আমরা একটি অস্থির সময় অতিক্রম করছি, আমাদের মূল্যবোধ নির্বাসিত হতে
চলেছে। আমাদের প্রেম-প্রীতি, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শিষ্টাচার, ভালোবাসার
স্নেহময় ঐতিহ্যের বাঁধন আলগা হয়ে তার বিপরীতে অশ্রদ্ধা, অস্থিরতা,
মিথ্যাচার, প্রবঞ্চনা, ধূর্ততা ও হিংসা-বিদ্বেষ আর লোভের অন্ধকার গলিতে
অসুস্থ প্রতিযোগিতায় সমাজ কলুষিত হচ্ছে। সমাজ ক্রমশ এক হৃদয়হীন গোষ্ঠীতে
পরিণত হচ্ছে। সরলতার কবর দিয়ে নিত্যনতুন রচিত হচ্ছে অচেনা সব চতুরতা,
কুটিলতা। কেউ কাউকে বিশ্বাস করছি না। কেউ কারও দিকে তাকিয়ে নির্মল ভালোবাসা
ও বন্ধুত্বের সেতু গড়তে পারছি না। আস্থার সংকট উঁচু করেছে অবিশ্বাসের
দেয়াল। আমরা ভুলেই গেছি আমাদের সরল সুন্দর নিরাবরণ আটপৌঢ়ে সাদাকালো জীবন
কতই না সুখের ছিল। আমরা যতই বলি শুকনো হেসে ভালো আছি, আসলেই কি ভালো আছি
বললে ভালো থাকা যায়? সুখের সন্ধানে অস্থিরতা কুড়িয়ে আনছি। শান্তির জীবন কি
তাও ভুলে গেছি। সমাজ, সংসার, পরিবার, রাজনীতি, অর্থনীতি সর্বত্র মূল্যবোধের
অবক্ষয়ে এক আদর্শহীন, স্বপ্নহীন ক্যানভাস প্রজন্মের সামনে উদ্ভাসিত হচ্ছে।
মাদকের আগ্রাসনে সন্তানের হাতে স্নেহময়ী পিতা-মাতা খুন হচ্ছেন। স্বামীর
হাতে স্ত্রী, স্ত্রীর হাতে স্বামী, বন্ধুর হাতে বন্ধু, স্বজনের হাতে স্বজন,
দলীয় কর্মীর হাতে নিজ দলের সতীর্থ, প্রতিপক্ষের হাতে প্রতিপক্ষ অহরহ খুন
হচ্ছেন। একটা নৈরাজ্যের দিকে, একটা বিশৃঙ্খলার দিকে আমরা ক্রমশ অগ্রসর
হচ্ছি। কে কার চেয়ে বেশি পাল্লা দিয়ে ঘুষ-দুর্নীতিতে এগিয়ে যেতে পারছি
সেটিই এখন সমাজের অলঙ্কার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজে সৎ থাকাটা যেন বোকার
স্বর্গে বাস করার শামিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্নীতি, লুটপাট একটি আগ্রাসী রূপ
নিতে নিতে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘুণে খেতে খেতে
দুর্বল থেকে অতিশয় দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমরা কোথাও মেরামতের উদ্যোগও নিচ্ছি
না। সংস্কারের স্বপ্ন অনেক দূর। সেই স্বপ্ন আমাদের পূর্বসূরিরা দেখেছিলেন
আমাদের জন্য। আমরা আমাদের অনাগত প্রজন্মের জন্য দুর্নীতির বিস্তীর্ণ জাল
রেখে যাচ্ছি। আমরা আমাদের অনাগত প্রজন্মের জন্য আদর্শহীন ক্ষমতাবাজি,
চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির মহোৎসবের রাজনীতির পথ তৈরি করে যাচ্ছি।
আমরা সমাজ, মানুষ ও দেশের বদলে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীস্বার্থকে প্রাধান্য
দিচ্ছি। যখন আমাদের এতগুলো টেলিভিশন ছিল না, তথ্যপ্রযুক্তির এত সুবিধা ভোগ
করিনি তখন সাইবার ক্রাইম আমরা শিখিনি। ফেসবুকে মানুষের চরিত্র হননের
নির্লজ্জ চিত্র দেখতে হয়নি। এমনকি আমাদের যখন রঙিন টেলিভিশন ছিল না তখন
সাদাকালো টিভিতে কী অসাধারণ সব নাটক, সিনেমা দেখানো হয়েছে। সাদাকালো সেই
সময়ের রাজনীতির পর্দায় কালো টাকার ছড়াছড়ি, রাজনীতির পথে ক্ষমতার সিঁড়িতে
হাঁটতে হাঁটতে বিত্তবৈভব গড়ে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার এমন উন্মত্ত নেশা ছিল
না। আমরা কতই না ভালো ছিলাম! আমাদের রাজনীতিবিদরা ছিলেন সত্যিকারের জননেতা।
মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ তাদের রাজনীতিতে আটপৌঢ়ে সাদামাটা ভাবখানার
মাধুর্য ও বৈচিত্র্য ছিল আকর্ষণ করার মতো। সহজ-সরল জীবনযাপন ছিল শ্রদ্ধা
কুড়ানোর মতো। একালের রঙিন সময়ে রাজনীতিতে কালারফুল চাকচিক্য আর কমিশন
বাণিজ্য থেকে কমিটি বাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, দখল বাণিজ্য
সর্বোপরি প্রতিপক্ষের প্রতি সেই ঐতিহ্যের সহমর্মিতা ও বন্ধুত্বের বিপরীতে
প্রতিহিংসার আগ্রাসী রূপ রাজনীতিকে রূপ-রস-গন্ধহীন করে দিয়েছে।
ছাত্ররাজনীতি কালের অন্ধকারে ঐতিহ্যের ইতিহাস রেখে হারিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক
অসহিষ্ণুতার কারণে রাজনৈতিক প্রভাবে সমাজের বিভক্তি এতটাই তিক্ততায় উপনীত
হয়েছে, ভিন্নমতকে কেউ সইতে পারছেন না। সারা জীবন একটি জাতি মানুষের অধিকার ও
গণতান্ত্রিক চেতনা নিয়ে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে রক্তস্নাত আন্দোলন সংগ্রাম ও
মুক্তিযুদ্ধের বিশাল অর্জনের মাধ্যমে বিকশিত হলেও সব অর্জনকে কোথায় কিভাবে
জানি হারাতে বসেছি। আমরা সমালোচনা সইবার ক্ষমতা রাখছি না। টেলিভিশনগুলোতে
সচরাচর সুস্থ বিনোদন মিলছে না।
বিনোদনের শিল্পমান নামতে নামতে শেষ তলানিতে এসে ঠেকেছে। টেলিভিশনের সামনে বসলে রিমোট কন্টোল টিপতে টিপতে সময় যাচ্ছে। ঘরে টিভির পর্দার সামনেও কারও স্থিরতা নেই। সমাজের অস্থিরতা ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষের মন অশান্ত হয়ে থাকছে। এক সময় যে দর্শক সাদাকালো যুগে নাটক দেখার জন্য ব্যাকুল থাকতেন সেই তারাই এখন মধ্যরাত জেগে টকশো দেখেন। দেশ নিয়ে ভাবেন বলেই অস্থিরতা থেকে খেয়ে দেয়ে দ্রুত ঘুমাতে যেতে পারেন না। আমরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গ্রেনেড হামলায় উড়িয়ে দেওয়ার বীভৎস অপচেষ্টা দেখেছি। সেখান থেকে আমরা একটি সুন্দর স্বপ্নের সকাল দিতে পারিনি। আমরা মামলার জালে আদালতে দৌড়াতে দৌড়াতে প্রতিপক্ষদের নাজেহাল করছি। যখন যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পাচ্ছি বেমালুম ভুলে যাচ্ছি মসনদের সঙ্গে কারাগারের কী গভীর সখ্য। আমরা হামেশাই ভুলে যাচ্ছি মানুষের জীবন যেখানে ক্ষণস্থায়ী সেখানে ক্ষমতা কতটা অস্থায়ী। আমরা বারবার বলছি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে। কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষাই হচ্ছে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নিচ্ছি না। আইন-কানুন ও সংবিধান লঙ্ঘন জাতীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অহরহ ঘটছে। ক্ষমতাবানদের দাম্ভিকতায় পিষ্ট হচ্ছে দুর্বলরা। প্রশাসন ক্ষমতাবানদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাবানরা যেদিকে আঙ্গুল তুলছেন সেদিকেই তারা হেলেদুলে পড়ছেন। সংবিধান অনুযায়ী যতই বলা হোক জনগণ ক্ষমতার মালিক কিন্তু বাস্তবে ঘটছে তার উল্টো। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পদে পদে উপেক্ষিত হচ্ছে। রাজনীতিতে সমঝোতার কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। কেউ বলতে পারছেন না টানেলের শেষ প্রান্তে আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। কেউ বলতে পারছেন না আগামী দিন আমাদের কপালে কী ঘটতে যাচ্ছে। রাজনীতি একটি জাতিকে এভাবে অতীতে আর কখনো এতটা বিভক্ত করেনি। রাজনীতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিত্বশীল পক্ষগুলো একে অন্যের চেহারা দেখতে নারাজ। একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে নারাজ। সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে কদাচিৎ দেখা-সাক্ষাৎও যাতে না হয় সেদিকে যতটা সতর্ক মানুষের কল্যাণে কোমল হৃদয় নিয়ে সেবা করার মানসিকতা ততটাই বেখেয়ালি। সরকার উন্নয়ন প্রকল্প কম হাতে নিচ্ছে না। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কম হচ্ছে না। কিন্তু দুর্নীতির লাগাম কোথাও টেনে ধরা যাচ্ছে না। সর্বগ্রাসী দুর্নীতির ঢেউ তৃণমূল পর্যন্ত একটি দেশকে আলোড়িত করছে। আমরা দেখছি, শুনছি, জানছি কিন্তু কিছুই করতে পারছি না। দুর্নীতিবাজদের সমাদর বাড়ছে। দেশের ব্যবসায়ীরা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। অর্থনীতি স্থবির হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতকে গতিশীল করতে কার্যকর পদক্ষেপ যতটা নেওয়ার ততটা নেওয়া হচ্ছে না। শেয়ারবাজার এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বিনিয়োগকারীদের দম বন্ধ অবস্থা এখনো। মানুষের অভাব-অভিযোগ কম নয়। আমরা শুনছি কিন্তু আমরা প্রতিকার করতে পারছি না। মূল্যবোধহীন,
দয়ামায়াহীন হিংসা-বিদ্বেষের চোরাবালিতে আমরা এতটাই ডুবেছি যে, মরা মানুষকেও সহানুভূতি দেখাচ্ছি না। আমরা নানান চেতনার কথা বলতে বলতে মানুষের সম্ভ্রম নিয়ে টানাহেঁচড়া করছি। আমরা ভুলেই গেছি আমাদের পূর্বপুরুষরা কী সুন্দর সামাজিক রীতিনীতি রেখে গিয়েছিলেন। আমরা সেটিকে আরও পরিশীলিত, মার্জিত না করে আরও বেশি কলুষিত করেছি। ফ্রি-স্টাইল চলছে সবকিছু। রাজনৈতিক দলাদলির কাদা ছোড়াছুড়ির ঢেউ পশ্চিমা দুনিয়াসহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। জীবন-জীবিকার সন্ধানে বিদেশ পাড়ি দেওয়া নাগরিকরাও দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে এত নগ্ন কাদা ছোড়াছুড়ি করছেন যে, আমাদের মাথা বিদেশিদের কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ তলব হচ্ছে হামেশাই। তাদের দেশের রাজনীতির জন্য পুলিশ যতটা না তলব হয় তার চেয়ে বেশি হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রাজনীতি নিয়ে। আমরা সামনের দিকে তাকাতে পারছি না। আমাদের নতুন প্রজন্মের হাতে আলোর মশাল তুলে দেওয়ার বদলে তাদের হৃদয়ে প্রতিহিংসার আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছি। শহীদ মিনারের মতো জাতির স্মৃতির পবিত্র মিনারে দাঁড়িয়ে হিংসা ও বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে শেখানো বুলিতে তারা হরণ করছে তাদের অভিভাবকদের সম্ভ্রম। সম্মানিত মানুষদের অসম্মান ও চরিত্র হননের অশোভন রাজনীতির পাঠ দেওয়া হচ্ছে। যারা দিচ্ছেন তারা আজকের কথা ভাবছেন। তারা আগামীকালের কথা ভাবছেন না। এই পাঠ দিনবদলের পর অন্যপক্ষ গ্রহণ করলে সমাজের এই তিক্ততা বিভেদ কতদূর যাবে সেটি আমলেই নিচ্ছেন না। শহীদ মিনার ঘিরে এক সময় একুশের প্রথম প্রহরে ছবি টানানোর অসুস্থ প্রতিযোগিতায় এতটাই লিপ্ত হতেন যে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা শেষ পর্যন্ত লাঞ্ছিত হতেন। মানুষের হৃদয় নিঃসৃত শ্রদ্ধার অর্ঘ্য দানবের পদদলে পিষ্ট হতে দেখে শহীদের আত্দাও ক্রন্দন করেছে। এক সময় সেটি বন্ধ হয়েছে। শহীদ মিনারে লাশ নেওয়া-না নেওয়া নিয়ে নতুন বিতর্ক বিভক্তির আরেক অধ্যায়ের সূচনা ঘটিয়েছে। এর পরিণতি আগামীতে কী ঘটতে পারে তা নিয়েও অনেকে উদ্বিঘ্ন। আমরা আসলে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শোষণমুক্ত দেশ ও সমাজ চেয়েছিলাম। আমরা লুটেরাতন্ত্রের অবসান চেয়েছিলাম। হিসাবের হালখাতা মেলালে দেখা যায়, অর্জন কতটা বেদনাবিধুর। আমরা ভাগাভাগি করতে করতে আমাদের চেতনার ভিত্তিমূল ধরে টান দিচ্ছি। আমাদের শেকড় নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। মাটি থেকে শেকড় যেন খুলে যাচ্ছে। আমরা বাহাদুরিতে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছি। আজ একে তো কাল ওকে ভিন্নমতের কারণে যাকে তাকে দিয়ে অসম্মান করাচ্ছি। এমনকি সরকারি দলের সমর্থক হয়েও একজন মন্ত্রীর মতামতকে গ্রহণ করতে না পেরে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করছি। এমনিতেই রাজনীতির প্রতি ভালো মানুষদের অনীহা, অনাগ্রহ চরমে। মেধাবী, সৃজনশীল, সৎ তরুণ-তরুণীদের, নারী-পুরুষদের রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করা হচ্ছে। রাজনীতিতে অশ্লীলতা প্রাধান্য পাচ্ছে। নষ্টদের হাতে সব তুলে দেওয়া হচ্ছে। আর আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলো অসুস্থ দলবাজির প্রতিযোগিতায় ভেঙে ভেঙে পড়ছে। অবাক হয়ে কালের আয়নায় তাকিয়ে জীবনের পড়ন্ত বেলায় মানুষ ভাবছে এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম? এই গণতান্ত্রিক সমাজ কি আমরা চেয়েছিলাম? যেখানে মত ও পথের পার্থক্য ঘটলেই চরিত্রহনন, দমন-পীড়ন, নিষেধাজ্ঞা এতটাই উদ্বিঘ্ন করছে যে, মানুষ এখন সত্য কথা বলতে ভয় পাচ্ছে। অনেকেই বারবার মিথ্যা বলার মধ্য দিয়ে সত্যকে হারিয়ে দিতে চাচ্ছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে যুগে যুগে স্বৈরতন্ত্র ও মিথ্যার কবর রচিত হয়েছে। সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী। মিথ্যা পরাজিত হয়েছে, সত্যের জয় হয়েছে। আমাদের রেনেসাঁ বা নবজাগরণের যুগ পঞ্চাশের হাত ধরে ষাটের দশককে ইতিহাসের ক্যানভাসে সোনার হরফে দাঁড় করানো হয়েছে। তুমি কে, আমি কে, বাঙালি, বাঙালি; তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা
জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছে জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের আলোয় পথ হেঁটে। আমাদের তরুণদের বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্দজীবনী থেকে নিজের ভেতরে চেতনার স্ফুলিঙ্গ জাগাতে সাহায্য করছি না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচন বন্ধ করে দিয়ে ২৩ বছরে ছাত্র রাজনীতিকে অন্ধকার পথে ঠেলে দিয়েছি। নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনই ছাত্র রাজনীতিকে গৌরবের পথে হাঁটতে শিখিয়েছে। প্রতিবাদের জায়গা সেই তারুণ্যকে আমরা অসার বোধহীন করে রেখেছি ছাত্র রাজনীতিতে বন্ধ্যত্ব এনে দিয়ে। সামরিক শাসকরা যদি ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে থাকেন গণতান্ত্রিক শাসকরা সব ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রেখে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজির লাইসেন্স তুলে দিয়ে বাজিকরদের সাম্রাজ্য রমরমা করে দিয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত হলে ছাত্র রাজনীতিতে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। দূষিত রক্ত বেরিয়ে যায়। নতুন রক্ত এই রাজনীতিকে পরিশীলিত, মার্জিত ও গণতান্ত্রিক আদর্শনির্ভর মূল্যবোধের তারুণ্যকে পথ হাঁটতে শেখায়। বন্ধ্যত্ব তারুণ্যকে বিভ্রান্তির চোরাবালিতে নিমজ্জিত করে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত হলে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে নির্বাচন নিয়মিত হয়। মেধাবী সৃজনশীল তরুণরা অগ্রভাগে আসার সুযোগ পান। একজন ভালো শিল্পী, একজন ভালো কবি, লেখক, সংস্কৃতিমনা তরুণ ও খেলোয়াড়কে টেনে আনা হয় সংগঠনে। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, আচার-আচরণের পাঠ দেওয়া হয়। এই কর্মশালা পরবর্তী জীবনেও কাজে লাগে। সমাজজীবনে প্রভাব ফেলে। আদর্শবোধ জাগ্রত করে। আজকের রঙিন সময়ের রাজনীতি আবেগ অনুভূতিহীন, আদর্শহীন অন্ধকার পথে সবাইকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কারও প্রতি কারও কোনো মমত্ববোধ নেই। দায়িত্ববোধ নেই। এক সময় কারও জন্মদিনে বিয়ে-শাদিতে বই ছিল মূল্যবান উপহার। তরুণরা পকেট খরচ বাঁচিয়ে, দুটো কাপড় কম পরে বই কিনতেন। বইমেলা এলেই বই কেনার ধুম পড়ে। সারা বছর বইয়ের প্রতি কোনো টান নেই। পাশর্্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় ঢুকলে একেকটা প্রকাশনী সংস্থার সামনে দীর্ঘলাইন দিয়ে বই কিনতে হয়। বই পড়ার দিকে পৃথিবীজুড়ে ঝোঁক বাড়ছে। ইন্টারনেটেও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। আমাদের ছেলেবেলায় দস্যু বনহুর, মাসুদ রানা, কুয়াশা, জেমস বন্ডসহ নানা গোয়েন্দা সিরিজ বই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে কিংবা অলস দুপুরে যেখানে সেখানে বসে শেষ করে দিতাম। আমাদের টানাপড়েনের সংসার জীবনে এত চাকচিক্য ছিল না। কিন্তু পরিবার থেকেই রবীন্দ্র-নজরুলের সঙ্গে সুকান্তের সঙ্গে প্রেমের সুতোয় জড়িয়ে দেওয়া হতো। আমাদের মায়েরা ফাইভ পাস হলেও আদর্শলিপি পড়াতেন। সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারা দিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি। আমাদের মায়েরা বড় সংসার পাড়া-পড়শি, আত্দীয়স্বজন সব দেখভাল করতেন। আমাদের জীবনে আনন্দ ছিল, বিত্তের সুখ না থাকলেও চিত্তের সুখে সুখী ছিলাম। আমাদের সন্তানদের মেকি চাকচিক্যের নগর সভ্যতার সঙ্গে আমরা সাইবার যুগের বদ্ধ রুমে ঢুকিয়ে দিয়েছি। কম্পিউটারে ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করে কোথায় প্রবেশ করছে তার খবর রাখছি না। আমাদের সন্তানরা পশ্চিমা সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্দ হচ্ছে ভালো কথা, কিন্তু ঠাকুরমার ঝুলি হাতে তুলে দিতে ভুলে যাচ্ছি। আমরা রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে, নজরুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারছি না। অ্যাপার্টমেন্ট সংস্কৃতির নগর সভ্যতার এই যান্ত্রিক জীবনে গ্রামের পরিবেশও বদলে যাচ্ছে। পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের 'তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়' সেই গাঁ হারিয়ে যাচ্ছে। হাঁটুজল নদী ভরাট হয়ে গেছে। প্রমত্তা নদীগুলো বন্ধ্যা নদীতে পরিণত হয়েছে। খরস্রোতা খালগুলো এখন মফস্বল শহরেও দেখা যায় না। আমরা প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে ডেকে আনছি। সম্পদ সীমিত, জনসংখ্যা অনেক। আমরা একটু রয়ে সয়ে পরিকল্পিত জীবনের সঙ্গে একাত্দ হতে পারছি না। দলীয়করণ, দুর্নীতি আর ক্ষমতার দাম্ভিকতায় যখন যারা মসনদে বসছি অন্ধের মতো হাঁটছি। আমরাও তাদের পেছনে দলকানা হয়ে ছুটছি। আমাদের পূর্বপুরুষরা পেশিবহুল কৃষক ছিলেন। তারা আমাদের শস্য ফলাতে শিখিয়েছিলেন। গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, স্বাস্থ্যকর জীবন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্ক করিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা সেখানে হাইব্রিড, ফর্মালিনের মাধ্যমে সন্তানদের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছি। বাহারি চাকচিক্যের এই জীবন থেকে আমাদের আলোর জগতে ফিরিয়ে আনতে একমাত্র পরিশীলিত রাজনৈতিক পরিবেশই দিতে পারে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে এইখানে নিবেদন, গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণে শত ফুল ফুটতে দিন। পরমতসহিষ্ণু হন। প্রতিহিংসার অন্ধকার গলি থেকে রাজনীতিকে সৌহার্দ্য সম্প্রীতি, শিষ্টাচারের ঐতিহ্যের রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনুন। আমাদের ইতিহাসের ক্যানভাসে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে আছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার ধানমণ্ডির বাড়িটিতে ইবাদতের মতো মগ্ন হয়ে সাধকের মতো চোখ রেখে পর্যবেক্ষণ করলে সৎ, আদর্শনির্ভর উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতি ফিরিয়ে আনা দুঃসাধ্য নয়। আমাদের গণমানুষের ভাত-কাপড়ের সংগ্রামে নিবেদিত রাজনীতিবিদ মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর জীবন পাঠ করার মধ্য দিয়ে গরিবের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার শিক্ষা দিতে পারে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে জেগে উঠতে সাহায্য করতে পারে। আমাদের গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে পাঠ করলে আমাদের জন্য সংসদীয় গণতন্ত্রে পরিশীলিত, মার্জিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা দুরূহ ব্যাপার নয়। আমাদের কৃষকের বন্ধু শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মকে সংযোগ ঘটিয়ে দেওয়ার এখনই সময়। আমরা জানি, আমাদের জাতীয় জীবনে সুমহান মুক্তিযুদ্ধে ধর্মান্ধ একটি গোষ্ঠীর দেশ ও মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতে বাঙালির মহোত্তম নেতা বঙ্গবন্ধুকে পরিবার-পরিজনসহ নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এবং তার পরবর্তীতে সামরিক শাসন কবলিত বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের রূপ এবং একুশের গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে আজকের প্রধানমন্ত্রীসহ উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে উড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা, দগদগে ক্ষত সৃষ্টি করে রেখেছে। এখান থেকে সেই ক্ষত শুকিয়ে অনাগত প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ আবাসভূমি হিসেবে অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আগামী দিনের রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার রূপরেখা তৈরি করার এখনই সময়। একটি অস্থির অশান্ত দমবন্ধ সময় কখনোই কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।
আমরা বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমেই একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারি। সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক চেতনা ও মূল্যবোধের দুয়ার খুলে দিতে পারি। আমাদের বর্তমান রাজনীতির নেতৃত্বে এখনো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মুখ দেখা যায়। এখনো গণতন্ত্রের সংগ্রামের নেতানেত্রীদের প্রতি গণমানুষের আস্থা রয়েছে। যে বর্ণবাদীদের হাতে অবর্ণনীয় নির্যাতন ভোগ করে নেলসন ম্যান্ডেলা তাদের বুকে টেনে নিয়েছিলেন, ক্ষমতার অংশীদারিত্ব দিয়েছিলেন, যে পশ্চিমারা তাকে সন্ত্রাসী বলে তাচ্ছিল্য করেছিল, তাদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন সেই ম্যান্ডেলাকে আমাদের নেতারা নিশ্চয়ই গভীরভাবে পাঠ করেছেন। মহাত্দা গান্ধীই নন, বিপ্লবী নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুই নন, উপমহাদেশের উদার গণতান্ত্রিক নেতা পণ্ডিত জওহর লাল নেহরুকেও পাঠ করেছেন। তাই আলোর পথে দেশকে নিয়ে হাঁটতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের ফর্মুলা বের করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়। মানুষ সেই পথটিই দেখতে চায়। হিংসা-বিদ্বেষ, সংঘাতের বিপরীতে শান্তি, সমঝোতা ও সৌহার্দ্যের রাজনীতির দুয়ার খোলা যেতে পারে। সমঝোতার দুয়ার না খুললে সামনে অন্ধকার। সেই অন্ধকারে আমাদের সবার হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি
বিনোদনের শিল্পমান নামতে নামতে শেষ তলানিতে এসে ঠেকেছে। টেলিভিশনের সামনে বসলে রিমোট কন্টোল টিপতে টিপতে সময় যাচ্ছে। ঘরে টিভির পর্দার সামনেও কারও স্থিরতা নেই। সমাজের অস্থিরতা ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষের মন অশান্ত হয়ে থাকছে। এক সময় যে দর্শক সাদাকালো যুগে নাটক দেখার জন্য ব্যাকুল থাকতেন সেই তারাই এখন মধ্যরাত জেগে টকশো দেখেন। দেশ নিয়ে ভাবেন বলেই অস্থিরতা থেকে খেয়ে দেয়ে দ্রুত ঘুমাতে যেতে পারেন না। আমরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গ্রেনেড হামলায় উড়িয়ে দেওয়ার বীভৎস অপচেষ্টা দেখেছি। সেখান থেকে আমরা একটি সুন্দর স্বপ্নের সকাল দিতে পারিনি। আমরা মামলার জালে আদালতে দৌড়াতে দৌড়াতে প্রতিপক্ষদের নাজেহাল করছি। যখন যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পাচ্ছি বেমালুম ভুলে যাচ্ছি মসনদের সঙ্গে কারাগারের কী গভীর সখ্য। আমরা হামেশাই ভুলে যাচ্ছি মানুষের জীবন যেখানে ক্ষণস্থায়ী সেখানে ক্ষমতা কতটা অস্থায়ী। আমরা বারবার বলছি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে। কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষাই হচ্ছে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নিচ্ছি না। আইন-কানুন ও সংবিধান লঙ্ঘন জাতীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অহরহ ঘটছে। ক্ষমতাবানদের দাম্ভিকতায় পিষ্ট হচ্ছে দুর্বলরা। প্রশাসন ক্ষমতাবানদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাবানরা যেদিকে আঙ্গুল তুলছেন সেদিকেই তারা হেলেদুলে পড়ছেন। সংবিধান অনুযায়ী যতই বলা হোক জনগণ ক্ষমতার মালিক কিন্তু বাস্তবে ঘটছে তার উল্টো। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পদে পদে উপেক্ষিত হচ্ছে। রাজনীতিতে সমঝোতার কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। কেউ বলতে পারছেন না টানেলের শেষ প্রান্তে আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। কেউ বলতে পারছেন না আগামী দিন আমাদের কপালে কী ঘটতে যাচ্ছে। রাজনীতি একটি জাতিকে এভাবে অতীতে আর কখনো এতটা বিভক্ত করেনি। রাজনীতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিত্বশীল পক্ষগুলো একে অন্যের চেহারা দেখতে নারাজ। একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে নারাজ। সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে কদাচিৎ দেখা-সাক্ষাৎও যাতে না হয় সেদিকে যতটা সতর্ক মানুষের কল্যাণে কোমল হৃদয় নিয়ে সেবা করার মানসিকতা ততটাই বেখেয়ালি। সরকার উন্নয়ন প্রকল্প কম হাতে নিচ্ছে না। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কম হচ্ছে না। কিন্তু দুর্নীতির লাগাম কোথাও টেনে ধরা যাচ্ছে না। সর্বগ্রাসী দুর্নীতির ঢেউ তৃণমূল পর্যন্ত একটি দেশকে আলোড়িত করছে। আমরা দেখছি, শুনছি, জানছি কিন্তু কিছুই করতে পারছি না। দুর্নীতিবাজদের সমাদর বাড়ছে। দেশের ব্যবসায়ীরা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। অর্থনীতি স্থবির হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতকে গতিশীল করতে কার্যকর পদক্ষেপ যতটা নেওয়ার ততটা নেওয়া হচ্ছে না। শেয়ারবাজার এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বিনিয়োগকারীদের দম বন্ধ অবস্থা এখনো। মানুষের অভাব-অভিযোগ কম নয়। আমরা শুনছি কিন্তু আমরা প্রতিকার করতে পারছি না। মূল্যবোধহীন,
দয়ামায়াহীন হিংসা-বিদ্বেষের চোরাবালিতে আমরা এতটাই ডুবেছি যে, মরা মানুষকেও সহানুভূতি দেখাচ্ছি না। আমরা নানান চেতনার কথা বলতে বলতে মানুষের সম্ভ্রম নিয়ে টানাহেঁচড়া করছি। আমরা ভুলেই গেছি আমাদের পূর্বপুরুষরা কী সুন্দর সামাজিক রীতিনীতি রেখে গিয়েছিলেন। আমরা সেটিকে আরও পরিশীলিত, মার্জিত না করে আরও বেশি কলুষিত করেছি। ফ্রি-স্টাইল চলছে সবকিছু। রাজনৈতিক দলাদলির কাদা ছোড়াছুড়ির ঢেউ পশ্চিমা দুনিয়াসহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। জীবন-জীবিকার সন্ধানে বিদেশ পাড়ি দেওয়া নাগরিকরাও দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে এত নগ্ন কাদা ছোড়াছুড়ি করছেন যে, আমাদের মাথা বিদেশিদের কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ তলব হচ্ছে হামেশাই। তাদের দেশের রাজনীতির জন্য পুলিশ যতটা না তলব হয় তার চেয়ে বেশি হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রাজনীতি নিয়ে। আমরা সামনের দিকে তাকাতে পারছি না। আমাদের নতুন প্রজন্মের হাতে আলোর মশাল তুলে দেওয়ার বদলে তাদের হৃদয়ে প্রতিহিংসার আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছি। শহীদ মিনারের মতো জাতির স্মৃতির পবিত্র মিনারে দাঁড়িয়ে হিংসা ও বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে শেখানো বুলিতে তারা হরণ করছে তাদের অভিভাবকদের সম্ভ্রম। সম্মানিত মানুষদের অসম্মান ও চরিত্র হননের অশোভন রাজনীতির পাঠ দেওয়া হচ্ছে। যারা দিচ্ছেন তারা আজকের কথা ভাবছেন। তারা আগামীকালের কথা ভাবছেন না। এই পাঠ দিনবদলের পর অন্যপক্ষ গ্রহণ করলে সমাজের এই তিক্ততা বিভেদ কতদূর যাবে সেটি আমলেই নিচ্ছেন না। শহীদ মিনার ঘিরে এক সময় একুশের প্রথম প্রহরে ছবি টানানোর অসুস্থ প্রতিযোগিতায় এতটাই লিপ্ত হতেন যে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা শেষ পর্যন্ত লাঞ্ছিত হতেন। মানুষের হৃদয় নিঃসৃত শ্রদ্ধার অর্ঘ্য দানবের পদদলে পিষ্ট হতে দেখে শহীদের আত্দাও ক্রন্দন করেছে। এক সময় সেটি বন্ধ হয়েছে। শহীদ মিনারে লাশ নেওয়া-না নেওয়া নিয়ে নতুন বিতর্ক বিভক্তির আরেক অধ্যায়ের সূচনা ঘটিয়েছে। এর পরিণতি আগামীতে কী ঘটতে পারে তা নিয়েও অনেকে উদ্বিঘ্ন। আমরা আসলে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শোষণমুক্ত দেশ ও সমাজ চেয়েছিলাম। আমরা লুটেরাতন্ত্রের অবসান চেয়েছিলাম। হিসাবের হালখাতা মেলালে দেখা যায়, অর্জন কতটা বেদনাবিধুর। আমরা ভাগাভাগি করতে করতে আমাদের চেতনার ভিত্তিমূল ধরে টান দিচ্ছি। আমাদের শেকড় নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। মাটি থেকে শেকড় যেন খুলে যাচ্ছে। আমরা বাহাদুরিতে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছি। আজ একে তো কাল ওকে ভিন্নমতের কারণে যাকে তাকে দিয়ে অসম্মান করাচ্ছি। এমনকি সরকারি দলের সমর্থক হয়েও একজন মন্ত্রীর মতামতকে গ্রহণ করতে না পেরে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করছি। এমনিতেই রাজনীতির প্রতি ভালো মানুষদের অনীহা, অনাগ্রহ চরমে। মেধাবী, সৃজনশীল, সৎ তরুণ-তরুণীদের, নারী-পুরুষদের রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করা হচ্ছে। রাজনীতিতে অশ্লীলতা প্রাধান্য পাচ্ছে। নষ্টদের হাতে সব তুলে দেওয়া হচ্ছে। আর আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলো অসুস্থ দলবাজির প্রতিযোগিতায় ভেঙে ভেঙে পড়ছে। অবাক হয়ে কালের আয়নায় তাকিয়ে জীবনের পড়ন্ত বেলায় মানুষ ভাবছে এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম? এই গণতান্ত্রিক সমাজ কি আমরা চেয়েছিলাম? যেখানে মত ও পথের পার্থক্য ঘটলেই চরিত্রহনন, দমন-পীড়ন, নিষেধাজ্ঞা এতটাই উদ্বিঘ্ন করছে যে, মানুষ এখন সত্য কথা বলতে ভয় পাচ্ছে। অনেকেই বারবার মিথ্যা বলার মধ্য দিয়ে সত্যকে হারিয়ে দিতে চাচ্ছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে যুগে যুগে স্বৈরতন্ত্র ও মিথ্যার কবর রচিত হয়েছে। সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী। মিথ্যা পরাজিত হয়েছে, সত্যের জয় হয়েছে। আমাদের রেনেসাঁ বা নবজাগরণের যুগ পঞ্চাশের হাত ধরে ষাটের দশককে ইতিহাসের ক্যানভাসে সোনার হরফে দাঁড় করানো হয়েছে। তুমি কে, আমি কে, বাঙালি, বাঙালি; তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা
জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছে জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের আলোয় পথ হেঁটে। আমাদের তরুণদের বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্দজীবনী থেকে নিজের ভেতরে চেতনার স্ফুলিঙ্গ জাগাতে সাহায্য করছি না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচন বন্ধ করে দিয়ে ২৩ বছরে ছাত্র রাজনীতিকে অন্ধকার পথে ঠেলে দিয়েছি। নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনই ছাত্র রাজনীতিকে গৌরবের পথে হাঁটতে শিখিয়েছে। প্রতিবাদের জায়গা সেই তারুণ্যকে আমরা অসার বোধহীন করে রেখেছি ছাত্র রাজনীতিতে বন্ধ্যত্ব এনে দিয়ে। সামরিক শাসকরা যদি ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে থাকেন গণতান্ত্রিক শাসকরা সব ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রেখে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজির লাইসেন্স তুলে দিয়ে বাজিকরদের সাম্রাজ্য রমরমা করে দিয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত হলে ছাত্র রাজনীতিতে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। দূষিত রক্ত বেরিয়ে যায়। নতুন রক্ত এই রাজনীতিকে পরিশীলিত, মার্জিত ও গণতান্ত্রিক আদর্শনির্ভর মূল্যবোধের তারুণ্যকে পথ হাঁটতে শেখায়। বন্ধ্যত্ব তারুণ্যকে বিভ্রান্তির চোরাবালিতে নিমজ্জিত করে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত হলে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে নির্বাচন নিয়মিত হয়। মেধাবী সৃজনশীল তরুণরা অগ্রভাগে আসার সুযোগ পান। একজন ভালো শিল্পী, একজন ভালো কবি, লেখক, সংস্কৃতিমনা তরুণ ও খেলোয়াড়কে টেনে আনা হয় সংগঠনে। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, আচার-আচরণের পাঠ দেওয়া হয়। এই কর্মশালা পরবর্তী জীবনেও কাজে লাগে। সমাজজীবনে প্রভাব ফেলে। আদর্শবোধ জাগ্রত করে। আজকের রঙিন সময়ের রাজনীতি আবেগ অনুভূতিহীন, আদর্শহীন অন্ধকার পথে সবাইকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কারও প্রতি কারও কোনো মমত্ববোধ নেই। দায়িত্ববোধ নেই। এক সময় কারও জন্মদিনে বিয়ে-শাদিতে বই ছিল মূল্যবান উপহার। তরুণরা পকেট খরচ বাঁচিয়ে, দুটো কাপড় কম পরে বই কিনতেন। বইমেলা এলেই বই কেনার ধুম পড়ে। সারা বছর বইয়ের প্রতি কোনো টান নেই। পাশর্্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় ঢুকলে একেকটা প্রকাশনী সংস্থার সামনে দীর্ঘলাইন দিয়ে বই কিনতে হয়। বই পড়ার দিকে পৃথিবীজুড়ে ঝোঁক বাড়ছে। ইন্টারনেটেও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। আমাদের ছেলেবেলায় দস্যু বনহুর, মাসুদ রানা, কুয়াশা, জেমস বন্ডসহ নানা গোয়েন্দা সিরিজ বই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে কিংবা অলস দুপুরে যেখানে সেখানে বসে শেষ করে দিতাম। আমাদের টানাপড়েনের সংসার জীবনে এত চাকচিক্য ছিল না। কিন্তু পরিবার থেকেই রবীন্দ্র-নজরুলের সঙ্গে সুকান্তের সঙ্গে প্রেমের সুতোয় জড়িয়ে দেওয়া হতো। আমাদের মায়েরা ফাইভ পাস হলেও আদর্শলিপি পড়াতেন। সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারা দিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি। আমাদের মায়েরা বড় সংসার পাড়া-পড়শি, আত্দীয়স্বজন সব দেখভাল করতেন। আমাদের জীবনে আনন্দ ছিল, বিত্তের সুখ না থাকলেও চিত্তের সুখে সুখী ছিলাম। আমাদের সন্তানদের মেকি চাকচিক্যের নগর সভ্যতার সঙ্গে আমরা সাইবার যুগের বদ্ধ রুমে ঢুকিয়ে দিয়েছি। কম্পিউটারে ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করে কোথায় প্রবেশ করছে তার খবর রাখছি না। আমাদের সন্তানরা পশ্চিমা সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্দ হচ্ছে ভালো কথা, কিন্তু ঠাকুরমার ঝুলি হাতে তুলে দিতে ভুলে যাচ্ছি। আমরা রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে, নজরুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারছি না। অ্যাপার্টমেন্ট সংস্কৃতির নগর সভ্যতার এই যান্ত্রিক জীবনে গ্রামের পরিবেশও বদলে যাচ্ছে। পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের 'তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়' সেই গাঁ হারিয়ে যাচ্ছে। হাঁটুজল নদী ভরাট হয়ে গেছে। প্রমত্তা নদীগুলো বন্ধ্যা নদীতে পরিণত হয়েছে। খরস্রোতা খালগুলো এখন মফস্বল শহরেও দেখা যায় না। আমরা প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে ডেকে আনছি। সম্পদ সীমিত, জনসংখ্যা অনেক। আমরা একটু রয়ে সয়ে পরিকল্পিত জীবনের সঙ্গে একাত্দ হতে পারছি না। দলীয়করণ, দুর্নীতি আর ক্ষমতার দাম্ভিকতায় যখন যারা মসনদে বসছি অন্ধের মতো হাঁটছি। আমরাও তাদের পেছনে দলকানা হয়ে ছুটছি। আমাদের পূর্বপুরুষরা পেশিবহুল কৃষক ছিলেন। তারা আমাদের শস্য ফলাতে শিখিয়েছিলেন। গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, স্বাস্থ্যকর জীবন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্ক করিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা সেখানে হাইব্রিড, ফর্মালিনের মাধ্যমে সন্তানদের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছি। বাহারি চাকচিক্যের এই জীবন থেকে আমাদের আলোর জগতে ফিরিয়ে আনতে একমাত্র পরিশীলিত রাজনৈতিক পরিবেশই দিতে পারে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে এইখানে নিবেদন, গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণে শত ফুল ফুটতে দিন। পরমতসহিষ্ণু হন। প্রতিহিংসার অন্ধকার গলি থেকে রাজনীতিকে সৌহার্দ্য সম্প্রীতি, শিষ্টাচারের ঐতিহ্যের রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনুন। আমাদের ইতিহাসের ক্যানভাসে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে আছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার ধানমণ্ডির বাড়িটিতে ইবাদতের মতো মগ্ন হয়ে সাধকের মতো চোখ রেখে পর্যবেক্ষণ করলে সৎ, আদর্শনির্ভর উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতি ফিরিয়ে আনা দুঃসাধ্য নয়। আমাদের গণমানুষের ভাত-কাপড়ের সংগ্রামে নিবেদিত রাজনীতিবিদ মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর জীবন পাঠ করার মধ্য দিয়ে গরিবের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার শিক্ষা দিতে পারে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে জেগে উঠতে সাহায্য করতে পারে। আমাদের গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে পাঠ করলে আমাদের জন্য সংসদীয় গণতন্ত্রে পরিশীলিত, মার্জিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা দুরূহ ব্যাপার নয়। আমাদের কৃষকের বন্ধু শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মকে সংযোগ ঘটিয়ে দেওয়ার এখনই সময়। আমরা জানি, আমাদের জাতীয় জীবনে সুমহান মুক্তিযুদ্ধে ধর্মান্ধ একটি গোষ্ঠীর দেশ ও মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতে বাঙালির মহোত্তম নেতা বঙ্গবন্ধুকে পরিবার-পরিজনসহ নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এবং তার পরবর্তীতে সামরিক শাসন কবলিত বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের রূপ এবং একুশের গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে আজকের প্রধানমন্ত্রীসহ উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে উড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা, দগদগে ক্ষত সৃষ্টি করে রেখেছে। এখান থেকে সেই ক্ষত শুকিয়ে অনাগত প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ আবাসভূমি হিসেবে অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আগামী দিনের রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার রূপরেখা তৈরি করার এখনই সময়। একটি অস্থির অশান্ত দমবন্ধ সময় কখনোই কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।
আমরা বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমেই একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারি। সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক চেতনা ও মূল্যবোধের দুয়ার খুলে দিতে পারি। আমাদের বর্তমান রাজনীতির নেতৃত্বে এখনো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মুখ দেখা যায়। এখনো গণতন্ত্রের সংগ্রামের নেতানেত্রীদের প্রতি গণমানুষের আস্থা রয়েছে। যে বর্ণবাদীদের হাতে অবর্ণনীয় নির্যাতন ভোগ করে নেলসন ম্যান্ডেলা তাদের বুকে টেনে নিয়েছিলেন, ক্ষমতার অংশীদারিত্ব দিয়েছিলেন, যে পশ্চিমারা তাকে সন্ত্রাসী বলে তাচ্ছিল্য করেছিল, তাদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন সেই ম্যান্ডেলাকে আমাদের নেতারা নিশ্চয়ই গভীরভাবে পাঠ করেছেন। মহাত্দা গান্ধীই নন, বিপ্লবী নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুই নন, উপমহাদেশের উদার গণতান্ত্রিক নেতা পণ্ডিত জওহর লাল নেহরুকেও পাঠ করেছেন। তাই আলোর পথে দেশকে নিয়ে হাঁটতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের ফর্মুলা বের করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়। মানুষ সেই পথটিই দেখতে চায়। হিংসা-বিদ্বেষ, সংঘাতের বিপরীতে শান্তি, সমঝোতা ও সৌহার্দ্যের রাজনীতির দুয়ার খোলা যেতে পারে। সমঝোতার দুয়ার না খুললে সামনে অন্ধকার। সেই অন্ধকারে আমাদের সবার হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি
No comments:
Post a Comment