Pages

Tuesday, January 5, 2016

মানব মস্তিষ্কের আনইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন

ভূমিকা
মানব মস্তিষ্ক এবং এর বিবর্তন নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কিছু লিখব ঠিক করেছি। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই লেখা। এটা সিরিজের প্রথম পর্ব বলা যেতে পারে। কিন্তু ব্লগ জগতে একটা কথা প্রচলিত আছে – কয়েক পর্বে সিরিজ লেখার চিন্তা করলে সেই সিরিজের নাকি অকালমৃত্যু ঘটে। তাই সেই ভয়ে এটাকে ‘প্রথম পর্ব’ কিংবা লেখার পরে ‘চলবে’ জাতীয় কথাগুলো বলা থেকে বিরত থাকলাম। কিন্তু ভবিষ্যতে এ নিয়ে লেখার হাল্কা হলেও এক ধরণের পরিকল্পনা থাকায় কিছু অংশ সবিস্তারে লিখতে পারিনি। সেজন্য কিছু কিছু অংশ ছন্নছাড়া মনে হলেও হতে পারে। সেরকম কিছু মনে হলে অগ্রিম ক্ষমা চাইছি। সবিস্তারে না লেখার কথা বলছি বটে কিন্তু লেখাটা শেষ করে এর দিকে তাকিয়ে নিজেরই ভয় লাগছে। লেখাটা রীতিমত হাতী সাইজে রূপ নিয়েছে দেখছি। এ ধরণের হাতী সাইজের লেখা আমার নিজেরই পড়া হয়ে উঠে না। পাঠকদের ক্ষেত্রেও সে সম্ভাবনাটুকু থেকে যাচ্ছে। তারপরেও লেখাটাকে আরো ছোট ভাগে ভাগ না করে পুরোটুকু একসাথেই দিলাম।

মানব মস্তিষ্কের আনইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন


মানব মস্তিষ্ক নিয়ে আমার কৌতূহল আসলে বহুদিনের। শুধু কৌতূহল বললে ভুল হবে, মস্তিষ্ককে ঘিরে আমার ছোটবেলা থেকেই ছিলো এক বিনম্র এক রহস্যময় অনুভূতি। তাই ২০০২ সালে আমার পিএচডি কাজের সময় যখন আমার সুযোগ আসলো মানব মস্তিষ্কের মডেলিং নিয়ে কাজ করার, সে সুযোগ আমি সাথে সাথে লুফে নিয়েছিলাম। একে তো এ ছিলো আমার জন্য এক দারুণ সুযোগ, তার উপর মানুষের জটিলতম অঙ্গ – মস্তিষ্কের মডেলিং নিয়ে কাজ। অভিভূত হবার মতোই ব্যাপার। কিন্তু অভিভূত হবার পাশাপাশি আমার মেরুদণ্ড বেয়ে নেমে গেল ভয়ের এক শীতল শিহরণও। ভয় পাওয়ার তো কথাই। শুধু আমি কেন, মানব মস্তিষ্কের গঠন, রকম সকম, আকৃতি, প্রকৃতি, জটিলতায় বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত হাবুডুবু খান। মস্তিষ্ককে হর-হামেশাই তুলনা করা হয় সুপার কম্পিউটারের সাথে, বলা হয় সেটা পৃথিবীর ‘শ্রেষ্ঠ সুপার কম্পিউটারেরও বাপ’, কেউ বা বলেন ‘শ্রেষ্ঠতম বায়োলজিক্যাল প্রত্যঙ্গ’, কেউ বা তুলনা করেন মহাবিশ্বের জটিলতার সাথে, যার রহস্যভেদ কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।
শুধু তাই নয়। মানব মস্তিষ্ককে এ পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ দেখে স্রষ্টার ‘পারফেক্ট ডিজাইন’ হিসেবে। শুধু ধার্মিকেরা নন, যারা নিয়মানুগ বিজ্ঞানের চর্চা করেন, যারা বিজ্ঞানের সাথে ধর্মকে খুব একটা মেশাতে পছন্দ করেননা, তারাও মানব মস্তিষ্কের কাছে গিয়ে যেন খেই হারিয়ে ফেলেন, হয়ে যান হতবিহবল। সবার কাছেই মানব মস্তিষ্ক নান্দনিক, জটিল এবং সর্বোপরি নিখুঁত। এর মধ্যে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি নেই। কিন্তু তাইকি হবার কথা? আমরা জানি বিবর্তনের ফলে উদ্ভূত জীবদেহ কিংবা তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচরাচর নিখুঁত হয় না। বিবর্তন কিভাবে কাজ করে সেটা জানা থাকলে এর কারণ বোঝাটা কিন্তু কঠিন নয়। প্রাকৃতিক নির্বাচন যেহেতু কেবল বিদ্যমান বৈশিষ্ট্যগুলোর উপর ভিত্তি করে দীর্ঘ সময় ধরে পরিবর্তিত এবং পরিবর্ধিত হয়, তাই যুক্তি সঙ্গত কারণেই জীবদেহে অনেক ত্রুটিপূর্ণ বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায়। আমাদের সবার চোখেই একটি জায়গা আছে যাকে আমরা অন্ধবিন্দু বা ‘ ব্লাইণ্ড স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করি। আমাদের প্রত্যেকের চোখেই এক মিলিমিটারের মত জায়গা জুড়ে এই অন্ধবিন্দুটি রয়েছে, আমরা আপাতভাবে বুঝতে না পারলেও ওই স্পটটিতে আসলে আমাদের দৃষ্টি সাদা হয়ে যায়। এছাড়া আছে পুরুষের স্তনবৃন্তের মতো বিলুপ্তপ্রায় নিষ্ক্রিয় অঙ্গ। এগুলো দেহের তেমন কোন কাজে লাগে না। মহিলাদের জননতন্ত্র প্রাকৃতিক-ভাবে এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছে যে অনেকসময়ই নিষিক্ত স্পার্ম ইউটেরাসের বদলে অবাঞ্ছিতভাবে ফ্যালোপিয়ান টিউব, সার্ভিক্স বা ওভারিতে গর্ভসঞ্চার ঘটায়। এ ব্যাপারটিকে বলে ‘একটোপিক প্রেগন্যান্সি’। ওভারী এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে অতিরিক্ত একটি গহ্বর থাকার ফলে এই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ডিস্ট্রফিন জিন আছে যেগুলো শুধু অপ্রয়োজনীয়ই নয়, সময় সময় মানবদেহে ক্ষতিকর মিউটেশন ঘটায়। আমাদের দেহে ত্রিশ বছর গড়াতে না গড়াতেই হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়ে যায়, যার ফলে হাড়ের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পায়, একটা সময় অস্টিওপরোসিসের মত রোগের উদ্ভব হয়। বিবর্তনীয় পথে উদ্ভূত জীবদের ‘ডিজাইন’ নিখুঁত নয় বলেই এই সমস্যাগুলো তৈরি হয়।
গতবছর একটা বই লিখেছিলাম ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ নামে। বইটার এক অধ্যায়ে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বাকযন্ত্রের স্নায়ুকে (recurrent Laryngeal nerve) উদাহরণ হিসেবে হাজির করা হয়েছিলো। মজার ব্যাপার হল, এই স্নায়ুটি সরাসরি মস্তিষ্ক থেকে বাকযন্ত্রে যাওয়ার সোজা এক ফুট রাস্তা সে গ্রহণ করেনি। মস্তিষ্ক থেকে বের হয়ে এটি প্রথমে চলে যায় বুক পর্যন্ত। সেখানে হৃদপিণ্ডের বাম অলিন্দের প্রধান ধমনী এবং ধমনী থেকে বের হওয়া লিগামেন্টকে পেঁচিয়ে আবার অনাবশ্যক-ভাবে উপরে উঠতে থাকে। উপরে উঠে তারপর সে যাত্রাপথে ফেলে আসা বাকযন্ত্রের (larynx) সাথে যোগ দেয়। হাত মাথার পেছন দিয়ে ঘুরিয়ে ভাত খাওয়ার ব্যাপারের মতো এই যাত্রাপথে স্নায়ুটি এক ফুটের জায়গায় তিন-ফুটের চেয়েও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে। জিরাফের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার আমরা দেখতে পাই। সেক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরো ভয়ঙ্কর। মস্তিষ্ক থেকে বের হয়ে সে লম্বা গলা পেরিয়ে বুকের মধ্যে ঘোরাঘুরি শেষে আবার লম্বা গলা পেরিয়ে উপরে উঠে বাকযন্ত্রে সংযুক্ত হয়। একজন ভাল ডিজাইনার সরাসরি সংযুক্ত করে দিলে যে দূরত্ব তাকে অতিক্রম করতে হতো,তার থেকে প্রায় পনের ফুট বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে হয় উদ্দেশ্যহীন, লক্ষ্যহীন এবং অন্ধ প্রাকৃতিক নির্বাচনের কেরমতি মেনে নিয়ে। আরো একটা বিষয় বোঝা গেছে এই উদাহরণ থেকে। আমরা যে একসময় মৎস-জাতীয় পূর্বপুরুষ থেকে ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়ে স্তন্যপায়ী জীবে পরিণত হয়েছি, এর একটি উল্লেখযোগ্য সাক্ষ্য কিন্তু এটি। এ নিয়ে অধ্যাপক জেরি কোয়েন তার ‘Why Evolution is True’ গ্রন্থে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। রিচার্ড ডকিন্সের Greatest Show on Earth বইটিতেও এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা আছে। এর বাইরে অধ্যাপক নীল সুবিনের লেখা ‘Your Inner Fish’ বইটিতেও প্রাসঙ্গিক বহু তথ্য পাওয়া যাবে।

চিত্র – বাকযন্ত্রের স্নায়ুর ‘ডিজাইন’ সাক্ষ্য দেয় যে আমরা মৎস-জাতীয় পূর্বপুরুষ থেকে ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়ে স্তন্যপায়ী জীবে পরিণত হয়েছি।
বলা-বাহুল্য, বাকযন্ত্রের স্নায়ুর এই আবর্তিত পথ শুধু মাত্র খুব বাজে ডিজাইনই নয় এটি ক্ষেত্র বিশেষে ভয়ংকরও। স্নায়ুটির এই অতিরিক্ত দৈর্ঘ্যের কারণে এর আঘাত পাবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। কেউ আপনাকে বুকে আঘাত করলে আমাদের গলার স্বর বন্ধ হয়ে আসে সেজন্যই। বুকে ছুরিকাহত হলে কথাবলার ক্ষমতা নষ্টের পাশাপাশি খাবার হজম করার ক্ষমতাও ধ্বংস হয়ে যায়। বুঝা যায় কোনো বুদ্ধিদীপ্ত মহাপরিকল্পক এই স্নায়ুটির ডিজাইন করেননি, এই অতিরিক্ত ভ্রমণ এবং ‘ব্যাড ডিজাইন’ সংক্রান্ত জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে বিবর্তনের কারণেই।
দেহের নানা জায়গায় ত্রুটি বিচ্যুতির নানা কারণ এবং ব্যাখ্যা আমাদের জানা থাকলেও অবধারিত ভাবে মস্তিষ্কের কাছে এসে আমরা থেমে যেতাম। যেন মনে করতাম মস্তিষ্ক ব্যাপারটা বিবর্তনের পথ ধরে যেন উদ্ভূত হয়নি, এক অশরীরী সত্ত্বার নিপুণ হাতে তৈরি বলেই এটি এত উন্নত, নিপুণ, নিপাট, নিখুঁত সুন্দর। এর ডিজাইনে কোন ফাঁক নেই, নেই কোন অপূর্ণতা। কিন্তু সত্যই কি তাই? আজকের এই প্রবন্ধে আমরা বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মস্তিষ্ককে বিশ্লেষণ করে দেখব এই দাবীর পক্ষে সত্যতা কতটুকু।

আগেই বলেছিলাম মস্তিষ্ক নিয়ে আমার ছিলো অদম্য কৌতূহল।  সেই কৌতুহলের খেসারত হিসেবে আমার গবেষণার জন্য প্রায় তেতাল্লিশটি কাঠামো (প্রত্যঙ্গ) সনাক্ত করে মডেলিং করতে হয়েছিলো। সেগুলোর ছিল বিদঘুটে সমস্ত নাম – কর্টেক্স, কর্পাস ক্যালোসাম, ফরনিক্স, হিপোক্যাম্পাস, থ্যালমাস, হাইপোথ্যালামাস, ইনসুলা, গাইরাস, কডেট নিউক্লিয়াস, পুটামেন, থ্যালামাস, সাবস্ট্যানশিয়া নাইয়াগ্রা, ভেন্ট্রিকুলাস, ব্রেইনস্টেম ইত্যাদি। আমার আগের দু একটি লেখায় আমার মডেলিং এর কিছু ছবি দিয়েছিলাম। এখানেও দেয়া যাক –

চিত্র- মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ সনাক্ত করে ত্রি-মাত্রিক মডেলিং; বিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের চিন্তাভাবনা, কর্মমান্ড, চাল চলন এবং প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা অনেকাংশেই মস্তিষ্কের এই সমস্ত প্রত্যঙ্গগুলোর সঠিক কর্মকাণ্ডের এবং তাদের সমন্বয়ের উপর নির্ভরশীল।
মানব মস্তিষ্ককে মডেলিং করা হয় কিভাবে? একেক জন একেকভাবে করেন। একজন মেডিক্যালের ছাত্র হয়তো মডেলিং করতে চাইবেন ব্রেন-অ্যানাটমিকে সামনে রেখে। একজন নিউরোসার্জনের কাছে হয়তো প্রাধান্য পাবে মস্তিষ্কের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের কাজের মডেল। একজন আণবিক জীববিজ্ঞানী হয়তো আণবিক স্কেলে ব্যাপারটার সুরাহা করতে চাইবেন। আবার এক মনোবিজ্ঞানী হয়তো দেখতে চাইবেন সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের আচরণ। আমি আমার বুয়েটের ছাত্রজীবনে আর তারপরের চাকুরী জীবনে ছিলাম মূলতঃ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার। তাই পিএইচডিতে বায়োইঞ্জিনিয়ারিং এ গবেষণা করতে গিয়ে ব্রেনের মডেলিং করলেও আমার সে মডেলিং ছিলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যন্ত্রকৌশলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ধার করা। ফাইনাইট এলিমেন্ট মডেলিং করে স্ট্রেস স্ট্রেইন এনালাইসিস ইত্যাদি। মস্তিষ্কের টিস্যুকে হাইপারভিস্কোইলাস্টিক পদার্থ হিসেবে নিয়ে অরৈখিক জালিকা (non-linear mesh) তৈরি করে মডেলিং করেছিলাম। আর প্রোগ্রাম করে একটা ডিসপ্লে ইঞ্জিন বানিয়েছিলাম যেটাতে সিমুলেশনগুলো দেখা যায়।

যাকগে, মস্তিষ্কের মডেলিং নিয়ে এত প্যাঁচালে কাজ নাই। এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্যও মডেলিং বোঝা নয়, বরং সার্বিকভাবে মস্তিষ্ককে বোঝার প্রচেষ্টা হিসেবে ধরে নেই বরং। তবে যেটা বলার জন্য এই আয়োজন সেটা বলে ফেলি। মস্তিষ্ক নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অদ্ভুত একটা ব্যাপার খেয়াল করেছিলাম সে সময়। ব্যাপারটা হল – আমি অবাক হয়ে দেখলাম যে, মস্তিষ্ককে সাধারণভাবে যতটা নিখুঁত এবং চৌকস ভাবা হয় আসলে তা মোটেই নয়। বাকযন্ত্রের স্নায়ুর মতই কিছু প্রত্যঙ্গ মস্তিষ্কেও আছে যাদের কাজ করতে হলে অনেক অনেক ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে করতে হয়। কিছু কিছু জায়গায় তার ‘ডিজাইন’ হাস্যকর রকমের দুর্বল এবং খেলো। এর টিস্যু দুর্বল, নিউরনের গঠন আর কর্মক্ষমতা দুর্বল, এক্সনগুলো এতোটাই খারাপ পরিবাহী যে মাঝে মধ্যেই তথ্য চুইয়ে বাইরে হারিয়ে যায়, একটা সাধারণ কম্পিউটারের প্রসেসিং এর সাথে তুলনা করলে ব্রেনের প্রসেসিং দক্ষতা আসলে চোখে পড়ার মতোই অদক্ষ। এমনকি স্মৃতিসংরক্ষণেও নানা ঝামেলা হয় বলেই দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হলে প্রায়শই স্মৃতি আমাদের সাথে প্রতারণা করতে শুরু করে। আর সামান্য কিছু কাজ করতে গেলেই তার দরকার হয় বিশাল এক ‘নেটওয়ার্কিং’-এর। তার উপর আমাদের মস্তিষ্ক যেন শক্তিখেকো এক দানব – দেহের সিংহভাগ শক্তিই আসলে খরচ হয় আমাদের এই মস্তিষ্ককে সচল রাখতে।
এ ব্যাপারগুলো আমার চোখে পড়েছিলো অনেক আগেই। কিন্তু এ নিয়ে তখন খুব একটা উচ্চবাচ্য করার সাহস বা সুযোগ কোনটাই পাইনি। আর তা ছাড়া বড় বড় ঝানু-মাথা বিশেষজ্ঞরা যেভাবে ‘সকল দেশের সেরা সে যে আমার জন্মভূমির মত’ মস্তিষ্কের স্তব করায় ব্যস্ত ছিলেন, আর মানব মস্তিষ্ককে একেবারে পূজার বেদীতে তুলে যেভাবে ফুল-বেলপাতা সহযোগে অর্ঘ্য পরিবেশন করে যাচ্ছিলেন, আমি ভেবে নিয়েছিলাম হয়তো আমারই নিশ্চয় কোথাও না কোথাও ভুল হচ্ছে। এর মধ্যে কেটে গেল বেশ কিছু বছর। এর মাঝে চাকুরী জীবনে ভিন্ন ধরণের কাজে জড়িয়ে পড়লেও আমার পূর্বতন একাডেমিক কাজের যোগসূত্রের কারণেই হোক, কিংবা বিবর্তন নিয়ে মুক্তমনায় সাম্প্রতিক লেখালিখির কারণেই হোক মানব মস্তিষ্ক ব্যাপারটা সবসময়ই রয়ে গিয়েছিলো আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে। সেজন্যই এ সংক্রান্ত খোঁজখবর আর কিছুটা পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। আর তা করতে গিয়েই দেখলাম – আমার সে সময়কার ধারণায় ভুল কিছু ছিলো না। হ্যাঁ, মানব মস্তিষ্ক যে অভিনব বা নিখুঁত কোন জিনিস নয়, বরং বহু জায়গায় রয়ে গেছে বেশ ভ্রান্ত ডিজাইনের আলামত – তা মানব মস্তিষ্ক নিয়ে বড় বড় বিজ্ঞানীদের অতি সাম্প্রতিক কিছু কাজ থেকে আবারো খুব ভালমতো বুঝতে পারলাম। এর মধ্যে কিছু ভাল বইও লেখা হয়েছে সেইসব ধারণাগুলোকে সন্নিবদ্ধ করে। এর মধ্যে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড লিণ্ডেনের লেখা ‘অ্যাক্সিডেন্টাল মাইণ্ড’ (The Accidental Mind: How Brain Evolution Has Given Us Love, Memory, Dreams, and God) এবং নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্যারি মার্কসের লেখা ‘ক্লুজ’ (Kluge: The Haphazard Evolution of the Human Mind) বইদুটো খুবই উল্লেখযোগ্য। তবে সেখানে যাবার আগে আমাদের মস্তিষ্ক নিয়ে সামান্য কিছু ব্যাপার জেনে নেয়া প্রয়োজন।


No comments:

Post a Comment