জীবন প্রায়ই ছোট ছোট সারপ্রাইজ দিয়ে আমাদেরকে মুগ্ধ করার চেষ্টা চালায়।
আমরা সবসময় সেগুলো ধরতে পারি না। বিশেষত অনভ্যাসের কারণে বেশিরভাগ
ক্ষেত্রেই ছোট বিষয়কে ছোট হিসেবে অগ্রাহ্য করে নিজেদেরকে বঞ্চিত করি। যদিও
কাজটা আসলে ঠিক না।
ব্লগ আর ফেসবুকের মাধ্যমে চেনাজানা হয়েছিল এক বড়ভাইয়ের সাথে। তিনি সবসময় কি যেন একটা কষ্টের মধ্যে থাকতেন। তাকে যদি বলি ভাই দুশ্চিন্তা পাশে সরিয়ে রেখে কিছুক্ষণের জন্য একটু হাসেন তো। উনি গোমড়া মুখে উত্তর দিতেন, আমার সাথে ভাল কিছু কখনও ঘটে না। উনার সিরিয়াসনেস দেখে আমারই মাঝে মাঝে হাসি পেয়ে যেতো।
স্টিভ জবস্ একবার বলেছিলেন, অতীতের দিকে তাকিয়ে আমাদের জীবনের বিন্দুগুলোকে জোড়া দিতে হয়। আজ যখন আমি অতীতের দিকে তাকাই, তখন দেখতে পাই, অনেক এমন ঘটনা আছে আপাত দৃষ্টিতে যেগুলোকে আমি ভাল কিছু বলে ভেবেছিলাম সেগুলো শেষ পর্যন্ত অনাবিল আক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই আনে নি জীবনে। আবার অনেক এমন ঘটনা আছে, যেগুলো ঘটার সময় কষ্ট পেয়েছি, মনের ভেতর রক্তক্ষরণ হয়েছে কিন্তু পরে প্রমাণ হয়েছে ঘটনাটা আমার সাথে ঘটা জরুরি ছিল। নাহলে পরে এসে পস্তাতে হতো। তাই যখন আমাকে কেউ বলে তার খারাপ সময় যাচ্ছে কিংবা বহুদিন ভাল কোনো কিছু তার সাথে ঘটে নি কিংবা উল্লিখিত গোমড়াথেরিয়াম বড় ভাইয়ের মতো করে জীবন সম্পর্কে অভিযোগ করে, তখন আমি তাদেরকে তীর-ধনুকের উদাহরণটা দিই। একটা তীর নিক্ষেপের আগে কিন্তু সেটাকে পেছন দিকে টানতে হয়। যতো পেছনে টানা যায়, ততো তীরটা সামনে গিয়ে পড়ে। জীবনও যখন আমাদেরকে দুঃখ আর কষ্টের বেড়াজালে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে পেছন দিকে টানে, তখন আমাদের উচিত জাস্ট ধৈর্য্য ধরা এবং অভীষ্ট লক্ষ্যের প্রতি ফোকাসড্ থাকা। তারপর ধনুক থেকে যখন তীর ছুটবে, তখন সাঁই করে জায়গামতো ঢুকে যাবে।
আবার সেই ভাইয়ের কথা মনে পড়ছে। তীর-ধনুকের কথা শুনে উনি বলেছিলেন, জীবনের টানা খেয়ে নাকি উনার ধনুকের ছিলা ছিঁড়ে গেছে। শুনে খারাপ লাগলো। আমাদের চারপাশের সুন্দর পৃথিবীটায় মাঝে মাঝে মানুষকে অনেক কষ্ট পেতে হয়। এত কষ্ট যা চামড়ার চোখে সহ্য হয় না। শহীদবাগে থাকার সময় এক রিকশাওয়ালার সাথে পরিচয় হয়েছিল। তার বাড়ি আমাদের গ্রামের কাছাকাছি। উনি প্রতিদিন সকালে দি বারাকাহ জেনারেল হাসপাতালের সামনে আমার জন্য অপেক্ষা করতেন। রিকশা ছিল শান্তিবাগের একটা গ্যারেজের। সকালে রিকশা বের করে একটু আয়েশী ভাবেই তিনি দিনটা শুরু করতেন। সেই অায়েশের ভাগ থেকে আমার জন্য অপেক্ষার সময়টুকু বরাদ্দ দিতেন। বহুদিন উনার রিকশায় চড়েছি। ভদ্রলোকের সবচেয়ে ভাল গুণ হচ্ছে অন্যের ব্যাপারে নাক না গলানোর স্বভাব। রিকশা ভ্রমণের সময় উনার সঙ্গে প্রচুর গল্প হতো। সেসব গল্প পরে আমাকে অনেক ভাবিয়েছে। জীবনের শেষ বয়সে গিয়ে যাকে রিকশা চালাতে হয়, তার দুঃখের কাছে পৃথিবীর অনেক দুঃখই ম্লান হয়ে যাওয়ার কথা। আমি উনার দুঃখের কথা শুনতে শুনতে একথার সত্যতা ভালভাবেই টের পেতাম।
তিন ছেলের বউদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ঘর ছাড়তে হয়েছিল উনাকে। সরকারী চাকুরীজীবী ছিলেন। রিটায়ারমেন্টের পর পাওয়া পেনশনের টাকায় মাটির ঘর পাকা করেছিলেন। ছনের চালা পাল্টে টিনশেড বানিয়েছিলেন। একান্নবর্তী পরিবার ছিল আজীবন। ছাপোষা চাকুরীলব্ধ অর্থ ব্যয় করে তিন ছেলেকেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পার করিয়েছিলেন। তারা এখনও একান্নবর্তীই আছে। অথচ যিনি তাদের স্বপ্নের কারিগর ছিলেন, তিনি আর সেখানে ঠাঁই পান না। রিকশার গ্যারেজের ভেতর, রিকশাগুলোর ওপর বাঁশের ভাড়া বানিয়ে দিয়েছেন গ্যারেজ মালিক। রাতপ্রতি সেখানে থাকতে ৫০ টাকা গুণতে হয়। বৃদ্ধ অবশ্য কোনকিছুতে আক্ষেপ করেন না। তার নিজের ভাষায়- "কাকা এখনও শরীরে যে জোর আছে, তাই দিয়ে ধরেন কমের পক্ষে ৭-৮ ঘন্টা রিকশা চালাতে পারি। ফেলে-থুয়ে ধরেন ইনকাম হয় পাশশো। মালিককে দেই দেড়শো। থাকা খরচ যায় পঞ্চাশ আর খাওয়া খরচ যেদিন যেমন ইচ্ছা। আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি। রোগ-বালাই কিছু নাই। খালি মাঝে মাঝে পোলাগুলার জইন্যে খারাপ লাগে। ছেলেবেলায় ওদের মা মারা গেছিল। সৎ মা আবার কেমন হয়, চিন্তা করে আর বিয়া করি নাই। কোলে-পিঠে তিন ভাইরে মানুষ করছিলাম। ছোটজনরে তো ১৩ বছর বয়স পর্যন্তও কোলে নিয়া ঘুম পাড়ায় দেয়া লাগতো। না জানি আমার বুকের মানিকেরা এখন একলা কেমনে সবকিছু ম্যানেজ করতেছে। আল্লার কাছে দোয়া করি ওরা যেন সারাজীবন সুখে-শান্তিতে থাকে।"
উনার মুখে ম্যানেজ শব্দটা শুনে আনন্দ হয়, আবার তার করুণ জীবনের সুর শুনে হতাশ হই। সেই হতাশা ব্যালেন্স হয়ে যায় যখন আমি গোমড়াথেরিয়ামদের 'গার্লফ্রেন্ড কথা শোনে না' টাইপের বিরাট কারণে ঝড়োকাকের মতো বিপর্যস্ত হয়ে থাকতে দেখি, দিনের পর দিন। তাদের মুখে 'কোনো কিছু ভালো লাগছে না' শুনলে আমি বুঝতে পারি, দুঃখ যত ছোটই হোক, মুখোমুখি হবার সাহস না থাকলে সেটা আপনাকে কাবু করবেই। আর মুখোমুখি হবার সাহস থাকলে পৃথিবীর কোন দুঃখই আপনাকে ভেঙ্গে রেখে যেতে পারবে না।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মানুষের জীবনটা একটা সুবিশাল ও সুকঠিন ধাঁধাঁ। আপনি আজ যে সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছেন, কষ্টেসৃষ্টে কাল সেটা পাড়ি দিয়ে দেখুন, সেখানে আরও বড় একটা সমস্যা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। যতক্ষণ আপনি সমস্যার মধ্যে আছেন, ততক্ষণ আপনি বেঁচে আছেন। ততক্ষণ আপনার জীবনের মূল্য আছে, কারণ আপনি কিছু একটা করছেন। যাদের জীবনে সমস্যা নেই তারা আসলে মূল্যহীন।
একটু আগে বলছিলাম, জীবন ছোট ছোট সুখকর বিষয় সারপ্রাইজ হিসেবে আমাদের সামনে হাজির করে। বেশিরভাগ সময় আমরা বুঝতে পারি না। ছোট ছোট সুখগুলো বুঝে নিতে জানলে জীবনের চেয়ে সুন্দর আর কোনকিছু আমাদের আশপাশে খুঁজে পাওয়া সম্ভব না। যাদের বাবা-মা এখনও বেঁচে আছেন, তারা জাস্ট একটু ভেবে দেখুন, আপনি চাইলেই তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। যখন খুশি তখন। যাদের বাবা-মা নেই, তারা পৃথিবীর বুকে জীবনের বাকি দিনগুলো মাথা কুটে গেলেও কি আর সে সুযোগ পাবে? একবারের জন্য?
ছোট ছোট বিষয়গুলোকে অগ্রাহ্য না করতে জানা একটা বিশাল গুণ। এটা কষ্ট করে শিখতে হয়। রাতে বাসায় ফেরার পথে কোনো বন্ধু যদি কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে, 'চল কালকের রান্না করা মাছের বাকিটুকু আজ দু'ভাই মিলে শেষ করে দিই', তাহলে ঠান্ডা আবহাওয়া কিংবা বন্ধুর বাসার দুরত্বের কথা আগে না ভেবে, দয়া করে ভাবুন, তার কি আপনার সঙ্গ দরকার কিনা। এমন হতে পারে তার হয়তো কোনো কারণে সে সময় একা একা বাসায় ফিরতে ইচ্ছা করছে না।
মনে রাখবেন,আজ আপনি যার প্রতি একটু সদয় হচ্ছেন, কাল সে আপনার জীবনটাকে এমন ভাবে ভরিয়ে দিতে পারে যে, আনন্দ অশ্রু লুকানোর কথাটা পর্যন্ত আপনার মনে থাকবে না। আর যদি তা নাও হয়, অন্তত নিজের মনের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে আশপাশের সবার প্রতি সদয় হোন। আমি লিখে দিতে পারি, আপনি ঠকবেন না।
ব্লগ আর ফেসবুকের মাধ্যমে চেনাজানা হয়েছিল এক বড়ভাইয়ের সাথে। তিনি সবসময় কি যেন একটা কষ্টের মধ্যে থাকতেন। তাকে যদি বলি ভাই দুশ্চিন্তা পাশে সরিয়ে রেখে কিছুক্ষণের জন্য একটু হাসেন তো। উনি গোমড়া মুখে উত্তর দিতেন, আমার সাথে ভাল কিছু কখনও ঘটে না। উনার সিরিয়াসনেস দেখে আমারই মাঝে মাঝে হাসি পেয়ে যেতো।
স্টিভ জবস্ একবার বলেছিলেন, অতীতের দিকে তাকিয়ে আমাদের জীবনের বিন্দুগুলোকে জোড়া দিতে হয়। আজ যখন আমি অতীতের দিকে তাকাই, তখন দেখতে পাই, অনেক এমন ঘটনা আছে আপাত দৃষ্টিতে যেগুলোকে আমি ভাল কিছু বলে ভেবেছিলাম সেগুলো শেষ পর্যন্ত অনাবিল আক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই আনে নি জীবনে। আবার অনেক এমন ঘটনা আছে, যেগুলো ঘটার সময় কষ্ট পেয়েছি, মনের ভেতর রক্তক্ষরণ হয়েছে কিন্তু পরে প্রমাণ হয়েছে ঘটনাটা আমার সাথে ঘটা জরুরি ছিল। নাহলে পরে এসে পস্তাতে হতো। তাই যখন আমাকে কেউ বলে তার খারাপ সময় যাচ্ছে কিংবা বহুদিন ভাল কোনো কিছু তার সাথে ঘটে নি কিংবা উল্লিখিত গোমড়াথেরিয়াম বড় ভাইয়ের মতো করে জীবন সম্পর্কে অভিযোগ করে, তখন আমি তাদেরকে তীর-ধনুকের উদাহরণটা দিই। একটা তীর নিক্ষেপের আগে কিন্তু সেটাকে পেছন দিকে টানতে হয়। যতো পেছনে টানা যায়, ততো তীরটা সামনে গিয়ে পড়ে। জীবনও যখন আমাদেরকে দুঃখ আর কষ্টের বেড়াজালে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে পেছন দিকে টানে, তখন আমাদের উচিত জাস্ট ধৈর্য্য ধরা এবং অভীষ্ট লক্ষ্যের প্রতি ফোকাসড্ থাকা। তারপর ধনুক থেকে যখন তীর ছুটবে, তখন সাঁই করে জায়গামতো ঢুকে যাবে।
আবার সেই ভাইয়ের কথা মনে পড়ছে। তীর-ধনুকের কথা শুনে উনি বলেছিলেন, জীবনের টানা খেয়ে নাকি উনার ধনুকের ছিলা ছিঁড়ে গেছে। শুনে খারাপ লাগলো। আমাদের চারপাশের সুন্দর পৃথিবীটায় মাঝে মাঝে মানুষকে অনেক কষ্ট পেতে হয়। এত কষ্ট যা চামড়ার চোখে সহ্য হয় না। শহীদবাগে থাকার সময় এক রিকশাওয়ালার সাথে পরিচয় হয়েছিল। তার বাড়ি আমাদের গ্রামের কাছাকাছি। উনি প্রতিদিন সকালে দি বারাকাহ জেনারেল হাসপাতালের সামনে আমার জন্য অপেক্ষা করতেন। রিকশা ছিল শান্তিবাগের একটা গ্যারেজের। সকালে রিকশা বের করে একটু আয়েশী ভাবেই তিনি দিনটা শুরু করতেন। সেই অায়েশের ভাগ থেকে আমার জন্য অপেক্ষার সময়টুকু বরাদ্দ দিতেন। বহুদিন উনার রিকশায় চড়েছি। ভদ্রলোকের সবচেয়ে ভাল গুণ হচ্ছে অন্যের ব্যাপারে নাক না গলানোর স্বভাব। রিকশা ভ্রমণের সময় উনার সঙ্গে প্রচুর গল্প হতো। সেসব গল্প পরে আমাকে অনেক ভাবিয়েছে। জীবনের শেষ বয়সে গিয়ে যাকে রিকশা চালাতে হয়, তার দুঃখের কাছে পৃথিবীর অনেক দুঃখই ম্লান হয়ে যাওয়ার কথা। আমি উনার দুঃখের কথা শুনতে শুনতে একথার সত্যতা ভালভাবেই টের পেতাম।
তিন ছেলের বউদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ঘর ছাড়তে হয়েছিল উনাকে। সরকারী চাকুরীজীবী ছিলেন। রিটায়ারমেন্টের পর পাওয়া পেনশনের টাকায় মাটির ঘর পাকা করেছিলেন। ছনের চালা পাল্টে টিনশেড বানিয়েছিলেন। একান্নবর্তী পরিবার ছিল আজীবন। ছাপোষা চাকুরীলব্ধ অর্থ ব্যয় করে তিন ছেলেকেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পার করিয়েছিলেন। তারা এখনও একান্নবর্তীই আছে। অথচ যিনি তাদের স্বপ্নের কারিগর ছিলেন, তিনি আর সেখানে ঠাঁই পান না। রিকশার গ্যারেজের ভেতর, রিকশাগুলোর ওপর বাঁশের ভাড়া বানিয়ে দিয়েছেন গ্যারেজ মালিক। রাতপ্রতি সেখানে থাকতে ৫০ টাকা গুণতে হয়। বৃদ্ধ অবশ্য কোনকিছুতে আক্ষেপ করেন না। তার নিজের ভাষায়- "কাকা এখনও শরীরে যে জোর আছে, তাই দিয়ে ধরেন কমের পক্ষে ৭-৮ ঘন্টা রিকশা চালাতে পারি। ফেলে-থুয়ে ধরেন ইনকাম হয় পাশশো। মালিককে দেই দেড়শো। থাকা খরচ যায় পঞ্চাশ আর খাওয়া খরচ যেদিন যেমন ইচ্ছা। আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি। রোগ-বালাই কিছু নাই। খালি মাঝে মাঝে পোলাগুলার জইন্যে খারাপ লাগে। ছেলেবেলায় ওদের মা মারা গেছিল। সৎ মা আবার কেমন হয়, চিন্তা করে আর বিয়া করি নাই। কোলে-পিঠে তিন ভাইরে মানুষ করছিলাম। ছোটজনরে তো ১৩ বছর বয়স পর্যন্তও কোলে নিয়া ঘুম পাড়ায় দেয়া লাগতো। না জানি আমার বুকের মানিকেরা এখন একলা কেমনে সবকিছু ম্যানেজ করতেছে। আল্লার কাছে দোয়া করি ওরা যেন সারাজীবন সুখে-শান্তিতে থাকে।"
উনার মুখে ম্যানেজ শব্দটা শুনে আনন্দ হয়, আবার তার করুণ জীবনের সুর শুনে হতাশ হই। সেই হতাশা ব্যালেন্স হয়ে যায় যখন আমি গোমড়াথেরিয়ামদের 'গার্লফ্রেন্ড কথা শোনে না' টাইপের বিরাট কারণে ঝড়োকাকের মতো বিপর্যস্ত হয়ে থাকতে দেখি, দিনের পর দিন। তাদের মুখে 'কোনো কিছু ভালো লাগছে না' শুনলে আমি বুঝতে পারি, দুঃখ যত ছোটই হোক, মুখোমুখি হবার সাহস না থাকলে সেটা আপনাকে কাবু করবেই। আর মুখোমুখি হবার সাহস থাকলে পৃথিবীর কোন দুঃখই আপনাকে ভেঙ্গে রেখে যেতে পারবে না।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মানুষের জীবনটা একটা সুবিশাল ও সুকঠিন ধাঁধাঁ। আপনি আজ যে সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছেন, কষ্টেসৃষ্টে কাল সেটা পাড়ি দিয়ে দেখুন, সেখানে আরও বড় একটা সমস্যা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। যতক্ষণ আপনি সমস্যার মধ্যে আছেন, ততক্ষণ আপনি বেঁচে আছেন। ততক্ষণ আপনার জীবনের মূল্য আছে, কারণ আপনি কিছু একটা করছেন। যাদের জীবনে সমস্যা নেই তারা আসলে মূল্যহীন।
একটু আগে বলছিলাম, জীবন ছোট ছোট সুখকর বিষয় সারপ্রাইজ হিসেবে আমাদের সামনে হাজির করে। বেশিরভাগ সময় আমরা বুঝতে পারি না। ছোট ছোট সুখগুলো বুঝে নিতে জানলে জীবনের চেয়ে সুন্দর আর কোনকিছু আমাদের আশপাশে খুঁজে পাওয়া সম্ভব না। যাদের বাবা-মা এখনও বেঁচে আছেন, তারা জাস্ট একটু ভেবে দেখুন, আপনি চাইলেই তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। যখন খুশি তখন। যাদের বাবা-মা নেই, তারা পৃথিবীর বুকে জীবনের বাকি দিনগুলো মাথা কুটে গেলেও কি আর সে সুযোগ পাবে? একবারের জন্য?
ছোট ছোট বিষয়গুলোকে অগ্রাহ্য না করতে জানা একটা বিশাল গুণ। এটা কষ্ট করে শিখতে হয়। রাতে বাসায় ফেরার পথে কোনো বন্ধু যদি কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে, 'চল কালকের রান্না করা মাছের বাকিটুকু আজ দু'ভাই মিলে শেষ করে দিই', তাহলে ঠান্ডা আবহাওয়া কিংবা বন্ধুর বাসার দুরত্বের কথা আগে না ভেবে, দয়া করে ভাবুন, তার কি আপনার সঙ্গ দরকার কিনা। এমন হতে পারে তার হয়তো কোনো কারণে সে সময় একা একা বাসায় ফিরতে ইচ্ছা করছে না।
মনে রাখবেন,আজ আপনি যার প্রতি একটু সদয় হচ্ছেন, কাল সে আপনার জীবনটাকে এমন ভাবে ভরিয়ে দিতে পারে যে, আনন্দ অশ্রু লুকানোর কথাটা পর্যন্ত আপনার মনে থাকবে না। আর যদি তা নাও হয়, অন্তত নিজের মনের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে আশপাশের সবার প্রতি সদয় হোন। আমি লিখে দিতে পারি, আপনি ঠকবেন না।
No comments:
Post a Comment