পরিবারে নতুন সদস্য আসার মত আনন্দ বোধ হয় আর কিছু নেই! একটা সময় ছিল যখন বিয়ের পরে সন্তান হবে এটাই ছিল নিয়ম। কিন্তু এখন বিয়ে করা এবং সন্তান নেয়া- এই সব কিছুই অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে; যেমনঃ লেখাপড়া, চাকরি, আর্থিক সচ্ছলতা, মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি ইত্যাদি। সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে দম্পতি যখন সন্তান নেবার জন্য প্রস্তুত হন, তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে উদয় হয় নতুন এক সমস্যার; আর তা হচ্ছে বন্ধ্যাত্ব !
কীভাবে বুঝবেন বন্ধ্যাত্ব দেখা দেবার সম্ভবনা রয়েছে?
সন্তান নিতে চাওয়ার ১ বছরের মধ্যে গর্ভে সন্তান না আসলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। মহিলাদের বয়স ৩৫ এর উপরে হলে অথবা অনিয়মিত মাসিক হলে ১ বছর অপেক্ষা করা যাবে না। ৬ মাসের মধ্যে ডাক্তারের দেখানো উচিৎ। শুধু মহিলা নয় তার সঙ্গীরও ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।
পুরুষদের কোন কোন সমস্যার কারণে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে?
- শুক্রাণু উৎপাদন কমে গেলে।
- শুক্রাণুর পরিবহণে সমস্যা হলে।
- শুক্রাণুর আকৃতি সঠিক না হলে।
- শুক্রাণু বের হওয়ার পথ বন্ধ বা বাধাগ্রস্ত হলে।
মহিলাদের সমস্যা
- ওভারিতে সঠিক সময়ে ডিম্বাণু প্রস্তুত না হলে।
- ফেলোপিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে গেলে।
- সার্ভিক্স অথবা জরায়ুতে সমস্যা দেখা দিলে।
বন্ধ্যাত্ব এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
সময়
বাচ্চা না হওয়ার প্রধান কারণ শুক্রাণু ডিম্বাণুর মিলন না হওয়া। যৌন সঙ্গমের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে অনেক সময় বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সময় নির্ধারিত থাকলে শরীর যৌন সঙ্গমের আগে প্রস্তুত থাকে এবং প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসৃত হয়। ফলে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
ঔষধ
অনেক দিন ধরে সন্তান না হলে চিকিৎসকেরা বিভিন্ন ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেন। এসব ঔষধে সাধারণত তিন মাসের মধ্যেই গর্ভে সন্তান আসে। তবে এক্ষেত্রে জমজ বাচ্চা বা আরও বেশি বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ এসকল ঔষধ ওভারি থেকে দুটি বা তারও অধিক ডিম্বাণু নিঃসৃত করে।
ইনজেকশন
ঔষধে কাজ না হলে আপনার ডাক্তার হরমোন ইনজেকশন ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন। এই পদ্ধতিতে শরীরে গর্ভধারণে সাহায্যকারী হরমোন ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রয়োগ করা হয়।
অপারেশন
ফেলোপিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে গেলে সার্জারি করে তা সারিয়ে তোলা সম্ভব হয় এবং বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি পায়।
ইন্ট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেশন
এই প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম উপায়ে জরায়ুতে শুক্রাণু প্রবেশ করানো হয়ে থাকে। ফলে নিষেক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
স্পার্ম ডোনেট
অনেক পুরুষ তাদের স্পার্ম ডোনেট করে থাকেন। যে সকল মহিলা জন্ম দিতে সক্ষম কিন্তু তাদের সঙ্গীর সমস্যা আছে তারা কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় এই স্পার্ম দিয়ে গর্ভধারণ করে বন্ধ্যাত্ব দূর করতে পারেন।
ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন
এ প্রক্রিয়ায় ল্যাবে ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর মিলন ঘটানো হয় এবং উৎপাদিত ভ্রূণটি জরায়ুতে প্রয়োগ করা হয়। অনেকেই এই প্রক্রিয়াটি পছন্দ করেন না এবং এটি অনেক ব্যয়বহুল।
এক্ষেত্রে আপনার নারী সঙ্গী গর্ভধারণে অক্ষম হলে অন্য কেউ তার পরিবর্তে ডিম্বাণু দান করতে পারে।
এই প্রক্রিয়ায় সফল হওয়ার লক্ষ্যে ২-৪ টি ভ্রূণ জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়। ফলে জমজ বা একাধিক বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
একের অধিক সন্তান গর্ভে থাকলে বাচ্চা নষ্ট হওয়া, রক্তশূন্যতা, উচ্চ রক্তচাপ সহ আরও অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ভ্রূণ দান
ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতিতে সফল না হলে অন্যের কাছ থেকে ভ্রূণ গ্রহণ করে মা হতে পারবেন। এক্ষেত্রে বাচ্চার মূল বাবা-মা(Biological parents) আপনারা হতে পারবেন না।
জীবন-যাপন
শরীরের যত্ন নিন। নিয়ম অনুযায়ী জীবন-যাপন করুন। ভাল এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান। ব্যায়াম করুন। এতে করে স্পার্মের পরিমাণ এবং গুণাগুণ বজায় থাকবে।
আকুপাংচার
এটি এক ধরনের চাইনিজ চিকিৎসা পদ্ধতি। এ পদ্ধতি ব্যবহার করেও বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সতর্কতা
যে হাসপাতালে চিকিৎসা করাবেন সেটা সম্পর্কে ভাল করে জেনে নিন।
চিকিৎসককে প্রশ্ন করুন। মনে কোনরূপ শঙ্কা রাখবেন না।
যদি এতো ধরণের চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণের সামর্থ্য না থাকে বা এগুলো নিতে পারবেন না বলে মনে করেন, তাহলে সঙ্গীর সাথে বেশি সময় থাকুন। দাম্পত্য জীবনে নতুনত্ব আনুন। হয়তো এটি আপনার বন্ধ্যাত্ব দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
No comments:
Post a Comment