আমার জীবনের কিছু কথা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব।আমি যখন প্রথম গ্রামের প্রাইমারি স্কুল ছেড়ে হাই স্কুল এ যাব তখন বাবা বলেছিলেন “যখন তুমি বাসে যাতায়াত করবে তখন বয়জৈষ্টদের শিশুদের নারীদের বসার জন্য নিজের আসন ছেড়ে দেবে।কারোর সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করবে না।মাদক নিবে না”।আরো অনেক কিছু বলেছিলেন সব মনে নেই।
তখন এই কথা গুলো বাবা কেন বলেছেন বুঝিনি।বাবার কথা গুলো তখনি বুঝলাম যখন চাকরি জীবন শুরু করলাম।আগেই বলে নিই আমি বেশিদূর পড়ালেখা করতে পারিনি।কোন রকম ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা শেষ করে চাকরি জীবনে শুরু করেছি।
বাবার কথা মত জীবনে কারোর সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি।মাদক গ্রহন করিনি।বাসে,ট্রেনে যখনি যাতায়াত করেছি বড়দের নিজের সিটে বসতে দিয়েছি।এভাবেই যাচ্ছিলো আমার দিনকাল।
আজও মনে পরে ২০১১ সালের এপ্রিল মাস দিনটি ছিলো বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন।তখন আমি সমাপনি বছরের ছাত্র।আমি রাংগামাটি থকে বাসে করে ছাত্রাবা্সে ফিরছিলাম।বাস কিছুদূর আসার পর আমার মায়ের বয়ষী একজন বৃদ্ধা মহিলা বাসে উঠলেন।রীতিমত কেউ জায়গা ছেড়ে দিয়ে কেউ বসতে দিলেন না।আমি ঠিক বাসের মাঝখানে বসেছিলাম।উনাকে দেখে মায়া হল।আমি উনাকে হাতে ধরে আমার সিটে বসিয়ে দিলাম।তারপর আমি দাঁড়িয়েচ যাচ্ছিলাম।হতাৎ খেয়াল করলাম ওই মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।এমন ভাবে তাকাচ্ছিলেন যেমনি এক মা তার সন্তানের দিকে তাকায়।এভাবে আধা ঘন্টা চলে গেল।তারপর হতাৎ পেছন থকে কেউ যেন “এই বাবু” করে ডেকে উঠলো।পেছনে ফিরে দেখি ওই মহিলা আমাকে ডাকছেন।আমি উনাকে বললাম “জি মাসি কিছু বললেন?”উনি বললেন”আজ শুভ দিন তুমি আমাকে বসতে দিয়েছো আমি তাতে অনেক খুশি হয়েছি ভগবান খুশি হবেন।আমি দোয়া করি যেন তোমার মনের বাসনা পূরণ হয়”।
দেখতে দেখতে ২০১১ সাল কেটে গেলো।১লা জানুয়ারি ২০১২ আমি চাকরির সন্ধানে অচিন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।তখন ঢাকায় কেবল একজন পরিচিত ছিলেন।উনার নাম ছিলো আরাফাত।উনি আমার সিনিয়র।উনার সাথে আমার ফেইস বুকে পরিচয়।কখনো সামনা সামনি দেখা হয়নি।তবে ঢাকা আসার আগে আমার মায়ের ধর্ম ভোনের ছেলের সাথে মোবাইল এ কথা হয়েছিলো উনি বলেছিলেন উনাদের বাসায় উঠতে।২রা জানুয়ারী ২০১২ ওই আমার মায়ের ধর্ম ভোনের ছেলের বাসা বাড্ডায় উঠলাম।৩রা জানুয়ারি ২০১২ UITS এ BSc in EEE তে এডমিশন নিলাম।প্রতিদিন চাকরির খবর পড়তাম আর বায়ো ডাটা পাঠাতাম।পরপর তিনটা ইন্টারভিউ দিলাম।সব প্রশ্নের ঠিক উত্তর দিলাম।মনে হচ্ছিল এই বুঝি চাকরি হবে হবে।কিন্তু হয়নি।কারন এক কোম্পানি নেইনি ওই কোম্পনিতে আমার পরিচিত কেউ নেই বলে।তাদের প্রশ্ন যদি আমি কোন অকারেস্ন ঘটায় তাহলে উনারা কাকে ধরবেন?কে দেবে খতিপূরন।আরো কতকিছু।কিন্তু বাপের ছেলে আমি সোজা উত্তর দিয়েছিলাম “যদি আমাকে এমন মনে হয় তাহলে আমাকে আপনারা নিয়েন না।আর যারা আমাকে এমন মনে করে তাদের চাকরি করার মন আমার ও নেই”।আর দুই কোম্পানি নেয়নি আমার চাকরির অভিজ্ঞতা নেই বলে।আমি তাদের বলেছিলাম “স্যার যদি কেউ ফ্রেশদের ফ্রেশ বলে চাকরিতে না নেয় তা হলে ফ্রেশরা তো আজীবন ফ্রেশ ই থেকে যাবে।তারা কেউ ফ্রেশ বলে চাকরি পাবে না।কেউ যদি চাকরি না দেয় তাহলে ফ্রেশরা কি করবে?চাকরি না পেলে কিভাবে অভিজ্ঞতা হবে?আপনা্রাও তো একদিন আমার মতই ফ্রেশ ই ছিলেন।মায়ের পেট থেকে কেউ চাকরির অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে না।একদিন চাকরি হয় তারপর অভিজ্ঞতা হয়।কিন্তু চাকরি দিবে কে?”।
এভাবে জানুয়ারি ২০১২ চলে গেল।২০-৩০টা কো্মপানিতে বায়ো ডাটা দিলাম তিনটাতে ইন্টারভিউ দিলাম।চাকরি হল না।হতাশ হয়ে গেলাম।২রা ফেব্রুয়ারী সিদ্ধান্ত নিলাম প্রয়োজনে হোটেলের ওয়েটারের চাকরি হলেও করবো।যেই ভাবা সেই কাজ।KFC, Fizza Hut গিয়ে বায়ো ডাটা দিয়ে আসলাম।তাতে হতাশ হলাম।তারা ইন্টারভিউতেও ডাকলো না।তখন মনে মনে ভাবতে লাগলাম কি পড়ালেখা করলাম হোটেলের ওয়েটারের চাকরি ও জুটে না।দিন যত যায় হতাশা তত বেড়ে যায়।২৫শে ফেব্রুয়ারী ২০১২ চূরান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম যদি ফেব্রুয়ায়ী ২০১২ এর মধ্যে চাকরি না হয় তাহলে ঢাকা ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাবো।যায়।২৫শে ফেব্রুয়ারী ২০১২ রাত আনুমানিক ১১টা দুঃখ ভরা ক্লান্ত মন নিয়ে ফেইস বুকে লগিন করলাম।প্রায় দুই মাস ফেইস বুকে লগিন করিনি।লগিন করেই আরাফাত ভাইকে অনলাইনে পেলাম।আরেকটা কথা এতদিন কিন্তু আরাফাত ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ হয়নি ফেইস বুকে লগিন করিনি বলে।আর উনার মোবাইল নাম্বার ও আমার কাছে ছিল না।যা হোক উনাকে চ্যাটিং এ বললাম “ভাই গত জানুয়ারি মাসে ঢাকা এসেছিলাম একটা জব করে পড়ালেখা করব বলে কিন্তু চাকরি পেলাম না তাই আগামি ৪ঠা ফেব্রুয়ারী বাড়ি ফিরে যাবো।“।উনি আমার মোবাইল নাম্বার নিয়ে আমাকে কল করে বললেন “আপনি এতদিন যাবত ঢাকায় আমাকে জানাননি কেন?কাল ই আমার সাথে দেখা করেন”।উল্লেখ্য যে আমি আরাফাত ভায়ের জুনিয়র হলেও উনি আমাকে আপনি করে বলতেন।
পরের দিন ২৬শে ফেব্রুয়ারী ২০১২ আসাদ গেইট আড়ং এর সামনে দেখা করলাম উনি আমাকে দিয়ে ধানমন্ডি ১৫ নাম্বার এ নিয়ে গেলেন।তারপর একটা অফিস দেখিয়ে দিয়ে বললেন “ আগামী কাল এই অফিসে এসে ইন্টারভিউ দিয়ে যাবেন।ওখানে আমার এক পরিচিত বড়ভাই আছেন।আমি আপনার ব্যপারে উনার সাথে কথা বলেছি”।
২৭শে ফেব্রুয়ারী ২০১২ সকাল ৭টা আমি নতুন বাজার বাড্ডা থেকে ওই অফিসে এসে হাজির হলাম।তখন অফিস খুলেনি।তাই হাটতে হাটতে মাকে কল করে বললাম”মা আজ আরেকটা ইন্টারভিউ দিতে এসেছি দোয়া করো যেন চাকরিটা হয়।“সকাল ৭টা-৯টা এ দুই ঘন্টা কিভাবে কেটেছে বুঝাতে পারবো না।মনে মনে ভাবছিলাম এটাই আমার জীবনের শেষ চাস্ন।এই চাকরিটা না হলে আর চাকরি বোধয় হবে না।৯টা বাজার সাথে সাথে অফিসে ঢুকলাম।অফিসের ওয়েটিং রুমে গিয়ে আরো ১৫ জন কেন্ডিডেট দেখে চমকে গেলাম।একে একে সবার সাথে পরিচয় হয়ে আরো বেশি চমকে গেলাম।দেখলাম সবাই বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার।তখন চাকরির আশাটা একে বারেই শেষ হয়ে গেল।যাক ইন্টারভিঊ দিতে গিয়ে দেখা হল আরাফাত ভাইয়ের পরিচিত মঞ্জু স্যারের সাথে।উনি হলেন ওই কোম্পানির মানব সম্পদ ও প্রসাশন বিভাগের প্রধান।
বিকেল ৩টা লিখিত ভাইভা শেষ।কোনটা ভালো হয়নি।কারন প্রশ্ন গুলো ছিলো আইটি রিলেটেড আর আমি ছিলাম ইলেক্ট্রিক্যালের স্টুডেন্ট।যখন ওই অফিস থেকে বের হচ্ছিলাম তখন আমার আমি আর ছিলাম না।চাকরি পাওয়ার আশা ছেরে দিয়েছিলাম।ভাবলাম কয়েকদিন পর তো চিরদিনের জন্য ঢাকা ছেড়ে চলে যাব যাবার আগে একটু ঢাকাটা শেষ বারের মত দেখে যাই।তাই ধানমন্ডি ১৫ নাম্বার থেকে নাতুন বাজার বাড্ডারের উদ্দেশ্য হাটা শুরু করলাম।হাটতে হাটতে আমি মহাখালি আসলাম।তখন আরাফাত ভাই কল দিয়ে জানতে চাইলেন ইন্টারভিউ কেমন হয়েছে।আমি যা সত্য তাই বলে দিলাম ভাই খুব খারাপ হয়েছে।উনি চিন্তা না করতে বললেন।
তারপর আমি আনমনা হয়ে হাটতে লাগলাম।হাটতে হাটতে মনে মনে বলছিলাম কি পাপ করেছি আমি কেউ কেন আমার কষ্ট বুঝে না?আমি কি চাকরি পাওয়ার মত পূণ্য ও করিনি?মনটা ব্যথায় কাঁদছলো।কোন রকম চোখের পানিকে সামলিয়ে হাটছিলাম।হতাৎ মোবাইল টা বেজে উঠলো।মন চাইছিলো না পকেট থেকে মোবাইলটা বের করতে।তারপর ও বের করলাম।দেখলাম অচেনা একটা টিনটি নাম্বার ।অনিচ্ছা নিয়ে হেলো বললাম।ওপাশ থেকে আশার বাণী শুনতে পেলাম।মানে আমার চাকরি হয়েছে।জ়ীবনের অনেক মূল্যবান ছিল সেই কলটি ।এতটাই খুশি হয়েছিলাম যে আমি কোন ভাষায় সেই অনুভূতি প্রকাশ করতে পারব না।
আজ ১২ই ফেব্রুয়ারী ২০১৫।এখন যখন এই লেখা গুলো আমি লেখছি আমি আর সেই আগের জায়গায় আগের প্রথম চাকরিতে নেই।কিন্তু রয়ে গেছি আগের মতই।ভূলিনি আরাফাত ভাইয়ের কথা।ভূলিনি মঞ্জু স্যারের কথা যারা শিখিয়েছেন সৎ ভাবে চাকরি করা যায়।তাই এখনো সৎ ভাবেই চলছি।যেখানে সৎ থাকা যাবে না সেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।এবং কি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আইটি কোম্পানির চাকরিটা ও ছেড়ে দিয়েছি এখন আমি ৪টা চাকরি ছেড়ে ৫ম চাকরিতে।এখন যে কোম্পানিতে চাকরি করি সেটা পৃথিবীর ২য় এগ্রো কোম্পানি।আর হয়ত আর থেমে থাকবো না।
এখন ভোর ৫টা শ্রদ্ধা ভরে ষ্মরণ করছি।আমার মাবাবাকে,সেই মঞ্জু স্যারকে,সেই আরাফাত ভাইকে যারা না থাকলে আমার জীবনটা হয়ত থেমে যেত মাঝ পথে।প্রত্যেক কোম্পানিতে একজন আরাফাত ভাই এক জন মঞ্জু স্যার চাই যারা বুঝবে আমার মত হাজার হাজার বেকার হয়ে পড়ে থাকা ফ্রেশদের দুঃখ বেদনা।স্যালুট আরাফাত ভাই কে স্যালুট মঞ্জু স্যারকে।
আজ ও মনে পড়ে বাসে সেই মহিলাটির কথা যিনি আমাকে দোয়া করেছিলেন বলেই হয়ত আরাফাত ভাই আর মঞ্জু স্যারের মত মহান মানুষের সাক্ষাৎ বা সান্নিধ্য পেয়েছি।
মনে পরে সেই মাকে বাবাকে।যাদের কথা সারাক্ষণ কানে বাজে।যাদের শিক্ষা পেয়ে শ্রদ্ধায় মাথা করি অবনত।আর অন্যায়ের করি প্রতিবাদ।
আমার লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।আহব্বান আসুন গরি মৈত্রীময় পৃথিবী।পৃথিবীকে করে দিই আগামী প্রজন্মের বাসযোগ্য।ভালো থাকবেন।
তখন এই কথা গুলো বাবা কেন বলেছেন বুঝিনি।বাবার কথা গুলো তখনি বুঝলাম যখন চাকরি জীবন শুরু করলাম।আগেই বলে নিই আমি বেশিদূর পড়ালেখা করতে পারিনি।কোন রকম ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা শেষ করে চাকরি জীবনে শুরু করেছি।
বাবার কথা মত জীবনে কারোর সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি।মাদক গ্রহন করিনি।বাসে,ট্রেনে যখনি যাতায়াত করেছি বড়দের নিজের সিটে বসতে দিয়েছি।এভাবেই যাচ্ছিলো আমার দিনকাল।
আজও মনে পরে ২০১১ সালের এপ্রিল মাস দিনটি ছিলো বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন।তখন আমি সমাপনি বছরের ছাত্র।আমি রাংগামাটি থকে বাসে করে ছাত্রাবা্সে ফিরছিলাম।বাস কিছুদূর আসার পর আমার মায়ের বয়ষী একজন বৃদ্ধা মহিলা বাসে উঠলেন।রীতিমত কেউ জায়গা ছেড়ে দিয়ে কেউ বসতে দিলেন না।আমি ঠিক বাসের মাঝখানে বসেছিলাম।উনাকে দেখে মায়া হল।আমি উনাকে হাতে ধরে আমার সিটে বসিয়ে দিলাম।তারপর আমি দাঁড়িয়েচ যাচ্ছিলাম।হতাৎ খেয়াল করলাম ওই মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।এমন ভাবে তাকাচ্ছিলেন যেমনি এক মা তার সন্তানের দিকে তাকায়।এভাবে আধা ঘন্টা চলে গেল।তারপর হতাৎ পেছন থকে কেউ যেন “এই বাবু” করে ডেকে উঠলো।পেছনে ফিরে দেখি ওই মহিলা আমাকে ডাকছেন।আমি উনাকে বললাম “জি মাসি কিছু বললেন?”উনি বললেন”আজ শুভ দিন তুমি আমাকে বসতে দিয়েছো আমি তাতে অনেক খুশি হয়েছি ভগবান খুশি হবেন।আমি দোয়া করি যেন তোমার মনের বাসনা পূরণ হয়”।
দেখতে দেখতে ২০১১ সাল কেটে গেলো।১লা জানুয়ারি ২০১২ আমি চাকরির সন্ধানে অচিন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।তখন ঢাকায় কেবল একজন পরিচিত ছিলেন।উনার নাম ছিলো আরাফাত।উনি আমার সিনিয়র।উনার সাথে আমার ফেইস বুকে পরিচয়।কখনো সামনা সামনি দেখা হয়নি।তবে ঢাকা আসার আগে আমার মায়ের ধর্ম ভোনের ছেলের সাথে মোবাইল এ কথা হয়েছিলো উনি বলেছিলেন উনাদের বাসায় উঠতে।২রা জানুয়ারী ২০১২ ওই আমার মায়ের ধর্ম ভোনের ছেলের বাসা বাড্ডায় উঠলাম।৩রা জানুয়ারি ২০১২ UITS এ BSc in EEE তে এডমিশন নিলাম।প্রতিদিন চাকরির খবর পড়তাম আর বায়ো ডাটা পাঠাতাম।পরপর তিনটা ইন্টারভিউ দিলাম।সব প্রশ্নের ঠিক উত্তর দিলাম।মনে হচ্ছিল এই বুঝি চাকরি হবে হবে।কিন্তু হয়নি।কারন এক কোম্পানি নেইনি ওই কোম্পনিতে আমার পরিচিত কেউ নেই বলে।তাদের প্রশ্ন যদি আমি কোন অকারেস্ন ঘটায় তাহলে উনারা কাকে ধরবেন?কে দেবে খতিপূরন।আরো কতকিছু।কিন্তু বাপের ছেলে আমি সোজা উত্তর দিয়েছিলাম “যদি আমাকে এমন মনে হয় তাহলে আমাকে আপনারা নিয়েন না।আর যারা আমাকে এমন মনে করে তাদের চাকরি করার মন আমার ও নেই”।আর দুই কোম্পানি নেয়নি আমার চাকরির অভিজ্ঞতা নেই বলে।আমি তাদের বলেছিলাম “স্যার যদি কেউ ফ্রেশদের ফ্রেশ বলে চাকরিতে না নেয় তা হলে ফ্রেশরা তো আজীবন ফ্রেশ ই থেকে যাবে।তারা কেউ ফ্রেশ বলে চাকরি পাবে না।কেউ যদি চাকরি না দেয় তাহলে ফ্রেশরা কি করবে?চাকরি না পেলে কিভাবে অভিজ্ঞতা হবে?আপনা্রাও তো একদিন আমার মতই ফ্রেশ ই ছিলেন।মায়ের পেট থেকে কেউ চাকরির অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে না।একদিন চাকরি হয় তারপর অভিজ্ঞতা হয়।কিন্তু চাকরি দিবে কে?”।
এভাবে জানুয়ারি ২০১২ চলে গেল।২০-৩০টা কো্মপানিতে বায়ো ডাটা দিলাম তিনটাতে ইন্টারভিউ দিলাম।চাকরি হল না।হতাশ হয়ে গেলাম।২রা ফেব্রুয়ারী সিদ্ধান্ত নিলাম প্রয়োজনে হোটেলের ওয়েটারের চাকরি হলেও করবো।যেই ভাবা সেই কাজ।KFC, Fizza Hut গিয়ে বায়ো ডাটা দিয়ে আসলাম।তাতে হতাশ হলাম।তারা ইন্টারভিউতেও ডাকলো না।তখন মনে মনে ভাবতে লাগলাম কি পড়ালেখা করলাম হোটেলের ওয়েটারের চাকরি ও জুটে না।দিন যত যায় হতাশা তত বেড়ে যায়।২৫শে ফেব্রুয়ারী ২০১২ চূরান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম যদি ফেব্রুয়ায়ী ২০১২ এর মধ্যে চাকরি না হয় তাহলে ঢাকা ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাবো।যায়।২৫শে ফেব্রুয়ারী ২০১২ রাত আনুমানিক ১১টা দুঃখ ভরা ক্লান্ত মন নিয়ে ফেইস বুকে লগিন করলাম।প্রায় দুই মাস ফেইস বুকে লগিন করিনি।লগিন করেই আরাফাত ভাইকে অনলাইনে পেলাম।আরেকটা কথা এতদিন কিন্তু আরাফাত ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ হয়নি ফেইস বুকে লগিন করিনি বলে।আর উনার মোবাইল নাম্বার ও আমার কাছে ছিল না।যা হোক উনাকে চ্যাটিং এ বললাম “ভাই গত জানুয়ারি মাসে ঢাকা এসেছিলাম একটা জব করে পড়ালেখা করব বলে কিন্তু চাকরি পেলাম না তাই আগামি ৪ঠা ফেব্রুয়ারী বাড়ি ফিরে যাবো।“।উনি আমার মোবাইল নাম্বার নিয়ে আমাকে কল করে বললেন “আপনি এতদিন যাবত ঢাকায় আমাকে জানাননি কেন?কাল ই আমার সাথে দেখা করেন”।উল্লেখ্য যে আমি আরাফাত ভায়ের জুনিয়র হলেও উনি আমাকে আপনি করে বলতেন।
পরের দিন ২৬শে ফেব্রুয়ারী ২০১২ আসাদ গেইট আড়ং এর সামনে দেখা করলাম উনি আমাকে দিয়ে ধানমন্ডি ১৫ নাম্বার এ নিয়ে গেলেন।তারপর একটা অফিস দেখিয়ে দিয়ে বললেন “ আগামী কাল এই অফিসে এসে ইন্টারভিউ দিয়ে যাবেন।ওখানে আমার এক পরিচিত বড়ভাই আছেন।আমি আপনার ব্যপারে উনার সাথে কথা বলেছি”।
২৭শে ফেব্রুয়ারী ২০১২ সকাল ৭টা আমি নতুন বাজার বাড্ডা থেকে ওই অফিসে এসে হাজির হলাম।তখন অফিস খুলেনি।তাই হাটতে হাটতে মাকে কল করে বললাম”মা আজ আরেকটা ইন্টারভিউ দিতে এসেছি দোয়া করো যেন চাকরিটা হয়।“সকাল ৭টা-৯টা এ দুই ঘন্টা কিভাবে কেটেছে বুঝাতে পারবো না।মনে মনে ভাবছিলাম এটাই আমার জীবনের শেষ চাস্ন।এই চাকরিটা না হলে আর চাকরি বোধয় হবে না।৯টা বাজার সাথে সাথে অফিসে ঢুকলাম।অফিসের ওয়েটিং রুমে গিয়ে আরো ১৫ জন কেন্ডিডেট দেখে চমকে গেলাম।একে একে সবার সাথে পরিচয় হয়ে আরো বেশি চমকে গেলাম।দেখলাম সবাই বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার।তখন চাকরির আশাটা একে বারেই শেষ হয়ে গেল।যাক ইন্টারভিঊ দিতে গিয়ে দেখা হল আরাফাত ভাইয়ের পরিচিত মঞ্জু স্যারের সাথে।উনি হলেন ওই কোম্পানির মানব সম্পদ ও প্রসাশন বিভাগের প্রধান।
বিকেল ৩টা লিখিত ভাইভা শেষ।কোনটা ভালো হয়নি।কারন প্রশ্ন গুলো ছিলো আইটি রিলেটেড আর আমি ছিলাম ইলেক্ট্রিক্যালের স্টুডেন্ট।যখন ওই অফিস থেকে বের হচ্ছিলাম তখন আমার আমি আর ছিলাম না।চাকরি পাওয়ার আশা ছেরে দিয়েছিলাম।ভাবলাম কয়েকদিন পর তো চিরদিনের জন্য ঢাকা ছেড়ে চলে যাব যাবার আগে একটু ঢাকাটা শেষ বারের মত দেখে যাই।তাই ধানমন্ডি ১৫ নাম্বার থেকে নাতুন বাজার বাড্ডারের উদ্দেশ্য হাটা শুরু করলাম।হাটতে হাটতে আমি মহাখালি আসলাম।তখন আরাফাত ভাই কল দিয়ে জানতে চাইলেন ইন্টারভিউ কেমন হয়েছে।আমি যা সত্য তাই বলে দিলাম ভাই খুব খারাপ হয়েছে।উনি চিন্তা না করতে বললেন।
তারপর আমি আনমনা হয়ে হাটতে লাগলাম।হাটতে হাটতে মনে মনে বলছিলাম কি পাপ করেছি আমি কেউ কেন আমার কষ্ট বুঝে না?আমি কি চাকরি পাওয়ার মত পূণ্য ও করিনি?মনটা ব্যথায় কাঁদছলো।কোন রকম চোখের পানিকে সামলিয়ে হাটছিলাম।হতাৎ মোবাইল টা বেজে উঠলো।মন চাইছিলো না পকেট থেকে মোবাইলটা বের করতে।তারপর ও বের করলাম।দেখলাম অচেনা একটা টিনটি নাম্বার ।অনিচ্ছা নিয়ে হেলো বললাম।ওপাশ থেকে আশার বাণী শুনতে পেলাম।মানে আমার চাকরি হয়েছে।জ়ীবনের অনেক মূল্যবান ছিল সেই কলটি ।এতটাই খুশি হয়েছিলাম যে আমি কোন ভাষায় সেই অনুভূতি প্রকাশ করতে পারব না।
আজ ১২ই ফেব্রুয়ারী ২০১৫।এখন যখন এই লেখা গুলো আমি লেখছি আমি আর সেই আগের জায়গায় আগের প্রথম চাকরিতে নেই।কিন্তু রয়ে গেছি আগের মতই।ভূলিনি আরাফাত ভাইয়ের কথা।ভূলিনি মঞ্জু স্যারের কথা যারা শিখিয়েছেন সৎ ভাবে চাকরি করা যায়।তাই এখনো সৎ ভাবেই চলছি।যেখানে সৎ থাকা যাবে না সেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।এবং কি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আইটি কোম্পানির চাকরিটা ও ছেড়ে দিয়েছি এখন আমি ৪টা চাকরি ছেড়ে ৫ম চাকরিতে।এখন যে কোম্পানিতে চাকরি করি সেটা পৃথিবীর ২য় এগ্রো কোম্পানি।আর হয়ত আর থেমে থাকবো না।
এখন ভোর ৫টা শ্রদ্ধা ভরে ষ্মরণ করছি।আমার মাবাবাকে,সেই মঞ্জু স্যারকে,সেই আরাফাত ভাইকে যারা না থাকলে আমার জীবনটা হয়ত থেমে যেত মাঝ পথে।প্রত্যেক কোম্পানিতে একজন আরাফাত ভাই এক জন মঞ্জু স্যার চাই যারা বুঝবে আমার মত হাজার হাজার বেকার হয়ে পড়ে থাকা ফ্রেশদের দুঃখ বেদনা।স্যালুট আরাফাত ভাই কে স্যালুট মঞ্জু স্যারকে।
আজ ও মনে পড়ে বাসে সেই মহিলাটির কথা যিনি আমাকে দোয়া করেছিলেন বলেই হয়ত আরাফাত ভাই আর মঞ্জু স্যারের মত মহান মানুষের সাক্ষাৎ বা সান্নিধ্য পেয়েছি।
মনে পরে সেই মাকে বাবাকে।যাদের কথা সারাক্ষণ কানে বাজে।যাদের শিক্ষা পেয়ে শ্রদ্ধায় মাথা করি অবনত।আর অন্যায়ের করি প্রতিবাদ।
আমার লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।আহব্বান আসুন গরি মৈত্রীময় পৃথিবী।পৃথিবীকে করে দিই আগামী প্রজন্মের বাসযোগ্য।ভালো থাকবেন।
No comments:
Post a Comment