শেয়ার ব্যবসা করতে চান? তাহলে শেয়ার কেনার
আগে আপনাকে অবশ্যই কিছু বিষয়ের ওপর লক্ষ্য রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতামত
এবং দেশ-বিদেশের বাজারের অভিজ্ঞতার আলোকে শেয়ার ব্যবসায় আগ্রহীদের জন্য
কিছু মৌলিক বিষয় তুলে ধরেছে। তবে সব সময় যে এসব বিষয় কার্যকর ফল দেবে এমন
নাও হতে পারে। বিশেষ করে স্বল্প মেয়াদে কাঙ্খিত ফল পাওয়া মুশকিল। তবে
বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে বিনিয়োগ করা হলে দীর্ঘ মেয়াদে ভালো ফল পাওয়া যেতে
পারে।
১। শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত (P/E) দেখুন।
এটা ২০ এর কম হওয়া ভালো। পিই রেশিও যত কম হয়, বিনিয়োগে ঝুঁকি তত কম।
মূল্য-আয় অনুপাত হচ্ছে একটি কোম্পানির শেয়ার তার আয়ের কতগুণ দামে বিক্রি
হচ্ছে তার একটি পরিমাপ। কোনো কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় যদি হয় ৫ টাকা, আর
বাজারে শেয়ারটির দাম থাকে ৪৫ টাকা, তাহলে মূল্য-আয় অনুপাত হবে ৯। এর অর্থ
কোম্পানিটি যদি তার আয়ের পুরোটা লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে দেয় তাহলে
বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পেতে ৯ বছর সময় লাগবে। কিন্তু শেয়ারটির বাজার মূল্য
যদি হতো ১০০ টাকা, তাহলে মূল্য-আয় অনুপাত বা পিই রেশিও দাঁড়াতো ২০। অর্থাৎ
কোম্পানির আয়ের ধারা অপরিবর্তিত থাকলে বিনিয়োগ ফেরতে ২০ বছর সময় প্রয়োজন।
২। শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (NAV) দেখুন।
এর সাথে বাজারমূল্যের একটা সামঞ্জস্য থাকা উচিত। যদিও কোম্পানির অবসায়ন
(বিলুপ্তি) না হলে সম্পদ মূল্যে বিনিয়োগকারীর কার্যত কিছু যায় আসে না।
কোম্পানির অবসায়ন হলেই কেবল শেয়ারহোল্ডাররা ওই সম্পদের কিছুটা ভাগ পেতে
পারেন। এক্ষেত্রেও সম্পদ বিক্রির মূল্য থেকে আগে ব্যাংক ঋণ এবং অন্যান্য
পাওনা পরিশোধ করা হয়। এরপর কিছু অবশিষ্ট থাকলে তা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে
ভাগ করে দেওয়া হয়।
৩। শেয়ার প্রতি আয় (EPS) দেখুন। এটা যত
বেশি হবে ততই ভালো। ইপিএস বেশি হলে বেশি লভ্যাংশ দেওয়ার সুযোগ থাকে। ইপিএস
কম হলে লভ্যাংশের সক্ষমতাও কম হয়।
৪। মোট শেয়ারের সংখ্যা দেখুন। আর দেখুন
তার কতটুকু ফ্লোটিং। চাহিদা-যোগানের সূত্র অনুসারে শেয়ার সংখ্যা কম হলে তার
মূল্য বাড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অন্যদিকে শেয়ার সংখ্যা বেশি হলে বাজারে
তা অনেক বেশি সহজলভ্য হয়। এছাড়া নিয়মিত ভালো অঙ্কের লেনদেন হয় এমন শেয়ার
কেনা ভালো। কারণ কোনো কারণে জরুরী ভিত্তিতে টাকার প্রয়োজন হলে সহজেই শেয়ার
বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব। কিন্তু নিয়মিত লেনদেন হয় না এমন শেয়ারে
বিনিয়োগ করা হলে জরুরিভিত্তিতে বিনিয়োগ প্রত্যাহার সম্ভব নয়।
৫। অনুমোদিত মূলধন (authorized capital)
আর পরিশোধিত মূলধন (paid-up capital) এর রেশিও দেখুন। এই দুই মূলধনের
পরিমাণ কাছাকাছি থাকলে বোনাস ও রাইট শেয়ার ইস্যু করা বেশ কঠিন। এ ক্ষেত্রে
কোম্পানিকে আগে অনুমোদিত মূলধন বাড়াতে হবে। বোনাস লভ্যাংশে যেসব
বিনিয়োগকারীর বিশেষ ঝোঁক রয়েছে তাদের উচিত এসব বিষয় দেখা নেওয়া।
৬। ডিভিডেন্ড ঈল্ড : শেয়ারের বাজার মূল্য
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিহিত মূল্যের চেয়ে বেশি হতে পারে। তাই লভ্যাংশের হার
প্রকৃত রিটার্ন নির্দেশ করে না। ডিভিডেন্ড ঈল্ডই শেয়ারের সঠিক রিটার্ন।
বাজার মূল্যের ভিত্তিতে প্রাপ্য লভ্যাংশ বিনিয়োগের কত শতাংশ তা-ই হচ্ছে
ডিভিডেন্ড ইল্ড। ঘোষিত লভ্যাংশকে ১০০ দিয়ে গুণ করে সংশ্লিষ্ট শেয়ারের বাজার
মূল্য দিয়ে ভাগ করলে ডিভিডেন্ড ইল্ড পাওয়া যায়। এ ইল্ড যত বেশি হবে
বিনিয়োগকারীর প্রাপ্তিও তত বাড়বে।
৭। গত ৩-৪ বছরের ট্র্যাক রেকর্ড দেখুন। কী
পরিমাণ ডিভিডেন্ড দেয় তা দেখুন। বার্ষিক গড় মূল্য দেখুন। চেষ্টা করুন এই
মূল্যের কাছাকাছি দামে শেয়ার কেনার।
৮। ডিএসইর সাইটে প্রকাশিত গত ৫-৬ মাসের
খবর দেখুন। পত্র-পত্রিকায় দেশ-বিদেশের অর্থনীতি ও ব্যবসার সংবাদগুলো দেখুন।
তাহলে সম্ভাবনাময় খাত ও কোম্পানি চিহ্নিত করা অনেক সহজ হবে।
৯। ডিএসই এখন ৪ মাস পর পর কোম্পানির আর্নিং রিপোর্ট দেয়। একটু মাথা খাটালেই বছর শেষে কী পরিমাণ লাভ হতে পারে তা জানা সম্ভব।
১০। আপনি যে কোম্পানির শেয়ার কিনবেন সে
কোম্পানির গুড উইল ও তার পরিচালকদের সামাজিক ও রাজনৈতিক দিকটাও বিবেচনায়
নিতে হবে। একটি কোম্পানি কতটুকু ভালো ব্যবসা করবে, ব্যবসার সম্প্রসারণের
সম্ভাবনা কতটুকু তা নির্ভর করে এর উদ্যোক্তাদের দূরদর্শীতা, দক্ষতা ও
আন্তরিকতার উপর। একইভাবে মুনাফার সবটুকু হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করা হবে কি-না,
লভ্যাংশের ক্ষেত্র অতিমাত্রায় রক্ষণশীল হবে, না-কি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ
বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া হবে তাও নির্ভর করে তাদের উপর।
মনে রাখতে হবে, বিক্রির সময় নয়, বরং কেনার
সময়ই লাভের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ ভালো দামে শেয়ার কিনতে পালে
ভালো লাভের সম্ভাবনা বেশি থাকবে। কেনার সময় দাম বেশি পড়ে গেলে লাভের
সম্ভাবনা একটু হলেও কমে আসবে।
No comments:
Post a Comment