ করতে পারেনি। বিয়ের আসরে ছেলে থাকে উৎফুল্ল আর মেয়ে লজ্জায় মাথা তুলতে পারে না। তাদের বিয়েতে দেখে গেল সৌরভের মুখ লাল-বেগুনী-গোলাপী হয়ে আছে আর তূর্ণা চিৎকার করে একে ডাকে তো ওকে ধমক দেয়।
বিয়ের রাতের কথা আজ মনে পড়ছে সৌরভের। সেদিন রাতে আজকের মতন বৃষ্টি হচ্ছিল। বাসর ঘর... রাত তখন দুটো বাজে। কথা নেই বার্তা নেই তূর্ণার মাথায় ভূত চাপলো, সে বৃষ্টিতে ভিজবে। নতুন বউয়ের করা অনুরোধ না, রীতিমত আদেশ। কি আর করার... সদ্যবিবাহিত দম্পতিকে রাত দুটোর সময় পাওয়া গেল ছাদে, বসে বসে গল্প করছে আর বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে। সবাই ভাববে কত রোমান্টিক... সৌরভ তখন মনে মনে বলছে, "হিটলারের কোন ভাইস্তিকে বিয়া করলাম আমি? কপালে দুঃখ আছে আমার।" সেটা অবশ্য শুধু মনে মনে বলা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। মুখে বলার সাহস ছিল না।
তাও সব সয়ে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে ভালই দিন যাচ্ছিল। তবে এতগুলো দিন গেল, এখন সবই কেমন জানি ম্যাজম্যাজে লাগে। এইযে এখন কি সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে, তূর্ণা তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ছাদে? বৃষ্টিতে ভেজার জন্য বকরবকর করছে? না করছে না। সেই দিন আর নেই। অবাক হয়ে সৌরভ আবিষ্কার করলো যে তূর্ণার হাত ধরে ভিজতে ইচ্ছে করছে। আচ্ছা তূর্ণা কোথায়? হ্যাঁ... ওইযে, গলা শোনা যাচ্ছে। বাসার সামনে বিশাল খোলা বারান্দা। সেখানে ছেলেমেয়ে দুটো দৌড়া দৌড়ি করে বেড়াচ্ছে আর তূর্ণা তাদেরকে ঘরে ফিরে আসার জন্য ধমক দিয়ে যাচ্ছে। যত্তসব হিপোক্রিসি। নিজে হইহই রইরই করে ভিজতো আর বাচ্চা ভিজলেই নাকি জ্বর আসবে। নিজের জামাইয়ের টাইমে এইসব জ্বর কই ছিল?
তূর্ণার পেছনে গিয়ে দাড়ালো সৌরভ। বাচ্চা দুটোকে দেখছে। কি দুরন্ত হয়েছে এই দুইটা!! এক্কেবারে যুবতী তূর্ণার কপিক্যাট।
-এই তূর্ণা, এত জোরে ওদেরকে ধমক দিয়ো নাতো। তোমার চিৎকার কানে লাগে। বৃষ্টিতে ভিজলে কিছু হবে না। কিছু হলেও চিন্তা নাই। তুমি আছ কি করতে? চল ওদের সাথে জয়েন করি। বোরিং লাগছে। বাই দা ওয়ে, বলতে ভূলে গিয়েছি, আই লাভ ইউ। এত অবাক হয়ে তাকায় আছো কেন? নাহ, তোমাকে নিয়ে আর পারলাম না...
নাহ, সৌরভ ভুল করেছে। বিবাহিত জীবনটা এখনও পানসে
No comments:
Post a Comment