১.
আমার এখানে যখন সকাল হয়, তখন দেশে হয়ে যায় দুপুর। দুপুর হতে হতে দেশের সূর্য পশ্চিমের পথে পাড়ি দেয় বিকেলের পথ। সময়ের হিসেব রাখাটা সবসময় সহজ হয় না তাই। মাঝে মাঝে গভীর রাতে দেশের কোনো বন্ধুকে হুটহাট টেক্সট পাঠিয়ে বিব্রত হয়ে বসে থাকি। হয়তো বেচারী গভীর ঘুমে। আমি তো টেক্সট পাঠিয়েছি আমার সময় বুঝে।
সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করতে পারার মতো বড় গুণ আর নেই। দুভার্গ্যবশত পৃথিবীতে আসার সময় ওস্তাদ গুণের ভাগ কমই বরাদ্দ করেছিলেন কপালে। বিশেষ করে বড় গুণগুলোর প্রায় কোনটিই আমাকে দেয়ার কথা মনে ছিল না তার। আমি যেমন বন্ধু-বান্ধবকে ভুল সময়ে টেক্সট পাঠাই, তেমনি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সঠিক কাজগুলো করার সিদ্ধান্তও নিই ভুল সময়ে। ক্যাসপারের অসুস্থতার কথা এবং ওর মায়াকাড়া ছবিগুলো নিউজফিডে ঘুরছিল দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে। অথচ আমি ক্যাসপারের জন্য কিছু একটা করবোই, এ সিদ্ধান্তটা নিতে আমাকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
২.
গতকাল গিয়েছিলাম মিজু ভাইয়ের বাসায়। উনি দুপুরে ঢেঁড়স ভাজি খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছিলেন। মিজু ভাই হচ্ছেন ইলমিনাউয়ের বাঙালি কমিউনিটির বটবৃক্ষ। আমার প্রথম ক্যাম্পাসটাতেও বেশ কিছু ছায়াশীতল বটবৃক্ষ ছিলেন। যাদের কাজের মধ্যে অন্যতম ছিল লাইব্রেরীর সামনে বা মধুর কেন্টিনে বসে বছরের পর বছর পার করা এবং আমার মতো বাউন্ডুলে, যাদের চাল-চুলোতে টানাটানি নিত্যদিনের ঘটনা, তাদের স্থাবর-অস্থাবর সব চাহিদার দিকে খেয়াল রাখা। মানিক ভাই আমার মুখ দেখে বলে দিতে পারতেন, ঠিক কি পরিমাণ টাকা হলে আমার সেদিনের দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মুখে হাসি ফুটে উঠতে পারে। উনার কাছ থেকে কোনোদিন চাইতে হয় নি। বুঝতে পারলেই হয়েছে, নিজ দায়িত্বে বুকপকেটে টাকা ঢুকিয়ে দিয়ে গেছেন। তবে শুধু টাকাই না, মাঝে মাঝে মানসিক সাপোর্টটাও বড় ভাইদের কাছ থেকে যেমন পেয়েছি, তেমন আর কোথাও পাই নি। এরকম অসংখ্য কারণে ক্যাম্পাসের বটবৃক্ষেরা স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছেন। চিরকাল থাকবেন।
ইলমিনাউয়ের মিজু ভাইও প্রায় একই রকম। সেদিন সন্ধ্যায় শান্তনুদা'র বাসায় আমাদের দাওয়াত ছিল। শান্তনুদা' আর উনার স্ত্রী, জনগণের ভাবি, আমার অবশ্য বন্ধু কারণ শান্তনু'দার আগে আমার উনার সাথে পরিচয় হয়েছিল ভাষা শিক্ষার ক্লাসে; হচ্ছেন আমাদের লোকাল গার্ডিয়ান। উনাদের গল্প বলবো অন্য কোনো সময়। তো, সেদিন ছিল শান্তনুদা'র স্ত্রী'র জন্মদিন। সে উপলক্ষে আমরা বিশেষভাবে ভেড়ার মাংসযোগে বানানো বাসমতি চালের বিরিয়ানি দিয়ে উদরপূর্তির উদ্দেশ্যে দলে দলে বার্থ ডে পার্টিতে যোগ দিয়েছিলাম। পার্টি শেষে বাড়ি ফেরার পথে চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক যখন মিজু ভাইয়ের নেতৃত্বে ভাল্লুক পানের ইচ্ছা প্রকাশ করলো, তখন রাত প্রায় দেড়টা বাজে। খুঁজে পেতে বিআই ক্লাবের দারস্থ হওয়া গেল। ঠিক হলো আমি ভেতরে গিয়ে বিয়ার কিনে আনবো, তারপর সবাই খোলা কোনো জায়গায় বসে মিষ্টি চাঁদের আলো মিশিয়ে সেগুলো গলধঃকরণ করবো। সেদিন দেখেছিলাম, মিজু ভাইয়ের সবদিকে সজাগ নজর। যার যার পকেটে বারগেল্ডের কমতি ছিল, সবারটা উনি দিয়ে দিলেন। জার্মানীতে পকেটে টাকা নিয়ে কমই ঘোরা হয়, কার্ডে কার্ডে কাজ চলে যায়; বারগেল্ড মানে টাকা। আমি টাকা তোলার দায়িত্বটা নিবিষ্টমনে পালন করলাম। আমি সম্ভবত মানুষটা একটু কাঠখোট্টা, স্বভাবের দিক দিয়ে একটু বেশিই 'হিজ হিজ হুজ হুজ' টাইপের। মানুষের কাছ থেকে যার যার বিয়ারের টাকা তুলতে আমার সংকোচ লাগলো না মোটেও। সবার টাকা তুলে বিয়ার আনতে যাবার সময় শুনি পেছন থেকে মিজু ভাই ডাকছে, নিশ্চিত হতে চায়- আমার কাছে টাকা আছে তো, না থাকলে উনার কাছ থেকে নিতে পারি। আমার কাছে টাকা ছিল তারপরও, মিজু ভাইকে জিজ্ঞেস করতে শুনে কতোটা যে ভাল লাগলো, লিখে বোঝানো সম্ভব না। এই কেয়ারিংটুকু আজকাল কয়জন করে বলেন? আমার পোড়ার দেশে তো চোখের সামনে পিটিয়ে মানুষ মেরে ফেললেও কেউ রা কাড়ে না।
যাহোক ঢেঁড়স ভাজির দাওয়াত খেতে যাওয়ার পথে দেখে গিয়েছিলাম দুইটা পিচ্চিকে তাদের বাবা রাবারের বেদিং বেডে গোসল করাচ্ছে। গরমের দিনে এই দৃশ্য সচরাচরই চোখে পড়ে। বাচ্চা দু'টোকে দেখে অনেক কিউট লেগেছিল। তারপর মিজু ভাইয়ের বাসা থেকে ফেরার পথে ওই বাসাটার সামনে দিয়ে হেঁটে আসার সময় পিচ্চি দু'টো 'হালো' বলতে বলতে আমাদের দিকে কেন যে দৌঁড়ে এসেছিল, আমি জানি না। মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল, স্বর্গ থেকে দু'টি ছোট্ট পরী নেমে এসেছে শুধু আমাদের দিনটাকে আলো ঝলমলে করে দেবে বলেই।
৩.
আর তখনই মনে মনে আমি ঠিক করে ফেলেছিলাম, ক্যাসপারের জন্য কিছু একটা করতে হবে। ভেবেছিলাম প্রথমে আমাদের ক্যাম্পাসে এবং পরে পুরো জার্মানীর বাঙালি কমিউনিটিতেই অ্যাপ্রোচ করে, অল্প-বিস্তর যা পারি জোগাড় করে পাঠিয়ে দেবো, ক্যাসপারের বাবার কাছে। কিভাবে কি করা যায়, ভাবতে গিয়ে পার হলো আরও ২৪টা ঘন্টা। আজ দুপুরে লাঞ্চ সেরে বাসায় ফিরে প্রস্তাবটা অফিসিয়ালি যখন সবাইকে দেবো ভাবছি, তখন হঠাৎই জানতে পারলাম, ক্যাসপার আমাদেরকে ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছে।
মজিদ মাজিদির 'দি কালার অফ প্যারাডাইস' দেখে চোখের পানি আটকে রাখতে একবার অমানুষিক কষ্ট করতে হয়েছিল, তবে শেষতক সফল হয়েছিলাম কারণ জানতাম সিনেমা আসলে সিনেমাই। আজ তার চেয়ে বেশি চেষ্টা করেও পারি নি কারণ ক্যাসপার আমাদের ছেড়ে বাস্তবিকই চলে গেছে। এই পৃথিবীতে সে আর কখনো হাসবে না। কথাটা মনে হলেই কিভাবে কিভাবে যেন চোখ থেকে পানি বের হয়ে আসছে। এত পানি অচেনা একটা বাচ্চার জন্য আমার ভেতরে কোথা থেকে যে এলো, বুঝতে পারছি না।
স্যরি ক্যাসপার, তোমার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। ভাল থেকো। আমাদের এই নষ্ট পৃথিবীর চেয়ে অনেক ভাল কোনো একটা জায়গায় আরও একবার জন্ম নিয়ো। এইটুকু শুভকামনা ছাড়া আর কিছুই তোমার জন্য করতে পারলাম না। কি অসহ্য কষ্ট যে হচ্ছে সেজন্য, বলে বোঝাতে পারবো না। তোমার জন্য একটা কবিতা কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত অাগেই লিখে গেছেন, সেই কবিতাটা আজ ঘুরে ফিরেই মনে পড়ছে শুধু, আর কিছু না।
"সবচেয়ে যে ছোট কাপড়গুলি
সেগুলি কেউ দেয় না মেলে ছাদে
যে শয্যাটি সবার চেয়ে ছোট
আজকে সেটি শূন্যে পড়ে কাঁদে
সবচেয়ে যে শেষে এসেছিল
সে গিয়েছে সবার আগে সরে
ছোট্ট যে জন ছিল রে সবচেয়ে
সে দিয়েছে সকল শূন্য করে।"
আমার এখানে যখন সকাল হয়, তখন দেশে হয়ে যায় দুপুর। দুপুর হতে হতে দেশের সূর্য পশ্চিমের পথে পাড়ি দেয় বিকেলের পথ। সময়ের হিসেব রাখাটা সবসময় সহজ হয় না তাই। মাঝে মাঝে গভীর রাতে দেশের কোনো বন্ধুকে হুটহাট টেক্সট পাঠিয়ে বিব্রত হয়ে বসে থাকি। হয়তো বেচারী গভীর ঘুমে। আমি তো টেক্সট পাঠিয়েছি আমার সময় বুঝে।
সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করতে পারার মতো বড় গুণ আর নেই। দুভার্গ্যবশত পৃথিবীতে আসার সময় ওস্তাদ গুণের ভাগ কমই বরাদ্দ করেছিলেন কপালে। বিশেষ করে বড় গুণগুলোর প্রায় কোনটিই আমাকে দেয়ার কথা মনে ছিল না তার। আমি যেমন বন্ধু-বান্ধবকে ভুল সময়ে টেক্সট পাঠাই, তেমনি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সঠিক কাজগুলো করার সিদ্ধান্তও নিই ভুল সময়ে। ক্যাসপারের অসুস্থতার কথা এবং ওর মায়াকাড়া ছবিগুলো নিউজফিডে ঘুরছিল দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে। অথচ আমি ক্যাসপারের জন্য কিছু একটা করবোই, এ সিদ্ধান্তটা নিতে আমাকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
২.
গতকাল গিয়েছিলাম মিজু ভাইয়ের বাসায়। উনি দুপুরে ঢেঁড়স ভাজি খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছিলেন। মিজু ভাই হচ্ছেন ইলমিনাউয়ের বাঙালি কমিউনিটির বটবৃক্ষ। আমার প্রথম ক্যাম্পাসটাতেও বেশ কিছু ছায়াশীতল বটবৃক্ষ ছিলেন। যাদের কাজের মধ্যে অন্যতম ছিল লাইব্রেরীর সামনে বা মধুর কেন্টিনে বসে বছরের পর বছর পার করা এবং আমার মতো বাউন্ডুলে, যাদের চাল-চুলোতে টানাটানি নিত্যদিনের ঘটনা, তাদের স্থাবর-অস্থাবর সব চাহিদার দিকে খেয়াল রাখা। মানিক ভাই আমার মুখ দেখে বলে দিতে পারতেন, ঠিক কি পরিমাণ টাকা হলে আমার সেদিনের দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মুখে হাসি ফুটে উঠতে পারে। উনার কাছ থেকে কোনোদিন চাইতে হয় নি। বুঝতে পারলেই হয়েছে, নিজ দায়িত্বে বুকপকেটে টাকা ঢুকিয়ে দিয়ে গেছেন। তবে শুধু টাকাই না, মাঝে মাঝে মানসিক সাপোর্টটাও বড় ভাইদের কাছ থেকে যেমন পেয়েছি, তেমন আর কোথাও পাই নি। এরকম অসংখ্য কারণে ক্যাম্পাসের বটবৃক্ষেরা স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছেন। চিরকাল থাকবেন।
ইলমিনাউয়ের মিজু ভাইও প্রায় একই রকম। সেদিন সন্ধ্যায় শান্তনুদা'র বাসায় আমাদের দাওয়াত ছিল। শান্তনুদা' আর উনার স্ত্রী, জনগণের ভাবি, আমার অবশ্য বন্ধু কারণ শান্তনু'দার আগে আমার উনার সাথে পরিচয় হয়েছিল ভাষা শিক্ষার ক্লাসে; হচ্ছেন আমাদের লোকাল গার্ডিয়ান। উনাদের গল্প বলবো অন্য কোনো সময়। তো, সেদিন ছিল শান্তনুদা'র স্ত্রী'র জন্মদিন। সে উপলক্ষে আমরা বিশেষভাবে ভেড়ার মাংসযোগে বানানো বাসমতি চালের বিরিয়ানি দিয়ে উদরপূর্তির উদ্দেশ্যে দলে দলে বার্থ ডে পার্টিতে যোগ দিয়েছিলাম। পার্টি শেষে বাড়ি ফেরার পথে চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক যখন মিজু ভাইয়ের নেতৃত্বে ভাল্লুক পানের ইচ্ছা প্রকাশ করলো, তখন রাত প্রায় দেড়টা বাজে। খুঁজে পেতে বিআই ক্লাবের দারস্থ হওয়া গেল। ঠিক হলো আমি ভেতরে গিয়ে বিয়ার কিনে আনবো, তারপর সবাই খোলা কোনো জায়গায় বসে মিষ্টি চাঁদের আলো মিশিয়ে সেগুলো গলধঃকরণ করবো। সেদিন দেখেছিলাম, মিজু ভাইয়ের সবদিকে সজাগ নজর। যার যার পকেটে বারগেল্ডের কমতি ছিল, সবারটা উনি দিয়ে দিলেন। জার্মানীতে পকেটে টাকা নিয়ে কমই ঘোরা হয়, কার্ডে কার্ডে কাজ চলে যায়; বারগেল্ড মানে টাকা। আমি টাকা তোলার দায়িত্বটা নিবিষ্টমনে পালন করলাম। আমি সম্ভবত মানুষটা একটু কাঠখোট্টা, স্বভাবের দিক দিয়ে একটু বেশিই 'হিজ হিজ হুজ হুজ' টাইপের। মানুষের কাছ থেকে যার যার বিয়ারের টাকা তুলতে আমার সংকোচ লাগলো না মোটেও। সবার টাকা তুলে বিয়ার আনতে যাবার সময় শুনি পেছন থেকে মিজু ভাই ডাকছে, নিশ্চিত হতে চায়- আমার কাছে টাকা আছে তো, না থাকলে উনার কাছ থেকে নিতে পারি। আমার কাছে টাকা ছিল তারপরও, মিজু ভাইকে জিজ্ঞেস করতে শুনে কতোটা যে ভাল লাগলো, লিখে বোঝানো সম্ভব না। এই কেয়ারিংটুকু আজকাল কয়জন করে বলেন? আমার পোড়ার দেশে তো চোখের সামনে পিটিয়ে মানুষ মেরে ফেললেও কেউ রা কাড়ে না।
যাহোক ঢেঁড়স ভাজির দাওয়াত খেতে যাওয়ার পথে দেখে গিয়েছিলাম দুইটা পিচ্চিকে তাদের বাবা রাবারের বেদিং বেডে গোসল করাচ্ছে। গরমের দিনে এই দৃশ্য সচরাচরই চোখে পড়ে। বাচ্চা দু'টোকে দেখে অনেক কিউট লেগেছিল। তারপর মিজু ভাইয়ের বাসা থেকে ফেরার পথে ওই বাসাটার সামনে দিয়ে হেঁটে আসার সময় পিচ্চি দু'টো 'হালো' বলতে বলতে আমাদের দিকে কেন যে দৌঁড়ে এসেছিল, আমি জানি না। মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল, স্বর্গ থেকে দু'টি ছোট্ট পরী নেমে এসেছে শুধু আমাদের দিনটাকে আলো ঝলমলে করে দেবে বলেই।
৩.
আর তখনই মনে মনে আমি ঠিক করে ফেলেছিলাম, ক্যাসপারের জন্য কিছু একটা করতে হবে। ভেবেছিলাম প্রথমে আমাদের ক্যাম্পাসে এবং পরে পুরো জার্মানীর বাঙালি কমিউনিটিতেই অ্যাপ্রোচ করে, অল্প-বিস্তর যা পারি জোগাড় করে পাঠিয়ে দেবো, ক্যাসপারের বাবার কাছে। কিভাবে কি করা যায়, ভাবতে গিয়ে পার হলো আরও ২৪টা ঘন্টা। আজ দুপুরে লাঞ্চ সেরে বাসায় ফিরে প্রস্তাবটা অফিসিয়ালি যখন সবাইকে দেবো ভাবছি, তখন হঠাৎই জানতে পারলাম, ক্যাসপার আমাদেরকে ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছে।
মজিদ মাজিদির 'দি কালার অফ প্যারাডাইস' দেখে চোখের পানি আটকে রাখতে একবার অমানুষিক কষ্ট করতে হয়েছিল, তবে শেষতক সফল হয়েছিলাম কারণ জানতাম সিনেমা আসলে সিনেমাই। আজ তার চেয়ে বেশি চেষ্টা করেও পারি নি কারণ ক্যাসপার আমাদের ছেড়ে বাস্তবিকই চলে গেছে। এই পৃথিবীতে সে আর কখনো হাসবে না। কথাটা মনে হলেই কিভাবে কিভাবে যেন চোখ থেকে পানি বের হয়ে আসছে। এত পানি অচেনা একটা বাচ্চার জন্য আমার ভেতরে কোথা থেকে যে এলো, বুঝতে পারছি না।
স্যরি ক্যাসপার, তোমার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। ভাল থেকো। আমাদের এই নষ্ট পৃথিবীর চেয়ে অনেক ভাল কোনো একটা জায়গায় আরও একবার জন্ম নিয়ো। এইটুকু শুভকামনা ছাড়া আর কিছুই তোমার জন্য করতে পারলাম না। কি অসহ্য কষ্ট যে হচ্ছে সেজন্য, বলে বোঝাতে পারবো না। তোমার জন্য একটা কবিতা কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত অাগেই লিখে গেছেন, সেই কবিতাটা আজ ঘুরে ফিরেই মনে পড়ছে শুধু, আর কিছু না।
"সবচেয়ে যে ছোট কাপড়গুলি
সেগুলি কেউ দেয় না মেলে ছাদে
যে শয্যাটি সবার চেয়ে ছোট
আজকে সেটি শূন্যে পড়ে কাঁদে
সবচেয়ে যে শেষে এসেছিল
সে গিয়েছে সবার আগে সরে
ছোট্ট যে জন ছিল রে সবচেয়ে
সে দিয়েছে সকল শূন্য করে।"
No comments:
Post a Comment