Pages

Friday, December 4, 2015

হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিনয়

হযরত উসামা ইবন যায়েদ (রা) হতে বর্ণিত, নবী করীম রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমস্ত পৃথিবী থেকে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও সবার থেকে বেশি বিনয়ী ও বিনীত স্বভাবের ছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত ইবন আমর (রা) হতে বর্ণিত , আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখেছি যে,(হজ্ব সম্পাদনকালে) লাল উটে আরোহিত অবস্থায় ‘জমরা’ তে প্রস্তরসমূহ নিক্ষেপ করেছিলেন। তখন তাঁর নিকটে আসতে কাউকেও বাধা দেওয়া হত না। যেমন অন্যান্য বাদশাহদের জন্য রাস্তা খালি করা হয়।রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এত বিনীত প্রকৃতির ছিলেন যে, স্বীয় গাধার উপর গদির স্থলে চাদর বিছিয়ে আরোহন করতেন পরে কাউকে নিজের সাথে আরোহন করাতেন।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোগীদের রোগ পরিদর্শন করতেন। জানাযার সাথে তাশরীফ নিতেন। ক্রীতদাসের দাওয়াত কবুল করতেন। স্বীয় কাপড় নিজেই পট্টি লাগাতেন এবং ঘরে পারিবারিক কাজে অংশগ্রহণ করতেন।
হযরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু কারো থেকে কাজ নেয়াকে পছন্দ করতেন না তাই সাহাবায়ে কেরাম(রা) তাঁর কাজ করতেন না। (তিরমিযি)
হযরত জাবির (রা) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করতেও তাদেরকে সালাম করতেন। (বুখারি ও মুসলিম)
হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, একজন ব্যক্তিকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দরবারে উপস্থিত করা হল। সে ভয়ে কাঁপতে লাগল, নবীজী (সা) তাকে সান্তনামূলক বাণী শোনালেন, ভীত হইও না। আমি বাদশাহ নই, বরং আমি কোরাইশ বংশের এক মহিলার সন্তান যিনি শুকনা গোশত খেতেন। (আবু দাউদ, নাসাঈ)
হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবায়ে কেরাম(রা) এর সাথে এরুপভাবে মিলে বসতেন যে, কোন অপরিচিত ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসা করা ব্যতীত চিনতে পারত না। তাই সাহাবায়ে কেরামগণ আরজ করলেন যে, আপনি এমন জায়গায় বসুন যাতে অপরিচিত মানুষজন আপনাকে চিনতে পারে। সুতরাং শুধু এ উদ্দেশ্যে সাহাবাগণ হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বসার জন্যে মাটির একটি উঁচু স্থান বানিয়ে দেন। (আবু দাউদ, নাসাঈ)
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) বলেন যে, একবার আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার আত্মা আপনার উপর উৎসর্গ হোক। আপনি বালিশে ঠেস দিয়ে আহার করুন। এতে আপনি আরাম পাবেন। কিন্তু
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহার করার সময় ঠেস দেয়ার স্থলে আরো বেশি ঝুকে আহার করতে লাগলেন, এমনকি তাঁর মাথা মুবারক জমিনে লাগার উপক্রম হয়ে গেছে। অতঃপর হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করলেন, আমি ক্রীতদাসের ন্যায় খাব ও ক্রীতদাসের ন্যায় বসবো। (ইবন জারীর)

হযরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনে কখনো ঐ থালা যাতে উপহারাদি পরিবেশন করা হয় তাতে এবং ট্রে এর মধ্যে আহার করেননি। (বুখারি)
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে যদি কোন সাহাবা (রা) কিংবা কোন অপর ব্যক্তি ডাকতেন, তখন উত্তরে তিনি বলতেন লাব্বাইক, অর্থাৎ আমি উপস্থিত। (আবু নাঈম, শামায়েলে তিরমিযি)
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন লোকদের সাথে অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরামের সাথে মজলিসে বসতেন, তখন তারা যেরূপ কথাবার্তা বলতেন তিনিও তাই বলতেন। যেমন তারা যদি দুনিয়ার কথাবার্তা শুরু করতেন, তখন তিনিও দুনিয়ার কথাবার্তা বলতেন। সারকথা, হুজুর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভদ্রতার কারণে মজলিসেও লোকদের লক্ষ্য রাখতেন।
হযরত জাবের ইবন ওমর (রা) হতে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে সাহাবায়ে কেরাম (রা) কবিতা আবৃত্তি করতেন এবং জাহেলিয়াত বা অজ্ঞতার কালের কথা আলোচনা করে হাসতেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাদের সাথে মুচকি হাসি দিতেন এবং হারাম ব্যতীত অন্য কোন (বৈধ) জিনিসের জন্য তাদেরকে নিষেধ করতেন না। (মুসলিম শরীফ)

No comments:

Post a Comment