পৃথিবীর ইতিহাস জানতে না পারলে বিবর্তনবাদ জিনিসটা ভাল মতো জানা যায় না। অথচ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা চেতনা যথাযথ করতে পৃথিবীর ইতিহাস সহ পৃথিবীতে জীবজগতের যে বিপুল বিবর্তন ঘটে আজকের যুগে আমরা এসেছি সেটা জানা একান্ত জরুরী। এটা যথাযথ না জানার ফলেই মানুষ ভীষন কুসংস্কারযুক্ত হয়ে পড়েছে।
দুনিয়াতে শত শত কোটি বছর ধরে লক্ষ লক্ষ প্রজাতির জীবের উদ্ভব ঘটেছে আবার তারা নিশ্চিহ্নও হয়ে গেছে। খনি খননের সময় কোটি কোটি বছর আগেকার জীব জন্তুর বহু জীবাশ্ম পাওয়া যায়। এসব জীবাশ্ম পাওয়া না গেলে বোঝা যেত না আসলেই কোটি কোটি বছর আগেও বিভিন্ন প্রজাতি ও আকার-প্রকৃতির জীব জন্তু এই দুনিয়ায় বিচরন করত। সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ফসিল হলো ডাইনোসরের , কারন এরা আকারে অনেক বড়। অনেকগুলো তো রীতিমতো ৬০/৭০ ফুট পর্যন্ত লম্বা। এসব ফসিল যখন আবিস্কৃত হয় ,তখন মানুষ বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়ে। তারা তখন উপলব্ধি করতে পারে যে , তারা সহ বাকী যে সব জীব জন্তু দেখা যায় তারাই দুনিয়ার একমাত্র জীব জন্তু না , বরং তারা নিজেরা এক সময় এই দুনিয়াতে ছিল না , ছিল ভিন্ন প্রজাতির বিচিত্র সব জীব জন্তু , যেমন বিশাল বিশাল ডাইনোসররা , যারা সারা দুনিয়ায় দাবড়ে বেড়াত। কিন্তু কোন অজানা কারনে তারা সম্পূর্ন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শুধু এরাই না , এরকম ছোট বড় লক্ষ লক্ষ প্রজাতির জীবাশ্ম পাওয়া গেছে যাদেরকে দুনিয়ায় আজকে আর দেখা যায় না।
এভাবে কোন কোন প্রজাতির জীব জন্তু সম্পূর্ন বিলুপ্ত হয়ে , নতুন প্রজাতির জীব জন্তুতে পৃথিবীর একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভরে গেছে , দেখা গেছে তারাও একটা পর্যায়ে বিলুপ্ত হয়ে আবার নতুন প্রজাতির জীব জন্তু উৎপত্তি হয়ে পৃথিবী ভরে গেছে। এভাবেই পৃথিবীতে বার বার ধ্বংস ও বিলোপের ঘটনা ঘটেছে। অনেকটা নুহ নবীর প্লাবনের মত। এসব জীবাশ্ম নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা গেছে, এক প্রজাতির জীব যখন সম্পূর্ন ধ্বংস হয়ে গেছে , পরবর্তী যে প্রজাতির জীব জন্তু পৃথিবীতে আবির্ভুত হয়েছে তারা পৃথিবীর পরিবর্তিত জলবায়ূ, আবহাওয়া ইত্যাদির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। এভাবে খাপ খাইয়ে চলতে চলতে আজকের যুগে পৌছেচে।
সারা দুনিয়া ব্যপী এ ধরনের জীবাশ্ম আবিস্কারই আসলে মানুষকে ভাবতে বাধ্য করে যে , দুনিয়া সৃষ্টির পর পরই কোন এক নির্দিষ্ট প্রজাতির জীব জন্তু দ্বারা এ পৃথিবী পূর্ণ হয়ে আজকে পর্যন্ত টিকে আছে বলে যে ধ্যান ধারনার কথা বিভিন্ন ধর্মীয় কিতাবে বর্ননা করা হয়েছে, প্রাপ্ত ফসিল বা জীবাশ্ম সেই সৃষ্টিতত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ন নয়। এরকমভাবে ধারনা করতে থাকলেও তখনও বিবর্তন মতবাদ সঠিকভাবে গড়ে ওঠেনি।
বিবর্তনবাদ বলতে অনেকেই শুধুমাত্র ডারউইনের বানর থেকে মানুষের উৎপত্তি বুঝায়। এরা বস্তুত চিন্তা চেতনায় মধ্যযুগে পড়ে আছে। যাহোক বিবর্তনবাদের মূল ঘটনায় যেতে পৃথিবীর অতীত ইতিহাস একটু জেনে নিতে হবে। তা না হলে এটা মোটেই বোঝা যাবে না , তখন বিবর্তনবাদ বলতে শুধুমাত্র বানর থেকে মানুষ উৎপত্তি বুঝাবে। সুতরাং আমরা জেনে নেই সংক্ষিপ্ত ভাবে সেই ইতিহাস। তবে তার আগে আরও একটা কথা বলা দরকার , বিবর্তনবাদ জীববিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত আর তাই এই বিষয়ে গবেষণা সম্পূর্ন নির্ভর করে ভূত্বকের বিভিন্ন স্তরে প্রাপ্ত ফসিলের ওপর। সে কারনে বিভিন্ন সময় বিবর্তনবাদে পরিবর্তন পরিবর্ধন ও সংস্কারের প্রয়োজন হয়। কারন সম্পূর্ন নিখুতভাবে জানা সম্ভব নয় কোন এক অতীতকালে পৃথিবীর কোথায় কি ঘটেছিল। অনেকে আছে শুধুমাত্র এই বিষয়টির ওপর ভিত্তি করে বিবর্তনবাদকে নানাভাবে সমালোচনা করে এবং বলে - বিজ্ঞানীরা আজ এক কথা বলছে , তো পরদিন আর এক কথা বলছে- সুতরাং তাদের কথায় বিশ্বাস নেই। তারা ভূলে যায় যে এটা পদার্থ বা রসায়ন বিজ্ঞানের মত গনিত নির্ভর বিজ্ঞান নয় যে গানিতিক সূত্রের দ্বারা সব কিছু নিখুত ভাবে বলা যাবে। যারা এসব কথা বলে তাদের বিজ্ঞান সম্পর্কেই কোন ধারনা আছে বলে মনে হয় না।
পৃথিবী আনুমানিক ৪৫০ কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল বলে নানা তথ্য উপাত্ত নির্দেশ করে। এ ব্যপারে জানা যেতে পারে এখান থেকে - পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস-১ ও পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস -২
কিন্তু আমাদেরকে বিবর্তনবাদ বুঝতে অতদুর যাওয়ার দরকার নেই। আমরা মোটামুটিভাবে ৫০ কোটি বছর আগের ইতিহাসকে পর্যালোচনা করলেই ভাল বুঝতে পারব। সেটার ছক নিম্নরূপ:
Eon= যুগ
Era= উপযুগ
Period= নির্দিষ্ট সময়
গত ৫০ কোটি বছরকে বলা হয় Phanerozoic Eon। এই Phanerozoic Eon কে ভাগ করা হয়েছে ৩ ভাগে - Paleozoic Era, Mesozoic Era ও Cenozoic Era ।
প্যালিওজোইক উপযুগ (Paleozoic Era) : এটা হলো প্রাচীনতম জীবদের যুগ এবং পৃথিবীর সবচাইতে লম্বা যুগ যা শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৫৪ কোটি বছর আগে ও শেষ হয় ২৫ কোটি বছর আগে। এই যুগ আবার ৬ ভাগে বিভক্ত। এই যুগেই বহুকোষী জীবের আবির্ভাব ঘটে , যারা ছিল মূলত উদ্ভিদ শ্রেনীর , পরে তা থেকে প্রানীর উদ্ভব ঘটে এবং উদ্ভিদ ও প্রানী উভয়ই জল ও স্থল সব যায়গাতে ছড়িয়ে পড়ে। এ উপযুগের ক্যাম্ব্রিয়ন পিরিয়ডে সারা পৃথিবীতে জীব জগতের একটা বিরাট অভ্যুত্থান ঘটে। এ পিরিয়ডেই শক্ত খোসা বা কংকাল বিশিষ্ট প্রানীর উদ্ভব ঘটে যেমন - শামুক , ঝিনুক যাদেরকে মলাস্কা বলা হয় এবং মেরুদন্ড বিশিষ্ট প্রানী যাদেরকে মেরুদন্ডি প্রানী বলা হয়, যেমন বহু প্রকার মাছের উদ্ভব ঘটে। ক্যম্ব্রিয়নের আগ পর্যন্ত মেরুদন্ড বিশিষ্ট কোন প্রানীর অস্তিত্ব ছিল না। ৫৪ কোটি বছর আগ থেকে ৪৮ কোটি বছর সময়কাল হলো ক্যম্ব্রিয়ন পিরিয়ড। এ সময়ে কীট পতংগেরও আবির্ভাব ঘটে। যাদেরকে আমরা অর্থপডা বলি। ট্রাইলোবাইট নামক এক প্রকার কীটের অনেক ফসিল পাওয়া গেছে এ যুগে। নীচে তার ছবি --
ক্যাম্ব্রিয়ন পিরিয়ডের পরে Ordovician পিরিয়ড শুরু হয়। এই যুগের Ordovician পিরিয়ডের শেষ দিকে এসে মাছ থেকে কিছু উভচর প্রানীর উদ্ভব ঘটে যারা জল ও স্থল উভয় স্থানেই বিচরন করতে পারত। এরা একই সাথে ডিম দেয়ার ক্ষমতা লাভ করে , যা তা দিয়ে ফুটিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করত। সেই সময়ের একটা ফসিল থেকে কল্পিত একটা জীব আঁকা হয়েছে যেমন -
Ordovician পিরিয়ডেই স্থলে উদ্ভিদগুলো সপুস্পক হতে থাকে এবং বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করতে থাকে। এর আগ পর্যন্ত অঙ্গজ প্রজননের মাধ্যমেই বংশ বৃদ্ধি হতো।
প্যালিওজোইক যুগের শেষ দিকে এসে নানা জাতের পাখি ও সরিসৃপের আবির্ভাব ঘটে। এই সরিসৃপেরাই পরবর্তী যুগ মেসোজোইকে এসে সেই বিখ্যাত সব দানবীয় ডাইনোসর প্রজাতির বিরাট বিরাট সরীসৃপের উৎপত্তি ঘটায়। কিন্তু এই প্যালিওজোসিক যুগে বহুবার পৃথিবীতে নানা ঘটনা ঘটেছে মোট প্রায় ২৫ কোটি বছর ধরে, সেই ঘটনার মধ্যে আছে বরফ যুগ , আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত , ভূমিকম্প, উল্কাপাত ইত্যাদি আর তাদের প্রতিক্রিয়ায় বার বার নানা প্রজাতির বহু জীব চিরতরে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তার পরিবর্তে নতুন নতুন ধরনের জীবজগতের উত্থান ঘটেছে। এর ফলেই সর্ব শেষে এসে উত্থান ঘটেছে উভচর প্রানী, সরীসৃপ ও পাখিদের। আর বলা বাহুল্য এরা পূর্ববর্তী যুগের যে কোন প্রানীদের চেয়ে লড়াই করে বাঁচার ক্ষমতা অর্জন করেছিল। যারা বিভিন্ন সময়ে নানা প্রাকৃতিক বিরূপ পরিবেশে লড়াই করে বাঁচতে পারেনি তারা সমূলে ধ্বংস হয়ে গেছে। ভূতাত্ত্বিক নানা গবেষণা থেকে দেখা যায় এই যুগের প্রায় ৯৫% জীবই নানা প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাইয়ে চলতে না পেলে চিরতরে ধ্বংস হয়ে গেছে। অত:পর বাকী মাত্র ৫% জীব থেকেই শুরু হয় পরবর্তী যুগের ঘনঘটা ও জীব জগতের বিস্তার। এভাবেই অতি ধীর গতিতে কোটি কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে জীবজগতে পরিবর্তন ঘটে চলেছে। এরপর আসে সেই মেসোজোয়িক যুগ।
মেসোজোইক যুগ (Mesozoic Era) : এ যুগের বিস্তার হলো ২৫ কোটি বছর আগ থেকে ৬ কোটি বছর আগ পর্যন্ত। এ যুগটাকে তিনটা উপ বিভাগে ভাগ করা যায় যেমন -Triassic, Jurassic, and Cretaceous periods। প্রায় ১৯ কোটি বছর ধরে দোর্দন্ড প্রতাপে রাজত্ব করার পর অবশেষে কোন এক ভয়াবহ দুর্যোগে এই যুগের তথা পৃথিবীর ইতিহাসের সব চাইতে আলোচিত ডাইনোসর প্রজাতির প্রানী গোষ্ঠি শুদ্ধ ধ্বংস হয়ে যায়। প্যালিওজোইক যুগের শেষ দিকে যে সরিসৃপদের উদ্ভব ঘটেছিল এবং ধ্বংস থেকে যারা বেচেছিল তাদের থেকেই ট্রাইয়াসিক পিরিয়ডে এদের আবির্ভাব ঘটে ধীরে ধীরে। অত:পর জুরাসিক পিরিয়ডে এদের ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এরা এই পিরিয়ডে এসে বহু প্রজাতিতে বিভক্ত হয়ে ছোট থেকে অতি বৃহৎ আকারে বিবর্তিত হয় এবং গোটা পৃথিবীতে দোর্দন্ড প্রতাপে রাজত্ব করতে থাকে। এ যুগের একটা কল্পিত ছবি--
সারা দুনিয়ায় বিভিন্ন যায়গায় প্রাপ্ত ডাইনোসরদের কংকাল বা ফসিলের কিছু ছবি দেখা যেতে পারে -
পরবর্তী পর্বে এই ডাইনোসরদের ওপর বিস্তৃত আলোচনা হবে কারন পৃথিবীর ইতিহাস ও বিবর্তনবাদ বুঝতে এই মেসোজোইক যুগ সহ ডাইনোসরদের ব্যপারে ভালমতো জানার দরকার আছে।
দুনিয়াতে শত শত কোটি বছর ধরে লক্ষ লক্ষ প্রজাতির জীবের উদ্ভব ঘটেছে আবার তারা নিশ্চিহ্নও হয়ে গেছে। খনি খননের সময় কোটি কোটি বছর আগেকার জীব জন্তুর বহু জীবাশ্ম পাওয়া যায়। এসব জীবাশ্ম পাওয়া না গেলে বোঝা যেত না আসলেই কোটি কোটি বছর আগেও বিভিন্ন প্রজাতি ও আকার-প্রকৃতির জীব জন্তু এই দুনিয়ায় বিচরন করত। সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ফসিল হলো ডাইনোসরের , কারন এরা আকারে অনেক বড়। অনেকগুলো তো রীতিমতো ৬০/৭০ ফুট পর্যন্ত লম্বা। এসব ফসিল যখন আবিস্কৃত হয় ,তখন মানুষ বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়ে। তারা তখন উপলব্ধি করতে পারে যে , তারা সহ বাকী যে সব জীব জন্তু দেখা যায় তারাই দুনিয়ার একমাত্র জীব জন্তু না , বরং তারা নিজেরা এক সময় এই দুনিয়াতে ছিল না , ছিল ভিন্ন প্রজাতির বিচিত্র সব জীব জন্তু , যেমন বিশাল বিশাল ডাইনোসররা , যারা সারা দুনিয়ায় দাবড়ে বেড়াত। কিন্তু কোন অজানা কারনে তারা সম্পূর্ন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শুধু এরাই না , এরকম ছোট বড় লক্ষ লক্ষ প্রজাতির জীবাশ্ম পাওয়া গেছে যাদেরকে দুনিয়ায় আজকে আর দেখা যায় না।
এভাবে কোন কোন প্রজাতির জীব জন্তু সম্পূর্ন বিলুপ্ত হয়ে , নতুন প্রজাতির জীব জন্তুতে পৃথিবীর একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভরে গেছে , দেখা গেছে তারাও একটা পর্যায়ে বিলুপ্ত হয়ে আবার নতুন প্রজাতির জীব জন্তু উৎপত্তি হয়ে পৃথিবী ভরে গেছে। এভাবেই পৃথিবীতে বার বার ধ্বংস ও বিলোপের ঘটনা ঘটেছে। অনেকটা নুহ নবীর প্লাবনের মত। এসব জীবাশ্ম নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা গেছে, এক প্রজাতির জীব যখন সম্পূর্ন ধ্বংস হয়ে গেছে , পরবর্তী যে প্রজাতির জীব জন্তু পৃথিবীতে আবির্ভুত হয়েছে তারা পৃথিবীর পরিবর্তিত জলবায়ূ, আবহাওয়া ইত্যাদির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। এভাবে খাপ খাইয়ে চলতে চলতে আজকের যুগে পৌছেচে।
সারা দুনিয়া ব্যপী এ ধরনের জীবাশ্ম আবিস্কারই আসলে মানুষকে ভাবতে বাধ্য করে যে , দুনিয়া সৃষ্টির পর পরই কোন এক নির্দিষ্ট প্রজাতির জীব জন্তু দ্বারা এ পৃথিবী পূর্ণ হয়ে আজকে পর্যন্ত টিকে আছে বলে যে ধ্যান ধারনার কথা বিভিন্ন ধর্মীয় কিতাবে বর্ননা করা হয়েছে, প্রাপ্ত ফসিল বা জীবাশ্ম সেই সৃষ্টিতত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ন নয়। এরকমভাবে ধারনা করতে থাকলেও তখনও বিবর্তন মতবাদ সঠিকভাবে গড়ে ওঠেনি।
বিবর্তনবাদ বলতে অনেকেই শুধুমাত্র ডারউইনের বানর থেকে মানুষের উৎপত্তি বুঝায়। এরা বস্তুত চিন্তা চেতনায় মধ্যযুগে পড়ে আছে। যাহোক বিবর্তনবাদের মূল ঘটনায় যেতে পৃথিবীর অতীত ইতিহাস একটু জেনে নিতে হবে। তা না হলে এটা মোটেই বোঝা যাবে না , তখন বিবর্তনবাদ বলতে শুধুমাত্র বানর থেকে মানুষ উৎপত্তি বুঝাবে। সুতরাং আমরা জেনে নেই সংক্ষিপ্ত ভাবে সেই ইতিহাস। তবে তার আগে আরও একটা কথা বলা দরকার , বিবর্তনবাদ জীববিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত আর তাই এই বিষয়ে গবেষণা সম্পূর্ন নির্ভর করে ভূত্বকের বিভিন্ন স্তরে প্রাপ্ত ফসিলের ওপর। সে কারনে বিভিন্ন সময় বিবর্তনবাদে পরিবর্তন পরিবর্ধন ও সংস্কারের প্রয়োজন হয়। কারন সম্পূর্ন নিখুতভাবে জানা সম্ভব নয় কোন এক অতীতকালে পৃথিবীর কোথায় কি ঘটেছিল। অনেকে আছে শুধুমাত্র এই বিষয়টির ওপর ভিত্তি করে বিবর্তনবাদকে নানাভাবে সমালোচনা করে এবং বলে - বিজ্ঞানীরা আজ এক কথা বলছে , তো পরদিন আর এক কথা বলছে- সুতরাং তাদের কথায় বিশ্বাস নেই। তারা ভূলে যায় যে এটা পদার্থ বা রসায়ন বিজ্ঞানের মত গনিত নির্ভর বিজ্ঞান নয় যে গানিতিক সূত্রের দ্বারা সব কিছু নিখুত ভাবে বলা যাবে। যারা এসব কথা বলে তাদের বিজ্ঞান সম্পর্কেই কোন ধারনা আছে বলে মনে হয় না।
পৃথিবী আনুমানিক ৪৫০ কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল বলে নানা তথ্য উপাত্ত নির্দেশ করে। এ ব্যপারে জানা যেতে পারে এখান থেকে - পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস-১ ও পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস -২
কিন্তু আমাদেরকে বিবর্তনবাদ বুঝতে অতদুর যাওয়ার দরকার নেই। আমরা মোটামুটিভাবে ৫০ কোটি বছর আগের ইতিহাসকে পর্যালোচনা করলেই ভাল বুঝতে পারব। সেটার ছক নিম্নরূপ:
Eon= যুগ
Era= উপযুগ
Period= নির্দিষ্ট সময়
গত ৫০ কোটি বছরকে বলা হয় Phanerozoic Eon। এই Phanerozoic Eon কে ভাগ করা হয়েছে ৩ ভাগে - Paleozoic Era, Mesozoic Era ও Cenozoic Era ।
প্যালিওজোইক উপযুগ (Paleozoic Era) : এটা হলো প্রাচীনতম জীবদের যুগ এবং পৃথিবীর সবচাইতে লম্বা যুগ যা শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৫৪ কোটি বছর আগে ও শেষ হয় ২৫ কোটি বছর আগে। এই যুগ আবার ৬ ভাগে বিভক্ত। এই যুগেই বহুকোষী জীবের আবির্ভাব ঘটে , যারা ছিল মূলত উদ্ভিদ শ্রেনীর , পরে তা থেকে প্রানীর উদ্ভব ঘটে এবং উদ্ভিদ ও প্রানী উভয়ই জল ও স্থল সব যায়গাতে ছড়িয়ে পড়ে। এ উপযুগের ক্যাম্ব্রিয়ন পিরিয়ডে সারা পৃথিবীতে জীব জগতের একটা বিরাট অভ্যুত্থান ঘটে। এ পিরিয়ডেই শক্ত খোসা বা কংকাল বিশিষ্ট প্রানীর উদ্ভব ঘটে যেমন - শামুক , ঝিনুক যাদেরকে মলাস্কা বলা হয় এবং মেরুদন্ড বিশিষ্ট প্রানী যাদেরকে মেরুদন্ডি প্রানী বলা হয়, যেমন বহু প্রকার মাছের উদ্ভব ঘটে। ক্যম্ব্রিয়নের আগ পর্যন্ত মেরুদন্ড বিশিষ্ট কোন প্রানীর অস্তিত্ব ছিল না। ৫৪ কোটি বছর আগ থেকে ৪৮ কোটি বছর সময়কাল হলো ক্যম্ব্রিয়ন পিরিয়ড। এ সময়ে কীট পতংগেরও আবির্ভাব ঘটে। যাদেরকে আমরা অর্থপডা বলি। ট্রাইলোবাইট নামক এক প্রকার কীটের অনেক ফসিল পাওয়া গেছে এ যুগে। নীচে তার ছবি --
ক্যাম্ব্রিয়ন পিরিয়ডের পরে Ordovician পিরিয়ড শুরু হয়। এই যুগের Ordovician পিরিয়ডের শেষ দিকে এসে মাছ থেকে কিছু উভচর প্রানীর উদ্ভব ঘটে যারা জল ও স্থল উভয় স্থানেই বিচরন করতে পারত। এরা একই সাথে ডিম দেয়ার ক্ষমতা লাভ করে , যা তা দিয়ে ফুটিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করত। সেই সময়ের একটা ফসিল থেকে কল্পিত একটা জীব আঁকা হয়েছে যেমন -
Ordovician পিরিয়ডেই স্থলে উদ্ভিদগুলো সপুস্পক হতে থাকে এবং বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করতে থাকে। এর আগ পর্যন্ত অঙ্গজ প্রজননের মাধ্যমেই বংশ বৃদ্ধি হতো।
প্যালিওজোইক যুগের শেষ দিকে এসে নানা জাতের পাখি ও সরিসৃপের আবির্ভাব ঘটে। এই সরিসৃপেরাই পরবর্তী যুগ মেসোজোইকে এসে সেই বিখ্যাত সব দানবীয় ডাইনোসর প্রজাতির বিরাট বিরাট সরীসৃপের উৎপত্তি ঘটায়। কিন্তু এই প্যালিওজোসিক যুগে বহুবার পৃথিবীতে নানা ঘটনা ঘটেছে মোট প্রায় ২৫ কোটি বছর ধরে, সেই ঘটনার মধ্যে আছে বরফ যুগ , আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত , ভূমিকম্প, উল্কাপাত ইত্যাদি আর তাদের প্রতিক্রিয়ায় বার বার নানা প্রজাতির বহু জীব চিরতরে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তার পরিবর্তে নতুন নতুন ধরনের জীবজগতের উত্থান ঘটেছে। এর ফলেই সর্ব শেষে এসে উত্থান ঘটেছে উভচর প্রানী, সরীসৃপ ও পাখিদের। আর বলা বাহুল্য এরা পূর্ববর্তী যুগের যে কোন প্রানীদের চেয়ে লড়াই করে বাঁচার ক্ষমতা অর্জন করেছিল। যারা বিভিন্ন সময়ে নানা প্রাকৃতিক বিরূপ পরিবেশে লড়াই করে বাঁচতে পারেনি তারা সমূলে ধ্বংস হয়ে গেছে। ভূতাত্ত্বিক নানা গবেষণা থেকে দেখা যায় এই যুগের প্রায় ৯৫% জীবই নানা প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাইয়ে চলতে না পেলে চিরতরে ধ্বংস হয়ে গেছে। অত:পর বাকী মাত্র ৫% জীব থেকেই শুরু হয় পরবর্তী যুগের ঘনঘটা ও জীব জগতের বিস্তার। এভাবেই অতি ধীর গতিতে কোটি কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে জীবজগতে পরিবর্তন ঘটে চলেছে। এরপর আসে সেই মেসোজোয়িক যুগ।
মেসোজোইক যুগ (Mesozoic Era) : এ যুগের বিস্তার হলো ২৫ কোটি বছর আগ থেকে ৬ কোটি বছর আগ পর্যন্ত। এ যুগটাকে তিনটা উপ বিভাগে ভাগ করা যায় যেমন -Triassic, Jurassic, and Cretaceous periods। প্রায় ১৯ কোটি বছর ধরে দোর্দন্ড প্রতাপে রাজত্ব করার পর অবশেষে কোন এক ভয়াবহ দুর্যোগে এই যুগের তথা পৃথিবীর ইতিহাসের সব চাইতে আলোচিত ডাইনোসর প্রজাতির প্রানী গোষ্ঠি শুদ্ধ ধ্বংস হয়ে যায়। প্যালিওজোইক যুগের শেষ দিকে যে সরিসৃপদের উদ্ভব ঘটেছিল এবং ধ্বংস থেকে যারা বেচেছিল তাদের থেকেই ট্রাইয়াসিক পিরিয়ডে এদের আবির্ভাব ঘটে ধীরে ধীরে। অত:পর জুরাসিক পিরিয়ডে এদের ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এরা এই পিরিয়ডে এসে বহু প্রজাতিতে বিভক্ত হয়ে ছোট থেকে অতি বৃহৎ আকারে বিবর্তিত হয় এবং গোটা পৃথিবীতে দোর্দন্ড প্রতাপে রাজত্ব করতে থাকে। এ যুগের একটা কল্পিত ছবি--
সারা দুনিয়ায় বিভিন্ন যায়গায় প্রাপ্ত ডাইনোসরদের কংকাল বা ফসিলের কিছু ছবি দেখা যেতে পারে -
পরবর্তী পর্বে এই ডাইনোসরদের ওপর বিস্তৃত আলোচনা হবে কারন পৃথিবীর ইতিহাস ও বিবর্তনবাদ বুঝতে এই মেসোজোইক যুগ সহ ডাইনোসরদের ব্যপারে ভালমতো জানার দরকার আছে।
No comments:
Post a Comment