Pages

Monday, December 21, 2015

অপেক্ষায়

আচ্ছা, যদি বলি ইদানীং হিন্দি গান শুনছি তাহলে কি কেউ আমাকে মারতে চাইবেন? খুবই কমন গান শুনছি তাও আবার। লাগ যা গালে..., হিনা কি খুশবু.., আর দিলবর জানিয়া। কি যে সমস্যা, বুঝি না। আর অালসেমী রোগটা আবার বাসা খোঁজা শুরু করেছে। যতোই বলি আমার বাড়িতে জায়গা নেই, ততোই আরও জেঁকে ধরতে চায়। কাজও আজকাল এত কম করি আর এত অদরকারী কাজ করি, যে বলার মতো না। তবে একটা জিনিস জানলাম।
জীবনধারণ করার জন্য যতোটুকু দরকার, তা জোগাড় করতে মানুষের কখনোই খুব বেশি কষ্ট হয় না। সমস্যা হয়ে যায়, যখন মানুষ 'আরও চাই' নামের ফাঁদে আটকে যায়। এটা প্রায়ই হয়, নাইন আউট অব টেন টাইমস্ হয়। ফাঁদের সাথে ফ্রি হিসেবে আসে লোভ, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, স্ট্রেস্, আত্মবিশ্বাসের কমতি, উদ্যমের ঘাটতি এবং আরও বেশ কয়েকটা ট্রোজান হর্স। প্রথমে যখন ফাঁদটা ইনস্টল হয়, তখন কিন্তু একেবারেই কিছু বোঝা যায় না। নানারকম ছদ্মবেশে তারা আসে। কখনও জীবনে খাওয়া পোড় হিসেবে, কখনও পরোক্ষ অভিজ্ঞতার ভেক ধরে আবার কখনও বা আসে উচ্চাকাঙ্ক্ষার চেহারা নিয়ে।
একবার যখন কম্পিউটারে ভাইরাস ধরার মতো করে মানুষের ভেতর 'আরও চাই' নামক সমস্যা ঢুকে পড়ে, তখনই সে হয়ে যায় ঝাঁকের কই। কম্পিউটারের ভাইরাসগুলোর সঙ্গে এর পার্থক্য হচ্ছে, ওগুলোকে অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে কিংবা আরও নানা উপায়ে 'ক্লিন' করা যায়। আরও চাই সংকটের আবর্তে একবার ঢুকে পড়লে সাধারণত মুক্তির কোনো উপায় থাকে না। একটা উপায় সবসময়ই থাকে। সেটা হলো, ধূমপান, মদ্যপান কিংবা জুয়ার মতো নেশাগুলো যেভাবে ছেড়ে দিতে হয়, সেভাবে আরও চাই সাইকোলজিটাকেও নিজের ভেতর থেকে ঝেড়ে ফেলা। তবে সে কাজটাও খুব সহজ না। কেননা সেটা করতে গেলেই চিন্তারাজি প্রথমে আপনার সামনে এনে পরিবারের সদস্যদের মুখগুলো হাজির করবে। সেটাকে এড়িয়ে যেতে পারলে, আপনার সামনে হাজির করা হবে, প্রতিদ্বন্দীদের মুখ। সেগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া সহজ না। তবে তাও যদি পারেন, তো আপনাকে মুখোমুখি হতে হবে সমাজ নির্ধারিত মানদন্ডের বাঁধার। এই সবগুলো বাঁধা অতিক্রম করার পর আপনি হয়তো ডিসইনফেক্টেড হবেন। ততোদিনে অনেক সময় পার হয়ে যাবে।
যাহোক ঝাঁকের কই হওয়ার সুবিধাও আছে। জীবনটা অনেক স্মুথ হয়ে যায়। কোনোদিকে কোনো বাঁধা থাকে না। অফিস, বাড়ি, গাড়ি, ফ্যামিলি, ফেইম কোনকিছুতেই খুব একটা অনিশ্চয়তা থাকে না। পরিশ্রম করলে কে না সফল হয়? তবে সমস্যাটা হলো সফলতার মানদণ্ডটা ঠিক করার সময় কিন্তু আপনি কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ পান নি। তারমানে আরেজকনের চোখে যেটা সফল, সেটা হয়ে আপনি নিজেকে খুশি মনে করছেন। আসলেই কি আপনি খুশি হতে পেরেছেন? আই মীন, পৃথিবীতে অবশ্যই কিছু মানুষ আছে যারা ক্যারিয়ারে যতো উন্নতি করে ততো খুশি হয়। সেটার একটা শতকরা হিসাব আছে। সংখ্যায় প্রকাশযোগ্য হিসাব। পাঁচ বা দশ বা বিশ পার্সেন্ট কিংবা তারও বেশি। তারা নিজেদেরকে নিয়ে খুশি হতে পারে। তবে একশ' পার্সেন্টের জীবনের খুশি নিশ্চই ক্যারিয়ারে না। পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ নাকি একে অপরের থেকে আলাদা। সেক্ষেত্রে এই একটা ব্যাপারে এসে সবার মধ্যে মিল থাকার কোনো কারণই ছিল না। অথচ আমি নিজের আশপাশে একটা মানুষও দেখছি না যে, ঝাঁকের কই হয়ে যেতে অর্থাৎ অন্যদের দৃষ্টিতে সফল হওয়ার প্রক্রিয়ায় ঢুকে পড়তে অনিচ্ছুক।
তবে আমি জানি পৃথিবীতে এখনও অনেক মানুষ আছে যারা অন্যভাবে ভাবে। যেকোন সময় কাঁধে বোঁচকা চাপিয়ে নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়তে জানে। নিজেকে একেবারে অকাতরে বিলিয়ে দিতে জানে প্রতিটি প্রয়োজনে। তাদের সাথে দেখা হওয়ার অপেক্ষায় আছি। মহানদী আমাজনের কোনো নাম না জানা খালে, ক্যানুতে বসে ছিপ দিয়ে ধরা মাছ ঝলসিয়ে খেতে খেতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার অপেক্ষায় আছি।

No comments:

Post a Comment