- মৃত্যুর পরবর্তীতে নতুন কোন জীবন আছে কি না — এ বিষয়টি বিজ্ঞানের আওতায় পড়ে না, কেননা বিজ্ঞান ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তথ্য নিয়ে কাজ করে। একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান এবং গবেষণা-এর বর্তমান প্রাতিষ্ঠানিক রূপে চালু হয়েছে মাত্র কয়েক শতাব্দী আগে। কিন্তু মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের ধারণার সাথে মানুষ স্মরণাতীত কাল থেকেই পরিচিত।
পৃথিবীতে নবীগণের আগমনের সময় ও স্থানের মধ্যে বিশাল ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও মৃত্যুর পরবর্তী জীবন সম্পর্কে তাঁদের বক্তব্যের দৃঢ়তা এবং মিল একথাই প্রমাণ করে যে তাঁরা এ সংক্রান্ত জ্ঞানলাভ করেছিলেন একই উৎস থেকে — যা কিনা ওহী।
আমরা আরও জানি যে আল্লাহর নবীগণ আখিরাতের ব্যাপারেই লোকদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশী বাধা ও কষ্টের সম্মুখীন হয়েছিলেন, কেননা এ বিষয়টি তাদের কাছে অসম্ভব ব্যাপার বলে মনে হত। কিন্তু এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও নবীগণকে অনুসরণ করেছেন বহু সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তি।
- (২)এখন প্রশ্ন হচ্ছে : কেন নবীগণের অনুসারীরা তাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত এবং প্রচলিত তাদের পূর্বপুরুষগণের বিশ্বাস ও প্রথার বিরুদ্ধাচরণ করে সমাজ থেকে বিতাড়িত হওয়ার ঝুঁকি পর্যন্ত নিলেন?
প্রকৃতপক্ষে স্রষ্টা মানুষকে ইন্দ্রিয়লব্ধ অনুভূতির পাশাপাশি আরও দান করেছেন যৌক্তিক চিন্তাভাবনার ক্ষমতা, সৌন্দর্যবোধ এবং নৈতিক সচেতনতা। এবং মানুষের এই বোধশক্তিই মানুষকে এমন সব বাস্তবতার প্রতি সচেতন করে তোলে, যার জ্ঞান ইন্দ্রিয়ের দ্বারা লাভ করা যায় না। এজন্য সকল নবীগণ মানুষকে আল্লাহ এবং আখিরাতে বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য আহ্বান জানানোর সময় তাদের যৌক্তিক চিন্তাশক্তি, সৌন্দর্যবোধ এবং নৈতিক সচেতনতাকে নাড়া দিতেন।
উদাহরণস্বরূপ যখন মক্কার মূর্তিপূজারীরা মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের সম্ভাবনাকে অস্বীকার করল, কুরআনে তাদের এই অবস্থানের অসারতাকে তুলে ধরা হল এই যৌক্তিক বক্তব্যের দ্বারা :
“সে আমার সম্পর্কে এক অদ্ভুত কথা বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়। সে বলে, কে জীবিত করবে(৩)কুরআনের অন্যত্র স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে অবিশ্বাসীদের আখিরাতকে অস্বীকার করার পেছনে কোন যৌক্তিক ভিত্তি নেই। তারা শুধুমাত্র অনুমানের ওপর ধারণা করছে :
অস্থিসমূহকে, যখন সেগুলো পচে গলে যাবে? বলুন, যিনি প্রথমবার সেগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই জীবিত করবেন।
তিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত। যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি
করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ, তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ।” (সূরা ইয়াসীন, ৩৬ : ৭৮-৮১)
“তারা বলে, আমাদের পার্থিব জীবনই তো শেষ ; আমরা মরি ও বাঁচি, সময়ই আমাদেরকে ধংস করে। তাদের কাছেএ ব্যাপারে কোন জ্ঞান নেই। তারা কেবল অনুমান করে কথা বলে। তাদের কাছে যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ
করা হয় তখন এ কথা বলা ছাড়া তাদের কোন যুক্তিই থাকে না যে, তোমরা সত্যবাদী হলে আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে নিয়ে এস।” (সূরা জাসিয়া, ৪৫ : ২৪-২৫)
(৪) নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল মৃতকে পুনরুত্থিত করবেন। কিন্তু তাঁর প্রতিটি কাজের নিজস্ব পরিকল্পনা রয়েছে। একটি দিন আসবে যখন সমগ্র মহাবিশ্ব ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে এবং তারপর মৃতদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে তাদের পালনকর্তার সামনে দাঁড়ানোর জন্য। সেদিনটি হবে এমন জীবনের শুরু, যার শেষ নেই এবং সেদিন সকলকে তার কৃত ভাল ও মন্দ কাজ অনুযায়ী প্রতিদান দেয়া হবে।
(৫) কুরআন মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের সেই ব্যাখ্যাই দেয়, যা মানুষের নৈতিক বোধ দাবী করে থাকে।
প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুর পরবর্তীতে কোন জীবন না থাকলে স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসের ব্যাপারটির কোন প্রাসঙ্গিকতা থাকে না, অথবা বলা যায় সে ক্ষেত্রে স্রষ্টা এমন একজন হবেন, যিনি মানুষের ব্যাপারে উদাসীন এবং যিনি সুবিচারক নন, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করে ছেড়ে দিয়েছেন এবং তাঁর সৃষ্টির ব্যাপারে বেখেয়াল। কিন্তু স্রষ্টা এমন সত্তা যিনি ন্যায়বিচারক, তিনি সেসব স্বৈরাচারীদেরকে শাস্তি দেবেন, যারা পাপাচারী, যারা শত শত মানুষকে হত্যা করেছে এবং সমাজে অশান্তির জন্ম দিয়েছে, যারা বহু মানুষকে তার খেয়ালখুশীর অনুসরণে বাধ্য করেছে। কিন্তু পৃথিবীতে মানুষের আয়ুষ্কাল ক্ষণস্থায়ী তাই এখানে তাদের প্রাপ্য পাপকাজের শাস্তি কিংবা পুণ্যের পুরস্কার প্রদান সম্ভব নয়।
কুরআন অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা দিচ্ছে যে বিচার দিবস অবশ্যই আসবে এবং স্রষ্টা প্রতিটি আত্মার গন্তব্য নির্ধারণ করবেন তার কৃত কর্ম অনুযায়ী :
“কাফিররা বলে, আমাদের ওপর কেয়ামত আসবে না। বলুন, কেন আসবে না? আমার পালনকর্তার শপথ — অবশ্যই
আসবে। তিনি অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত। নভোমণ্ডলে এবং ভূমণ্ডলে তাঁর অগোচরে নয় অণু পরিমাণ কিছু। না তদপেক্ষা ক্ষুদ্র এবং না বৃহৎ — সমস্তই লিপিবদ্ধ আছে সুস্পষ্ট কিতাবে। তিনি পরিণামে যারা মুমিন ও সৎকর্মপরায়ণ তাদেরকে প্রতিদান দেবেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযিক। আর যারা আমার আয়াতসমূহকে ব্যর্থ করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা সাবা, ৩৪ : ৩-৫)
(৬) শেষ বিচারের দিন হল সেই দিন
যখন রবের ন্যায়পরায়ণতা ও রহমত পূর্ণধারায় প্রতিভাত হবে। রব তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করবেন যারা ইহলৌকিক জীবনে তাঁর পথে ক্লেশ স্বীকার করেছে শুধু চূড়ান্ত পারলৌকিক সাফল্য লাভের আশায়। কিন্তু যারা তাঁদের রবের নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হয় এবং চূড়ান্ত সফলতাকে অগ্রাহ্য করে, তারা সেদিন চরম অবর্ণনীয় দুর্দশায় নিপতিত হবে। এতদুভয়ের পার্থক্য নির্দেশ পূর্বক কুরআন বলে :
“যাকে আমি উত্তম প্রতিশ্র“তি দিয়েছি, যা সে পাবে, সে কি ঐ ব্যক্তির সমান, যাকে আমি পার্থিব জীবনের ভোগ-সম্ভার(৭) কুরআন আরও তাগাদা দেয় যে, পার্থিব জীবন মূলত মৃত্যুপরবর্তী জীবনেরই শস্যক্ষেত্র মাত্র। তথাপি যারা এই অমোঘ সত্যকে অস্বীকার করে তারা নিজেদের স্বীয় প্রবৃত্তির দাসে পরিণত হয় এবং অহংকারবশত সৎপরায়ণ, খোদাভীরুদের নিয়ে উপহাসে মত্ত হয়। এ ধরনের লোকেরা কেবল মৃত্যুর সম্মুখীন হলেই সম্বিত ফিরে পায়, কিন্তু সে সময় তারা পুনরায় পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের আশা করলেও তাদের আর সুযোগ দেয়া হবে না। মৃত্যুকালীন দুর্দশাময় অবস্থা, বিচার দিবসের বিভীষিকা এবং নিষ্ঠাবান ঈমানদারদের চূড়ান্ত সফলতার নিশ্চয়তা খুব সুন্দরভাবে আলোচ্য আয়াতে ব্যক্ত হয়েছে :
দিয়েছি, অতঃপর তাকে কেয়ামতের দিন অপরাধী রূপে হাজির করা হবে।” (২৮ : ৬১)
“যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলে: ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে) প্রেরণ(৮ )মৃত্যু পরবর্তী জীবনের উপর ইয়াকিন বা দৃঢ় বিশ্বাস
করুন, যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা আমি করিনি।’
কখনই নয়, এ তো তার একটি কথার কথা মাত্র। তাদের সামনে পর্দা আছে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। অতঃপর যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন তাদের পারস্পরিক আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে না। যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম, এবং যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতিসাধন করেছে, তারা দোযখেই চিরকাল বসবাস করবে। আগুন তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা তাতে বীভৎস আকার ধারণ করবে।” (সূরা আল মুমিনুন, ২৩ : ৯৯-১০৪)
শুধু পরকালীন সফলতার নিশ্চয়তা দেয় না উপরন্তু ব্যক্তিকে কর্তব্যপরায়ণ ও দায়িত্ববানরূপে গড়ে তুলে তার পার্থিব জীবনকেও শান্তি ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে সুষমামণ্ডিত করে। ভেবে দেখুন তৎকালীন আরবদের কথা যারা একসময় পরকাল সম্পর্কে গাফেল ছিল। তখন জুয়া, মদ, গোত্র-কোন্দল, রাহাজানি, হত্যাকাণ্ড ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কিন্তু তারা এক রব ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস আনয়ন করা মাত্র পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট সুশৃঙ্খল জাতিতে পরিণত হয়। তারা সকল প্রকার অনাচার ত্যাগ করল, প্রয়োজনে পরস্পরকে সহায়তা করল এবং আভ্যন্তরীণ সকল মতবিরোধ তারা ন্যায়পরায়ণতা ও সমতার সাথে সুরাহা করল।
অন্যথায় মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রতি অবিশ্বাসের পরিণতি শুধু পরকাল নয় ইহলোকেও ভোগ করতে হয়। যখন গোটা জাতি এ ব্যাপারে বিস্মৃত হয় তখন তাবৎ অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, ফ্যাসাদ সমাজদেহকে ব্যাপকভাবে আচান্ত করে এবং পরিশেষে একে ধ্বংস করে। কুরআন বিস্তারিতভাবে আদ, ছামুদ ও ফেরাউন এর ভয়ানক পরিণতির কথা এভাবে তুলে ধরে :
“আদ ও ছামুদ গোত্র মহাপ্রলয়কে মিথ্যা বলেছিল।
অতঃপর ছামুদ গোত্রকে ধবংস করা হয়েছিল এক প্রলয়ংকর বিপর্যয় দ্বারা এবং আদ গোত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচণ্ড ঝঞ্ঝাবায়ু দ্বারা যা তিনি প্রবাহিত করেছিলেন তাদের উপর সাত রাত্রি এবং আট দিবস পর্যন্ত অবিরাম।
আপনি তাদেরকে দেখতেন যে, তারা অসার খেজুর কাণ্ডের ন্যায় ভূপাতিত হয়ে
রয়েছে। আপনি তাদের কোন অস্তিত্ব দেখতে পান কি? ফেরাউন, তার পূর্ববর্তীরা
এবং উল্টে যাওয়া বস্তিবাসীরা গুরুতর পাপ করেছিল। তারা তাদের পালনকর্তার
রাসূলকে অমান্য করেছিল। ফলে তিনি তাদেরকে কঠোর হস্তে পাকড়াও করলেন।অতঃপর ছামুদ গোত্রকে ধবংস করা হয়েছিল এক প্রলয়ংকর বিপর্যয় দ্বারা এবং আদ গোত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচণ্ড ঝঞ্ঝাবায়ু দ্বারা যা তিনি প্রবাহিত করেছিলেন তাদের উপর সাত রাত্রি এবং আট দিবস পর্যন্ত অবিরাম।
যখন জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল, তখন আমি তোমাদেরকে চলন্ত নৌযানে আরোহণ করিয়েছিলাম, যাতে এ ঘটনা তোমাদের জন্য স্মৃতির বিষয় এবং কান এটাকে উপদেশ গ্রহণের উপযোগী রূপে গ্রহণ করে।
যখন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে — একটি মাত্র ফুৎকার এবং পৃথিবী ও পর্বতমালা উত্তোলিত হবে ও চূর্ণ বিচুর্ণ করো দেয়া হবে, সেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে। সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে ও বিক্ষিপ্ত হবে এবং ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে ও আটজন ফেরেশতা আপনার পালনকর্তার আরশকে তাদের উর্ধ্বে বহন করবে।
সেদিন তোমাদের উপস্থিত করা হবে। তোমাদের কোন কিছু গোপন থাকবে না। অতঃপর যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, সে বলবে ; ‘নাও তোমরাও আমলনামা পড়ে দেখ। আমি জানতাম যে, আমাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে।’ অতঃপর সে সুখী জীবন যাপন করবে, সুউচ্চ জান্নাতে। তার ফলসমূহ অবনমিত থাকবে। বিগত দিনে তোমরা যা প্রেরণ করেছিলে, তার প্রতিদানে তোমরা খাও এবং পান কর তৃপ্তি সহকারে।
যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে, সে বলবে : ‘হায় যদি আমার আমলনামা না দেয়া হত!’ আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব! হায়, আমার মৃত্যুই যদি শেষ হত। আমার ধন সম্পদ আমার কোন উপকারে আসল না। আমার ক্ষমতাও বরবাদ হয়ে গেল।
ফেরেশতাদেরকে বলা হবে : ধর একে, গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও, অতঃপর নিক্ষেপ কর জাহান্নামে, অতঃপর তাকে শৃংখলিত কর সত্তর গজ দীর্ঘ এক শিকলে। নিশ্চয়ই সে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না এবং মিসকীনকে আহার্য দিতে উৎসাহিত করত না। অতএব, আজকের দিন এখানে তার কোন সুহৃদ নেই এবং কোন খাদ্যও নেই, ক্ষত-নিঃসৃত পুঁজ ব্যতীত, গোনাহ্গার ব্যতীত এটা কেউ খাবে না।” (৬৯ : ৪-৩৯)
সংক্ষেপে, পরিশেষে আসুন, আমাদের আলোচনাকে সামারাইজ করা যাক।
আমরা বলেছি, পরকাল এমন কোন বিষয় নয়, যা
ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে (যেমন- স্বাদ, গন্ধ, স্পর্শ, দৃষ্টি ইত্যাদি) প্রমাণ
করা যায়, বরং মানুষের যৌক্তিকতাই পরকালের সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
সুতরাং, মৃত্যু পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য বেশ কিছু যুক্তিপূর্ণ কারণ রয়েছে।- প্রথমত, আল্লাহর প্রত্যেক নবীই তাদের কওমকে এ বিশ্বাসের প্রতি আহ্বান করেছিলেন।
- দ্বিতীয়ত, যখনই কোন মানবজাতি এ বিশ্বাসের ভিত্তিমূলে গড়ে উঠেছিল, তারা সবচেয়ে আদর্শবান, শান্তিপূর্ণ জাতি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল এবং সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় হতে মুক্ত-বিশুদ্ধ ছিল। (উদাহরণ=১৪০০ বছর পূর্বে আরবের জাহেল লোকদের জাহেলিয়া থেকে অকল্পনীয় মুক্তিলাভ)
- তৃতীয়ত, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, নবীগণের পৌনঃপুনিক সতর্কতা বাণী সত্ত্বেও যখনই কওমের লোকেরা এ বিশ্বাস অগ্রাহ্য করেছে তারা সকলেই এই পৃথিবীতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হয়েছে। (উদাহরণ-কুর’আন সুস্পষ্টভাবে অতীতের জাতিসমূহ০ আদ, সামুদ, কওমে লুত, ফেরাউন সকলের অবাধ্যতা অবিশ্বাসের ভয়াবহ ফলাফল ঐতিহাসিক প্রামাণ্য দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেছে)
- চতুর্থত, নৈতিকতা, সুন্দর জীবন জিজ্ঞাসা ও যুক্তিবাদিতার ও দাবী এটাই যে, মৃত্যুর পরবর্তী একটি জীবন থাকা বাঞ্ছনীয়।
- পঞ্চমত, যদি মৃত্যু পরবর্তী জীবন নাই থাকত তবে রবের ন্যায়পরায়ণতা ও রহমতের কোন মানে হত না।
No comments:
Post a Comment