Pages

Wednesday, December 30, 2015

ইসলামের যাকাত বিধান – 1,2

প্রসঙ্গ-কথা
মানুষের অর্থনৈতিক জীবনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশেষত গরীব, নিঃস্ব ও অসহায় লোকদের জীবিকার নিশ্চয়তা বিধান নিঃসন্দেহে একটি কঠিন সমস্যা। এই সমস্যাটির সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন অর্থ ব্যবস্থায় কিচু ‘কল্যাণধর্মী’ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু সে সব পদক্ষেপ সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যে কোন নিশ্চয়তা বিধান করতে পারেনি। ফলে কল্যাণধর্মী বলে খ্যাত রাষ্ট্রগুলোতেও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও দারিদ্র্য বিমোচনের কর্মসূচী এখনো নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। দৃশ্যত কিছু কল্যাণধর্মী ব্যবস্থা গ্রহণ সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ অসহায় মানুষ সে সব দেশে চরম দুরাবস্থার মধ্যে বসবাস করছে।
ইসলাম আল্লাহ্র দেয়া এক পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এ জীবন ব্যবস্থায় এক সুষম ও ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতি ছাড়াও সামাজিক ন্যায়বিচারকে নিশ্চিত করার জন্যে যাকাত-এর একটি চ মৎকার কর্মসূচীর বিধান ছাড়াও সামাজিক ন্যায়বিচারকে নিশ্চিত করার জন্যে যাকাত-এর একটি চমৎকার কর্মসূচীর বিধান রাখা হয়েছে। সমাজের বিত্তবান ও সচ্ছল লোকদের বাড়তি সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ নিয়মিত আদায় করে দরিদ্র ও বঞ্চিত লোকদের মধ্যে যথাযথ বন্টন করাই এ কর্মসূচীর প্রধান বৈশিষ্ট্য। বলাবুহল্য, এটি যেমন একটি রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম, তেমনি ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদতও। তাই পবিত্র কুরআনে বহুতর স্থানে নামায প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে যাকাত প্রদানেরও আদেশ করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, যাকাত সম্পর্কে স্পষ্টতর ধারণার অভাবে এই কল্যাণময় ব্যবস্থাটি থেকে আমাদের সমাজ যথোচিতভাবে উপকৃত হতে পারছে না।
আরব জাহানের স্বনামধন্য ইসলামী চিন্তাবিদ ও সপণ্ডিত আল্লাম ইউসুফ আল-কারযাভী প্রণীত ‘ফিক্হুয যাকাত’ নামক বিশাল গ্রন্থটি এদিক থেকে আমাদের জন্যে এক পরম সম্পদ। যাকাত আদায়ের উৎস ও ব্যয়ের খাতগুলো অত্যন্ত পুংখানুপুংখভাবে বিবৃত করা হয়েছে দুই খণ্ডে বিভক্ত এই মূল্যবান গ্রন্থে। এ কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক আল্লামা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ) ‘ইসলামের যাকাত বিধান’ শিরোনামে এই অনন্য গ্রন্থটি বাংলায় অনুবাদ করে সময়ের এক বিরাট দাবি পূরণ করেছেন। কিন্তু গ্রন্থটির প্রকাশনায় ধারাবাহিকতা না থাকায় এর অপরিমেয় কল্যাণ থেকে যথোচিতভাবে উপকৃত হতে পারেননি আমদের বিদগ্ধ পাঠক সমাজ, বরং গত কয়েক বছর ধরে গ্রন্থটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না বলে আগ্রহী পাঠকরা সরাসরি অভিযোগ করেছেন আমাদের কাছে।
এই অবস্থার প্রেক্ষাপটে আল্লামা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ)-এর গ্রন্থাবলী প্রকাশের দায়িত্বে নিয়োজিত ‘খায়রুন প্রকাশনী’ এখন থেকে ‘ইসলামের যাকাত বিধান’ শীর্ষক গ্রন্থটির যথাযথ প্রকাশনার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তদনুসারে বর্তমানে এর প্রথম খণ্ডটি সহৃদয় পাঠকদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। এর দ্বিতীয় খণ্ডটিও যথাসম্ভব শীঘ্র প্রকাশের ব্যবস্থা করা হবে, ইনশাআল্লাহ।
গ্রন্থটির এ সংস্করণে আমরা পূর্বেকার মুদ্রণ-প্রমাদগুলোর সংশোধনের জন্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। এর অঙ্গসজ্জা ও মুদ্রণ পরিপাট্যকেও উন্নত করার ব্যাপারে যত্ন নেয়া হয়েছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, গ্রন্থটির এ সংস্করণ পাঠকদের কাছে পূর্বাপেক্ষা অধিকতর সমাদৃত হবে। মহান আল্লাহ গ্রন্থকার ও অনুবাদককে এই অনন্য খেদমতের উত্তম প্রতিফল দান করুন, এটাই আমাদের সানুনয় প্রার্থনা।
মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান
চেয়ারম্যান, মওলানা আবদুর রহীম ফাউন্ডেশন
ঢাকা: ১৩, এপ্রিল, ১৯৯৭
অনুবাদকের কথা
‘যাকাত’ দ্বীন-ইসলামের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কিন্তু এ বিষয়ে আধুনিক সমাজ ও অর্থনীতির দৃষ্টিতে বিস্তারিত আলোচনা সম্বলিত গ্রন্থ উপমহাদেশের কোন ভাষায় ছিল না। তাই এ বিষয়ে একখানি গ্রন্থ রচনার প্রয়োজনীয়তা আমি অনুভব করেছিলাম বহুদিন থেকে।
তবে এ যুগের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক ও সুপণ্ডিত এবং কাতারের অধিবাসী আল্লামা ইউসুফ আল-কারযাভী লিখিত ‘ফিকহুয্ যাকাত’ (আরবী*****) নামক আরবী গ্রন্থটির নাম শুনে আসছিলাম ১৯৬৯ সন থেকেই। কিন্তু দুই খণ্ডে বিভক্ত এই বিরাট গ্রন্থখানি পড়ার কোন সুযোগ তখন আমি পাই নি।
এর দশ বছর পর ১৯৭৯ সনের রমযান মাসে এই গ্রন্থখানি আমি সর্বপ্রথম দেখতে পাই এবং তখনই আমি এর অনুবাদের দায়িত্ব গ্রহণ করি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আল্লামা ইউসুফ আল-কারযাভীর এ এক অমর ও অতুলনীয় সৃষ্টি। আমার জানামাতে আরবী ভাষাযও এর সমতুল্য আর কোন গ্রন্থ নেই।
বস্তুত ইসলামী জ্ঞান ও আদর্শের ক্ষে্রেত যাকাত যেমন মহান আল্লাহর একটি বিশেষ অবদান, দুনিয়ার বঞ্চিত মানবতার দারিদ্র্য মুক্তির জন্য যাকাতও এক অনন্য ও অনবদ্য ব্যবস্থা। এ বিষয়ে ব্যাপক ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে এই গ্রন্থখানি এক মহামূল্য সম্পদ। এই গ্রন্থখানি রচনা করে আল্লামা কারযাভী দ্বীন-ইসলামের এক অতুলনীয় খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন এবঙ সেই সঙ্গে গোটা মুসলিম জাহানের মহাকল্যাণ সাধন করেছেন।
আমি আশা করি, এই গ্রন্থখানি আদ্যন্ত পাঠ করে পাঠকবৃন্দ যাকাতের গুরুত্ব ও মানবতার কল্যাণে এর বিরাট ভূমিকার কথা সবিস্তারে জানতে পারবেন। এই বিরাট গ্রন্থের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ সম্পূর্ণ করে বাংলা ভাষাভাষী জনগণের সম্মুখে পেশ করতে পারা আমার জন্যে একটি পরম সৌভাগ্যের ব্যাপারে এবং এজন্য আমি মহান আল্লাহর দরবারে নিবেদন করছি অশেষ শুকরিয়া।
(মওলানা) মুহাম্মদ আবদুর রহীম
মুস্তফা মনযিল
২০৮, নাখালপাড়া, ঢাকা
২৮-৮-১৪০২ হিজরী
সূচীপত্র
গ্রন্থকারের কথা
কুরআনের তাফসীর লেখকগণের ভূমিকা
মুহাদ্দিস ও হাদীসের ব্যাখ্যাকারদের ভূীমকা
ফিকাহবিদদের কাজ
ইসলামের অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ফিকাহ আলিমগণের কাজ
আলোচনার পদ্ধতি ও ধরন
মৌল উৎস নির্ধারণ ও তত্ত্ব সংগ্রহ
আলোচনার বন্টন ও তার বিভিন্ন বিন্যাস
তুলনামুলক আলোচনা
ব্যাখ্যা ও কারণ প্রদর্শন
যাচাই ও অগ্রাধিকার দান
গ্রহণ, অগ্রাধিকার ও সত্য নির্ধারণে অবলম্বিত নিয়ম-নীতি
সুদৃঢ় ইজমার প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন
সহীহ কিয়াস কার্যকরকরণ
লক্ষ্য ও কল্যাণের গুরুত্ব স্বীকার
আলোচনার পদ্ধতি
যাতা ও সাদকার অর্থ
‘যাকাত’ শব্দের বিশ্লেষণ
সাদকার অর্থ
কুরআন মজীদে যাকাত
প্রথম অধ্যায়ঃ যাকাত ওয়াজিব: ইসলামে তার স্থান
শুরুর কথা
প্রাচীণ সভ্যতার দারিদ্র সমাজ
দারিদ্রের ব্যাপারে বিভিন্ন ধর্মের ভূমিকা
আসমানী ধর্মসমূহের অবদান
পর্যালোচনা
দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলামের অবদান
মক্কী যুগ থেকে কুরআনের ভূমিকা
মিসকীনদের খাবার দেয়া ঈমানের অংগ
মিসকীনের অধিকার আদায়ের জন্যে
উৎসাহ দান
ভিখারী, বঞ্চিত, মিসকীন ও নিঃস্ব পথিকদের অধিকার
শস্য কর্তনকালীন অধিকার
মক্কায় ‘যাকাত’ দান
মক্কী যুগের যাকাত নিঃশর্তঃ
মদীনা পর্যায়ে যাকাত
কুরআনের মাদানী আয়াতে যাকাতের বিধান
‘যাকাত’ প্রসঙ্গে সূরা তাওবা’র দৃষ্টান্ত
কুরআনে মোটামুটি বলা কথার ব্যাখ্যা দেয় সুন্নাত
যাকাতের হিসাব ও পরিমাণ সুন্নাত কর্তৃক নির্ধারিত
রোযাপর পরই যাকাত
যাকাত ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ
যাকাত না দেয়ার কঠোর আযাবের ভয় প্রদর্শন
পরকালীন আযাব
যাকাত না দেয়ার বৈষয়িক শাস্তি
যাকাত দিতে অস্বীকারকারীদের শরীয়তসম্মত শাস্তি
যাকাত আদায়ে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
হযরত আবূ বকর (রা)-এর যুক্তির দুটি দিক
দ্বীন-ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব
যাকাত অমান্যকারী কাফির
ইসলামের যাকাত ও অন্যান্য ধর্মের যাকাতের মধ্যে পার্থক্য
যাকাতের প্রকৃতি সম্পর্কে শাখ্ত-এর ধারণা ভুল
দ্বিতীয অধ্যায়: যাকাত কার উপর ফরয
ইসলাম অমুসলিমদের উপর যাকাত প্রথম পর্ব
ফরয করেনি কেন
অমসলিমদের কাছ থেকে যাকাত-পরিমান কর গ্রহণ করা হবে কিনা
দ্বিতীয় পর্ব
বালক ও পাগলের ধন-মালে যাকাত
যাকাত ফরয হয় না বলে যাঁরা মত দিয়েছেন এঁদের দলীল
বালক ও পাগলের মালে যাকাত ফরয হওয়ার পক্ষের লোকদের কথা
বালকের ধন মালে যাকাত হওয়ার দলীল
তুলনা ও অগ্রাধিকার দান
ফরয না-হওয়া মতের বাতুলতা
সার কথা
তৃতীয় অধ্যায়: যেসব ধন-মালে যাকাত ফরয হয় তার নিসাব পরিমাণ
যে সম্পদে যাকাত ফরয হয়
‘মাল’ শব্দের অর্থ-আভিধানিক শরীয়াতের পরিভাষা
যে মালে যাকাত ফরয হয় তার শর্তাবলী
পূর্ণাংগ মালিকানা
এ শর্তটির যৌক্তিকতা
এ শর্তের দলীল
এ শর্তের আনুষঙ্গিক কথা
ওয়াক্ফকৃত জমি
হারাম সম্পদে যাকাত হয় না
ঋণের যাকাত
চাকুরীজীবীদের বেতন ও সঞ্চয়
প্রবৃদ্ধি
প্রবৃদ্ধি শর্ত করার যৌক্তিকতা
এ শর্তের দলীল
বর্ধনশীল রহিত সম্পদ
নিসাবের শর্ত
মৌল প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া
কুরআন ও সুন্নাহ থেকে এ শর্তের দলীল
ঋণমুক্তি
এ পর্যায়ের দলীলসমূহ নিম্নরূপ
যাকাতের প্রতিবন্ধক ঋণের শর্ত
এ ঋণ বর্তমানকালের হওয়া কি শর্ত
এক বছর অতিক্রমণ
কতিপয় মালের এক বছরের শর্তের কারণ
এক বছরের শর্তের প্রমাণ
কতিপয়, সাহাবী ও তাবেয়ীনের ভিন্ন মত
সমন্বয়ের কেন্দ্রবিন্দু
প্রাপ্ত ধন-মালের ব্যাপারে মতপার্থক্য
পশু সম্পদের যাকাত
পশুর যাকাতরে সাধারণ শর্ত
তার সংখ্যা নিসাব-মাত্রা পর্যন্ত পৌঁছতে হবে
মালিকানার এক বছর
‘সায়েমা’ হতে হবেউটের যাকাত
একশ’টির উপর সংখ্যক উষ্ট্রের যাকাতের মতভেদ ও তার কারণ
হানাফী মাযহাবের মত ও তার পর্যালোচনা
যাকাত সংক্রান্ত পত্রসমূহের মধ্যে সামান্য পার্থক্যের তাৎপর্য
গরুর যাকাত
গরুর যাকাতের নিসাব
প্রসিদ্ধ কথা-নিসাব সংখ্যা ত্রিশ
ইমাম তাবারীর মতে নিসাব পরিমাণ পঞ্চাশটি
ইবনুল মুসাইয়্যিব ও জুহরীর মত
এই মতের দলীল
ভিন্নমত
প্রাসঙ্গিক কথা
ছাগলের যাকাত
বহুসংখ্যক ছাগলের যাকাত ফরয হয় কেন
ছোট গবাদিপশুর যাকাত কি যাকাত দিতে হবে
গবাদিপশুর যাকাত বাবদ কি গ্রহণ করা হবে
যাকাতের জন্তুতে মিশ্রণের প্রভাব
ঘোড়ার যাকাত
যানবাহন বোঝা বহন ও জিহাদে ব্যবহৃত ঘোড়ার যাকাত নেই
ব্যবসায়ের ঘোড়ার যাকাত দিতে হবে
ঘরে ঘাস খাওয়ানো ঘোড়ার যাকাত নেই
ঘোড়ার যাকাত না হওয়ার দলীল
ইমাম আবূ হানীফার মত
আবূ হানীফার মতে যাকাতের নিসাব
পর্যালোচনা
ঘোড়া ছাড়া অন্যান্য গবাদিপশু
প্রাথমিক কথা
তৃতীয় অধ্যায়: স্বর্ণ ও রৌপ্রের যাকাত
নগদ সম্পদের যাকাত
নগদ সম্পদের ভূমিকা ও পর্যাসমুহ
রাসূলে করীমের যুগে প্রচলিত নগদ অর্থ
নগদ সম্পদে যাকাত ফরয হওয়ার দলীল
নগদ সম্পদে যাকাত ধার্য হওয়ার দলীল
নগদ সম্পদে যাকাত ধার্যা হওয়ার যৌক্তিকতা
নগদ সম্পদে যাকাতের পরিমাণ
একালে এ পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায় কি?
নগদ সম্পদের নিসাব
সংশয় ও তার অপনোদন
শরীয়াতসম্মত ‘দিরহাম’ ও দীনারের পরিমাণ
সমকালীন চিন্তাবিদদের একটা বড় ভুল
এ যুগে নিসাব নির্ধরণ কিসে হবে?
নগদ সম্পদের কোন স্থির মান নির্ধারণ কি সম্ভব
অন্রান্য নিসাব পরিমাণ নির্ধারণ
শস্য ও ফল-ফসলের নিসাব অনুযায়ী নির্ধারণ কি সম্ভব?
অন্যান্য নিসাব পরিমাণ নির্ধারণ
শস্য ও ফল-ফসলের নিসাব অনুযায়ী নির্ধারণ কি সম্ভব?
গবাদিপশুর নিসাবের দৃষ্টিতে নিসাব নির্ধারণ কি সম্ভব?
নগদ সম্পদের নিসাবের গ্রহণযোগ্য মান
নগদ কাগজী মুদ্রা ও তার বিচিত্রতা
কাগজী নগদের যাকাত
নগদ সম্পদে যাকাত ফরয হওয়ার শর্ত
নিসাব পরিমাণ হওয়া
নিসাব পরিমাণের একক মালিক হওয়া কি শর্ত?
একটি বছরকাল অতিবাহিত হওয়া
ঋণমুক্তি
মৌল প্রয়োজনের বাড়তি হওয়া
অলংকারাদি, তৈজসপত্র ও স্বর্ণ-রৌপ্য নির্মিত উপঢৌকনাদির যাকাত
স্বর্ণ-রৌপ্য নির্মিত পাত্রাদি ও উপঢৌকনাদির যাকাত
পুরুষের ব্যবহৃত হারাম অলংকারাদিতেও যাকাত ফরয
স্ত্রীলোকদের মুক্তা ও মণি নির্মিত অলংকারের যাকাত
স্ত্রীলোকদের স্বর্ণ-রৌপ্যের অলংকারের যাকাত সম্পর্ক বিভিন্ন মত
অলংকারের যাকাত ফরয হওয়ার দলীল
এ কথার দলীল
অলংকারের যাকাত ফরয না হওয়ার পক্ষেমত
এ মতের দলীল
পর্যালোচনা ও অগ্রাধিকার দান
অলংকারের যাকাত ফরয হওয়ার দলীল ভুল
যে অলংকার পুঁজি বানানো হবে, তারই যাকাত দিতে হবে
সারনির্যাস
চতুর্থ অধ্যায়: ব্যবসায়ী সম্পদের যাকাত
ব্যবসায়ে যাকাত ফরয হওয়ার দলীল
কুরআনের আয়াত
সুন্নাত
সাহাবী, তাবেয়ীন ও প্রাচীন বিশেষজ্ঞদের ইজমা
কিয়াস-বিবেচনা
বিরুদ্ধবাদীদের শোবাহ-সন্দেহ
ব্যবসায় পণ্য সম্পর্কে জাহিরী ফিকাহ্র মত
ব্যবসা-পণ্যে যাকাতের শর্ত
ব্যবসায়ী তার ব্যবসা সম্পদের যাকাত কিভাবে দেবে
মজুদদার ব্যবসায়ী ও চলতি বাজারদরে বিক্রয়কারী ব্যবসায়ীর মধ্যে পার্থক্য
স্থিতিশীল পণ্যের যাকাত নেই
যাকাত দেয়ার সময় পণ্যদ্রব্যের মূল্য কোন্ দরে হিসাব করা হবে?
ব্যবসায়ী মূল ব্যবসা দ্রব্য থেকে যাকাত দিবে না তার মূল্য থেকে
পঞ্চম অধ্যায়: কৃষি সম্পদের যাকাত
ফল ও ফসলে যাকাত ফরয হওয়ার দলীল
কুরআন মজীদ
সুন্নত
ইজমা
কৃষি ফসলে ফরয যাকাত
হযরত ইবনে উমরের মত
ইমাম মালিক ও শাফেয়ীর মত
ইমাম আহমদের মত
ইমাম আবূ হানীফার মত
জমির সর্বপ্রকার উৎপাদনেই যাকাত
এই মতের পক্ষে দলীল
পর্যালোচনা ও অগ্রাধিকার
কৃষি ফসল ও ফল-ফঁকড়ার যাকাত
নিসাবের হিসাব
পর্যালোচনা ও অগ্রাধিকার দান
শস্য ও ফলের নিসাব
ছা’র পরিমাণ
ছা’র ব্যাপারে হিজাজ ও ইরাকের মধ্যকার পার্থক্য
ইরাকী ফিকাহ্বিদদের দলীল
হিজাজীদের দলীল
দুটো কথার সমন্বয়ের কোন পথ আছে কি?
ফলশ্রুতি
আধুনিক মানে শস্য ও ফলের নিসাব
পাত্র দিয়ে মাপা হয় এমন জিনিসের নিসাব
আমাদের গৃহীত মত
নিসাব কখন হিসাব করা হবে
যাকাতের পরিমাণ ও তার পার্থক্য
ওশর ও অর্ধ-ওশর
সেচ প্রয়োজন না হলেও কষ্টের সম্ভাব্যতা
অনুমানের ভিত্তিতে যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণ
অনুমান করার উপযুক্ত সময়
অনুমানকারীর ভুল
খেজুর-আঙ্গুর ছাড়া অন্যান্য ফলেও কি অনুমান করা যাবে?
কৃষি ফসল ও ফলের মালিকের জন্যে কি ছেড়ে দেয়া যাবে
ঋণ ও ব্যয়ভার বাদ দিয়ে অবশিষ্টের যাকাত
ঋণ ও ব্যয়ভার বাদ দিয়ে কি যাকাত দেয়া হবে?
ভাড়া করা জমির যাকাত
মারিক নিচেই চাষ করলে
ধার করা জমির যাকাত
জমি-মালিক ও শরীক
মালিক যাকাত দেবে, না কেরায়দার?
ইমাম আবু হানীফার মত
জমহুর ফিকাহবিদদের মত
মতপার্থক্যের কারণ
অগ্রাধিকার দান
ওশর ও খারাজ
জমি কখন ওশরী হয়, কখন খারাজী
ওশরী জমি
খারাজী জমির বিভিন্ন প্রকার
খারাজী জমি ক্রয় ও বিক্রয়
সমর্থনের মাধ্যমে খারাজ ধার্যকরণ
ওশর ও খারাজ কি একসাথে ধার্য হতে পারে
হানাফী মত ও তার দলীল
মজহুর ফিকাহ্বিদদের অভিমত
পর্যালোচনা ও অগ্রাধিকার দান
উৎপাদন থেকে খারাজ বাদ দিয়ে অবশিষ্টের যাকাত দান
এক্ষণে খারাজী জমি কোথায়
ওশর ও খারাজ একত্র হওয়া সম্পর্কে একালের বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গী
ষষ্ঠ অধ্যায়: মধু ও প্রাণী উৎপাদনের যকাত
মধুর যাকাত
শুরুর কথা
মধুর যাকাতের পক্ষেযাঁরা
এ মতের দলীল
এ পর্যায়ে অন্যান্য মত
আবূ উবায়দার মত
মধুর যাকাত পর্যায়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মত
মধুর যাকাত পর্যায়ে অগ্রাধিকারপ্রা্ত মত
মধুর যাকাতের পরিমাণ
মধুর নিসাব
রেশম ও দুগ্ধ ইত্যাদির প্রাণীজাত সম্পদের যাকাত
সপ্তম অধ্যায়: খনিজ ও সামুদ্রিক সম্পদের যাকাত
খনি, পুঁজি বা সঞ্চিত ধন ও মাটির তলে পুঞ্জিত সম্পদ সংক্রান্ত বর্ণনা
মাটির তলায় প্রোথিত সম্পদ এবং তার উপর ধার্য যাকাত
খনি এবং খনিজ পদার্থের যাকাত
যে খনিজ সম্পদের উপর যাকাত ধার্য হয়
খনিজ সম্পরেদ উপর ধার্য যাকাতের পরিমাণঃ এক-পঞ্চমাংশ অথবা এক-দশমাংশের এক-চতুর্থাংশ
এক-দশমাংশের এক চতুর্থাংশ দেয়ার পক্ষের দলীল
এক-পঞ্চমাংশ দেয়ার পক্ষের দলীল
শ্রম পরিমাণ ফরয হওয়ার মত
খনিজ সম্পদের নিসাব- তা কখন গণনা করা হবে
খনিজ সম্পদের কি কোন নিসাব আছে
নিসাব নির্ধারণের সময়-মিয়াদ
খনিজ সম্পদে যাকাত ধার্যকরণে এক বছর কি শর্ত
খনিজ সম্পদের যাকাত ব্যয়ের ক্ষেত্র
খনিজ সম্পদের যাকাত কোথা ব্যয় করা হবে?
সমুদ্র থেকে লব্ধ সম্পদ
সমুদ্র থেকে পাওয়া মণি-মুক্ত আম্বর ইত্যাদি প্রসঙ্গে
মাছে কি ধার্য হবে
অষ্টম অধ্যায়: দালান-কোঠা ও শিল্প-কারখানা প্রভৃতি প্রবৃদ্ধিমূলক প্রতিষ্ঠানের যাকাত
প্রবৃদ্ধি দান-ক্ষেত্রসমূহের যাকাত
যাকাত ধার্যকরণে সংকীর্ণতাবাদীদের বক্তব্য
যাকাত ধার্যকরণে উদার দৃষ্টিসম্পন্ন লোকদের বক্তব্য
যাকাত ধার্য করার ক্ষেত্রে সংকীর্ণকারীদের মতের প্রতিবাদ
দালান-কোঠা ও শিল্প-কারখানার যাকাত কিভাবে দিতে হবে
ভাড়া দেয়া ঘর-বাড়ি ইত্যাদি মুনাফা লাভের উপায় থেকে যাকাত গ্রহণের ব্যাপারে দুটি প্রাচীন মত
প্রথম দৃষ্টিকোণ: মূল্যায়ন করে ব্যবসায়ী যাকাত গ্রহণ
হাম্বলী ফকীহ ইবনে আকীলের মত
আমদানী বৃদ্ধির জন্যে নির্মিত ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ‘হাদুইয়ার’ মত
ভিন্ন মতের উত্থাপিত আপত্তি
পর্যালোচনা ও অগ্রাধিকার দান
দ্বিতীয় দৃষ্টিকোণ: আমদানী হাতে আসার পর নগদ সম্পদের মতই তার যাকাত দিতে হবে
ইমাম আহমদের মত
মালিকী মতের কথা
সাহাবী, তাবেয়ীন ও তৎপরবর্তী লোকদের মত
এ কালের আলিমদের মত, আয়েল যাকাত শস্য ও ফলের যাকাতের মত
পর্যালোচনা ও অগ্রাধিকার দান
ইমারত ইত্যাদির যাকাতের নিসাব
যে মেয়াদের মধ্যে নিসাব গণ্য হবে
আমদানী থেকে ঋণ ও ব্যয়াদি বাদ দেয়া
জীবিকার জন্যে নিম্নতম পরিমাণ বাদ দেয়া
নবম অধ্যায়: স্বাধীন শ্রমের উপার্জনের যাকাত
শুরু কথা
স্বাধীন ও পেশাভিত্তিক উপার্জনের স্বরূপ নির্ধারণ
সমসাময়িক অভিমত
মাসিক বেতন ও মজুরীলব্ধ মাল
অর্জিত সম্পদ সম্পর্কে সুচিন্তিত মত
এক বছর পূর্তি সংক্রান্ত হাদীস
হযরত আলী (রা) বর্ণিত হাদীস
ইবনে উমর বর্ণিত হাদীস
আনাস বর্ণিত হাদীস
আয়েশা বর্ণিত হাদীস
অর্জিত মাল সম্পর্কিত হাদীস
অর্জিত মাল সম্পর্কে সাহাবী, তাবেয়ীন ও পরবর্তী লোকদের মতপার্থক্য
অর্জিত মাল পর্যায়ে সাহাবী ও তাবেয়ীর মত
ইবনে মাসউদ
মু’য়াবিয়া
উমর ইবনে আবদুল আযীয
অন্যান্য তাবেয়ী ফিকাহ্বিদ
ইমাম বাকের, সাদেক, নাসের ও দাঊদের মত
অর্জিত মাল হস্তগত করার সাথে সাথে যাকাত দিতে হবে
এ কালের বিশেষজ্ঞদের অভিমত
কাজ ও স্বাধীন পেশার বিনিময়ে পাওয়া সম্পদের নিসাব
এ প্রসঙ্গে অবশিষ্ট কথা
অর্জিত সম্পদের যাকাত দেয়ার নিয়ম
নির্ভেজাল আমদানী ও মাসিক বেতনের যাকাত
কর্মে উপার্জিত সম্পদের যাকাত পরিমাণ
দশম অধ্যায়: শেয়ার ও বণ্ডের যাকাত
শেয়ার ও বন্ডের মধ্যে পার্থক্য
বিভিন্ন কোম্পানী শেয়ারের যাকাত দেয়ার পদ্ধতি
কোম্পানী স্বরূপ অনুযায়ী শেয়ারের মূল্যায়ন
বন্ডের যাকাত
শেয়ারগুলোকে ব্যবসা পণ্য হিসেবে গণ্য করা
কোম্পানীর আয় ও শেয়ারের যাকাত কি এক সাথে নেয়া হবে
নিষিদ্ধ দ্বৈততা
সাদৃশ্যসম্পন্ন অবস্থাসমুহ, -যা ফিকাহবিদগণ নিষেধ করেছেন
গবাদি পশুর ব্যবসায় ও তার যাকাত দেয়ার নিয়ম





কুরআন ও সুন্নাহর আলোকের যাকাত বিধান ও তার দার্শনিক পটভূমির তুলনামূলক অধ্যয়ন]
প্রসঙ্গ-কথা
মানুষেল অর্থনৈতিক জীবনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশেষত গরীব, নিঃস্ব ও অসহায় লোকদের জীবিকার নিশ্চয়তা বিধান নিঃসন্দেহে একটি কঠিন সমস্যা। এই সমস্যাটির সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন অর্থ ব্যবস্থায় কিছু ‘কল্যাণধর্মী’ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু সে সব পদক্ষেপ সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যে কোন নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে নি। ফলে কল্যাণধর্মী বলে খ্যাত রাষ্ট্রগুলোতেও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও দারিদ্র্য বিমোচনের কর্মসূচী এখনো নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। দৃশ্যত কিছু কল্যাণধর্মী ব্যবস্থা গ্রহণ সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ অসহায় মানুষ সে সব দেশে চরম দুরাবস্থার মধ্যে বসবাস করছে।
ইসলাম আল্লাহর দেয়া এক পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এ জীবন ব্যবস্থায় এক সুষম ও ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতি ছাড়াও সামাজিক ন্যায়বিচারকে নিশ্চিত করার জন্যে যাকাত-এর একটি চমৎকার কর্মসূচীর বিধান রাখা হয়েছে। সমাজের বিত্তবান ও সচ্ছল লোকদের বাড়তি সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ নিয়মিত আদায় করে দরিদ্র ও বঞ্চিত লোকদের মধ্যে যথাযথ বণ্টন করাই এ কর্মসূচীর প্রধান বৈশিষ্ট্য। বলাবাহুল্য, এটি যেমন একটি রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম, তেমনি ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদতও। তাই পবিত্র কুরআনের বহুতর স্থানে নামায প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে যাকাত প্রদানেরও আদেশ করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, যাকাত সম্পর্কে স্পষ্টতর ধারণার অভাবে এই কল্যানময় ব্যবস্থাটি থেকে আমাদের সমাজ যথোচিতভাবে উপকৃত হতে পারছে না। আরব জাহানের স্বনামধন্য ইসলামী চিন্তাবিদ ও সুপন্ডিত আল্লামা ইউসূফ আল-কারযাভী প্রণীত ‘ফিকহুয যাকাত’ নামক বিশাল গ্রন্থটি এদিক থেকে আমাদের জন্যে এক পরম সম্পদ। যাকাত আদায়ের উৎস ও ব্যয়ের খাতগুলো অত্যন্ত পুংখানুপুংখভাবে বিবৃত করা হয়েছে দুই খন্ডে বিভক্ত এই মূল্যবান গ্রন্থে। এ কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক আল্লামা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (র) ’ইসলামের যাকাত বিধান’ শিরোনামে এই অনন্য গ্রন্থটি বাংলায় অনুবাদ করে সময়ের এক বিরাট দাবি পূরণ করেছেন। কিন্তু গ্রন্থটির প্রকাশনায় ধারাবাহিকতা না থাকায় এর অপরিমেয় কল্যাণ থেকে যথোচিতভাবে উপকৃত হতে পারেননি আমাদের বিদগ্ধ পাঠক সমাজ, বরং গত কয়েক বছর ধরে গ্রন্থটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না বলে আগ্রহী পাঠকরা সরাসরি অভিযোগ করেছেন আমাদের কাছে।
এই অবস্থার প্রেক্ষাপটে আল্লামা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ)- এর গ্রন্থাবলী প্রকাশের দাবিতে নিয়োজিত ‘খায়রুন প্রকাশনী’ এখন থেকে ‘ইসলামের যাকাত বিধান’ শীর্ষক গ্রন্থটির যথাযথ প্রকাশনার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তদনুসারে এর প্রথম খন্ডটি পাঠকের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে এবং বর্তমানে এর দ্বিতীয় খন্ডটিও সহৃদয় পাঠকদের হাতে তুলে দেয়া হল।
গ্রন্থটির এ সংস্করণে আমরা পূর্বেকার মুদ্রণ- প্রমাদগুলোর সংশোধনের জন্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। এর অঙ্গসজ্জা ও মুদ্রণ পারিপাট্যকেও উন্নত করার ব্যাপারে যত্ন নেয়া হয়েছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, গ্রন্থটির ও সংস্করণ পাঠকদের কাছে পূর্বাপেক্ষা অধিকতর সমাদৃত হবে। মহান আল্লাহ গ্রন্থকার ও অনুবাদককে এই অনন্য খেদমতের উত্তম প্রতিফল দান করুন, এটাই আমাদের সানুনয় প্রার্থনা।
ঢাকাঃ জানুয়ারী ২০০১
মুহাম্মাদ হাবিবুর রহমান
চেয়ারম্যান
মাওলানা আবদুর রহীম ফাউন্ডেশন
অনুবাদকের কথা
‘যাকাত’ দ্বীন ইসলামের মৌলিক বিধানের অতীব গুরুত্বপূর্ণ রুকণ। কিন্তু এ পর্যায়ে আধুনিক সমাজ ও অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে বিস্তারিত আলোচনা সম্বলিত কোন গ্রন্থ দুনিয়ার কোন ভাষায় আছে বলে আমার জানা ছিলো না।
তবে এ যুগের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষণা ও গভীর ব্যাপক পান্ডিত্যের অধিকারী কাতারের রাজধানী দোহায় বসবাসকারী ও তথাকার শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বশীল পদে নিযুক্ত আল্লামা ইউসুফ আল-কারযাভী লিখিত ফিকহুল যাকাত فقه الزكواة নামক আরবী গ্রন্থটির নাম শুনে আসছিলাম তার প্রথম প্রকাশ ১৯৬৯ সন থেকেই। কিন্তু দুটি খন্ডে বিভক্ত ও বিরাট গ্রন্থখানি পড়ার কোন সুযোগ পূর্বে আমি পাইনি।
১৯৭৯ সনের রমযান পাসে ঢাকস্থ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক জনাব শামসুল আলমের কাছে এ বইখানি দেখতে পাই। তিনি এর বাংলা অনুবাদ করানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং তখনই আমি সেই অনুবাদের দায়িত্ব গ্রহণ করি।
আমি নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করি, আল্লামা ইউসূফ আল-কারযাভীর এ এক তুলনাহীন অমর সৃষ্টি। আমার জানামতে আরবী ভাষায়ও এ পর্যায়ে বা এর সমতুল্য গ্রন্থ আর একটি নেই। ইসলামী জ্ঞান ও আদর্শের ক্ষেত্রে যাকাত যেমন মহান আল্লাহর একটি বিশেষ অবদান, দুনিয়ার চিরকালের বঞ্চিত মানবতার জন্যে দারিদ্র্য মুক্তিরও এ এক অনন্য ও অনবদ্য ব্যবস্থা, তার বিস্তারিত ও ব্যাপক গভীর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে এ গ্রন্থখানি অনুরূপ এক মহামূল্য সম্পদ। ইসলামের বিশেষজ্ঞ মনীষিগণ এ গ্রন্থখানিকে যাকাত বিষয়ে বিশ্বকোষ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ গ্রন্থখানি রচনা করে তিনি দ্বীন-ইসলামের এক অতুলনীয় খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন এবং সেই সাথে গোটা মুসলিম জাহানের মহাকল্যাণ সাধন করেছেন।
আমি আশা করি এ গ্রন্থখানি আদ্যাপাস্ত পাঠ করে পাঠকবৃন্দ যাকাতের গুরুত্ব ও মানবতার কল্যাণে তার কল্পনাতীত বিরাট ভূমিকার কথা বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন।
ফিকহুয যাকাত’ নামক এ বিরাট গ্রন্থের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ সম্পন্ন করে বাংলাভাষী জনগনের সম্মুখে পেশ করতে পারা আমার জন্যে একটি অনুপম সৌভাগ্যের ব্যাপার বলে মনে করি এবং এজন্যে মহান আল্লাহর দরবারে নিবেদন করছি অশেষ শুকরিয়া।
(মাওলনা) মুহাম্মাদ আবদুর রহীম
মুস্তাফা মনযিল
২০৮, নাখালপাড়া
সূচী পত্র
প্রথম অধ্যায়ঃ যাকাত ব্যয়ের খাত
ভূমিকা
কুরআন যাকাত ব্যয়ের খাতের উল্লেখ
যাকাত ব্যয় খাত পর্যায়ে কুরআনী ঘোষণার তাৎপর্য
প্রথম পরিচ্ছেদঃ ফকীহ ও মিসকীন
ফকীর’ ও মিসকীন’ বলতে কাদের বোঝায়?
হানাফী মতে ‘ফকীহ’ ও মিসকীন’
ফকীর-মিসকীনের অংশ থেকে কোন ধনীকেই কিছু দেয়া যেতে পারে না
ধনীর যাকাত গ্রহণ নিষিদ্ধ
ইমাম সওরী প্রমুখের অভিমত
হানাফী মাযহাবের মত
ইমাম আল-কাসানী বলেছেন
ইমাম মালিক, শাফেয়ী ও আহমদের মত
উপার্জনক্ষম দরিদ্র ইবাদতে লিপ্ত ব্যক্তি যাকাত পাবে না ইলম শেখার কাজে একনিষ্ঠ ব্যক্তি যাকাত পাবে
প্রচ্ছন্ন আত্মসম্মান রক্ষাকারী দরিদ্ররা সাহায্য পাওয়ার অধিকারী
ফকীর ও মিসকীনকে কি পরিমাণ যাকাত দেয়া যাবে
প্রথমত জীবনকালের প্রয়োজন পরিমাণ দান
যখন দিবেই তখন সচ্ছল করে দাও
দ্বিতীয় মতঃ এক বছরের জন্যে যথেষ্ট পরিমাণ দিতে হবে
বিয়ে করিয়ে দেয়াও পূর্ণমাত্রার যথেষ্ট পরিমাণের অন্তর্ভূক্ত
ইলমের বই-পত্র দানও যথেষ্ট দানের অন্তর্ভূক্ত
কোন মতটি গ্রহণ করা উত্তম
ফকীরকে দেয় পরিমাণ পর্যায়ে অন্যান্য মত
ইমাম গাজালীর মত
দানে প্রশস্ততার মতকে অগ্রাধিকার দান
উপযুক্ত মানের জীবিকা ব্যবস্থা
স্থায়ী ও সুসংবদ্ধ সাহায্য ব্যবস্থা
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদঃ যাকাত কার্যে নিয়োজিত কর্মচারী
যাকাতের অর্থনৈতিক ও প্রতিষ্ঠানগত ব্যবস্থাপনা
যাকাত আদায়কারী প্রেরণ সরকারের দায়িত্ব
যাকাত আদায়কারী কর্মচারীদের কর্তব্য
যাকাতের জন্যে দুটো প্রতিষ্ঠান
যাকাত পাওয়ার যোগ্যতা নির্ণয়ের ওপর গুরুত্ব
যাকাত কর্মচারী হওয়া শর্ত
কর্মচারীকে কত দেওয়া হবে
যাকাতের মালের প্রতি লোভের ওপর রাসূলের কঠোরতা
বেতনভুক্ত কর্মচারীদের জন্য দেয়া উপঢৌকন ঘুষ
যাকাত সংগ্রহকারীদের প্রতি নবী করীমের উপদেশ
মালের মালিকদের জন্যে দোয়া
মুসলিম জনকল্যানমূলক কাজে ব্যতিব্যস্ত লোকদের কি যাকাত কাজের কর্মচারী মনে করা হবে
তৃতীয় পরিচ্ছেদঃ যাদের মন সন্তষ্ট করা প্রয়োজন
এই খাতটির ফায়দা
এই লোকদের কয়েকটি ভাগ
রাসূলের ইন্তেকালের পর এই খাতটি কি পরিত্যাক্ত
মনসূখ হওয়ার দাবি অগ্রহনযোগ্য
মন তুষ্ট করার প্রয়োজন কখনই ফুরায় না
মন সন্তুষ্টকরণ ও মুয়াল্লাফাতু’র জন্যে যাকাত ব্যয়ের অধিকার কার
এ যুগে মুয়াল্লাফাত’ খাতের টাকা কোথায় ব্যয় করা হবে
যাকাতের মাল ছাড়াও এ কাজ করা জায়েয
চতুর্থ পরিচ্ছেদঃ ফির-রিকাব – দাসমুক্তি
কুরআনে খাত নির্ধারণে অক্ষর প্রয়োগের পার্থক্য
ফির-রিকাব-এর তাৎপর্য
দাসপ্রথা বিলুপ্তকরণের ইসলামের অগ্রবর্তীতা
মুসলিম বন্দীকে দাসমুক্তির অংশ দিয়ে মুক্ত করা যাবে
সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অধীন জাতিসমূহকে কি যাকাত দিয়ে সাহায্য করা যাবে
পঞ্চম পরিচ্ছেদঃ আল গারেমূন’- ঋণগ্রস্ত লোকগণ গোরেমূন কারা
নিজের প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণকারী লোক
আকস্মিক বিপদগ্রন্তরা এই পর্যায়ে গণ্য
ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণকারীকে সাহায্যদেয়ার শর্ত
ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ঋণ গ্রহীতাকে কত দেয়া হবে
ঋণগ্রন্তদের প্রতি ইসলামের ভীতি প্রদর্শন
দ্বিতীয় প্রকারঃ অন্য লোকের কল্যাণে ঋণগ্রন্ত হওয়া মৃতের ঋণ শোধে যাকাত ব্যবহার
শিয়া জাফরী ফিকাহরও এই মত
যাকাত থেকে ‘কারযে হাসানা’ দেয়া
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদঃ ফী-সাবীলিল্লাহ- আল্লাহর পথে
হানাফী মাযহাব
মালিকী মাযহাবের মত
শাফেয়ী মত
হাম্বলী মত
আলোচ্য বিষয়ে চারটি মাযহাবের ঐকমত্য
যারা সাবীলিল্লাহর তাৎপর্য ব্যাপক মনে করেন
কতিপয় ফিকাহবিদের মত
আনাস ও হাসান সম্পর্কে বলা কথা
জাফরী ইমামিয়া ফিকাহর মত
জায়দীয়া ফিকাহর মত
الروضة النديه এর লেখকের অভিমত
মুহাদ্দিসমন্ডলীর মত-আল কাসেমী
রশীদ রিজা ও শালতুতের অভিমত
মাখলুকের ফতোয়া
তুলনা ও অগ্রাধিকার দান
কুরআনে সাবীলিল্লাহ’ ব্যয় করার কথাটির পার্শ্বে ‘সাবীলিল্লাহর’ অর্থ কি
যাকাত ব্যয়ক্ষেত্রে ‘সাবীলিল্লাহর অর্থ কোথায় ব্যয় করা হবে
কাফরী শাসন থেকে ইসলামী দেশ মুক্তকরণ
সব যুদ্ধই ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ নয়
ইসলামী শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা আল্লাহর পথে জিহাদ
একালে ইসলামী জিহাদের বিচিত্র রূপ
সপ্তম পরিচ্ছেদঃ ইবনুল সাবীল- নিঃস্বপথিক
ইবনুস সাবীল’ কে
ইবনুস সাবীল-এর প্রতি কুরআনের বদান্যতা
ইবনুস সাবীল- এর প্রতি গুরুত্ব দানের যৌক্তিকতা
সামাজিক নিরাপত্তার এক দৃষ্টান্তহীন ব্যবস্থা
সফর শুরুকারী ও সফর সমাপ্তকারী
জমহুর ফিকাহবিদদের বক্তব্য
ইবনুস সাবীল পর্যায়ে ইমাম শাফেয়ীর বক্তব্য
এই গ্রন্থকারের বিবেচনা
ইবনুস সাবীলকে যাকাত দেয়ার শর্ত
ইবনুস সাবীলকে কত দেয়া হবে
এযুগে ইবনুস সাবীল পাওয়া যায় কি
ইবনুস সাবীল এর বাস্তবরূপ
পালিয়ে যাওয়া ও আশ্রয়গ্রহণকারী লোক
ফিকাহর পরিভাষায় তাদের কি বলা হবে?
নিজ ঘরে থেকেও নিজের মালের ওপর কর্তৃত্ব নেই যার
কল্যাণমূলক কাজে বিদেশ গমনকারী
আশ্রয় বঞ্চিত লোকেরা
পড়ে পাওয়া মানুষ
অষ্টম পরিচ্ছেদঃ যাকাত পাওয়ার যোগ্য লোকদের সম্পর্কে পর্যালোচনা
যাকাত পাওয়ার যোগ্য লোকদের সম্পর্কে ফিকাহবিদদের সামগ্রিক পর্যালোচনা
الروضة النديه গ্রন্থকারের গবেষণা
আবূ উবাইদের অগ্রাধিকার দান
রশিদ রিজার অগ্রাধিকার দান
খাতসমূহের যাকাত বন্টনের সার কথা
নবম পরিচ্ছেদঃ যেসব খাতে যাকাত ব্যয় করা হবে না
প্রথম আলোচনাঃ ধনী সচ্ছল লোকেরা
ছোট বয়সের ধনী পুত্র পিতাকেও ধনী করে দেয়
দ্বিতীয় আলোচনাঃ উপার্জনশীল শক্তিসম্পন্ন লোক
তৃতীয় আলোচনাঃ অমুসলিমকে যাকাত দেয়া যায়ে কি
নাস্তিক, দ্বীন ত্যাগকারী ও ইসলামের সাথে যুদ্ধকারীকে যাকাত দেয়া যাবে না
যিম্মীদের যাকাত দেয়া
নফল সাদকা দান
সাদকায়ে ফিতর থেকে দেয়া
জমহুর ফিকাহবিদদের দৃষ্টিতে মালের যাকাত অমুসলিমকে দেয়া জায়েয নয়
ইজমা হওয়ার দাবির পর্যালোচনা
তুলনা ও অগ্রাধিকার দান
ফাসিক ব্যক্তিকে কি যাকাত দেয়া যাবে
নামায তরককারী সম্পর্কে বলেছেন
সাইয়্যেদ রশীদ রিজার বক্তব্য
ইসলামের পরস্পর বিরোধী গোষ্ঠীসমূহকে যাকাত দান
চতুর্থ আলোচনাঃ স্বামী, পিতামাতা ও নিকটাত্মীয়কে কি যাকাত দেয়া যাবে
স্ত্রীকে যাকাত দেয়া জায়েয নয়
স্ত্রী কি তার দরিদ্র স্বামীকে যাকাত দিতে পারে
অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের যাকাত দানঃ নিষেধকারী ও অনুমতিদানকারী
নিকটাত্মীয়দের যাকাত দেয়া জায়েয বলেছেন যারা
তুলনা অগ্রাধিকার দান
পঞ্চম আলোচনাঃ মুহাম্মাদ (সা) এর বংশ পরিবার
যেসব হাদীস মুহাম্মাদ (স) এর বংশ পরিবারের জন্যে যাকাত হারাম বলে
আলে মুহাম্মাদ (স) কারা
হাশিমীর গণীমত ও ফাই সম্পদের অংশ না পেলে
পর্যালোচনা ও অগ্রাধিকার দান
ষষ্ঠ আলোচনাঃ যাকাত ব্যয় ভুল-ভ্রান্তি
যাকাতদাতা যাকাত ব্যয়ে ভুল করলে কি করা হবে
মালিকী মতে
যায়দীয়া ফিকাহবিদদের মতে
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ যাকাত আদায় করার পন্থা
ভূমিকা
প্রথম পরিচ্ছেদঃ যাকাতের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক
যাকাতের ব্যাপারে রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও জবাবদিহি
কুরআনের দলিল
হাদীস
নবী ও খুলাফায়ে রাশেদুনের বাস্তব সুন্নাত
সাহাবিগণের ফতোয়া
এই ব্যবস্থার তত্ত্ব ও বৈশিষ্ট্য
যাকাত সম্পদের ঘর
প্রকাশমাল ধন-মাল ও প্রচ্ছন্ন ধনমাল এবং তার যাকাত যে পাবে
হানাফিদের রায়
মালিকী মাযহাবের বক্তব্য
শাফেয়ী মাযহাবের মত
বাম্বলী মাযহাবের বক্তব্য
জায়দীয়া ফিকাহবিদদের মত
আবাজায়ীদের মত
শবী, বাকের, আবু রুজাইন ও আওযায়ীর মত
তুলনা ও অগ্রাধিকার দান
আবূ উবাইদের মত এবং তার পর্যালোচনা
এ যুগে যাকাত আদায়ের দায়িত্ব কার ওপর
যাকাত গোপনকারী, দিতে অস্বীকারকারী বা দেয়ার মিথ্যা দাবিকারী সম্পর্কে বিভিন্ন মাযহাবের অভিমত
হানাফী ফিকাহবিদদের মত
মালিকী মাযহাবের মত
শাফেয়ী মাযহাবের মত
যাকাত দিতে অস্বীকারকারীকে শিক্ষাদান ও জোরপূর্বক গ্রহণে ঐকমত্য
যাকাত দিতে অস্বীকারকারীকে তার অর্ধেক মাল নিয়ে শাস্তিদান ও বিভিন্ন মত
পর্যালোচনা ও অগ্রাধিকার দান
হাম্বলী মাযহাবের মত
জায়দীয়া মতের লোকদের বক্তব্য
অত্যাচারী শাসকের কাছে যাকাত দেয়ার
যাঁরা জায়েয বলেছেন তাঁদের বক্তব্য
যাঁরা নিষেধ করেছেন তাঁদের অভিমত এবং দলিল
যাঁরা পার্থক্যকরণের মত দিয়েছেন
হানাফীদের মত
হাম্বলীদের মত
তুলনা ও অগ্রাধিকার দান
শাসকের মুসলিম হওয়া শর্ত
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদঃ যাকাতে নিয়তের স্থান
যাকাতে নিয়তের শর্তকরণ
ইমাম আওযায়ীর মত এবং তার পর্যালোচনা
যাকাতের নিয়তের অর্থ কি
প্রশাসকের যাকাত গ্রহণ অবস্থায় নিয়ত
যাকাতে নিয়তের সময়
তৃতীয় পরিচ্ছেদঃ যাকাতের মূল্য প্রদান
মূল্য প্রদানে ফিকাহবিদাদের বিভিন্ন মত
মতবৈষম্যের কারণ
মূল্যদানের নিষেধকারীদের দলিল
মূল্য প্রদান জায়েয মতের দলিল
তুলনা ও অগ্রাধিকার দান
চতুর্থ পরিচ্ছেদঃ যাকাত স্থানান্তকরণ
কোন স্থানের জনগণ দারিদ্রমুক্ত হলে সেখানকার যাকাত অন্যত্র নিয়ে যাওয়া জায়েয
পূর্ণ অভাবমুক্তি না হওয়া সত্ত্বেও স্থানান্তরি করণে বিভিন্ন মত
রাষ্ট্র প্রধানের ইজতিহাদে স্থানান্তর জায়েয
বিশেষ প্রয়োজন ও কল্যাণ দৃষ্টিতে ব্যক্তিদের যাকাত স্থানান্তরিতকরণ
পঞ্চম পরিচ্ছেদঃ যাকাত প্রদানে দ্রুততা ও বিলম্বিতকরণ
দ্রুত ও অনতিবিলম্বে যাকাত দিয়ে দেয়া ফরয
যাকাত প্রদানে তাড়াহুড়া করা নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই যাকাত আদায় করা
যাঁরা জায়েয বলেন না তাঁদের দলিল
যাঁরা জায়েয বলেন তাঁদের দলিল
অগ্রিম দেয়ার কোন নির্দিষ্ট সীমা আছে কি
যাকাত বিলম্বিত করা কি জায়েয
বিনা প্রয়োজনে যাকাত প্রদান বিলম্বিত করা
যাকাত দেয়ার পর তা বিনষ্ট হয়ে গেলে
যাকাত ফরয হওয়ার পর ও প্রদানের পূর্বে মাল ধ্বংস হলে
বিষয় দুটিতে মতপার্থক্যের কারণে
আগে-পরে হলে কি যাকাত রহিত হবে
যাকাতের ঋণ অপরাপর ঋণের তুলনায়
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদঃ যাকাত প্রদান পর্যায়ে বিভিন্ন বিক্ষিপ্ত আলোচনা
যাকাত রহিত করার উদ্দেশ্যে কৌশল অবলম্বন
ফিকাহবিদদের বিভিন্ন মত
মালিকী মতের লোকেরা কৌশল হারাম বিলুপ্ত করেন
হাম্বলী মতের লোকেরা মালিকী লোকদের মতই
জায়দীয়া মতের লোকেরা কৌশল অবলম্বন হারাম মনে করেন
যাকাতদাতা ও গ্রহীতা কি বলবে
যাকাত প্রদানের উকিল নিয়োগ
যাকাত প্রকাশ্যভাবে প্রদান
ফকীরকে জানাতে হবে না যে এ যাকাত
গরীব ব্যক্তির ঋণ রহিত করাকে যাকাত গণ্য করা যাবে
তৃতীয় অধ্যায়ঃ যাকাতের লক্ষ্য এবং ব্যক্তি ও সামষ্টিক জীবনে তার প্রভাব
ভূমিকা
প্রথম পরিচ্ছেদঃ ব্যক্তি জীবনে যাকাতের লক্ষ্য ও প্রভাব
প্রথম আলোচনাঃ যাকাতের লক্ষ্য ও দাতার জীবনে তার প্রভাব
যাকাত লোভ নিবারক ও তা থেকে পবিত্রকারী
যাকাত অর্থদান ও ব্যয়ে অভ্যস্ত করে
আল্লাহর চরিত্র ভুষিত হওয়া
যাকাত আল্লাহর নিয়ামতের শোকর
দুনিয়া প্রেমের চিকিৎসা
ধনীর ব্যক্তিত্ব বিকাশে যাকাত
যাকাত ভালবাসা উদ্ভাবক
যাকাত ধন-মালের পবিত্রতা বিধান করে
যাকাত হারাম মাল পবিত্র করে না
যাকাত ধন-মালের প্রবৃদ্ধির কারণ
দ্বিতীয় আলোচনাঃ গ্রহণকারীর জীবনে যাকাতের লক্ষ্য ও প্রভাব
যাকাত তার গ্রহণকারীকে অভাবগ্রস্ততা থেকে মুক্তি দেয়
যাকাত হিংসা ও বিদ্বেষ দূর করে
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদঃ যাকাতের লক্ষ্য ও সমাজ জীবনে তার প্রভাব
যাকাত ও সামাজিক নিরাপত্তা
যাকাত ও অর্থনৈতিক রূপায়ন
যাকাত ও জাতির আধ্যাত্মিক উপাদান
পার্থক্য সমস্যা
ভিক্ষাবৃত্তি সমস্যা
কাজই আসল ভিত্তি
লোকদের কাছে চাওয়া হারাম
যে ধনাঢ্যতা ভিক্ষঅ হারাম করে
কর্মক্ষম লোকদের কর্মসংস্থানই ভিক্ষাবৃত্তি রোধের বাস্তব উপায়
অক্ষম লোকদের জীবিকার নিরাপত্তা
পারস্পরিক শত্রুতা ও সম্পর্ক বিনষ্টির সমস্যা
সৌভ্রাতৃত্ব মৌল ইসলামী লক্ষ্য
ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দৃষ্টান্তমূলক সমাজ
ইসলাম বস্তবভিক্তিক আইন তৈরী করে
যুদ্ধ-বিগ্রহ মানব সমাজের আদিম ক্রিয়া
ঝগড়া-বিবাদ ও দ্বন্দ্ব-সংগ্রামে ইসলামের ভূমিকা
মীমাংসার জন্যে হস্তক্ষেপ করা সমষ্টির দায়িত্ব
মীমাংসাকারী কমিটি
অর্থনৈতিক দায়-দয়িত্ব
একটি ফিকহী প্রশ্ন
কঠিন দুঃখপূর্ণ ঘটনার সমস্যা
প্রাচুর্য ও বিপদমুক্ততা
কালের ঘাত-প্রতিঘাত
আকস্মিক দুর্ঘটনা উত্তরকালে বীমা ব্যবস্থা সূচনা করেছে
ইসলামী বীমা ব্যবস্থা
ঋণগ্রন্তদের অংশে আকস্মিক দুর্ঘটনার সাহায্য
আকস্মিক বিপদগ্রস্তকে কত দেয়া হবে
চাষের জমির বিপদ
কুমারিত্বের সমস্যা
ইসলামে বৈরাগ্যবাদ নেই
পালিয়ে যাওয়ার সমস্যা
একটি জরুরী সতর্কবাণী
চতুর্থ অধ্যায়ঃ ফিতরের যাকাত
প্রথম পরিচ্ছেদঃ ফিতরের যাকাত এর অর্থ তার হুকুম ও যৌক্তিকতা
ফিতরের যাকাত এর অর্থ
ফিতরের যাকাতও ওয়াজিব
ফিতরের যাকাত বিধিবদ্ধ হওয়ার যৌক্তিকতা
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদঃ যাকাতুল ফিতল কার উপর ওয়াজিব এবং কাদের পক্ষ থেকে দেয়া ওয়াজিব
ফিতরের যাকাত কার ওপর ওয়াজিব
স্ত্রী ও শিশুর ওপরও কি ওয়াজিব
দর্ভস্থ সন্তানের ফিতরাও কি ওয়াজিব
সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্যে নিসাব কি শর্ত
দুরিদ্রদের ওপর ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত
দীর্ঘমেয়াদী ঋণ ফিতরা দেয়ার প্রতিবন্ধক নয়
তৃতীয় পরিচ্ছেদঃ ওয়াজিব ফিতরার ঋণ এবং কি থেকে দিতে হবে
অর্ধ ছা’গম দেয়ার কথা যাঁরা বলেছেন তাঁদের মত
এক ছা’ পরিমাণ ওয়াজিব যাঁরা বলেছেন তাঁদের দলিল
অর্ধ ছা’ যথেষ্ট বলার সমর্থনে আবূ হানিফার দলিল
পর্যালোচনা ও অগ্রাধিকার দান
এক ছা’ পরিমাণের বেশী দেয়া কি জায়েয
এক ছা’ এর পরিমাণ
যেসব জিনিস ফিতরা বাবদ দেয়া হয়
মূল্য প্রদান
মূল্য প্রদান সম্পর্কিত বিষয়াদি
চতুর্থ পরিচ্ছেদঃ ফিতরা কখন ওয়াজিব হয় এবং তা কখন প্রদান করতে হবে
ফিতরা কখন ওয়াজিব হয়
কখন প্রদান করা হবে
পঞ্চম পরিচ্ছেদঃ ফিতরা কাদের দেয়া হবে
ফিতরা মুসলমান গরীবকে দিতে হবে
যিম্মী মিসকীনদের ব্যাপারে মতানৈক্য
ফিতরাও কি যাকাতের আটটি খাতে বন্টনীয়
ফিতরা যাকে দেয়া যাবে না
স্থানীয় দরিদ্র ব্যক্তি বেশী অধিকারী
পঞ্চম অধ্যায়ঃ যাকাত ছাড়া ধন-মালে কোন অধিকার কি স্বীকৃতব্য
ধন-মালের যাকাত ছাড়াও কোন অধিকার আছে কি
প্রথম পরিচ্ছেদঃ ধন-মালে যাকাত ছাড়া আরও কিছু অধিকার থাকার বিরোধী মত
এ মতের সমর্থনে উপস্থাপিত হাদীসসমূহ
বিপরীতধর্মী দলিলসমূহ সম্পর্কে তাদের বক্তব্য
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদঃ ধন-মালে যাকাত ছাড়া অধিকার আছে এই কথায় বিশ্বাসীদের মত
তাদের দলিল
দ্বিতীয় দলিলঃ কাটাকালে ফসলের হক
তৃতীয় দলিলঃ দবাদিপশুর ও ঘোড়ার হক
চতুর্থ দলিলঃ অতিথির অধিকার
পঞ্চম দলিলঃ নিত্য ব্যবহার্য জিনিসের হক
ষষ্ঠ দলিলঃ মুসলিম সমাজে পারস্পরিক দায়িত্ব গ্রহণ কর্তব্য
ইবনে হাজম এ মতটি পক্ষাবলম্বন করেছেন
কুরআনী দলিল
হাদীসের দলিল
সাহাবিগণের উক্তি
ভিন্ন মতের লোকদের ইবনে হাজমের সমালোচনা
তৃতীয় পরিচ্ছেদঃ মুক্তকরণ ও অগ্রাধিকার দান
দুই পক্ষের মধ্যকার দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে উদঘাটন
পর্যালোচনা ও অগ্রাধিকার দান
ভিন্ন মতের লোকদের দলিল হিসেবে উপস্থাপিত হাদীসসমূহের তাৎপর্য
ষষ্ঠ অধ্যায়ঃ যাকাত ও কর
প্রথম পরিচ্ছেদঃ কর-এর মৌল তত্ত্ব ও যাকাতের মৌল তত্ত্ব
যাকাত ও কর এর পারস্পারিক একত্বের কতিপয় দিক
যাকাত ও কর এর মধ্যে পার্থক্যের দিকসমূহ
যাকাত, ইবাদত ও কর-একসাথে
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদঃ কর ধার্যকরণ ও যাকাত ফরযকরণের দার্শনিক ভিত্তি
কর’ ধার্যকরণের আইনগত ভিত্তি
সামাজিক চুক্তি সংক্রান্ত মতবাদ
রাষ্ট্রের প্রাধান্যের মতবাদ
যাকাত ফরয করার ভিত্তি
শরীয়াত পালনে বাধ্য করার সাধারণ দৃষ্টিকোণ
খলিফা বানানোর মত
ব্যক্তি ও সমষ্টির মধ্যকার দায়িত্ব গ্রহণের মতবাদ
মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব
তৃতীয় পরিচ্ছেদঃ কর ধার্যের ক্ষেত্রে বনাম যাকাত ধার্যের ক্ষেত্রে
প্রথম আলোচনাঃ মুলধনে যাকাত
যাকাতে মূলধন করের বৈশিষ্ট্য আছে-দোষ ত্রুটি নেই
মূলধনের ওপর কর ধার্যের বৈশিষ্ট্য-তার সমর্থকদের দৃষ্টিতে
মূলধনের ওপর কর ধার্যকরণ বিরোধীদের বক্তব্য
মূলধনের ওপর কর ধার্যকরণ কালে অবশ্য গ্রহণীয় সতর্কতা
যাকাত ফরযকরণের এই বিষয়গুলোর ওপর লক্ষ্য আরোপে ইসলামের অগ্রবর্তীতা
দ্বিতীয় আলোচনাঃ আয় ও উৎপন্নের উপর যাকাত
আয়-এর তাৎপর্য
ইসলাম শরীয়াতের আয়ের যাকাত
তৃতীয় আলোচনাঃ ব্যক্তিদের উপর ধার্য যাকাত
ব্যক্তিদের উপর ধার্য কর
বিশেষত্ব ও দোষ ত্রুটি
ফিতারার যাকাতে ব্যক্তিগণের কর এর মতই সুবিধা
চতুর্থ পরিচ্ছেদঃ কর ও যাকাতের মধ্যে সুবিচারের ভূমিকা
প্রথম আলোচনাঃ সুবিচার ও ন্যায়পরতার ক্ষেত্রে
প্রথমঃ যাকাত ফরয হওয়ার সমতা ও সাম্য
দ্বিতীয়ঃ নিসাবের কম পরিমাণ ধন-মাল বাবদ যাবে
তৃতীয়ঃ জোড়া যাকাত নিষিদ্ধ
চতুর্থঃ কষ্টের পার্থক্যের দরুন যাকাত পরিমাণে পার্থক্য
পঞ্চমঃ করদাতার ব্যক্তিগত অবস্থার প্রতি লক্ষ্য দান
ষষ্ঠঃ সংগতি বিধানে সুবিচার
দ্বিতীয় আলোচনাঃ দৃঢ় প্রত্যয়
তৃতীয় আলোচনাঃ মধ্যম নীতি অনুসরণে
পঞ্চম পরিচ্ছেদঃ কর’ ও যাকাতের’ মধ্যে স্থিতি ও ঊর্ধ্বগামিতা
স্থিতিশীল কর ও ঊর্ধ্বগামী কর
যাকাত ঊর্ধ্বমুখী নীতিতে গ্রহণ করা হয় না কেন
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদঃ কর-এর নিশ্চয়তা যাকাতের নিশ্চয়তা
কর’ ফাঁকি দেয়া
কর’ ফাকি দেয়ার কারণ
কর’ ফাঁকি দেয়ার ধরণ ও পদ্ধতি কর ফাঁকি দেয়ার ক্ষতি
ফাঁকি প্রতিরোধ ও কর দেয়া নিশ্চিতকরণ
ইসলামী শরীয়াতে যাকাতের নিশ্চয়তা
দ্বীনী ও নৈতিক নিশ্চয়তা
আইনগত ও সাংগঠনিক নিশ্চয়তা
যাকাত সংগ্রহকারীদের সহযোগিতা করা ও কোন জিনিস গোপন না করার নির্দেশ
যাকাত এড়ানোর কৌশল অবলম্বণ নিষিদ্ধ
যাকাত দিতে অস্বীকারকারীর অপরাধ ও আর্থিক দন্ড
সপ্তম পরিচ্ছেদঃ যাকাতের পরও কি কর ধার্য হবে
প্রথম আলোচনাঃ যাকাতের পাশাপাশি কর ধার্যকরণ জায়েয হওয়ার দলিল
প্রথমঃ সামষ্টিক দায়িত্ব গ্রহণ কর্তব্য
দ্বিতীয়ঃ যাকাত ব্যয় ক্ষেত্র সুনির্দিষ্ট, রাষ্ট্রের আর্থিক দায়িত্ব বহু
তৃতীয় শরীয়াতের সর্বাত্মক নিয়ম
চতুর্থঃ মাল দিয়ে জিহাদ এবং বড় পরিমাণ ব্যয়ের দাবি
পঞ্চমঃ জনসম্পদের লাভবান হওয়া
দ্বিতীয় আলোচনাঃ কর ধার্যকরণের অবশ্য পালনীয় শর্তাবলী
প্রথম শর্তঃ অর্থের প্রকৃত প্রয়োজন- অন্য আয়সূত্র না থাকা
দ্বিতীয় শর্তঃ কর-এর বোঝা ইনসাফ সহকারের বন্টন
তৃতীয় শর্তঃ জাতীয় কল্যাণে ব্যয় করতে হবে পাপ ও নির্লজ্জতার কাজে নয়
চতুর্থ শর্তঃ উপদেষ্টা পরিষদ ও জনমতের সামঞ্জস্য রক্ষা
পরামর্শ করা কুরআন সুন্নাহর প্রমাণে ফরয
পরামর্শ কি জ্ঞানদানকারী না বাধ্যতামূলক
তৃতীয় আলোচনাঃ কর ধার্যের বিরোধীদের সংশয়
প্রথম সংশয়ঃ ধন-মালের যাকাত ছাড়া আর কিছু প্রাপ্য নেই
দ্বিতীয় সংশয়ঃ ব্যক্তিগত মালিকানার মর্যাদা রক্ষা
তৃতীয় সংশয়ঃ কর ও শুল্ক ধার্যকারণের বিরুদ্ধে বর্ণিত হাদীস প্রথম সংশয়ের জবাব
তৃতীয় সংশয়ের জবাবঃ শুল্ক কর শরীয়াতসম্মত কর নয়
মুসলমানদের عشور মুক্তি সংক্রান্ত হাদীসের তাৎপর্য
আবূ উবাইদের ব্যাখ্যা
তিরমিযীর ব্যাখ্যা
আল মুনাভীর অভিমত ও তার পর্যালোচনা
চার মাযহাবের ফিকাহবিদগণ সুবিচারপূর্ণ কর জায়েয মনে করেন
হানাফী ফিকাহতে
অবশিষ্ট তিনটি মাযহাবের ফিকাহতে
অত্যাচারমূলক কর পর্যায়ে ফিকহী খুঁটিনাটি
অষ্টম পরিচ্ছেদ যাকাতের পর কর ধার্যের প্রয়োজন হবে না
মুসলিম জীবনের বাস্তব বৈপরীত্য
এই বৈপরীত্য সৃষ্টিতে সম্রাজ্যবাদের প্রভাব
যাকাতের ব্যাপারে ইসলামী সরকারের দায়িত্ব
সরকার যাকাত না নিলে ব্যক্তির দায়িত্ব কি
কর দিয়েই যাকাতের দায়িত্ব থেকে মুক্তির ফতোয়া
অধিকাংশ আলিম কর বা مكس কে যাকাত পর্যায়ের মনে করেন না
ইবনে হাজার হায়সামীর বক্তব্য
ইবনে আবেদীনের বক্তব্য
শায়খ আলী শের ফতোয়া
সাইয়্যেদ রশীদ রিজর ফতোয়া
শায়খ শালতুতের ফতোয়া
শায়খ আবু জুহরার অভিমত
সার কথা
উপসংহার
ইসলামের যাকাত এক অভিনব ও অনন্য ব্যবস্থা
যাকাত একটা আর্থিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
তা একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা
তা একটি নৈতিক ব্যবস্থা
সর্বোপরি তা একটা দ্বীনী ব্যবস্থা
যাকাতের পক্ষে ভিন্নমতের লোকদের সাক্ষ্য
মুসলিম সমাজ সংস্কারকদের কথা
ইসলামের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্যে যাকাত আদায়
বাধ্যতামূলক করাই যথেষ্ট
যাকাত উম্মতের কাছ থেকে ও তাদের প্রতি
মুসলিম সমাজে যাকাতের ভূমিকা
ইসলামে যাকাতের উজ্জ্বলতম দিক
শেষ কথা
ইসলামের যাকাত বিধান
দ্বিতীয় খন্ড
بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহর বিধান
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
লোকদের ধন-মাল থেকে যাকাত গ্রহণ কর, তার দ্বারা তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ কর এবং তাদের জন্যে কল্যাণের দো’আ কর। নিঃসন্দেহে তোমার এই দো’আ তাদের জন্যে পরম সান্ত্বনার কারণ। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ।
প্রথম অধ্যায়
যাকাত ব্যয়ের খাত
ফকীর ও মিসকীন
(যাকাত আদায় ও বন্টন কাজে) নিয়োজিত কর্মচারীবৃন্দ
যেসব লোকের মন জয়ের প্রয়োজন
দাস মুক্তকরণ
ঋণগ্রস্ত লোক
আল্লাহর পথে
নিঃস্ব পথিক
যাকাত পাওয়ার অধিকারী বিভিন্ন প্রকার লোকদের সম্পর্কে বিছিন্ন আলোচনা
যেসব ব্যক্তির জন্যে যাকাত ব্যয় করা হবে না

তারাবিহ নামাজ

তারাবিহ নামাজ
এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, একে ‘তারাবিহ নামাজ’ বলা হয়। আরবি ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা।
রমজান মাসের জন্য নির্দিষ্ট তারাবিহ নামাজ জামাতে পড়া ও সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে তারাবিহ নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে পড়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তারাবি নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা ও কোরআন শরিফ খতম করা অধিক সওয়াবের কাজ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তারাবিহ নামাজের জন্য রাতের কোনো বিশেষ সময়কে নির্দিষ্ট করে দেননি। তবে তারাবিহ নামাজ অবশ্যই এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ববর্তী সময়ের মধ্যে আদায় করতে হবে।
তারাবি নামাজের নিয়ত
نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر.
(নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা, রকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা’আলা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।)
অর্থ: আমি ক্বিবলামুখি হয়ে দু’রাকাআত তারাবিহ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামাযের নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার।

তারাবি নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া
سبحان ذى الملك والملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبة والقدرة والكبرياء والجبروت . سبحان الملك الحى الذى لاينام ولا يموت ابدا ابدا سبوح قدوس ربنا ورب الملئكة والروح.
উচ্চারণ: সুব্হানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি সুবহানাযিল ইযযাতি ওয়াল আযমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারূত। সুব্হানাল মালিকিল হায়্যিল্লাযি লা-ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। দরুদ ও সালাম তাঁর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি, যিনি সমগ্র বিশ্বমানবতার নবী, নবীকূলের শিরোমনি সৃষ্টিকুলের রহমত ও কল্যাণের প্রতীক। মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর এবাদাত বন্দেগীর উদ্যেশ্যে। সেই এবাদত এর অন্যতম একটি হল নামায আদায় করা। তাই সঠিকভাবে নামাজ আদায় করতে হলে সঠিক পদ্ধিতে আদায় করতে হবে। না হয় আমাদের এবাদত কবুল হবে না।আমাদের মধ্যে অনেকেই নামাজ আদায়ের সঠিক নিয়ম-পদ্ধতি জানি না। আজ সে সব বন্ধুদের জন্য নিয়ে এলাম সহীহ নামাজ শিক্ষা। এ বইটিতে আপনি যা যা জানতে পারবেন তা নিম্ন রুপঃ
০১। নামাজ সম্পর্কিত জরুরী কিছু আলোচনা (কোরআন ও হাদীসের আলোকে)।
০২। নামাজের ফযীলত।
০৩। তাহারাত (পবিত্রতা) ওজু ও গোসলের মাসআ’লা।
০৪। ফরয নামাজ
০৫। নামাজ যে ভাবে আদায় করবেন।
০৬। জামাতের সহিত নামাজ।
০৭। জুমআ’র নামাজ।
০৮। মুসাফিরের নামাজ।
০৯। মাসনূন যিকরসমূহ
১০। সুন্নত নামায
- See more at: http://answerglobe.com/e-books/4408#sthash.kVpPTxk0.dpuf
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। দরুদ ও সালাম তাঁর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি, যিনি সমগ্র বিশ্বমানবতার নবী, নবীকূলের শিরোমনি সৃষ্টিকুলের রহমত ও কল্যাণের প্রতীক। মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর এবাদাত বন্দেগীর উদ্যেশ্যে। সেই এবাদত এর অন্যতম একটি হল নামায আদায় করা। তাই সঠিকভাবে নামাজ আদায় করতে হলে সঠিক পদ্ধিতে আদায় করতে হবে। না হয় আমাদের এবাদত কবুল হবে না।আমাদের মধ্যে অনেকেই নামাজ আদায়ের সঠিক নিয়ম-পদ্ধতি জানি না। আজ সে সব বন্ধুদের জন্য নিয়ে এলাম সহীহ নামাজ শিক্ষা। এ বইটিতে আপনি যা যা জানতে পারবেন তা নিম্ন রুপঃ
০১। নামাজ সম্পর্কিত জরুরী কিছু আলোচনা (কোরআন ও হাদীসের আলোকে)।
০২। নামাজের ফযীলত।
০৩। তাহারাত (পবিত্রতা) ওজু ও গোসলের মাসআ’লা।
০৪। ফরয নামাজ
০৫। নামাজ যে ভাবে আদায় করবেন।
০৬। জামাতের সহিত নামাজ।
০৭। জুমআ’র নামাজ।
০৮। মুসাফিরের নামাজ।
০৯। মাসনূন যিকরসমূহ
১০। সুন্নত নামায
- See more at: http://answerglobe.com/e-books/4408#sthash.kVpPTxk0.dpuf

৭ বীরশ্রেষ্ঠের জীবনী ও শাহাদাত বরণের ইতিহাস

৭ বীরশ্রেষ্ঠের জীবনী ও শাহাদাত বরণের ইতিহাস

৭ বীরশ্রেষ্ঠের জীবনী ও শাহাদাত বরণের ইতিহাস পাঠকই লেখক ডেস্ক: ১৯৭৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বরে সরকারি গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ ও অদম্য সাহসিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতির সেরা বীর সন্তানদেরকে শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রীয় সম্মান ও উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এদের মধ্যে মরণোত্তর সাতজন সর্বশ্রেষ্ঠ উপাধি ‘বীরশ্রেষ্ঠ’, ৬৮ জন ‘বীর উত্তম’, ১৭৫ জন ‘বীর বিক্রম’ এবং ৪২৬ জন ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন। শহীদ সাত বীরশ্রেষ্ঠরা হলেন রাইফেলস-এর ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ও ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ, সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর, সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ও সিপাহি মোহাম্মদ হামিদুর রহমান, নৌবাহিনীর ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিন এবং বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁরা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত আছেন। তাঁরা আমাদের গৌরবের অহঙ্কার। এই বীর সন্তানেরা এখন কে কীভাবে কোথায় শোয়ে আছেন তা দেখার আগে আসুন আমরা আরেকবার অবনত চিত্তে শ্রদ্ধা জানাই তাঁদের জীবন ও বীরোচিত গৌরব গাথাকে গর্বভরে স্মরণ করে। ১. বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর (মার্চ ৭, ১৯৪৯- ডিসেম্বর ১৪, ১৯৭১) : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। জন্ম ও শিক্ষাজীবন: মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর ১৯৪৯ সালে বরিশালের বাবুগঞ্জ থানার রহিমগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল মোতালেব হাওলাদার। তিনি ১৯৬৪ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন এবং ১৯৬৬ তে আই.এস.সি পাশ করার পর বিমান বাহিনীতে যোগদানের চেষ্টা করেন, কিন্তু চোখের অসুবিধা থাকায় ব্যর্থ হন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই পাকিস্তান সামরিক একাডেমীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৮-র ২ জুন তিনি ইঞ্জিনিয়ার্স কোরে কমিশন লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা: ১৯৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় তিনি পাকিস্তানে ১৭৩ নম্বর ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটেলিয়ানে কর্তব্যরত ছিলেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি ছুটে এসেছিলেন পাকিস্তানের দুর্গম এলাকা অতিক্রম করে। তবে ৩ জুলাই পাকিস্তানে আটকে পড়া আরো তিনজন অফিসারসহ তিনি পালিয়ে যান ও পরে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার মেহেদীপুরে মুক্তিবাহিনীর ৭নং সেক্টরে সাব সেক্টর কমান্ডার হিসাবে যোগ দেন। তিনি সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হকের অধীনে যুদ্ধ করেন। বিভিন্ন রণাঙ্গনে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখানোর কারণে তাঁকে রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ দখলের দায়িত্ব দেয়া হয়। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে বিজয় সুনিশ্চিত করেই তিনি শহীদ হয়েছিলেন। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরকে চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক সোনা মসজিদ আঙিনায় সমাহিত করা হয়। যেভাবে শহীদ হলেন: ১০ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর, লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম, লেফটেন্যান্ট আউয়াল ও ৫০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা চাঁপাইনবাবগঞ্জের পশ্চিমে বারঘরিয়া এলাকায় অবস্থান গ্রহণ করেন। ১৪ ডিসেম্বর ভোরে মাত্র ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বারঘরিয়া এলাকা থেকে ৩/৪ টি দেশী নৌকায় করে রেহাইচর এলাকা থেকে মহানন্দা নদী অতিক্রম করেন। নদী অতিক্রম করার পর উত্তর দিক থেকে একটি একটি করে প্রত্যেকটি শত্রু অবস্থানের দখল নিয়ে দক্ষিণে এগোতে থাকেন। তিনি এমনভাবে আক্রমণ পরিকল্পনা করেছিলেন যেন উত্তর দিক থেকে শত্রু নিপাত করার সময় দক্ষিণ দিক থেকে শত্রু কোনকিছু আঁচ করতে না পারে। এভাবে এগুতে থাকার সময় জয় যখন প্রায় সুনিশ্চিত তখন ঘটে বিপর্যয়। হঠাৎ বাঁধের উপর থেকে ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সের ৮/১০ জন সৈনিক দৌড়ে চর এলাকায় এসে যোগ দেয়। এরপরই শুরু হয় পাকিস্তান বাহিনীর অবিরাম ধারায় গুলিবর্ষন। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর জীবনের পরোয়া না করে সামনে এগিয়ে যান। ঠিক সেই সময়ে শত্রুর একটি গুলি এসে বিদ্ধ হয় জাহাঙ্গীরের কপালে। শহীদ হন তিনি। পুরস্কার ও সম্মাননা: মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক বীরশ্রেষ্ঠ পদক দেয়া হয় মহিউদ্দনী জাহাঙ্গীরকে। বরিশালের নিজ গ্রামের নাম তাঁর দাদার নামে হওয়ায় পরিবার ও গ্রামবাসীর ইচ্ছে অনুসারে তাঁর ইউনিয়নের নাম ‘আগরপুর’ পরিবর্তন করে ‘মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর’ ইউনিয়ন করা হয়েছে৷ সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে বরিশাল জেলা পরিষদ ৪৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বীরশ্রেষ্ঠর পরিবারের দান করা ৪০ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মাণ করছে বীরশ্রষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার৷ ২. বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান (২৯শে অক্টোবর, ১৯৪১—২০শে আগস্ট, ১৯৭১): একজন বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত হন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে সর্বোচ্চ সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান তাদের মধ্যে অন্যতম। জন্ম ও শিক্ষাজীবন: মতিউর রহমান ১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার ১০৯ আগা সাদেক রোডের পৈত্রিক বাড়ি “মোবারক লজ”-এ জন্মগ্রহণ করেন। ৯ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে মতিউর ৬ষ্ঠ। তাঁর বাবা মৌলভী আবদুস সামাদ, মা সৈয়দা মোবারকুন্নেসা খাতুন। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পাস করার পর সারগোদায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ডিস্টিংকশনসহ মেট্রিক পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬১ সালে বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালের জুন মাসে রিসালপুর পি,এ,এফ কলেজ থেকে কমিশন লাভ করেন এবং জেনারেল ডিউটি পাইলট হিসাবে নিযুক্ত হন। এরপর করাচির মৌরীপুরে জেট কনভার্সন কোর্স সমাপ্ত করে পেশোয়ারে গিয়ে জেটপাইলট হন। ১৯৬৫ তে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ফ্লাইং অফিসার অবস্থায় কর্মরত ছিলেন। এরপর মিগ কনভার্সন কোর্সের জন্য পুনরায় সারগোদায় যান। সেখানে ১৯৬৭ সালের ২১ জুলাই তারিখে একটি মিগ-১৯ বিমান চালানোর সময় আকাশে সেটা হঠাৎ বিকল হয়ে গেলে দক্ষতার সাথে প্যারাসুট যোগে মাটিতে অবতরণ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ইরানের রানী ফারাহ দিবার সম্মানে পেশোয়ারে অনুষ্ঠিত বিমান মহড়ায় তিনি ছিলেন একমাত্র বাঙালি পাইলট। রিসালপুরে দু’বছর ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হিসাবে কাজ করার পর ১৯৭০ এ বদলি হয়ে আসেন জেট ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হয়ে। ১৯৭১ এর ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় ছুটিতে আসেন। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা: ১৯৭১ সালের শুরুতে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মতিউর সপরিবারে দুই মাসের ছুটিতে আসেন ঢাকা৷ ২৫ মার্চের কালরাতে মতিউর ছিলেন রায়পুরের রামনগর গ্রামে ৷ পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হয়েও অসীম ঝুঁকি ও সাহসিকতার সাথে ভৈরবে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প খুললেন ৷ যুদ্ধ করতে আসা বাঙালি যুবকদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকলেন ৷ মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা অস্ত্র দিয়ে গড়ে তুললেন একটি প্রতিরোধ বাহিনী ৷ ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বিমান বাহিনী ‘সেভর জেড’ বিমান থেকে তাঁদের ঘাঁটির উপর বোমাবর্ষণ করে ৷ মতিউর রহমান পূর্বেই এটি আশঙ্কা করেছিলেন ৷ তাই ঘাঁটি পরিবর্তনের কারণে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পান তিনি ও তাঁর বাহিনী ৷ এরপর ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল ঢাকা আসেন ও ৯ মে সপরিবারে করাচি ফিরে যান ৷ ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট শুক্রবার ফ্লাইট শিডিউল অনুযায়ী মিনহাজের উড্ডয়নের দিন ছিলো ৷ মতিউর পূর্ব পরিকল্পনা মতো অফিসে এসে শিডিউল টাইমে গাড়ি নিয়ে চলে যান রানওয়ের পূর্ব পাশে ৷ সামনে পিছনে দুই সিটের প্রশিক্ষণ বিমান টি-৩৩ । রশিদ মিনহাজ বিমানের সামনের সিটে বসে স্টার্ট দিয়ে এগিয়ে নিয়ে আসতেই তাঁকে অজ্ঞান করে ফেলে বিমানের পেছনের সিটে লাফিয়ে উঠে বসলেন৷ কিন্তু জ্ঞান হারাবার আগে মিনহাজ বলে ফেললেন, তিনিসহ বিমানটি হাইজ্যাকড হয়েছে । ছোট পাহাড়ের আড়ালে থাকায় কেউ দেখতে না পেলেও কন্ট্রোল টাওয়ার শুনতে পেল তা ৷ বিমানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মতিউর বিমান নিয়ে ছুটে চললেন৷ রাডারকে ফাঁকি দেবার জন্য নির্ধারিত উচ্চতার চেয়ে অনেক নিচ দিয়ে বিমান চালাচ্ছিলেন তিনি ৷ যেভাবে শহীদ হলেন: ২৫ মার্চের ঘটনায় তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হন। পরে তিনি দৌলতকান্দিতে জনসভা করেন এবং বিরাট মিছিল নিয়ে ভৈরব বাজারে যান। পাক-সৈন্যরা ভৈরব আক্রমণ করলে বেঙ্গল রেজিমেন্টে ই,পি,আর-এর সঙ্গে থেকে প্রতিরোধ বুহ্য তৈরি করেন। এর পরই কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে জঙ্গি বিমান দখল এবং সেটা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ২০ই আগস্ট সকালে করাচির মৌরিপুর বিমান ঘাঁটিতে তারই এক ছাত্র রশীদ মিনহাজের কাছ থেকে একটি জঙ্গি বিমান ছিনতাই করেন। কিন্তু রশীদ এ ঘটনা কন্ট্রোল টাওয়ারে জানিয়ে দিলে, অপর চারটি জঙ্গি বিমান মতিউরের বিমানকে ধাওয়া করে। এ সময় রশীদের সাথে মতিউরের ধ্বস্তাধস্তি চলতে থাকে এবং এক পর্যায়ে রশীদ ইজেক্ট সুইচ চাপলে মতিউর বিমান থেকে ছিটকে পড়েন এবং বিমান উড্ডয়নের উচ্চতা কম থাকায় রশীদ সহ বিমানটি ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৫ মাইল দূরে থাট্টা এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। মতিউরের সাথে প্যারাসুট না থাকাতে তিনি নিহত হন। তাঁর মৃতদেহ ঘটনাস্থল হতে প্রায় আধ মাইল দূরে পাওয়া যায়। রশীদকে পাকিস্তান সরকার সম্মানসূচক খেতাব দান করে। প্রসঙ্গতঃ একই ঘটনায় দুই বিপরীত ভূমিকার জন্য দুইজনকে তাদের দেশের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক খেতাব প্রদানের এমন ঘটনা বিরল। মতিউরকে করাচির মাসরুর বেসের চতুর্থ শ্রেণীর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। ২০০৬ সালের ২৩ জুন মতিউর রহমানের দেহাবশেষ পাকিস্তান হতে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তাঁকে পূর্ণ মর্যাদায় ২৫শে জুন শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে পুনরায় দাফন করা হয়। ৩. বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ হামিদুর রহমান (জন্ম:২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৩ – মৃত্যু: ২৮ অক্টোবর, ১৯৭১): বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে। মাত্র ১৮ বছর বয়সে শহীদ হওয়া হামিদুর রহমান সাত জন বীর শ্রেষ্ঠ পদকপ্রাপ্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। জন্ম ও শিক্ষাজীবন: মোহাম্মদ হামিদুর রহমান জন্ম ১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তদানিন্তন যশোর জেলার (বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলা) মহেশপুর উপজেলার খোরদা খালিশপুর গ্রামে।তাঁর পিতার নাম আব্বাস আলী মন্ডল এবং মায়ের নাম মোসাম্মাৎ কায়সুন্নেসা। শৈশবে তিনি খালিশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরবর্তীকালে স্থানীয় নাইট স্কুলে সামান্য লেখাপড়া করেন। কর্মজীবন: ১৯৭০ সালে হামিদুর যোগ দেন সেনাবাহিনীতে সিপাহী পদে৷ তাঁর প্রথম ও শেষ ইউনিট ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট৷ সেনাবাহিনীতে ভর্তির পরই প্রশিক্ষণের জন্য তাঁকে পাঠানো হলো চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারে৷ ২৫ মার্চের রাতে চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ওখানকার আরও কয়েকটি ইউনিটের সমন্বয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়৷ মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে চাকরীস্থল থেকে নিজ গ্রামে চলে আসেন। বাড়ীতে একদিন থেকে পরদিনই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য চলে যান সিলেট জেলার শ্রীমঙ্গল থানার ধলই চা বাগানের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ধলই বর্ডার আউটপোস্টে। তিনি ৪নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে হামিদুর রহমান ১ম ইস্টবেঙ্গলের সি কোম্পানির হয়ে ধলই সীমান্তের ফাঁড়ি দখল করার অভিযানে অংশ নেন। ভোর চারটায় মুক্তিবাহিনী লক্ষ্যস্থলের কাছে পৌছে অবস্থান নেয়। সামনে দু প্লাটুন ও পেছনে এক প্লাটুন সৈন্য অবস্থান নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে শত্রু অভিমুখে। শত্রু অবস্থানের কাছাকাছি এলে একটি মাইন বিস্ফোরিত হয়। মুক্তিবাহিনী সীমান্ত ফাঁড়ির খুব কাছে পৌছে গেলেও ফাঁড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত হতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিবর্ষণের জন্য আর অগ্রসর হতে পারছিলো না। অক্টোবরের ২৮ তারিখে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পাকিস্তান বাহিনীর ৩০এ ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্টের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশ নেয়। মুক্তিবাহিনী পাকিস্তান বাহিনীর মেশিনগান পোস্টে গ্রেনেড হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। গ্রেনেড ছোড়ার দায়িত্ব দেয়া হয় হামিদুর রহমানকে। তিনি পাহাড়ি খালের মধ্য দিয়ে বুকে হেঁটে গ্রেনেড নিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। দুটি গ্রেনেড সফলভাবে মেশিনগান পোস্টে আঘাত হানে, কিন্তু তার পরপরই হামিদুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। সে অবস্থাতেই তিনি মেশিনগান পোস্টে গিয়ে সেখানকার দুই জন পাকিস্তানী সৈন্যের সাথে হাতাহাতি যুদ্ধ শুরু করেন। এভাবে আক্রণের মাধ্যমে হামিদুর রহমান এক সময় মেশিনগান পোস্টকে অকার্যকর করে দিতে সক্ষম হন। এই সুযোগে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল উদ্যমে এগিয়ে যান, এবং শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে সীমানা ফাঁড়িটি দখল করতে সমর্থ হন। কিন্তু হামিদুর রহমান বিজয়ের স্বাদ আস্বাদন করতে পারেননি, ফাঁড়ি দখলের পরে মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হামিদুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে। হামিদুর রহমানের মৃতদেহ সীমান্তের অল্প দূরে ভারতীয় ভূখন্ডে ত্রিপুরা রাজ্যের হাতিমেরছড়া গ্রামের স্থানীয় এক পরিবারের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। নীচু স্থানে অবস্থিত কবরটি এক সময় পানির তলায় তলিয়ে যায়। ২০০৭ সালের ২৭শে অক্টোবর বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার হামিদুর রহমানের দেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১০ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাইফেলসের একটি দল ত্রিপুরা সীমান্তে হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ গ্রহণ করে, এবং যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে কুমিল্লার বিবিরহাট সীমান্ত দিয়ে শহীদের দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ১১ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে ঢাকার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। পুরস্কার ও সম্মাননা: মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক বীরশ্রেষ্ঠ পদক দেয়া হয় সিপাহী হামিদুর রহমানকে। এছাড়া তাঁর নিজের গ্রাম ‘খোর্দ খালিশপুর’-এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় হামিদনগর৷ এই গ্রামে তাঁর নামে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়৷ ঝিনাইদহ সদরে রয়েছে একটি স্টেডিয়াম৷ ১৯৯৯ সালে খালিশপুর বাজারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি কলেজ ৷ স্বাধীনতার ৩৬ বছর পর এই শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর গ্রামে লাইব্রেরি ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়৷ ১২ জুন ২০০৭ সালে এই কলেজ প্রাঙ্গণে ৬২ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে শুরু হয় এই নির্মাণ কাজ৷ ৪. বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল (জন্ম: ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৪৭- এপ্রিল ৮, ১৯৭১) : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। জন্ম ও শিক্ষাজীবন: মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান থানার পশ্চিম হাজীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাবিবুর রহমান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার ছিলেন। শৈশব থেকেই দুঃসাহসী হিসেবে খ্যাত ছিলেন। পড়াশোনা বেশিদূর করতে পারেননি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর উচচ বিদ্যালয়ে দু-এক বছর অধ্যয়ন করেন। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা: ১৯৬৭-র ১৬ ডিসেম্বর বাড়ী থেকে পালিয়ে গিয়ে সেনাবাহিনীতে চাকরি গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক। ১৯৭১-এর প্রথম দিকে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠানো হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে তিনটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তোলে এন্ডারসন খালের পাঁড়ে। আখাউড়ায় অবস্থিত চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট দক্ষিণ দিক থেকে নিরাপত্তার জন্য দরুইন গ্রামের দুই নম্বর প্লাটুনকে নির্দেশ দেয়। সিপাহী মোস্তফা কামাল ছিলেন দুই নম্বর প্লাটুনে। কর্মতৎপরতার জন্য যুদ্ধের সময় মৌখিকভাবে তাঁকে ল্যান্স নায়েকের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। যেভাবে শহীদ হলেন: ১৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য কুমিল্লা-আখাউড়া রেললাইন ধরে উত্তর দিকে এগুতে থাকে। ১৭ই এপ্রিল পরদিন ভোরবেলা পাকিস্তান সেনাবাহিনী দরুইন গ্রামে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের উপর মর্টার ও আর্টিলারীর গোলাবর্ষণ শুরু করলে মেজর শাফায়াত জামিল ১১ নম্বর প্লাটুনকে দরুইন গ্রামে আগের প্লাটুনের সাথে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেন। ১১ নম্বর প্লাটুন নিয়ে হাবিলদার মুনির দরুইনে পৌছেন। সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল তার নিকট থেকে গুলি নিয়ে নিজ পরিখায় অবস্থান গ্রহণ করেন। বেলা ১১ টার দিকে শুরু হয় শত্রুর গোলাবর্ষণ। সেই সময়ে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। সাড়ে ১১টার দিকে মোগরা বাজার ও গঙ্গা সাগরের শত্রু অবস্থান থেকে গুলি বর্ষিত হয়। ১২ টার দিকে আসে পশ্চিম দিক থেকে সরাসরি আক্রমণ। প্রতিরক্ষার সৈন্যরা আক্রমণের তীব্রতায় বিহ্বল হয়ে পড়ে। কয়েক জন শহীদ হন। মোস্তফা কামাল মরিয়া হয়ে পাল্টা গুলি চালাতে থাকেন। তাঁর পূর্ব দিকের সৈন্যরা পেছনে সরে নতুন অবস্থানে সরে যেতে থাকে এবং মোস্তফাকে যাবার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু তাদের সবাইকে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগের জন্য মোস্তফা পূর্ণোদ্যমে এল.এম.জি থেকে গুলি চালাতে থাকেন। তাঁর ৭০ গজের মধ্যে শত্রুপক্ষ চলে এলেও তিনি থামেননি। এতে করে শত্রু রা তাঁর সঙ্গীদের পিছু ধাওয়া করতে সাহস পায়নি। এক সময় গুলি শেষ হয়ে গেলে, শত্রুর আঘাতে তিনিও লুটিয়ে পড়েন। পুরস্কার ও সম্মাননা: মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক বীরশ্রেষ্ঠ পদক দেয়া হয় মোহাম্মদ মোস্তফা কামালকে। এছাড়া তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজ প্রাঙ্গণের একটি কোণে ভোলা জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লাইব্রেরি ও জাদুঘর নির্মাণ করা হয়। এছাড়া মোস্তফা কামালের নামানুসারে গ্রামের নাম মৌটুপীর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে কামালনগর৷ ৫.বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ(১৯৪৩ – এপ্রিল ৮, ১৯৭১) : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। সংক্ষিপ্ত জীবনী: মুন্সি আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের মে মাসে ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার (পূর্বে বোয়ালমারী উপজেলার অন্তর্গত) সালামতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুন্সি মেহেদী হোসেন এবং মাতার নাম মকিদুন্নেসা। কিশোর বয়সে রউফ-এর পিতা মারা যান। ফলে তিনি উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। তিনি অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৩-র ৮ মে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এ ভর্তি হন। তাঁর রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ১৩১৮৭। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে চট্টগ্রামে ১১ নম্বর উইং এ কর্মরত ছিলেন। সে সময় তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করেন। যেভাবে শহীদ হলেন: ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পনীর সাথে বুড়িঘাটে অবস্থান নেন পার্বত্য চট্টগ্রামে রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি জলপথ প্রতিরোধ করার জন্য ৮ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো ব্যাটেলিয়নের দুই কোম্পানী সৈন্য, সাতটি স্পীড বোট এবং দুটি লঞ্চে করে বুড়িঘাট দখলের জন্য অগ্রসর হয়। তারা প্রতিরক্ষি বূহ্যের সামনে এসে ৩” মর্টার এবং অন্যান্য ভারী অস্ত্র দিয়ে হঠাৎ অবিরাম গোলা বর্ষন শুরু করে। গোলাবৃষ্টির তীব্রতায় প্রতিরক্ষার সৈন্যরা পেছনে সরে বাধ্য হয়। কিন্তু ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ পেছনে হটতে অস্বীকৃতি জানান। নিজ পরিখা থেকে মেশিনগানের গুলিবর্ষণ শুরু করেন। মেশিনগানের এই পাল্টা আক্রমণের ফলে শত্রুদের স্পীড বোট গুলো ডুবে যায়। হতাহত হয় এর আরোহীরা। পেছনের দুটো লঞ্চ দ্রুত পেছনে গিয়ে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে শুরু করে দুরপাল্লার ভারী গোলাবর্ষণ। মর্টারের ভারী গোলা এসে পরে আব্দুর রউফের উপর। লুটিয়ে পড়েন তিনি, নীরব হয়ে যায় তাঁর মেশিনগান। ততক্ষণে নিরাপদ দূরুত্বে সরে যেতে সক্ষম হন তাঁর সহযোদ্ধারা। শহীদ ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধি পার্বত্য জেলা রাঙামাটির নানিয়ার চরে। তাঁর অপরিসীম বীরত্ব,সাহসীকতা ও দেশপ্রেমের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্ব্বোচ সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করে। ৬. বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিন (১৯৩৫ – ডিসেম্বর ১০, ১৯৭১) : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। জন্ম ও শিক্ষাজীবন: মোহাম্মদ রুহুল আমিন ১৯৩৫ সালে নোয়াখালী জেলার বাঘচাপড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আজহার পাটোয়ারী, মাতা জোলখা খাতুন। তিনি বাঘচাপড়া প্রাইমারী স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে আমিষাপাড়া হাই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে জুনিয়র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে পাকিস্তান নৌ-বাহিনীতে যোগদান করেন। কর্মজীবন: মোহাম্মদ রুহুল আমিন আরব সাগরে অবস্থিত মানোরা দ্বীপে পি.এন.এস বাহাদুর-এ প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেন। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর পি.এন.এস. কারসাজে যোগদান করেন। ১৯৫৮ সালে পেশাগত প্রশিক্ষণ শেষ করেন। ১৯৬৫ -তে মেকানিসিয়ান কোর্সের জন্য নির্বাচিত হন। পি.এন.এস. কারসাজে কোর্স সমাপ্ত করার পর আর্টিফিসার পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম পি.এন.এস. বখতিয়ার নৌ-ঘাটিঁতে বদলি হয়ে যান। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে ঘাটিঁ থেকে পালিয়ে যান। ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত অতিক্রম করে ২ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে থেকে বিভিন্ন স্থলযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ নৌ বাহিনী গঠিত হলে কলকাতায় চলে আসেন। ভারত সরকার বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী কে কলকাতার গার্ডেন রিজ ডক ইয়ার্ডে দুটি গানবোট উপহার দেয়। গানবোটের নামকরণ করা হয় ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’। রুহুল আমিন পলাশের প্রধান ইঞ্জিনরুমে আর্টিফিসার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা: ১৯৭১ সালের মার্চে রুহুল আমিন চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন৷ একদিন সবার অলক্ষ্যে সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বের হয়ে পড়েন নৌঘাঁটি থেকে৷ পালিয়ে সীমান্ত পার হয়ে তিনি চলে যান ত্রিপুরা৷ যোগ দেন ২ নং সেক্টরে৷ মেজর শফিউল্লাহ্ নেতৃত্বে ২ নং সেক্টরে তিনি সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং স্থলযুদ্ধের বিভিন্ন অপারেশনে যোগ দেন৷ ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ নৌবাহিনী গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়৷ এ উদ্দেশ্যে নৌবাহিনীর সদস্যদের যাঁরা বিভিন্ন সেক্টর ও সাব-সেক্টরে থেকে মুক্তিযুদ্ধ করছিলেন তাঁদেরকে সেপ্টেম্বর মাসে একত্রিত করা হয় আগরতলায় এবং গঠন করা হয় ১০ নং সেক্টর৷ ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিন নৌবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আগরতলায় একত্রিত হয়ে কলকাতায় আসেন এবং যোগ দেন ১০ নং নৌ সেক্টরে৷ যেভাবে শহীদ হলেন: ৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী যশোর সেনানিবাস দখলের পর ‘পদ্মা’, ‘পলাশ’ এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর একটি গানবোট ‘পানভেল’ খুলনার মংলা বন্দরে পাকিস্তানি নৌ-ঘাটিঁ পি.এন.এস. তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ-এ প্রবেশ করে। ১০ ডিসেম্বর দুপুর ১২ টার দিকে গানবোটগুলো খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে এলে অনেক উচুঁতে তিনটি জঙ্গি বিমানকে উড়তে দেখা যায়। শত্রুর বিমান অনুধাবন করে পদ্মা ও পলাশ থেকে গুলি করার অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু অভিযানের সর্বাধিনায়ক ক্যাপ্টেন মনেন্দ্রনাথ ভারতীয় বিমান মনে করে গুলিবর্ষণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। এর কিছুক্ষণ পরে বিমানগুলো অপ্রত্যাশিত ভাবে নিচে নেমে আসে এবং আচমকা গুলিবর্ষণ শুরু করে। গোলা সরাসরি ‘পদ্মা’ এর ইঞ্জিন রুমে আঘাত করে ইঞ্জিন বিধ্বস্ত করে। হতাহত হয় অনেক নাবিক। ‘পদ্মা’-র পরিণতিতে পলাশের অধিনায়ক লে. কমান্ডার রায় চৌধুরী নাবিকদের জাহাজ ত্যাগের নির্দেশ দেন। রুহুল আমিন এই আদেশে ক্ষিপ্ত হন। তিনি উপস্থিত সবাইকে যুদ্ধ বন্ধ না করার আহ্বান করেন। কামানের ক্রুদের বিমানের দিকে গুলি ছুড়ঁতে বলে ইঞ্জিন রুমে ফিরে আসেন। কিন্তু অধিনায়কের আদেশ অমান্য করে বিমানগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। বিমানগুলো উপূর্যপুরি বোমাবর্ষণ করে পলাশের ইঞ্জিনরুম ধ্বংস করে দেয়। আহত হন তিনি। কিন্তু অসীম সাহসী রুহুল আমিন তারপর-ও চেষ্টা চালিয়ে যান পলাশ কে বাঁচানোর। অবশেষে পলাশের ধ্বংশাবশেষ পিছে ফেলেই আহত রুহুল আমিন ঝাঁপিয়ে পড়েন রূপসা-এ। প্রাণশক্তি-তে ভরপুর এ যোদ্ধা একসময় পাড়ে-ও এসে পৌছান। কিন্তু ততক্ষণে সেখানে ঘৃণ্য রাজাকারের দল অপেক্ষা করছে তার জন্য। আহত এই বীর সন্তান কে তারা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে রূপসা-র পাড়ে-ই। তাঁর বিকৃত মৃতদেহ বেশকিছুদিন সেখানে পড়ে ছিলো অযত্নে, অবহেলায়।: বীরশ্রেষ্ট সম্মান ১৯৭৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর সরকারি গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাতজন বীর সন্তানকে মরণোত্তর বীরশ্রেষ্ঠ উপাধীতে ভূষিত করা হয়। সেই তালিকাতে নাম যুক্ত করা হয় মোহাম্মদ রুহুল আমিনের। সম্মাননা: বীরশ্রেষ্ঠ আর্টিফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিনের জন্মস্থান নোয়াখালীর বাগপাদুরা গ্রামের নাম পরিবর্তন করে এখন রাখা হয়েছে তাঁর নামে আমিননগর৷ বাড়ির সম্মুখে বীরশ্রেষ্ঠর পরিবারের দেয়া ২০ শতাংশ জমিতেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নোয়াখালী জেলা পরিষদ ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছে রুহুল আমিন স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার৷ ৭. বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্সনায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ (ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৯৩৬ – সেপ্টেম্বর ৫, ১৯৭১) : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। সংক্ষিপ্ত জীবনী: ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার মহিষখোলা গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে নূর মোহাম্মদ শেখ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোহাম্মদ আমানত শেখ, মাতা জেন্নাতুন্নেসা। অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারান ফলে শৈশবেই ডানপিটে হয়ে পড়েন। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সপ্তম শ্রেণীর পর আর পড়াশোনা করেননি। নিজ গ্রামেরই সম্পন্ন কৃষক ঘরের মেয়ে তোতাল বিবিকে বিয়ে করেন। ১৯৫৯-এর ১৪ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস বা ইপিআর-এ যোগদান করেন। দীর্ঘদিন দিনাজপুর সীমান্তে চাকরি করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই নূর মোহাম্মদকে দিনাজপুর থেকে যশোর সেক্টরে বদলি করা হয়। এরপর তিনি ল্যান্স নায়েক পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালে যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নং সেক্টরে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করেন।[১] যুদ্ধ চলাকালীন যশোরের শার্শা থানার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদা’র নেতৃত্বে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। যেভাবে শহীদ হলেন: ১৯৭১- এর ৫ সেপ্টেম্বর সুতিপুরে নিজস্ব প্রতিরক্ষার সামনে যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে নূর মোহাম্মদকে অধিনায়ক করে পাঁচ জনের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্ট্যান্ডিং পেট্রোল পাঠানো হয়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হঠাৎ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পেট্রোলটি তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। পেছনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা থেকে পাল্টা গুলিবর্ষণ করা হয়। তবু পেট্রোলটি উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। এক সময়ে সিপাহী নান্নু মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে নূর মোহাম্মদ নান্নু মিয়াকে কাঁধে তুলে নেন এবং হাতের এল.এম.জি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করলে শত্রুপক্ষ পশ্চাৎপসরণ করতে বাধ্য হয়। হঠাৎ করেই শত্রুর মর্টারের একটি গোলা এসে লাগে তাঁর ডান কাঁধে। ধরাশয়ী হওয়া মাত্র আহত নান্নু মিয়াকে বাঁচানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন। হাতের এল.এম.জি সিপাহী মোস্তফাকে দিয়ে নান্নু মিয়াকে নিয়ে যেতে বললেন এবং মোস্তফার রাইফেল চেয়ে নিলেন যতক্ষণ না তাঁরা নিরাপদ দূরুত্বে সরে যেতে সক্ষম হন ততক্ষণে ঐ রাইফেল দিয়ে শত্রুসৈন্য ঠেকিয়ে রাখবেন এবং শত্রুর মনোযোগ তাঁর দিকেই কেন্দ্রীভুত করে রাখবেন। অন্য সঙ্গীরা তাদের সাথে অনুরোধ করলেন যাওয়ার জন্যে। কিন্তু তাঁকে বহন করে নিয়ে যেতে গেলে সবাই মারা পড়বে এই আশঙ্কায় তিনি রণক্ষেত্র ত্যাগ করতে রাজি হলেন না। বাকিদের অধিনায়োকোচিত আদেশ দিলেন তাঁকে রেখে চলে যেতে। তাঁকে রেখে সন্তর্পণে সরে যেতে পারলেন বাকিরা। এদিকে সমানে গুলি ছুড়তে লাগলেন রক্তাক্ত নূর মোহাম্মদ। একদিকে পাকিস্তানী সশস্ত্রবাহিনী, সঙ্গে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্র, অন্যদিকে মাত্র অর্ধমৃত সৈনিক (ই.পি.আর.) সম্বল একটি রাইফেল ও সীমিত গুলি। এই অসম অবিশ্বাস্য যুদ্ধে তিনি শত্রুপক্ষের এমন ক্ষতিসাধন করেন যে তারা এই মৃত্যুপথযাত্রী যোদ্ধাকে বেয়নেট দিয়ে বিকৃত করে চোখ দুটো উপড়ে ফেলে। পরে প্রতিরক্ষার সৈনিকরা এসে পাশের একটি ঝাড় থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে। এই বীরসেনানীকে পরবর্তীতে যশোরের কাশিপুর গ্রামে সমাহিত করা হয়।

স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর বেহেশত, এটা কি সহীহ হাদিস?

স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর বেহেশত, এটা কি সহীহ হাদিস?

স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর বেহেশত, এটা কি সহীহ হাদিস? ইসলাম ডেস্ক: আমাদের সমাজে অধিকাংশ মানুষই মনে করেন স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর বেহেশত। কিন্তু বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে মূলত অন্য একটি সহীহ হাদিস ‘মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত’ জানার পর। এখন প্রশ্ন হলো ‘স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর বেহেশত’ এটি কোন সহীহ হাদিস কি না? মূলত হাদিসের গ্রন্থাবলিতে এই হাদিস সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। সুতরাং এটিকে হাদীস বলা যাবে না। যদিও কিছু বর্ণনায় এর মর্মার্থ পাওয়া যায়। যেমন: হাদীসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে- একবার এক নারী সাহাবী রাসূলের কাছে এলেন নিজের কোনো প্রয়োজনে। যাওয়ার সময় রাসূল [সা] তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি স্বামী আছে? তিনি বললেন, জী, আছে। নবীজী বললেন, তার সাথে তোমার আচরণ কেমন? সে বলল, আমি যথাসাধ্য তার সাথে ভালো আচরণ করার চেষ্টা করি। তখন নবীজী বললেন, হাঁ, তার সাথে তোমার আচরণের বিষয়ে সজাগ থাকো, কারণ সে তোমার জান্নাত বা তোমার জাহান্নাম। (মুআত্তা মালেক, হাদীস ৯৫২) এছাড়া রাসুল (সা.) নারীদেরকে স্বামীর আনুগত্য করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং এর ফযীলতও বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমত আদায় করবে, রমজানের রোজা রাখবে, আপন লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে, স্বামীর আনুগত্য করবে- তখন সে জান্নাতের যেই দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।(সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪১৬৩)

মুমিন ব্যক্তিদের চেনার পাঁচ উপায়

মুমিন ব্যক্তিদের চেনার পাঁচ উপায়

মুমিন ব্যক্তিদের চেনার পাঁচ উপায় ইসলাম ডেস্ক: আমাদের সমাজে অনেকেই আছেন যারা ইসলামের মুখোশ পরে অনেক অন্যায় অবিচার করে থাকে। এই শ্রেণীর মানুষগুলো নামাজের সময় হয়ে ঠিকই আবার নামাজ আদায় করে থাকে। তবে তারা নামাজ আদায় করলেও তাদের মুমিন ব্যক্তি বলা যাবে না। আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তা পবিত্র কোরআনের সূরা আল বাকারার মধ্যে ঘোষণা করেছেন- ‘ওই কিতাবটি প্রকৃত কিতাব, এতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই। যা মুত্তাকিদের জন্য পথপ্রদর্শক। যারা অদৃশ্য বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে, যথাযথভাবে নামাজ প্রতিষ্ঠা রাখে, আমি তাদের যে রিজিক দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে, যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এই কিতাবকে যা আপনার ওপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেই কিতাবের ওপর যা আপনার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে এবং তারা আখেরাতের ওপর নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে। তারাই স্বীয় প্রতিপালকের পক্ষ থেকে হেদায়েতের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং তারাই সফলকাম। [সুরা বাকারা : আয়াত-২, ৩, ৪, ৫] আয়াতে মুমিন ব্যক্তিদের পাঁচটি গুণের কথা বলা হয়েছে। গুণাবলিগুলো হলো- ১। মুমিনের প্রথম গুণ হলো তারা ‘ঈমান বিল গায়েব’ তথা অদৃশ্য বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে। যেমন কবরের আজাব, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি। অর্থাৎ রসুল সা. যেসব অদৃশ্য বিষয়ের সংবাদ দিয়েছেন এবং মানুষ যেসব বিষয় স্বীয় বুদ্ধিবল ও ইন্দ্রিয় গ্রাহ্যের মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করতে অক্ষম, সেসব বিষয়ে পূর্ণ আস্থাশীল হয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে। ২। মুমিনের দ্বিতীয় গুণ হলো তারা যথাযথভাবে নামাজ কায়েম রাখে। কোনো অবস্থাতেই নামাজ ছাড়ে না। কখনো কোনো কারণে নামাজ কাজা হলে তার হৃদয় ক্ষরণ শুরু হয়ে যায়, অর্থাৎ সে নামাজের সব ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব স্বযতেœ ওয়াক্ত মতো আদায় করে। ৩। মুমিনের তৃতীয় গুণ হলো, তারা সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে। তারা কৃপণ কিংবা লোভী নয়। আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার প্রকারসমূহ (১) সম্পদের জাকাত আদায় করা (২) সদকায়ে ফিতর আদায় করা (৩) ফকিরদের দান করা (৪) অভাবিকে ঋণ প্রদান করা (৫) ওয়াক্ফ তথা মসজিদ, মাদ্রাসা, মুসাফিরখানা, মেহমানখানা তৈরিসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা (৬) হজের সফরে ব্যয় করা (৭) আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা (৮) আর্থিক সংকটে জর্জরিত আত্মীয়স্বজনের জন্য ব্যয় করা (৯) মাতা-পিতার জন্য ব্যয় করা, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততির ভরণপোষণের জন্য ব্যয় করা (১০) মেহমানকে আপ্যায়ন করা। [মাআরেফুল কোরআন] ৪। মুমিনের চতুর্থ গুণ হলো- তারা কোরআনের প্রতি ইমান আনার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবসমূহের প্রতিও ইমান আনে। অর্থাৎ আসমানি সমস্ত কিতাব আল্লাহর কালাম, হক ও সত্য এ কথার ওপর ইমান এনে, পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ রহিত হয়ে যাওয়ায় এখন শুধু সর্বশেষ কিতাব তথা আল কোরআনের বিধানের ওপর আমল করে। আল কোরআনকে বোঝার জন্য রসুল (সা.) এর অসংখ্য হাদিস চর্চা করে আর আমলের পদ্ধতিগত দিকগুলো মাজাহেবে আরবাআ (চার মাজহাব) এর ইমামদের এজতেহাদের ওপর নির্ভর করে এবং তার আদেশ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে। মৌলিকভাবে মুমিন ব্যক্তি মনে করে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন, তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার অবকাশ নেই এবং সে এটাও মনে করে, ইসলাম ধর্ম আল্লাহর এমন মনোনীত ও শ্রেষ্ঠ ধর্ম, যার মধ্যে কোনোরূপ বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি করা যাবে না। তাই তো আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, তোমাদের জন্য রসুল সা. যা নিয়ে এসেছেন তা মজবুত করে ধর এবং যার থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক। [সুরা হাশর : আয়াত-৬] ৫। মুমিনের পঞ্চম গুণ হলো, তারা পরকালের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে। বস্তুত পরকালের প্রতি বিশ্বাস থেকেই সৃষ্টি হয় নেক আমলের অনুপ্রেরণা এবং গুনাহের অনুসূচনা। উপরোল্লিখিত গুণের অধিকারী মুমিন মুত্তাকিদের জন্য দুটি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। (১) ওইসব লোকই তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে হেদায়েতপ্রাপ্ত এবং তারা হেদায়েতের ওপর থাকবে অটল অবিচল (২) আর ওইসব লোকের জন্যই ইহকাল ও পরকালের সফলতা রয়েছে। আর রয়েছে জান্নাতের হাজারো নেয়ামত

যে নামাজ আদায় করলে ১২ বছরের সওয়াব পাওয়া যায়

যে নামাজ আদায় করলে ১২ বছরের সওয়াব পাওয়া যায়

যে নামাজ আদায় করলে ১২ বছরের সওয়াব পাওয়া যায় ইসলাম ডেস্ক: মহান আল্লাহ তায়ালা নির্দেশে মুসলামানেরা নিয়মিত সালাত আদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন জিকির আজগার করে থাকেন। তবে এর মধ্যেও বিশেষ কিছু আমল রয়েছে যেগুলো গুনাহ মাফের ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। গুনাহ মাফের তেমনই এক নামাজের নাম আওয়াবীনের নামায। এই নামায আদায় করলে ১২ বছরের গুনাহ হতে মুক্তি পাওয়া যায়। মাগরিবের ফরয এবং সুন্নাতের পর কমপক্ষে ছয় রাকআত এবং সর্বাপেক্ষা বিশ রাকআত নফল নামাযকে আওয়াবীনের নামায বলা হয়। হাদিসে এই ছয় রাকাআত আওয়াবীনের ফযিলতের ১২ বছরের ইবাদত করার সওয়াব অর্জিত হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। অপর এক হাদিসে বিশ রাকআত আদায় করলে জান্নাতে আল্লাহ তার জন্য একটা ঘর তৈরি করবেন বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস: হযরত হুযাইফা (রা) বলেন “আমি নবীজি (সা)-র কাছে এসে তার সাথে মাগরীবের সালাত আদায় করলাম। তিনি মাগরীবের পরে ইশার সালাত পর্যন্ত নফল সালাতে রত থাকলেন।” সহীহ হাদিস। (ইবনু আবী শাইবা, মুসান্নাফ, নসাঈ, সুনানুল কুবরা)। অন্য হাদীসে আনাস (রা) বলেন, সাহাবায়ে কেরাম মাগরীব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে সজাগ থেকে অপেক্ষা করতেন এবং নফল সালাত আদায় করতেন।” হযরত হাসান বসরী বলতেন, ইশার মধ্যবর্তী সময়ের নামাযও রাতের নামায বা তাহাজ্জুদের নামায বলে গণ্য হবে। (বাইহাকী, আস সুনানুল কুবরা

সুন্দরী মেয়েদের খুশি করার ৫ উপায়

সুন্দরী মেয়েদের খুশি করার ৫ উপায়

সুন্দরী মেয়েদের খুশি করার ৫ উপায় এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: অনেকেই বলে থাকে মেয়েদের নাকি মন বোঝা যায় না। তারা কখন কি চায় তা তারা নিজেই জানে না। অনেকেই বলে থাকেন ‘নারী’ শব্দটির মধ্যেপৃথিবীর সমস্ত রহস্যই যেন লুকিয়ে আছে। মেয়েরা সাধারণত ভিন্ন বৈচিত্র্য এবং ভিন্ন রূপের হয়ে থাকে। কিন্তু ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে সব মেয়েরই প্রত্যাশা থাকে একই রকম। যেমন এমন অনেক কথা আছে যেগুলো নারীরা পুরুষদের মুখ থেকে শুনতে ভীষণ পছন্দ করেন। তাই মেয়েদের বিশেষ করে সুন্দরী মেয়েদের খুশি করার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ কিছু বাক্য শিখে নিন। ১.তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে: এটা খুবই সাধারণ একটি কথা যা প্রতিটি নারী তাদের আকাঙ্খিত পুরুষদের কন্ঠ থেকে শুনতে পছন্দ করেন। সেই নারী হোক সুন্দর বা অসুন্দর তবু এই কয়েকটি শব্দ তাদের সুমধুর মনে হয়। ২.তুমি আমার জীবনের প্রথম প্রেম: প্রতিটি মেয়েই চাই তার ভালোবাসার মানুষটি তাকে অনেক বেশি ভালোবাসে এবং তাকে ছাড়া দ্বিতীয় কোনো নারীর দিকে যেন সে না তাকায়। তাই পুরুষ সঙ্গীটির মুখে একজন নারী শুনতে চান যে ‘তুমি আমার জীবনের প্রথমনারী’ এই বাক্যটি। সেটি যদি মিথ্যাও হয়ে থাকে তারপরও তার কাছে সেটি চরম সত্যি কথা। ৩. তুমি আমার জীবনে আছো বলে আমি সবচেয়ে সুখী মানুষ: আপনার জীবন সঙ্গীটি যখন এই ধরনের কথা আপনাকে বলে তখন স্বাভাবিকভাবে আপনার মাঝে একটা গর্ববোধ হতে থাকে। এটিও একজন নারীর শুনতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাক্যগুলোর মধ্যে একটি। ৪.তুমি কি আমার সাথে তোমার সারাটিজীবন কাটাবে: ভিন্ন সত্ত্বার মানুষগুলোর জীবন সঙ্গীকে প্রপোজ করার পদ্ধতিও ভিন্ন হয়ে থাকে। একজন নারী বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে প্রপোজে বেশি খুশি হয়। তার মধ্যে এটি একটি যেমন তুমি কি আমার সাথে তোমার সারাটিজীবন কাটাবে?এ ধরনের বাক্যেও একজন নারী অনেক বেশি খুশি হয়ে থাকেন। ৫. কোনো একটা বিষয়ে যদি পুরুষ সঙ্গীটি জিজ্ঞাসা করে বা জানতে চায় যে এই বিষয়টি সম্পর্কে তুমি কি মনে কর বা কোনো একটা বিষয় সম্পর্কে যদি তার মতামত জিজ্ঞাসা করে তাহলে নারীটি ভীষণ খুশি হয়ে থাকে। তারা ভাবেন যে তাদের মতামতেরওমূল্য দিচ্ছেন তারপুরুষ সঙ্গীটি।

যে আমলে সারা শরীর পবিত্র হয়ে যায়

যে আমলে সারা শরীর পবিত্র হয়ে যায়

যে আমলে সারা শরীর পবিত্র হয়ে যায় ইসলাম ডেস্ক: ওজু নামাজের চাবি এবং নামাজ বেহেশতের চাবি। তাই আমাদের সকলকেই সঠিক নিয়মে ও সঠিক দোয়া পড়ে ওজু করা খুবই দরকার। এ প্রসঙ্গে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘ বিসমিল্লাহ পড়ে যদি কেউ অজু করে, তাহলে আমলনামা লেখার কাজে নিয়োজিত ফেরেশতা তার আমলনামায় সওয়াব লিখতেই থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত এই অজুু নষ্ট না হবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে ডেকে বললেন, “হে আবু হুরায়রা! তুমি যখন অজু করবে, তখন বলো, ‘বিসমিল্লাহি ওয়াল-হামদুলিল্লাহ’। তাহলে তোমার অজু নষ্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত ফেরেশতারা তোমার জন্য সওয়াব লিখতেই থাকবে।’ (তাবরানি : ১২২)। আরেক হাদিসে রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ না বলে, তার অজুই হয় না।’ (তিরমিজি : ২৫)। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ বরকত ও ফজিলত অর্জন করার মতো অজু হয়নি। সুন্নত অনুযায়ী অজু করলে যেসব বরকত ও ফজিলত পাওয়া যায়, সে তা পাবে না। যদিও এই অজুর দ্বারা তার পবিত্রতা অর্জন হয়েছে; কিন্তু অজুর দ্বারা যতটুকু সওয়াব হওয়ার কথা, তা হবে না। কারণ, সে অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়েনি। অন্যত্র বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি বিসমিল্লাহ পড়ে অজু করে, তাহলে তার গোটা শরীর পবিত্র হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি বিসমিল্লাহ ছাড়া অজু করল, সে গোটা শরীরকে পবিত্র করতে পারল না। শুধু অজুর জায়গাগুলো পবিত্র করল।’ (দারা কুতনি : ২৩৯)। চেহারা ধুয়েছে, চেহারা পবিত্র হয়েছে। হাত ধুয়েছে, হাত পবিত্র হয়েছে। পা ধুয়েছে, পা পবিত্র হয়েছে। মাথা মাসেহ করেছে, মাথা পবিত্র হয়েছে। অজুর অঙ্গগুলো পবিত্র হয়েছে ঠিকই; কিন্তু গোটা শরীর তার পবিত্র হয়নি। এজন্য বিসমিল্লাহ পড়ে অজু করা উচিত। তাহলে আল্লাহ তায়ালা পুরো শরীর পবিত্র করে দেবেন। অজু করে নামাজ পড়লে যতক্ষণ অজু থাকবে, ততক্ষণ সওয়াব লেখা হয়। অজুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত। সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। বিসমিল্লাহ দুইভাবে পড়া যায় : ১. বিসমিল্লাহির রহমানি রাহিম, যেটা আমরা পড়ি। ২. ‘বিসমিল্লাহিল আজিম, ওয়াল-হামদুলিল্লাহি আলা-দ্বীনিল ইসলাম’- এভাবেও পড়া যায়।
কাগজ অনলাইন ডেস্ক: ফালাহ ও সফলতা শব্দ দু’টি কোরআন ও হাদিসের বহু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। দুনিয়াবি দৃষ্টিকোণ থেকে সফলতা হচ্ছে সব মনোবাঞ্ছা পূরণ হওয়া, সব ধরনের দুঃখ-কষ্ট থেকে বেঁচে থাকা এবং কোনো অবাঞ্ছিত অবস্থার সম্মুখীন না হওয়া। তবে মানুষের প্রকৃত সফলতা হচ্ছে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সফলতা। আর এই সফলতা অর্জনের জন্য সাতটি গুণ অর্জনের ভূমিকা অনেক বড়।
প্রথম গুণ : নামাজে খুশু-খুজু তথা বিনয়, নম্রতা ও স্থিরতা অর্জন করা। নামাজের অন্য রুকনগুলো হচ্ছে দেহের সমতুল্য, আর ইখলাস ও খুশু-খুজু হচ্ছে প্রাণতুল্য। তাই নামাজের খুশু-খুজুকে মুমিনের সফলতার সর্বপ্রথম শর্ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় গুণ : অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা। এ সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষ যখন অনর্থক কার্যকলাপ বর্জন করে তখন তার ইসলাম সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়। অনর্থক কার্যকলাপ বলতে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, খাদ্য গ্রহণ, নিদ্রা যাওয়া, গৃহ নির্মাণ, মাত্রাতিরিক্ত কাপড়চোপড় তৈরি সবকিছুই বোঝানো হয়েছে। মনে রাখতে হবে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অমূল্য সম্পদ। যারা সফল হতে চায়, তারা কখনও অহেতুক কাজে সময় ব্যয় করতে পারে না।
তৃতীয় গুণ : জাকাত প্রদান করা। জাকাত হচ্ছে ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন, ‘যে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে সে সফলকাম হয়েছে, যে নিজের আত্মাকে কলুষিত করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে।’
চতুর্থ গুণ : যৌনাঙ্গকে হারাম থেকে হেফাজত করা। নিজ স্ত্রী ছাড়া সব পরনারী থেকে নিজেকে হেফাজত করা। অতএব বৈধ ক্ষেত্রেও অস্বাভাবিক পন্থায় বা নিষিদ্ধ সময়ে কামবাসনা পূর্ণ করা হারাম।
পঞ্চম গুণ : আমানতদারি রক্ষা করা। ‘আমানত’ শব্দ দিয়ে ওই দায়িত্ব বোঝায়, যা এমন কোনো ব্যক্তি বহন করে যার ওপর আস্থা ও ভরসা করা হয়। আমানত শব্দটি বহুবচন ব্যবহৃত হওয়ায় সব ধরনের আমানত এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। এই আমানত আল্লাহতায়ালার হক সংক্রান্তও হতে পারে। যেমন- ফরজ, ওয়াজিব বিধিবিধানগুলো আদায় করা। হারাম ও মাকরূহ বিষয়াদি থেকে বিরত থাকা। বান্দার হক সংক্রান্তও হতে পারে। যেমন, কেউ কারও কাছে অর্থ-সম্পদ আমানত রাখল। তাহলে এই আমানত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া পর্যন্ত হেফাজত করা আমানতদারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ ছাড়া কেউ কারও কাছে কোনো গোপন কথা বললেও কথাটি তার কাছে আমানত হিসাবে থাকে। শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া কারও গোপন কথা ফাঁস করাও আমানাতের খেয়ানতি।
ষষ্ঠ গুণ : অঙ্গীকার পূর্ণ করা। অঙ্গীকার বলতে এমন দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বোঝায়, যা কোনো ব্যাপারে উভয় পক্ষ নিজের ওপর অপরিহার্য করে নেয়। এ ধরনের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ভঙ্গ করা বিশ্বাসঘাতকতা ও হারাম। একজন অন্যজনকে কিছু দেয়ার কিংবা কোনো কাজ করে দেয়ার একতরফা যে অঙ্গীকার করে, তাও পূর্ণ করা ওয়াজিব। এ সম্পর্কে হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ওয়াদা হচ্ছে এক ধরনের ঋণ। ঋণ আদায় করা যেমন ওয়াজিব, ওয়াদা পূর্ণ করাও তেমনি ওয়াজিব।
সপ্তম গুণ : নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া। প্রতি নামাজ মুস্তাহাব ওয়াক্তে আদায় করা। ‘সালাত’ শব্দটি বহুবচন ব্যবহার করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বোঝানো হয়েছে।
উপরোক্ত সাতটি গুণের আলোচনা নামাজ দিয়ে শুরু করা হয়েছে এবং নামাজ দিয়েই শেষ করা হয়েছে। উল্লিখিত সাতটি গুণের মধ্যে কিছু গুণ আল্লাহতায়ালার হক সংক্রান্ত, কিছু গুণ বান্দার হক সংক্রান্ত। আর এই সাতটি গুণের মধ্যে শরিয়তের প্রায় মৌলিক বিধিবিধানগুলো এসে গেছে।
উল্লিখিত সাতটি গুণে গুণান্বিত লোকদের জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী বলা হয়েছে। তবে তাদের জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী বলে এই দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, মৃত ব্যক্তির সম্পদ যেমন উত্তরাধিকারীদের হাতে আসার বিষয়টি সুনিশ্চিত, অনুরূপ এই সাতটি গুণের অধিকারী ব্যক্তিদেরও জান্নাত লাভের বিষয়টি সুনিশ্চিত।
- See more at: http://www.bhorerkagoj.net/online/2015/06/25/89065.php#sthash.FtMm52R
কাগজ অনলাইন ডেস্ক: ফালাহ ও সফলতা শব্দ দু’টি কোরআন ও হাদিসের বহু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। দুনিয়াবি দৃষ্টিকোণ থেকে সফলতা হচ্ছে সব মনোবাঞ্ছা পূরণ হওয়া, সব ধরনের দুঃখ-কষ্ট থেকে বেঁচে থাকা এবং কোনো অবাঞ্ছিত অবস্থার সম্মুখীন না হওয়া। তবে মানুষের প্রকৃত সফলতা হচ্ছে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সফলতা। আর এই সফলতা অর্জনের জন্য সাতটি গুণ অর্জনের ভূমিকা অনেক বড়।
প্রথম গুণ : নামাজে খুশু-খুজু তথা বিনয়, নম্রতা ও স্থিরতা অর্জন করা। নামাজের অন্য রুকনগুলো হচ্ছে দেহের সমতুল্য, আর ইখলাস ও খুশু-খুজু হচ্ছে প্রাণতুল্য। তাই নামাজের খুশু-খুজুকে মুমিনের সফলতার সর্বপ্রথম শর্ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় গুণ : অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা। এ সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষ যখন অনর্থক কার্যকলাপ বর্জন করে তখন তার ইসলাম সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়। অনর্থক কার্যকলাপ বলতে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, খাদ্য গ্রহণ, নিদ্রা যাওয়া, গৃহ নির্মাণ, মাত্রাতিরিক্ত কাপড়চোপড় তৈরি সবকিছুই বোঝানো হয়েছে। মনে রাখতে হবে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অমূল্য সম্পদ। যারা সফল হতে চায়, তারা কখনও অহেতুক কাজে সময় ব্যয় করতে পারে না।
তৃতীয় গুণ : জাকাত প্রদান করা। জাকাত হচ্ছে ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন, ‘যে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে সে সফলকাম হয়েছে, যে নিজের আত্মাকে কলুষিত করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে।’
চতুর্থ গুণ : যৌনাঙ্গকে হারাম থেকে হেফাজত করা। নিজ স্ত্রী ছাড়া সব পরনারী থেকে নিজেকে হেফাজত করা। অতএব বৈধ ক্ষেত্রেও অস্বাভাবিক পন্থায় বা নিষিদ্ধ সময়ে কামবাসনা পূর্ণ করা হারাম।
পঞ্চম গুণ : আমানতদারি রক্ষা করা। ‘আমানত’ শব্দ দিয়ে ওই দায়িত্ব বোঝায়, যা এমন কোনো ব্যক্তি বহন করে যার ওপর আস্থা ও ভরসা করা হয়। আমানত শব্দটি বহুবচন ব্যবহৃত হওয়ায় সব ধরনের আমানত এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। এই আমানত আল্লাহতায়ালার হক সংক্রান্তও হতে পারে। যেমন- ফরজ, ওয়াজিব বিধিবিধানগুলো আদায় করা। হারাম ও মাকরূহ বিষয়াদি থেকে বিরত থাকা। বান্দার হক সংক্রান্তও হতে পারে। যেমন, কেউ কারও কাছে অর্থ-সম্পদ আমানত রাখল। তাহলে এই আমানত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া পর্যন্ত হেফাজত করা আমানতদারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ ছাড়া কেউ কারও কাছে কোনো গোপন কথা বললেও কথাটি তার কাছে আমানত হিসাবে থাকে। শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া কারও গোপন কথা ফাঁস করাও আমানাতের খেয়ানতি।
ষষ্ঠ গুণ : অঙ্গীকার পূর্ণ করা। অঙ্গীকার বলতে এমন দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বোঝায়, যা কোনো ব্যাপারে উভয় পক্ষ নিজের ওপর অপরিহার্য করে নেয়। এ ধরনের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ভঙ্গ করা বিশ্বাসঘাতকতা ও হারাম। একজন অন্যজনকে কিছু দেয়ার কিংবা কোনো কাজ করে দেয়ার একতরফা যে অঙ্গীকার করে, তাও পূর্ণ করা ওয়াজিব। এ সম্পর্কে হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ওয়াদা হচ্ছে এক ধরনের ঋণ। ঋণ আদায় করা যেমন ওয়াজিব, ওয়াদা পূর্ণ করাও তেমনি ওয়াজিব।
সপ্তম গুণ : নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া। প্রতি নামাজ মুস্তাহাব ওয়াক্তে আদায় করা। ‘সালাত’ শব্দটি বহুবচন ব্যবহার করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বোঝানো হয়েছে।
উপরোক্ত সাতটি গুণের আলোচনা নামাজ দিয়ে শুরু করা হয়েছে এবং নামাজ দিয়েই শেষ করা হয়েছে। উল্লিখিত সাতটি গুণের মধ্যে কিছু গুণ আল্লাহতায়ালার হক সংক্রান্ত, কিছু গুণ বান্দার হক সংক্রান্ত। আর এই সাতটি গুণের মধ্যে শরিয়তের প্রায় মৌলিক বিধিবিধানগুলো এসে গেছে।
উল্লিখিত সাতটি গুণে গুণান্বিত লোকদের জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী বলা হয়েছে। তবে তাদের জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী বলে এই দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, মৃত ব্যক্তির সম্পদ যেমন উত্তরাধিকারীদের হাতে আসার বিষয়টি সুনিশ্চিত, অনুরূপ এই সাতটি গুণের অধিকারী ব্যক্তিদেরও জান্নাত লাভের বিষয়টি সুনিশ্চিত।
- See more at: http://www.bhorerkagoj.net/online/2015/06/25/89065.php#sthash.FtMm52Ro.dpuf
Untitled-4কাগজ অনলাইন ডেস্ক: ফালাহ ও সফলতা শব্দ দু’টি কোরআন ও হাদিসের বহু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। দুনিয়াবি দৃষ্টিকোণ থেকে সফলতা হচ্ছে সব মনোবাঞ্ছা পূরণ হওয়া, সব ধরনের দুঃখ-কষ্ট থেকে বেঁচে থাকা এবং কোনো অবাঞ্ছিত অবস্থার সম্মুখীন না হওয়া। তবে মানুষের প্রকৃত সফলতা হচ্ছে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সফলতা। আর এই সফলতা অর্জনের জন্য সাতটি গুণ অর্জনের ভূমিকা অনেক বড়।
প্রথম গুণ : নামাজে খুশু-খুজু তথা বিনয়, নম্রতা ও স্থিরতা অর্জন করা। নামাজের অন্য রুকনগুলো হচ্ছে দেহের সমতুল্য, আর ইখলাস ও খুশু-খুজু হচ্ছে প্রাণতুল্য। তাই নামাজের খুশু-খুজুকে মুমিনের সফলতার সর্বপ্রথম শর্ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় গুণ : অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা। এ সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষ যখন অনর্থক কার্যকলাপ বর্জন করে তখন তার ইসলাম সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়। অনর্থক কার্যকলাপ বলতে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, খাদ্য গ্রহণ, নিদ্রা যাওয়া, গৃহ নির্মাণ, মাত্রাতিরিক্ত কাপড়চোপড় তৈরি সবকিছুই বোঝানো হয়েছে। মনে রাখতে হবে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অমূল্য সম্পদ। যারা সফল হতে চায়, তারা কখনও অহেতুক কাজে সময় ব্যয় করতে পারে না।
তৃতীয় গুণ : জাকাত প্রদান করা। জাকাত হচ্ছে ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন, ‘যে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে সে সফলকাম হয়েছে, যে নিজের আত্মাকে কলুষিত করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে।’
চতুর্থ গুণ : যৌনাঙ্গকে হারাম থেকে হেফাজত করা। নিজ স্ত্রী ছাড়া সব পরনারী থেকে নিজেকে হেফাজত করা। অতএব বৈধ ক্ষেত্রেও অস্বাভাবিক পন্থায় বা নিষিদ্ধ সময়ে কামবাসনা পূর্ণ করা হারাম।
পঞ্চম গুণ : আমানতদারি রক্ষা করা। ‘আমানত’ শব্দ দিয়ে ওই দায়িত্ব বোঝায়, যা এমন কোনো ব্যক্তি বহন করে যার ওপর আস্থা ও ভরসা করা হয়। আমানত শব্দটি বহুবচন ব্যবহৃত হওয়ায় সব ধরনের আমানত এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। এই আমানত আল্লাহতায়ালার হক সংক্রান্তও হতে পারে। যেমন- ফরজ, ওয়াজিব বিধিবিধানগুলো আদায় করা। হারাম ও মাকরূহ বিষয়াদি থেকে বিরত থাকা। বান্দার হক সংক্রান্তও হতে পারে। যেমন, কেউ কারও কাছে অর্থ-সম্পদ আমানত রাখল। তাহলে এই আমানত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া পর্যন্ত হেফাজত করা আমানতদারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ ছাড়া কেউ কারও কাছে কোনো গোপন কথা বললেও কথাটি তার কাছে আমানত হিসাবে থাকে। শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া কারও গোপন কথা ফাঁস করাও আমানাতের খেয়ানতি।
ষষ্ঠ গুণ : অঙ্গীকার পূর্ণ করা। অঙ্গীকার বলতে এমন দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বোঝায়, যা কোনো ব্যাপারে উভয় পক্ষ নিজের ওপর অপরিহার্য করে নেয়। এ ধরনের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ভঙ্গ করা বিশ্বাসঘাতকতা ও হারাম। একজন অন্যজনকে কিছু দেয়ার কিংবা কোনো কাজ করে দেয়ার একতরফা যে অঙ্গীকার করে, তাও পূর্ণ করা ওয়াজিব। এ সম্পর্কে হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ওয়াদা হচ্ছে এক ধরনের ঋণ। ঋণ আদায় করা যেমন ওয়াজিব, ওয়াদা পূর্ণ করাও তেমনি ওয়াজিব।
সপ্তম গুণ : নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া। প্রতি নামাজ মুস্তাহাব ওয়াক্তে আদায় করা। ‘সালাত’ শব্দটি বহুবচন ব্যবহার করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বোঝানো হয়েছে।
উপরোক্ত সাতটি গুণের আলোচনা নামাজ দিয়ে শুরু করা হয়েছে এবং নামাজ দিয়েই শেষ করা হয়েছে। উল্লিখিত সাতটি গুণের মধ্যে কিছু গুণ আল্লাহতায়ালার হক সংক্রান্ত, কিছু গুণ বান্দার হক সংক্রান্ত। আর এই সাতটি গুণের মধ্যে শরিয়তের প্রায় মৌলিক বিধিবিধানগুলো এসে গেছে।
উল্লিখিত সাতটি গুণে গুণান্বিত লোকদের জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী বলা হয়েছে। তবে তাদের জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী বলে এই দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, মৃত ব্যক্তির সম্পদ যেমন উত্তরাধিকারীদের হাতে আসার বিষয়টি সুনিশ্চিত, অনুরূপ এই সাতটি গুণের অধিকারী ব্যক্তিদেরও জান্নাত লাভের বিষয়টি সুনিশ্চিত।
- See more at: http://www.bhorerkagoj.net/online/2015/06/25/89065.php#sthash.FtMm52Ro.dpuf
Untitled-4কাগজ অনলাইন ডেস্ক: ফালাহ ও সফলতা শব্দ দু’টি কোরআন ও হাদিসের বহু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। দুনিয়াবি দৃষ্টিকোণ থেকে সফলতা হচ্ছে সব মনোবাঞ্ছা পূরণ হওয়া, সব ধরনের দুঃখ-কষ্ট থেকে বেঁচে থাকা এবং কোনো অবাঞ্ছিত অবস্থার সম্মুখীন না হওয়া। তবে মানুষের প্রকৃত সফলতা হচ্ছে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সফলতা। আর এই সফলতা অর্জনের জন্য সাতটি গুণ অর্জনের ভূমিকা অনেক বড়।
প্রথম গুণ : নামাজে খুশু-খুজু তথা বিনয়, নম্রতা ও স্থিরতা অর্জন করা। নামাজের অন্য রুকনগুলো হচ্ছে দেহের সমতুল্য, আর ইখলাস ও খুশু-খুজু হচ্ছে প্রাণতুল্য। তাই নামাজের খুশু-খুজুকে মুমিনের সফলতার সর্বপ্রথম শর্ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় গুণ : অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা। এ সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষ যখন অনর্থক কার্যকলাপ বর্জন করে তখন তার ইসলাম সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়। অনর্থক কার্যকলাপ বলতে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, খাদ্য গ্রহণ, নিদ্রা যাওয়া, গৃহ নির্মাণ, মাত্রাতিরিক্ত কাপড়চোপড় তৈরি সবকিছুই বোঝানো হয়েছে। মনে রাখতে হবে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অমূল্য সম্পদ। যারা সফল হতে চায়, তারা কখনও অহেতুক কাজে সময় ব্যয় করতে পারে না।
তৃতীয় গুণ : জাকাত প্রদান করা। জাকাত হচ্ছে ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন, ‘যে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে সে সফলকাম হয়েছে, যে নিজের আত্মাকে কলুষিত করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে।’
চতুর্থ গুণ : যৌনাঙ্গকে হারাম থেকে হেফাজত করা। নিজ স্ত্রী ছাড়া সব পরনারী থেকে নিজেকে হেফাজত করা। অতএব বৈধ ক্ষেত্রেও অস্বাভাবিক পন্থায় বা নিষিদ্ধ সময়ে কামবাসনা পূর্ণ করা হারাম।
পঞ্চম গুণ : আমানতদারি রক্ষা করা। ‘আমানত’ শব্দ দিয়ে ওই দায়িত্ব বোঝায়, যা এমন কোনো ব্যক্তি বহন করে যার ওপর আস্থা ও ভরসা করা হয়। আমানত শব্দটি বহুবচন ব্যবহৃত হওয়ায় সব ধরনের আমানত এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। এই আমানত আল্লাহতায়ালার হক সংক্রান্তও হতে পারে। যেমন- ফরজ, ওয়াজিব বিধিবিধানগুলো আদায় করা। হারাম ও মাকরূহ বিষয়াদি থেকে বিরত থাকা। বান্দার হক সংক্রান্তও হতে পারে। যেমন, কেউ কারও কাছে অর্থ-সম্পদ আমানত রাখল। তাহলে এই আমানত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া পর্যন্ত হেফাজত করা আমানতদারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ ছাড়া কেউ কারও কাছে কোনো গোপন কথা বললেও কথাটি তার কাছে আমানত হিসাবে থাকে। শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া কারও গোপন কথা ফাঁস করাও আমানাতের খেয়ানতি।
ষষ্ঠ গুণ : অঙ্গীকার পূর্ণ করা। অঙ্গীকার বলতে এমন দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বোঝায়, যা কোনো ব্যাপারে উভয় পক্ষ নিজের ওপর অপরিহার্য করে নেয়। এ ধরনের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ভঙ্গ করা বিশ্বাসঘাতকতা ও হারাম। একজন অন্যজনকে কিছু দেয়ার কিংবা কোনো কাজ করে দেয়ার একতরফা যে অঙ্গীকার করে, তাও পূর্ণ করা ওয়াজিব। এ সম্পর্কে হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ওয়াদা হচ্ছে এক ধরনের ঋণ। ঋণ আদায় করা যেমন ওয়াজিব, ওয়াদা পূর্ণ করাও তেমনি ওয়াজিব।
সপ্তম গুণ : নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া। প্রতি নামাজ মুস্তাহাব ওয়াক্তে আদায় করা। ‘সালাত’ শব্দটি বহুবচন ব্যবহার করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বোঝানো হয়েছে।
উপরোক্ত সাতটি গুণের আলোচনা নামাজ দিয়ে শুরু করা হয়েছে এবং নামাজ দিয়েই শেষ করা হয়েছে। উল্লিখিত সাতটি গুণের মধ্যে কিছু গুণ আল্লাহতায়ালার হক সংক্রান্ত, কিছু গুণ বান্দার হক সংক্রান্ত। আর এই সাতটি গুণের মধ্যে শরিয়তের প্রায় মৌলিক বিধিবিধানগুলো এসে গেছে।
উল্লিখিত সাতটি গুণে গুণান্বিত লোকদের জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী বলা হয়েছে। তবে তাদের জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী বলে এই দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, মৃত ব্যক্তির সম্পদ যেমন উত্তরাধিকারীদের হাতে আসার বিষয়টি সুনিশ্চিত, অনুরূপ এই সাতটি গুণের অধিকারী ব্যক্তিদেরও জান্নাত লাভের বিষয়টি সুনিশ্চিত।
- See more at: http://www.bhorerkagoj.net/online/2015/06/25/89065.php#sthash.FtMm52Ro.dpuf