এখনও বিকেল হয়নি। দেয়াল ঘড়িতে চারটা বেজে সতেরো মিনিট। শুভ জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। আকাশ জুড়ে মন খারাপ করা কালো কালো মেঘ ভাসছে। দল বেধে মেঘরা উড়ছে। শুভর ইচ্ছে করছে চশমার কাচে জমে থাকা ধুলো বালির মত আকাশের মেঘ গুলিকেও মুছে ফেলতে। জানালা দিয়ে অযথাই হাত বাড়ায় সে।
বিদূৎ চমকাচ্ছে। চারদিকে নীলচে ফ্যাকাসে আলো। দেখে মনে হচ্ছে এখুনি হয়ত রাত নামবে। শুভর মন খারাপ হয়ে যায়। আকাশের মেঘের সাথে ঝগড়া করতে ইচ্ছে করে। কেন ভাই মেঘ তুমি অসময়ে এলে! তোমার কি সময় জ্ঞান নেই? আপন মনে কথা গুলো বলে যায় সে।
মোবাইলে রিং বেজে উঠে হটাৎ করেই। ডিসপ্লেতে তনুর হাসি ভরা মুখ ভেসে উঠে। রিসিভ করতেই তনু আদর জড়ানো কণ্ঠে বলে উঠে, দেখেছো মেঘে কেমন হটাৎ করেই আকাশ ছেয়ে গেল। নিশ্চয় ঝড় আসবে।
শুভ বিষণœ গলায় সায় দিয়ে বলে, হুম তেমনটাই মনে হচ্ছে। ধুর! কিচ্ছু ভাল লাগছেনা।
- জানো, আজ তোমার জন্য আমি অনেক সুন্দর করে সেজে ছিলাম। তোমার পছন্দের কালো শাড়িটা পড়েছি। চুলে পড়েছি রজনীগন্ধা।
- তোমাকে পরীর মত লাগছে, না? আমার খুব খারাপ লাগছে। ইচ্ছে হচ্ছে এখুনি মেঘ বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে তোমার কাছে ছুটে যাই।
শুভর কথা শেষ হওয়ার আগেই ঝমঝম শব্দে বৃষ্টি শুরু হল।
জানালার গ্রিল পেরিয়ে বৃষ্টির স্বচ্ছকণা পড়ার টেবিলে এসে পড়তে শুরু করলো। শুভ তারপরও জানালা বন্ধ করল না। বৃষ্টি দেখতে তার খুব ভাললাগে। কিন্তু আজ এই বৃষ্টি তার মনটা খারাপ করে দিল। কথা ছিল তনুর সাথে সারাটা বিকেল কাটাবে সে। বহুদিন পর হটাৎ করেই সুযোগটা এসেছিল আজ। পাশের মহল্লায় তনুদের বাসা কিন্তু তারপরও দু’জন দু’জনার সাথে দেখা নেই একমাস হল। সর্ম্পকটা জানাজানি হবার পর থেকেই সব আনন্দ উল্লাস থেমে গিয়েছে তাদের জীবন থেকে। কেন যে ভালবাসাকে ভালচোখে দেখেনা সমাজ? মনে মনে কথাটা বলে শুভ। ও প্রান্ত হতে তনু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, জানো আমার না ইদানিং কিচ্ছু ভালোলাগেনা। বাসার সবাই আমাকে শুধু উপদেশ দেয়। তুমি অবাক হবে আমার স্কুলে পড়া ছোট ভাইটা পযন্ত আমাকে উপদেশ দেয়। জানো ওরা কেউ তোমাকে সহ্য করতে পারে না!
শুভ তনুর কথার উত্তর দেয়না। তার হৃদয়টা আজ ভরাকান্ত। নিজেকে খুব একা একা লাগছে তার। সে চুপ করে বৃষ্টি দেখতে থাকে। দুরে ইলেকট্রিক তারের উপর একটি কালো কাকা ভিজছে। কাকটাকে খুব আপন মনে হয় শুভর। মনে হয় কাকটাও তার মত নিঃসঙ্গ। শুভর ইচ্ছে করে বৃষ্টিতে ভিজতে।
ফোনের ও প্রান্তে অধের্য্য কন্ঠে তনু বলে, কি হল! কোথায় হারিয়ে যাচ্ছ তুমি বারবার? আমি কিন্তু ফোন রেখে দিব। তনুর কন্ঠে অভিমান।
শুভ বলে, এখন আমাদের বাসায় কেউ নেই। সারাঘর জুড়ে ভুতড়ে পরিবেশ। খুব একা একা লাগছে। ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজতে। ফোনে চেচিয়ে উঠে তনু , খবরদার তুমি বৃষ্টিতে ভিজবে না। তোমার না ঠান্ডায় এলার্জি? একটা আইসক্রিম খেলে যে ছেলে সর্দি বাধিয়ে ফেলে তার এত রোমান্টিক হওয়ার দরকার নেই। ঠান্ডা পানিতে ভিজলে তোমার জ্বর আসবে।
- তারের উপর একটা নিঃসঙ্গ কাক বৃষ্টিতে ভিজছে। কাকটার জন্য খারাপ লাগছে।
- ভিজুক না কাকা, তোমার কি তাতে? তুমি কি নিঃসঙ্গ? আমি যে সারাক্ষন তোমাকে ছায়ার মত জড়িয়ে ধরে আছি তা বোঝনা তুমি?
শুভ তনুর কথা শুনে হাসে। আসলে শাররীক ভাবে শুভ তেমন ফিট না। ছোট বেলা থেকেই নানান রোগে আকান্ত হয়ে শরীরটা খুব পাতলা। তার গায়ের রং তার মায়ের মত ধবধবে ফর্সা। ফর্সা ছেলেদের নাকি দেখতে বোকা বোকা লাগে। তনু তাকে তাল পাতার সেপাই ,বোকা আজব সহ নানা নামে ডেকে ক্ষেপানোর চেষ্টা করে। আর চোখে ভারি গ্লাসের চশমা পড়ার কারনে বন্ধুরা তাকে কানামামা বলেও ইয়ার্কি করে।
শুভ তনুকে বলে, তুমি ফোনে এখন বলছো ছায়ার মত আমাকে জড়িয়ে ধরে আছ। অথচ কাছে গেলে শুধু হাতটা ধরতে দাও। কখনো একটু আদর করে দাওনা। একবার শুধু বাবুদের যেভাবে বড়রা কিস করে সেভাবে কপালে কিস করে দিয়েছিলে। তিন বছর ধরে তোমার অবহেলা সইছি!
- জান, তুমিতো জানোই আমি একটু অন্যরকম। অন্য মেয়েদের মত আমি হেংলা হতে পারিনা। আমি কিছুটা ব্যাকডেটেট মেয়ে। বুঝেছো?
- আমি যদি ছাতা নিয়ে তোমাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় আসি তুমি কি একটু বারান্দায় এসে দাড়াবে?
- পাগল হইছো নাকি? ভাইয়া তোমাকে দেখলে বৃষ্টির ভেতর ঠাঙ্গানী দিবে। আগের বার ড্রেনে পড়ে পা মচকে যাবার কথা ভুলে গ্যাছো না? সিমুর গায়ে হলুদ এর কথা বলে মাকে ম্যানেজ করে ছিলাম। দেখো মরার বৃষ্টি কিভাবে সব উল্টে-প্লাটে দিল। ধুর.. বিকেলটাই মাটি হয়ে গেল। যেভাবে মুষুলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে মনে হচ্ছেনা সহষাই থামবে।
- তোমার বিরহে দেবদাস হয়ে যাচ্ছি।
-আমি কিন্তু পার্বতী হতে পারবো না। তোমাকে ভুলে অন্যর হতে পারবনা। আজন্ম তোমাকে কাছে পেতে চাই। তোমাকে পেলে আর কিছু চাইনা আমি। গভির আবেগে কথা গুলো বলে তনু। শুভ’র খুব ভাললাগে। তারমত ক্যাবলাকান্ত টাইপের ছেলের জন্য ক্যাম্পাসের সেরা সুন্দরী মেয়েটার ভালবাসা তাকে মুগ্ধ করে। তার মনটা ভাল হয়ে যায়।
শুভ বলে, প্রেমে বিরহ থাকা ভাল। এতে করে ভালবাসার গভিরতা বোঝা যায়।
- ভাল না ছাই! দেখ আমাকে কত সুন্দর লাগছে। অথচ তোমাকে দেখাতে পারছিনা। অসহ্য!
- আমি কিন্তু তোমাকে দেখতে পারছি। চোখ বন্ধ করে তোমাকে অনুভব করছি। তোমার মায়াবী মুখটা হৃদয়ের ভেতরে ভেসে উঠছে।
তনু কৃত্তিম আশ্চার্য হবার স্বরে বলে, তুমিতো দেখছি কবি হয়ে গিয়েছো! ভাল।
তনু হাসতে থাকে।
২.
শুভদের বাসার সবার আজ খুব মন খারাপ। তার বাবা মিজানুর রহমান গত সাত বছর ধরে একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন। সরকার বদল হল দুই মাস। নতুন সরকার এরি মধ্যে তাকে বদলী করে দিয়েছে চট্রগ্রাম। মিজানুর রহমান অনেক চেষ্টা তদবির করার চেষ্টা করে ছিলেন বটে কিন্তু তাতে বিশেষ কোন কাজ হলনা। শুভর বিশ্বাস হচ্ছিল না যে তাকে এ শহর ছাড়তে হবে। এ যেন বিনা মেঘে বর্জপাত! তার বাবা বললেন এখন আর কিছুই করার নেই। নতুন গর্ভমেন্টের ধারণা আমি সাবেক সরকার পন্থি! এটাই নিয়ম। আপাতত তোমরা এখানেই থাকবে। কয়েক মাস পর তোমাদের চট্রগ্রাম নিয়ে যাব।
শুভ তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা-মা তাকে অনেক ভালবাসে। কিন্তু তনুর সাথে তার ভালবাসার সম্পর্কটাকে তারা মেনে নিতে পারেনি। শুভ’র মায়ের ধারণা তার সহজ সরল ছেলেটার মাথাটা তনুই নষ্ট করেছে। মেয়েটা ইচ্ছে করেই তার একমাত্র ছেলের পিছনে আঠার মত লেগে আছে। সে প্রায়ই মনে মনে অভিসাব দেয়। অন্যান্য ছেলের মায়ের মত তারও বদ্ধমুল ধারণা তার ছেলের কোন দোষ নেই। সব ঐ পাকনা মেয়েটার দোষ। পাশের বাসার সালমা ভাবির কথামত এক পীরবাবার কাছে থেকে ২০০০ টাকা দিয়ে তৈল পড়া নিয়ে এসেছে। পীরবাবা বলেছেন এই শাহীতৈল প্রতি সপ্তাহে দুইদিন করে ১মাস নিয়মিত ছেলের মাথায় দিতে পারলে তনু-ফনুর ভুত মাথা থেকে নেমে দৌড়ে পালাবে। তাই সে তেলের বাটি নিয়ে শুভ’র রুমে আসে। শুভ চোখ বন্ধ করে তনুর কথা ভাবতে ছিল। শুভর চোখ বন্ধ দেখে তার মা ভাবলো ছেলে ঘুমিয়ে আছে। সে পড়া তৈল শুভর মাথায় দিয়ে দিল। শুভ অবশ্য বুঝতে পারলো নিশ্চয় কোন মতলবে মা মাথায় তৈল দিয়ে দিয়েছে। শুভ ঘুমের ভান করে পড়ে রইল। শুভর মা ঘুমানো ছেলেকে ঠিক মতন শাহীতৈল মাথায় দিতে পেরে বেশ স্বস্তি পেল। শুভ কখনোই মাথায় তৈল লাগানো পছন্দ করে না। সে বাথরুমে গিয়ে মাথায় সাম্পু করে ফেললো।
৩.
তনু খুব বুদ্ধিমতি মেয়ে। তার প্রেমে পড়ার কোন আগ্রহ বা ইচ্ছে ছিলনা। নিছক এক দুঃঘটনা থেকেই শুভ’র সাথে তার সম্পর্কটা গড়ে উঠে। শুভ চোখে কম দেখে। চশমা ছাড়া বেচারাকে অন্ধই বলা যায়। দুইহাত দুরের কিছুও সে চশমা ছাড়া দেখতে পায়না। তবে ক্লাসে সে বরাবরি প্রথম হত। ক্লাসে সবাই শুভর বোকাসোকা চেহারা আর কথা-বার্তা নিয়ে হাসাহাসি করত। ক্লাসে বদের হাড্ডি বলে পরিচিত সুব্রত। একদিন ফাজিল সুব্রত কানাবাবা বলে ছোমেরে শুভর চশমা নিয়ে দৌড়ে পালালো। অসহয় শুভ দুই ঘন্টা ক্যাম্পাসের সিমেন্টের বেঞ্চে বসে রইল। সুব্রতর দেখা পাওয়া গেলনা কোথাও। তনু সবি দেখছিল, প্রথম দিকে সে অনেক মজা পেলেও পরে কেন যেন শুভর জন্য তার খারাপ লাগল। মায়া হল। সে শুভ’র কাছে গিয়ে জ্ঞিগাসা করলো “ কি ব্যাপার তুমি এখানে একা একা বসে আছ কেন?”
তনু সবি দেখছিল, প্রথম দিকে সে অনেক মজা পেলেও পরে কেন যেন শুভর জন্য তার খারাপ লাগল। মায়া হল। সে শুভ’র কাছে গিয়ে জ্ঞিগাসা করলো “ কি ব্যাপার তুমি এখানে একা একা বসে আছ কেন?”
শুভ হাসিমুখে বললো,সুব্রত ফাজলামো করে আমার চশমা নিয়ে গিয়েছে। কখন যে আসবে ও?
তনু ভারি আশ্চর্য হল শুভ কথা শুনে। এমন ধৈয্যশীল মানুষ আর কখনো দেখেনি সে। শুভর মুখের দিক তাকিয়ে রইল সে। তনুর কেন যেন মনে হয় শুভর কাছে আছে সিমাহীন নির্জণতা। আর অসিম ধৈয্যশক্তি। এমন একজন পুরুষকেই তার চাই।
শুভর হাতধরে বলে
চল তোমাকে বাসায় পৌছে দেই।
শুভ হেসে বলে তোমার কষ্ট হবে নাতো?
আরে না। তুমিতো আমাদের পাশের মহল্লাতেই থাক। চল।
৪.
তনুর নাম্বারে এপযন্ত দশবার কল দিল শুভ। রিং হচ্ছে কিন্তু তনু ধরছে না। গতকালও সে ফোন রিসিভ করেনি। তনুর জন্য খুব দুঃশ্চিন্তা হয় শুভর। একমাস পর ভাসির্টি খুলেছে। গতকালও তনু ক্লাসে আসেনি। ফাইনাল পরিক্ষার আর মাত্র দুইমাস আছে। এমন সময় কেউ ক্লাস মিস করে? কি হল ওর?
মনটা খারাপ হয়ে যায় শুভর। সে তনুকে এসএমএস পাঠায়।
কিছুক্ষন পর কল আসে তনুর। রিসিভ করতেই তনু বলে, শুভ তুমি আমাকে ভুলে যাও। আমি তোমার যোগ্য নই। আমি খুব খারাপ একটা মেয়ে।
শুভ তনুর শিতল কন্ঠে অভস্ত্য নয়। কেমন অচেনা মনে হয় তনুকে। এমন কন্ঠে কখনো তনু তার সঙ্গে কথা বলেনি। বিস্মিত হয়ে তাই শুভ বলে, কি হয়েছে তোমার? ক্লাসে আস। প্লিজ!
ফোনের ও প্রান্তে তনুর কান্নার শব্দ পেয়ে বিচলিত হয়ে যায় শুভ। বলে, প্লিজ কি হয়েছে বল আমাকে।
তনু কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে, তোমার মা গতকাল সকালে আমাদের বাসায় এসেছিল। সবার সামনে আমাকে যাচ্ছেতাই বলে বকা দিয়েছে। আমার মা বাবাকেও সে অনেক অপমান করেছে। বাবা তাই আমার কলেজে যাওয়া বন্ধকরে দিয়েছে। আমার বাইয়া সন্ধায় আমাকে এজন্য মেরেছে। তুমি, বল আমার বাবা কি এতই গরিব যে তোমার বাবার সম্পতী পাবার লোভে আমাকে তোমার পেছনে লেলিয়ে দিবে? মেয়ের বাবা বলেই কি তাকে এতসব কথা শুনিয়ে দিতে পারে তোমার মা?
শুভ এসব কথা শুনে যেন পাথরের মূর্তি হয়ে গেল। কষ্টে তার বুকটা ভেঙে যাচ্ছিল। সে তনুর কাছে ক্ষমা চাইল বার বার। কিন্তু তনুর কান্না তাতে থামলো না।
শুভর খুব অভিমান হল মায়ের প্রতি। সে ক্লাস না করেই বাসায় ফিরে এল। শুভর মা ডোয়িং রুমে বসে টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল দেখতে ছিল। শুভ বইর ব্যাগটা সোফার উপর ছুড়ে ফেলে তার মায়ের সামনে গিয়ে দাড়ালো। তারপর কঠিন গলায় শুভ বললো, আম্মা তুমি কি তনুদের বাসায় গিয়েছিলে?
তার মা কখনোই শুভর এমন অগ্নিমূর্তি দেখেনি। প্রথম দিকে সে ভড়কে গেলেও সে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, হ্যা গিয়েছিলাম। ওদের উচিৎ শিক্ষা দিয়ে এসেছি। হিন্দি সিরিয়ালের মহিলা ভিলেনের মত কওে বলে সে।
- তুমি কিন্তু কাজটা মোটেও ঠিক করনি। লালচোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে শুভ। কিন্তু তার মা তাকে মোটেও পাত্তা দেয়না। গম্ভীর স্বরে বলে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল তোমার কাছে আমার শিক্ষতে হবে না? বেশি বড় হয়ে গিয়েছো? ঐ শয়তানটা তোমার মাথা খেয়েছে।
এরপর শুভ আর কোন কথা না বলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। শুভর মা আবার তার হিন্দি সিরিয়ালে ডুবে যায়।
ডাইনীং টেবিলে খাবার সাজিয়ে অনেক বার ডাকার পরও যখন শুভ ভাত খেতে আসেনা, তখন শুভর দরজার কড়া নাড়ে শুভর মা। জোরে জোরে কয়েক বার ডাকার পরও ভেতর থেকে কোন সাড়া নেই। তার মায়ের হটাৎ করেই মনে হয় ছেলেটাকে ওভাবে বকা দেওয়াটা ঠিক হয়নি।
সে আদরভরা গলায় বলে, সরি বাবা আমার ভুল হয়েছে। দরজা খোল।
কোন শব্দ নেই। ক্রমাগত আঘাত করে যায় শুভর মা। কোন শব্দ নেই। অজানা আশংকায় বারান্দা দিয়ে ঘুরে গিয়ে কাচের জানালা ভেদ করে সে শুভর ঘরের ভিতর তাকায়।
শুভ তখন ঝুলছে ফ্যানের সঙ্গে। চিৎকার করে জ্ঞান হারায় সে।
বিদূৎ চমকাচ্ছে। চারদিকে নীলচে ফ্যাকাসে আলো। দেখে মনে হচ্ছে এখুনি হয়ত রাত নামবে। শুভর মন খারাপ হয়ে যায়। আকাশের মেঘের সাথে ঝগড়া করতে ইচ্ছে করে। কেন ভাই মেঘ তুমি অসময়ে এলে! তোমার কি সময় জ্ঞান নেই? আপন মনে কথা গুলো বলে যায় সে।
মোবাইলে রিং বেজে উঠে হটাৎ করেই। ডিসপ্লেতে তনুর হাসি ভরা মুখ ভেসে উঠে। রিসিভ করতেই তনু আদর জড়ানো কণ্ঠে বলে উঠে, দেখেছো মেঘে কেমন হটাৎ করেই আকাশ ছেয়ে গেল। নিশ্চয় ঝড় আসবে।
শুভ বিষণœ গলায় সায় দিয়ে বলে, হুম তেমনটাই মনে হচ্ছে। ধুর! কিচ্ছু ভাল লাগছেনা।
- জানো, আজ তোমার জন্য আমি অনেক সুন্দর করে সেজে ছিলাম। তোমার পছন্দের কালো শাড়িটা পড়েছি। চুলে পড়েছি রজনীগন্ধা।
- তোমাকে পরীর মত লাগছে, না? আমার খুব খারাপ লাগছে। ইচ্ছে হচ্ছে এখুনি মেঘ বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে তোমার কাছে ছুটে যাই।
শুভর কথা শেষ হওয়ার আগেই ঝমঝম শব্দে বৃষ্টি শুরু হল।
জানালার গ্রিল পেরিয়ে বৃষ্টির স্বচ্ছকণা পড়ার টেবিলে এসে পড়তে শুরু করলো। শুভ তারপরও জানালা বন্ধ করল না। বৃষ্টি দেখতে তার খুব ভাললাগে। কিন্তু আজ এই বৃষ্টি তার মনটা খারাপ করে দিল। কথা ছিল তনুর সাথে সারাটা বিকেল কাটাবে সে। বহুদিন পর হটাৎ করেই সুযোগটা এসেছিল আজ। পাশের মহল্লায় তনুদের বাসা কিন্তু তারপরও দু’জন দু’জনার সাথে দেখা নেই একমাস হল। সর্ম্পকটা জানাজানি হবার পর থেকেই সব আনন্দ উল্লাস থেমে গিয়েছে তাদের জীবন থেকে। কেন যে ভালবাসাকে ভালচোখে দেখেনা সমাজ? মনে মনে কথাটা বলে শুভ। ও প্রান্ত হতে তনু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, জানো আমার না ইদানিং কিচ্ছু ভালোলাগেনা। বাসার সবাই আমাকে শুধু উপদেশ দেয়। তুমি অবাক হবে আমার স্কুলে পড়া ছোট ভাইটা পযন্ত আমাকে উপদেশ দেয়। জানো ওরা কেউ তোমাকে সহ্য করতে পারে না!
শুভ তনুর কথার উত্তর দেয়না। তার হৃদয়টা আজ ভরাকান্ত। নিজেকে খুব একা একা লাগছে তার। সে চুপ করে বৃষ্টি দেখতে থাকে। দুরে ইলেকট্রিক তারের উপর একটি কালো কাকা ভিজছে। কাকটাকে খুব আপন মনে হয় শুভর। মনে হয় কাকটাও তার মত নিঃসঙ্গ। শুভর ইচ্ছে করে বৃষ্টিতে ভিজতে।
ফোনের ও প্রান্তে অধের্য্য কন্ঠে তনু বলে, কি হল! কোথায় হারিয়ে যাচ্ছ তুমি বারবার? আমি কিন্তু ফোন রেখে দিব। তনুর কন্ঠে অভিমান।
শুভ বলে, এখন আমাদের বাসায় কেউ নেই। সারাঘর জুড়ে ভুতড়ে পরিবেশ। খুব একা একা লাগছে। ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজতে। ফোনে চেচিয়ে উঠে তনু , খবরদার তুমি বৃষ্টিতে ভিজবে না। তোমার না ঠান্ডায় এলার্জি? একটা আইসক্রিম খেলে যে ছেলে সর্দি বাধিয়ে ফেলে তার এত রোমান্টিক হওয়ার দরকার নেই। ঠান্ডা পানিতে ভিজলে তোমার জ্বর আসবে।
- তারের উপর একটা নিঃসঙ্গ কাক বৃষ্টিতে ভিজছে। কাকটার জন্য খারাপ লাগছে।
- ভিজুক না কাকা, তোমার কি তাতে? তুমি কি নিঃসঙ্গ? আমি যে সারাক্ষন তোমাকে ছায়ার মত জড়িয়ে ধরে আছি তা বোঝনা তুমি?
শুভ তনুর কথা শুনে হাসে। আসলে শাররীক ভাবে শুভ তেমন ফিট না। ছোট বেলা থেকেই নানান রোগে আকান্ত হয়ে শরীরটা খুব পাতলা। তার গায়ের রং তার মায়ের মত ধবধবে ফর্সা। ফর্সা ছেলেদের নাকি দেখতে বোকা বোকা লাগে। তনু তাকে তাল পাতার সেপাই ,বোকা আজব সহ নানা নামে ডেকে ক্ষেপানোর চেষ্টা করে। আর চোখে ভারি গ্লাসের চশমা পড়ার কারনে বন্ধুরা তাকে কানামামা বলেও ইয়ার্কি করে।
শুভ তনুকে বলে, তুমি ফোনে এখন বলছো ছায়ার মত আমাকে জড়িয়ে ধরে আছ। অথচ কাছে গেলে শুধু হাতটা ধরতে দাও। কখনো একটু আদর করে দাওনা। একবার শুধু বাবুদের যেভাবে বড়রা কিস করে সেভাবে কপালে কিস করে দিয়েছিলে। তিন বছর ধরে তোমার অবহেলা সইছি!
- জান, তুমিতো জানোই আমি একটু অন্যরকম। অন্য মেয়েদের মত আমি হেংলা হতে পারিনা। আমি কিছুটা ব্যাকডেটেট মেয়ে। বুঝেছো?
- আমি যদি ছাতা নিয়ে তোমাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় আসি তুমি কি একটু বারান্দায় এসে দাড়াবে?
- পাগল হইছো নাকি? ভাইয়া তোমাকে দেখলে বৃষ্টির ভেতর ঠাঙ্গানী দিবে। আগের বার ড্রেনে পড়ে পা মচকে যাবার কথা ভুলে গ্যাছো না? সিমুর গায়ে হলুদ এর কথা বলে মাকে ম্যানেজ করে ছিলাম। দেখো মরার বৃষ্টি কিভাবে সব উল্টে-প্লাটে দিল। ধুর.. বিকেলটাই মাটি হয়ে গেল। যেভাবে মুষুলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে মনে হচ্ছেনা সহষাই থামবে।
- তোমার বিরহে দেবদাস হয়ে যাচ্ছি।
-আমি কিন্তু পার্বতী হতে পারবো না। তোমাকে ভুলে অন্যর হতে পারবনা। আজন্ম তোমাকে কাছে পেতে চাই। তোমাকে পেলে আর কিছু চাইনা আমি। গভির আবেগে কথা গুলো বলে তনু। শুভ’র খুব ভাললাগে। তারমত ক্যাবলাকান্ত টাইপের ছেলের জন্য ক্যাম্পাসের সেরা সুন্দরী মেয়েটার ভালবাসা তাকে মুগ্ধ করে। তার মনটা ভাল হয়ে যায়।
শুভ বলে, প্রেমে বিরহ থাকা ভাল। এতে করে ভালবাসার গভিরতা বোঝা যায়।
- ভাল না ছাই! দেখ আমাকে কত সুন্দর লাগছে। অথচ তোমাকে দেখাতে পারছিনা। অসহ্য!
- আমি কিন্তু তোমাকে দেখতে পারছি। চোখ বন্ধ করে তোমাকে অনুভব করছি। তোমার মায়াবী মুখটা হৃদয়ের ভেতরে ভেসে উঠছে।
তনু কৃত্তিম আশ্চার্য হবার স্বরে বলে, তুমিতো দেখছি কবি হয়ে গিয়েছো! ভাল।
তনু হাসতে থাকে।
২.
শুভদের বাসার সবার আজ খুব মন খারাপ। তার বাবা মিজানুর রহমান গত সাত বছর ধরে একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন। সরকার বদল হল দুই মাস। নতুন সরকার এরি মধ্যে তাকে বদলী করে দিয়েছে চট্রগ্রাম। মিজানুর রহমান অনেক চেষ্টা তদবির করার চেষ্টা করে ছিলেন বটে কিন্তু তাতে বিশেষ কোন কাজ হলনা। শুভর বিশ্বাস হচ্ছিল না যে তাকে এ শহর ছাড়তে হবে। এ যেন বিনা মেঘে বর্জপাত! তার বাবা বললেন এখন আর কিছুই করার নেই। নতুন গর্ভমেন্টের ধারণা আমি সাবেক সরকার পন্থি! এটাই নিয়ম। আপাতত তোমরা এখানেই থাকবে। কয়েক মাস পর তোমাদের চট্রগ্রাম নিয়ে যাব।
শুভ তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা-মা তাকে অনেক ভালবাসে। কিন্তু তনুর সাথে তার ভালবাসার সম্পর্কটাকে তারা মেনে নিতে পারেনি। শুভ’র মায়ের ধারণা তার সহজ সরল ছেলেটার মাথাটা তনুই নষ্ট করেছে। মেয়েটা ইচ্ছে করেই তার একমাত্র ছেলের পিছনে আঠার মত লেগে আছে। সে প্রায়ই মনে মনে অভিসাব দেয়। অন্যান্য ছেলের মায়ের মত তারও বদ্ধমুল ধারণা তার ছেলের কোন দোষ নেই। সব ঐ পাকনা মেয়েটার দোষ। পাশের বাসার সালমা ভাবির কথামত এক পীরবাবার কাছে থেকে ২০০০ টাকা দিয়ে তৈল পড়া নিয়ে এসেছে। পীরবাবা বলেছেন এই শাহীতৈল প্রতি সপ্তাহে দুইদিন করে ১মাস নিয়মিত ছেলের মাথায় দিতে পারলে তনু-ফনুর ভুত মাথা থেকে নেমে দৌড়ে পালাবে। তাই সে তেলের বাটি নিয়ে শুভ’র রুমে আসে। শুভ চোখ বন্ধ করে তনুর কথা ভাবতে ছিল। শুভর চোখ বন্ধ দেখে তার মা ভাবলো ছেলে ঘুমিয়ে আছে। সে পড়া তৈল শুভর মাথায় দিয়ে দিল। শুভ অবশ্য বুঝতে পারলো নিশ্চয় কোন মতলবে মা মাথায় তৈল দিয়ে দিয়েছে। শুভ ঘুমের ভান করে পড়ে রইল। শুভর মা ঘুমানো ছেলেকে ঠিক মতন শাহীতৈল মাথায় দিতে পেরে বেশ স্বস্তি পেল। শুভ কখনোই মাথায় তৈল লাগানো পছন্দ করে না। সে বাথরুমে গিয়ে মাথায় সাম্পু করে ফেললো।
৩.
তনু খুব বুদ্ধিমতি মেয়ে। তার প্রেমে পড়ার কোন আগ্রহ বা ইচ্ছে ছিলনা। নিছক এক দুঃঘটনা থেকেই শুভ’র সাথে তার সম্পর্কটা গড়ে উঠে। শুভ চোখে কম দেখে। চশমা ছাড়া বেচারাকে অন্ধই বলা যায়। দুইহাত দুরের কিছুও সে চশমা ছাড়া দেখতে পায়না। তবে ক্লাসে সে বরাবরি প্রথম হত। ক্লাসে সবাই শুভর বোকাসোকা চেহারা আর কথা-বার্তা নিয়ে হাসাহাসি করত। ক্লাসে বদের হাড্ডি বলে পরিচিত সুব্রত। একদিন ফাজিল সুব্রত কানাবাবা বলে ছোমেরে শুভর চশমা নিয়ে দৌড়ে পালালো। অসহয় শুভ দুই ঘন্টা ক্যাম্পাসের সিমেন্টের বেঞ্চে বসে রইল। সুব্রতর দেখা পাওয়া গেলনা কোথাও। তনু সবি দেখছিল, প্রথম দিকে সে অনেক মজা পেলেও পরে কেন যেন শুভর জন্য তার খারাপ লাগল। মায়া হল। সে শুভ’র কাছে গিয়ে জ্ঞিগাসা করলো “ কি ব্যাপার তুমি এখানে একা একা বসে আছ কেন?”
তনু সবি দেখছিল, প্রথম দিকে সে অনেক মজা পেলেও পরে কেন যেন শুভর জন্য তার খারাপ লাগল। মায়া হল। সে শুভ’র কাছে গিয়ে জ্ঞিগাসা করলো “ কি ব্যাপার তুমি এখানে একা একা বসে আছ কেন?”
শুভ হাসিমুখে বললো,সুব্রত ফাজলামো করে আমার চশমা নিয়ে গিয়েছে। কখন যে আসবে ও?
তনু ভারি আশ্চর্য হল শুভ কথা শুনে। এমন ধৈয্যশীল মানুষ আর কখনো দেখেনি সে। শুভর মুখের দিক তাকিয়ে রইল সে। তনুর কেন যেন মনে হয় শুভর কাছে আছে সিমাহীন নির্জণতা। আর অসিম ধৈয্যশক্তি। এমন একজন পুরুষকেই তার চাই।
শুভর হাতধরে বলে
চল তোমাকে বাসায় পৌছে দেই।
শুভ হেসে বলে তোমার কষ্ট হবে নাতো?
আরে না। তুমিতো আমাদের পাশের মহল্লাতেই থাক। চল।
৪.
তনুর নাম্বারে এপযন্ত দশবার কল দিল শুভ। রিং হচ্ছে কিন্তু তনু ধরছে না। গতকালও সে ফোন রিসিভ করেনি। তনুর জন্য খুব দুঃশ্চিন্তা হয় শুভর। একমাস পর ভাসির্টি খুলেছে। গতকালও তনু ক্লাসে আসেনি। ফাইনাল পরিক্ষার আর মাত্র দুইমাস আছে। এমন সময় কেউ ক্লাস মিস করে? কি হল ওর?
মনটা খারাপ হয়ে যায় শুভর। সে তনুকে এসএমএস পাঠায়।
কিছুক্ষন পর কল আসে তনুর। রিসিভ করতেই তনু বলে, শুভ তুমি আমাকে ভুলে যাও। আমি তোমার যোগ্য নই। আমি খুব খারাপ একটা মেয়ে।
শুভ তনুর শিতল কন্ঠে অভস্ত্য নয়। কেমন অচেনা মনে হয় তনুকে। এমন কন্ঠে কখনো তনু তার সঙ্গে কথা বলেনি। বিস্মিত হয়ে তাই শুভ বলে, কি হয়েছে তোমার? ক্লাসে আস। প্লিজ!
ফোনের ও প্রান্তে তনুর কান্নার শব্দ পেয়ে বিচলিত হয়ে যায় শুভ। বলে, প্লিজ কি হয়েছে বল আমাকে।
তনু কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে, তোমার মা গতকাল সকালে আমাদের বাসায় এসেছিল। সবার সামনে আমাকে যাচ্ছেতাই বলে বকা দিয়েছে। আমার মা বাবাকেও সে অনেক অপমান করেছে। বাবা তাই আমার কলেজে যাওয়া বন্ধকরে দিয়েছে। আমার বাইয়া সন্ধায় আমাকে এজন্য মেরেছে। তুমি, বল আমার বাবা কি এতই গরিব যে তোমার বাবার সম্পতী পাবার লোভে আমাকে তোমার পেছনে লেলিয়ে দিবে? মেয়ের বাবা বলেই কি তাকে এতসব কথা শুনিয়ে দিতে পারে তোমার মা?
শুভ এসব কথা শুনে যেন পাথরের মূর্তি হয়ে গেল। কষ্টে তার বুকটা ভেঙে যাচ্ছিল। সে তনুর কাছে ক্ষমা চাইল বার বার। কিন্তু তনুর কান্না তাতে থামলো না।
শুভর খুব অভিমান হল মায়ের প্রতি। সে ক্লাস না করেই বাসায় ফিরে এল। শুভর মা ডোয়িং রুমে বসে টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল দেখতে ছিল। শুভ বইর ব্যাগটা সোফার উপর ছুড়ে ফেলে তার মায়ের সামনে গিয়ে দাড়ালো। তারপর কঠিন গলায় শুভ বললো, আম্মা তুমি কি তনুদের বাসায় গিয়েছিলে?
তার মা কখনোই শুভর এমন অগ্নিমূর্তি দেখেনি। প্রথম দিকে সে ভড়কে গেলেও সে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, হ্যা গিয়েছিলাম। ওদের উচিৎ শিক্ষা দিয়ে এসেছি। হিন্দি সিরিয়ালের মহিলা ভিলেনের মত কওে বলে সে।
- তুমি কিন্তু কাজটা মোটেও ঠিক করনি। লালচোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে শুভ। কিন্তু তার মা তাকে মোটেও পাত্তা দেয়না। গম্ভীর স্বরে বলে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল তোমার কাছে আমার শিক্ষতে হবে না? বেশি বড় হয়ে গিয়েছো? ঐ শয়তানটা তোমার মাথা খেয়েছে।
এরপর শুভ আর কোন কথা না বলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। শুভর মা আবার তার হিন্দি সিরিয়ালে ডুবে যায়।
ডাইনীং টেবিলে খাবার সাজিয়ে অনেক বার ডাকার পরও যখন শুভ ভাত খেতে আসেনা, তখন শুভর দরজার কড়া নাড়ে শুভর মা। জোরে জোরে কয়েক বার ডাকার পরও ভেতর থেকে কোন সাড়া নেই। তার মায়ের হটাৎ করেই মনে হয় ছেলেটাকে ওভাবে বকা দেওয়াটা ঠিক হয়নি।
সে আদরভরা গলায় বলে, সরি বাবা আমার ভুল হয়েছে। দরজা খোল।
কোন শব্দ নেই। ক্রমাগত আঘাত করে যায় শুভর মা। কোন শব্দ নেই। অজানা আশংকায় বারান্দা দিয়ে ঘুরে গিয়ে কাচের জানালা ভেদ করে সে শুভর ঘরের ভিতর তাকায়।
শুভ তখন ঝুলছে ফ্যানের সঙ্গে। চিৎকার করে জ্ঞান হারায় সে।
No comments:
Post a Comment