Pages

Monday, November 30, 2015

মুসলিম হওয়ার কারণে বিমান থেকে নামিয়ে দেয়া হলো তরুণীকে !

শুধুমাত্র মুসলমান হওয়ার কারণে এবার প্লেন থেকে নেমে যেতে বলা হল তুর্কি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নাগরিক কামিলা রাশিদকে। ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের নিউ আর্ক শহরের একটি বিমানবন্দরে।
কামিলা রাশিদ নিউ আর্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে তুর্কির ইস্তানবুলের উদ্দেশে যাত্রা করার সময় বিমানবন্দরের স্বাভাবিক নিরাপত্তা তল্লাশি পার হওয়ার পরেও কাস্টম অফিসারার তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকে রাখেন।
কামিলাকে পরে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ব্যাবস্থা ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের আরেকটি বিমানে উঠতে অনুমতি দেয়া হলেও বিমানটি উড্ডয়নের ঠিক পূর্বেই এফবিআই কর্মকর্তারা তাকে অন্যান্য যাত্রীদের সামনে প্লেন থেকে আবারো জিজ্ঞাসাবাদের অজুহাতে নামান।
৩০ বছর বয়েসি কামিলা রাশিদ গত বুধবার সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, বিমানবন্দরে নিরাপত্তাকর্মীদের থেকে নেয়া এই অগ্নিপরীক্ষা তাকে এতটাই অপমানিত এবং ভীতসন্ত্রস্ত করেছে যে বিমানে চড়ে দ্বিতীয় কোথাও ভ্রমন করার কথা তিনি চিন্তাও করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, ‘আমাকে অপমান এবং বহিস্কার করাই ছিল তাদের উদ্দেশ।’
তিনি আরো বলেন, ‘তারা সম্ভবত এটা করেছে কারণ আমি মুসলিম, কারণ আমি ইস্তানবুল যাচ্ছিলাম, কারণ তাদের যা খুশি তাই করার ক্ষমতা আছে, কারণ নিরাপত্তা মানে মানুষের অধিকার হরণ করা, কারণ বেশিরভাগ মানুষই জানেনা নিরাপত্তার অর্থ আসলে কি, কারণ বেশিরভাগ মানুষের বিশ্ব রাজনীতির সাধারণজ্ঞানটাও নেই।’
গত নভেম্বরের ১৩ তারিখে প্যারিসে আইএসের জঙ্গি হামলার পর গোটা যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদার করা হয় এবং মুসলিমদের উপর কড়া নজরদারি শুরু হয়। কামিলাও এই নজরদারির শিকার।
কামিলা বলেন, ‘বিমানের ২০০ আরোহীর মধ্যে আমিই কেবল জলজ্যান্ত মুসলিম যাকে নামিয়ে দেয়া হয় এবং যার পাসপোর্ট এবং মুঠোফোন জব্দ করা হয়।’
কামিলা রাশিদ যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেছেন। তিনি একইসাথে একজন শিক্ষক, শিল্পী এবং দ্যা নিউ ইনকয়ারি ম্যাগাজিনের লেখক।
যুক্তরাষ্ট্রের ইসলামভীতি নিয়ে কামিলা বলেন, ‘আমার মনে হয় না প্যারিস হামলার পরে ইসলামভীতির পুনরুত্থান হয়েছে। এটা আগে থেকেই ছিল, এখন এটাকে শুধু কায়দা করে বৈধ করা হয়েছে। ৯/১১ হামলার পরেও যে রকম হয়েছিল, অনেক মানুষ মুসলিমদের উপর ঘৃণাবশত অনেক আঘাত করেছেন। প্যারিস হামলার পরেও ঠিক সেটাই হচ্ছে।’
উল্লেখ্য যে বিগত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে সন্দেহবশত আরো কিছু মুসলিম নাগরিককে বিমান থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে।

বিয়ে-দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য ও মৌলিক ভিত্তি কী?

মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে জ্ঞান-বুদ্ধি,বিবেক-বিশ্বাস, নৈতিকতার ভিত্তিতেই সৃষ্টির সেরা বা আশরাফুল মাখলুকাত এর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। তাই মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয়ই মানুষ সামাজিক ও নৈতিক জীব। সুখ, শান্তি, তৃপ্তি ও নিশ্চিন্ততা এবং নিরবচ্ছিন্ন আনন্দ লাভই হচ্ছে মানব জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য, মানব মনের ঐকান্তিক কামনা ও বাসনা। এদিক দিয়ে নারী পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। মানব জাতির সৃষ্টির মধ্যে এরাও একটি উদ্দেশ্য এই যে, নারী-পুরুষ জাতি মিলে একটি পরিবার গঠন করবে এবং তার থেকে একটি সভ্যতার বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠিত হবে।
biye-(1)
 এই জন্যেই নারী-পুরুষকে ভিন্ন রূপে সৃষ্টি করেছেন। তাদের মধ্যে পারস্পরিক যৌন আকর্ষণ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের দৈহিক গঠন ও মনস্তাত্মিক বিন্যাসকে পারস্পরিক ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যেই দাম্পত্য জীবনকে পুরোপুরি উপযোগী করে দেয়া হয়েছে। ইসলাম এমনি এক দাম্পত্য জীবনের নিশ্চয়তা দেয় যেখানে রয়েছে প্রেম-প্রীতি, স্নেহ-মমতা, ভক্তি ভালবাসায় ভরপুর সুন্দর পরিবেশ। ইসলামের দাম্পত্য বিধান এমনই এক আইন বিধান যা সামাজিক বিধান সমূহের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী। ইসলামে এ বিধানের মৌলিক গুরুত্বের দিকে লক্ষ্য রেখে তা অন্তত নির্ভুল বুনিয়াদের উপর রচনা করা হয়েছে। এবং মুসলমানরা দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের দ্বীনের মধ্যে একটি উত্তম, পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ বিধান লাভ করেছিল। এবং তা যে কোন দিক দিয়ে পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মের দাম্পত্য বিধানের তুলনায় নিঃসন্দেহে উত্তম বলা যেতে পারে। ইসলামে দাম্পত্য সম্পর্ক এমন সামাজিকতা ও উত্তম নৈতিক আচরণের সর্বোৎকৃষ্ট নমুনা।
ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে
একজন নারী ও একজন পুরুষ তাদের মধ্যে পরস্পরে যৌন আকর্ষণের যে দাবী তা পূরণের জন্যে আল্লাহ সৃষ্ট যে বিধান সেটাই বিবাহ। ইসলামে নারী ও পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্যে বিবাহ হচ্ছে একমাত্র বৈধ উপায়। এবং সামাজিক সাংবিধানিক স্কীকৃত একমাত্র বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা। যার ফলে নারী পুরুষের একত্রে বসবাস ও পরস্পরে যৌন সম্পর্ক স্থাপন সম্পূর্ণরূপে বৈধ হয়ে যায়। বিবাহ ছাড়া অন্য কোন পন্থায় নারী পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থপন ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নারী পুরুষ সৃষ্টি যত পুরাতন,বিবাহ ব্যবস্থাটিও তত পুরাতন এক মানবিক ব্যবস্থা একজন নারী ও একজন পুরুষ বিবাহ সুত্রে আবদ্ধ হয়ে সুশৃংখল ও সুষ্ঠু জীবন যাপনকেই বলা হয় দাম্পত্য জীবন।
দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য
ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিটি নারী-পুরুষের বিবাহের বয়স হলে তাদের জন্যে অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে বিবাহ সুত্রে আবদ্ধ হয়ে দাম্পত্য জীবন-যাপন করা। একমাত্র বিয়ের মাধ্যমেই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন সম্ভব, তেমনিভাবে যৌন মিলনের স্বাভাবিক অদম্য ও অনিবার্য স্পৃহা সঠিকভাবে পূরণ হতে পারে কেবল মাত্র এই পন্থায় আল্লাহ পাক দাম্পত্য জীবনের এই ব্যবস্থাপনা এজন্যেই করেছেন যে,নারী পুরুষ উভয়ই পরস্পরের নিকট পরম শান্তি, তৃপ্তি ও স্বস্তি লাভ করবে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র আল কুরআনের সুরা আরাফে বলেন,“এবং উহারই সত্তা হইতে উহার জুড়ি বানাইয়াছেন যেন উহার নিকট পরম শান্তি ও স্থিতি লাভ করতে পারে”।(সুরা আরাফ-১৮৯)।
এ আয়াত থেকে বুঝা গেল, স্ত্রী পুরুষের জন্যে এবং পুরুষ স্ত্রীর জন্যে শান্তি স্বরূপ। এর মাধ্যমে একদিকে মানব বংশ সংরক্ষণ এবং মানবীয় সভ্যতা ও তমদ্দুন সৃষ্টির ব্যবস্থা করেছেন। এই ব্যবস্থাপনা যদি না করতেন তাহলে মানব বংশ গরু-ছাগলের মতো সমাজে বৃদ্ধি পেতো। ইহার মাধ্যমে কোন সভ্যতা গড়ে উঠার কল্পনা করা যেত না। তাই আল্লাহ পাক নারী পুরুষের পরস্পর তারা পরস্পরের প্রতি কামনা-বাসনা ও উদ্যম, ব্যাগ্রতা, ব্যাকুলতার এক পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যেন একে অপরের সাথে লাভের পিপাসাই তাদেরকে পরিবার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাধ্য করে। এই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই মানব সভ্যতা গড়ে উঠা সম্ভব।
দাম্পত্য জীবনের মৌলিক ভিত্তি
আল্লাহ পাক বিনা উদ্দেশ্যেই বিয়ে এবং দাম্পত্য জীবনের এ ব্যবস্থাপনা সৃষ্টি করেননি। তিনি তাঁর আপন ইচ্ছায় এই ব্যবস্থাপনা করেছেন। ইসলাম যেনাকে হারাম ঘোষণা করেছে এবং নারী-পুরুষের চরিত্রকে অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতা থেকে এবং সমাজকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দাম্পত্য জীবনের এই ব্যবস্থাপনা করে রেখেছেন। আল্লাহ পাক দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের মৌলিক দুটি দিকের বর্ণনা করেছেন। সুরা আর রূমের মধ্যে তিনি বলেন-“তাঁর নিদর্শন সমূহের মধ্যে ইহাও একটি যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই জাতির মধ্য হইতে স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের নিকট পরম প্রশান্তি লাভ করতে পারো। আর তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও স্বহৃদয়তার সৃষ্টি করে দিয়েছেন”। (রূম-২১) এ আয়াত থেকে দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের মৌলিক দুটি দিক পাওয়া যায়। (১) নৈতিক চরিত্র ও সতীত্বের হেফাজত। (২) ভালবাসা ও আন্তরিকতা।

জীবন কী এমনো হয়।

৮ বছর বয়সী সন্তানের জননী নাসরিন আক্তারের (৩৫) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো ২১ বছর বয়সী দেবর জমির উদ্দিনের।
বড় ভাই প্রবাসে থাকার সুযোগে ভাবীর সমস্ত কাজ করে দেওয়ার পাশাপাশি খুব কাছাকাছি থাকার সুযোগে অসম পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলো এই দেবর-ভাবী। প্রায় দুই বছরের প্রেম থেকে শুরু হয় অনৈতিক সম্পর্ক।
ঘটনাটি বাড়িতে জানাজানি হতেই শেষ পরিণতি, দেবর-ভাবী একে অপরের হাত ধরে অচেনা গন্তব্যে পলায়ন। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা ইউনিয়নের দক্ষিণ কোদালা গ্রামে।
দেবরের হাত ধরে পালিয়ে যাওয়া নাসরিন আক্তারের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে নগদ ২৫ লাখ টাকা ১০ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়েছে এই গৃহবধু। গত ২০ নভেম্বর এই ঘটনায় রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছে গৃহবধুর শ্বশুর পক্ষ।
থানায় দায়েরকৃত অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার কোদালা ইউনিয়নের দক্ষিণ কোদালা গ্রামের আব্দুল খালেকের প্রবাসে থাকা ছেলে মো. মুন্সি আহম্মদ প্রকাশ বদির সঙ্গে চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের সুফিগোট্টা গ্রামের আবুল কাসেম মিস্ত্রীর মেয়ে নাসরিন আক্তারের বিয়ে হয়। ১৬ বছর আগে সামাজিকভাবেই এই বিয়ে সম্পন্ন হয়।
বিয়ের পর মুন্সি আহমদ নিজ কর্মস্থল সৌদি আরবে চলে যান। তাদের সংসারে ৮ বছরের এক ছেলে সন্তানও রয়েছে। স্বামী বিদেশ থাকায় পরিবারে নাসরিন আক্তারের কনিষ্ঠ দেবর মো. জমির উদ্দিন ভাবী নাসরিনের ব্যক্তিগত সব কাজকর্ম করে দেয়। পরিবারে সব কাজে নাসরিনের সাথী ছিলো ছোট্ট দেবর জমির। সেই সুবাদে ভাবী নাসরিন আক্তারের সঙ্গে গভীর প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে জমির। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক স্পাপিত হলে বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতে পারে। এতে পরিবারের মধ্যেই অশান্তির সৃষ্টি হয়।
নাসরিনের বড় দেবর মো. খোরশেদ আলম জানান, ছয় ভাইয়ের মধ্যে আমাদের বড় ভাই প্রবাসে থাকার সুবাদে সবার ছোট ভাই জমির বড় ভাবীর কাজ কর্ম করে দিত। এই সুযোগে তাদের মধ্যে অনৈতিক সর্ম্পক গড়ে ওঠে। এই নিয়ে বাড়িতে অশান্তি সৃষ্টি হলে কয়েকদিন আগে নাসরিন আক্তার ও জমির উদ্দিন বাড়ি থেকে নগদ ২৫ লাখ টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণলংকার ও বিভিন্ন মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় গত ২০ নভেম্বর প্রবাসীর ছোট ভাই মো. খোরশেদ আলম বাদী হয়ে রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়ালি উল্লাহ ওলি অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

কিছু সত্য প্রেমের কাহিনী।

রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট, শাহজাহান-মমতাজ, লাইলী-মজনু, দেবদাস-পার্বতী সহ আরও অনেক প্রেম কাহিনী ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। যুগ যুগ ধরে প্রেমিক-প্রেমিকাদের কাছে ইতিহাসের সেই প্রেমিক-প্রেমিকাদের প্রেম আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
প্রেমের সেই আদর্শ বর্তমান সময়ে এসে অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। এখনকার প্রেম-ভালোবাসা মূলত মনের দিক থেকে হয় না। হয় টাকা ও শরীরের দিক থেকে। তবে এর মধ্যেও দেশে-বিদেশে এমন কিছু প্রেম-ভালোবাসার ঘটনা ঘটছে যা আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই সব ঐতিহাসিক প্রেমের ইতিহাসের কাছে। আজ আমরা এমন কিছু প্রেমের গল্প শুনবো।

 
ঘটনা – ১:
একজন ধর্ষিতা নারীর পাশে দাঁড়ালেন সত্যিকারের একজন বন্ধু। ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তিনি। বন্ধুত্বের মর্যাদা রাখলেন বিহারের এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র। চোখের সামনেই তার বান্ধবীকে ধর্ষণ করেছিল পর পর ৩ জন ৷ কিন্তু অধিকাংশ সময়েই যা হয়, এ ক্ষেত্রে তা হয়নি৷ বান্ধবীর পাশ থেকে সরে আসেননি ওই তরুণ৷ প্রথাসম্মত ভাবে বিয়ে করে লাঞ্ছিতা তরণীকে জীবনসঙ্গিনী করেন তিনি৷২২ বছর বয়সী বান্ধবীর সঙ্গে বিহারের বাঁকা জেলার মন্দার পর্বত এলাকায় ঘুরতে গিয়েছিলেন ওই তরুণ৷ অনেকের বিশ্বাস, ওই পর্বতটিই হল হিন্দু পুরাণ কথিত মন্দারচল পর্বত, যা সমুদ্রমন্থন করে অমৃত তোলার কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল৷ তাই সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বহু তীর্থযাত্রীর সমাগম হয়৷ কিন্তু সমুদ্রমন্থনে যেমন বিষ উঠে এসেছিল, তেমনিই তীর্থস্থানেও ওই তরুণ-তরুণীর জন্য অপেক্ষা করেছিল বিপদ৷ রাস্তা হারিয়ে কিছু মেষপালকের কাছে পথ জিজ্ঞেস করেছিলেন তাঁরা৷ ভুল তথ্য দিয়ে ওই মেষপালকরা তাঁদের এক নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়৷ দু’জনকেই আটকে রেখে মারধর করা হয়৷ তিন ঘণ্টা ধরে বন্ধুর সামনেই ৩ জনের হাতে গণধর্ষিতা হন ওই তরুণী৷ ছেড়ে দেওয়ার আগে তাঁদের টাকাপয়সাও কেড়ে নেয় দুষ্কৃতীরা৷ কোনক্রমে বরাহত থানায় পৌঁছে আক্রান্ত তরুণ-তরুণী এফআইআর দায়ের করেন৷

 
ঘটনা – ২:
রূপকথাকেও হার মানায় জেতসুন পেমা প্রেম কাহিনী। তিনি তখন ৭ বছরের শিশু। দেখা হলো ১৭ বছরের জিগমে খেসর নামগিয়েল ওয়াংচুকের সঙ্গে। সেখানে ওই জিগমে কথা দেন যদি দু’জনই সিঙ্গেল থাকেন ভবিষ্যতে তারা বিয়ে করবেন। দিন যায়, মাস যায়, একে একে বছরও যায়। এভাবে ১৩ বছর পর তাদের দেখা হয়। ৩০ বছর বয়স্ক ওই যুবক তখন ভূটানের রাজা। কথা রাখলেন তিনি। বিয়ে করলেন সেদিনের শিশু আজকের ২০ বছরের তরুণী জেতসুনকে। বৌদ্ধ রীতিতে বিয়ের পর জেতসুন হয়ে গেলেন ভূটানের রানী।

 
ঘটনা – ৩:
ভঙ্গুর এ সমাজে ভালোবাসার অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর অনুপম সেন। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা কতটা গভীর এবং নিখাদ হতে পারে তা দীর্ঘ ৫ বছর ধরে তার প্রমাণ দিয়ে চলেছেন ২০১৪ সালের একুশে পদক বিজয়ী এ শিক্ষাবিদ। দীর্ঘ এ সময়ে, কোমায় থাকা অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার পাশাপাশি নিরলসভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন সেবা শুশ্রুষা । অসুস্থ স্ত্রী`র প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিসর্জন দিয়েছেন নিজের সব কিছু। পরম মমতায় স্ত্রী উমা সেনের মাথায় হাত রেখে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে কি না দেখছেন ডক্টর অনুপম সেন। হয়তো সে সঙ্গে কিছুটা নিশ্চিত থাকার চেষ্টা করেন প্রিয়তমা স্ত্রীর এখনো শ্বাস চলছে। আর এভাবে গত ৫ বছর ধরে প্রতিদিন সকাল শুরু হয় শিক্ষাবিদ ডক্টর অনুপম সেনের। সাত সকালে শুরু হওয়া সত্তোরোর্ধ্ব শিক্ষাবিদের নিজ হাতে অসুস্থ স্ত্রীর সেবা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। এর মাঝে তিনি সেরে নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সব কাজ। অসুস্থ স্ত্রী, সংসার, নিয়মিত লেখালেখি-- এত সবের পরও বসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি-নির্ধারনী সভায়। করে চলেছেন সমাজ সেবামূলক নানা কাজও। স্ত্রী আবারো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন এ আশায় এখনো বুক বেঁধে আছেন ১২টি গবেষণাধর্মী বইয়ের লেখক এ সামজ বিজ্ঞানী। তিনি বিশ্বাস করেন প্রিয়তমা স্ত্রী আবারো জেগে উঠবে। ফিরে আসবে আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে। চট্টগ্রামের বনেদী পরিবারের সন্তান অনুপম সেন। কানাডা থেকে এমএ পাশ করার পর অনুপম সেন সেখানেই পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ১৯৬৪ সালে পরিবারের সিদ্ধান্তে বিয়ে করেন প্রতিবেশী ঊমা সেনকে। দীর্ঘ ৫০ বছরের সুখের সংসারে হঠাৎ করেই নেমে আসে বিপর্যয়। ২০০৯ সালে রক্তক্ষরণের কারণে সেমি কোমায় চলে যান উমা সেন। সেই থেকে শুরু হয় ডক্টর অনুপম সেনের আরেক সংগ্রাম।

 
ঘটনা – ৪:
দাম্পত্য জীবনের বয়স দীর্ঘ ৬০টি বছর। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তারা ছিলেন দু`জনের ছায়া হয়ে। বিয়ের পর থেকে তাদের কখনও আলাদা হতে দেখা যায় নি। ভালোবাসার টান এমনই ছিল যে, মৃত্যুও তাঁদের আলাদা করতে পারেনি। পরস্পরের হাতে হাত রেখেই শেষবারের মতো চোখ বুজেছেন তাঁরা। ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের বাটাভিয়ায়। স্বামীর নাম এড হেইল (৮৩) ও স্ত্রীর নাম ফ্লোরিন হেইল (৮২)।   ফ্লোরিনের মৃত্যুর পর হাসপাতালের বিছানায় তাঁর হাত ধরে থেকেই মাত্র ৩৬ ঘণ্টা পর পৃথিবী ছেড়েছেন এড।আত্মীয় ও পরিচিতরা জানান, তাঁদের কাছে এড ও ফ্লোরিন দম্পতি ছিলেন আদর্শ প্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কখনো তাঁদের আলাদা হতে দেখেননি তাঁরা। তাঁদের এই মধুর সম্পর্ক নিয়ে ঠাট্টা করে ফ্লোরিনকে যখন তাঁরা জিজ্ঞেস করতেন, তখন ফ্লোরিনের জবাব ছিল- তাঁর আগে এডকে মরতেই দেবেন না! ৬০ বছর আগে এক পার্টিতে পরিচয় ফ্লোরিন ও এডের। তরুণ প্রকৌশলী এড যখন ফ্লোরিনের বাবা-মায়ের কাছে গিয়ে তাঁদের মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন, তখন তাঁরা বাস্তবিকই সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। কারণ মাত্র তিন মাস আগে ফ্লোরিনের বিয়ে হয়েছিল। সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়েছিল। ওই দুর্ঘটনায় ফ্লোরিনও প্রচণ্ড আঘাত পান এবং মানসিকভাবে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমন অবস্থায় এত শিগগির মেয়েকে আবার বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে রাজি ছিলেন না তাঁরা। কিন্তু তাঁদের `না`কে মানতে পারেননি এড। তিনি ফ্লোরিনকেই বিয়ে করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৫৩ সালের ১২ মে ফ্লোরিনকেই বিয়ে করেন।

 
ঘটনা – ৫:
মার্কিন মুলুকের আইওয়া প্রদেশের নাগরিক নরমা ও গর্ডন। দু’জনেরই বয়স ৯০ বছরের বেশি। ৭২ বছর ধরে দু’জন একসঙ্গে সংসারের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে আসছেন। হঠাৎ গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে দু’জনকেই একসঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। দুর্ঘটনার পর থেকে দু’জনই দু’জনের হাত ধরে ছিলেন। ডাক্তাররা উপায় না পেয়ে দু’জনকে একসঙ্গে একটি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রাখেন। দু’জনের হুশ ছিল না; কিন্তু পরস্পরের হাত কেউ ছাড়েননি। হাত ধরা অবস্থায় গর্ডন নরমাকে ছেড়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলে মাত্র। এক ঘণ্টা পর নরমাও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ১৯৩৯ সালের ২৬ মে বিয়ে করা এ দম্পতি মৃত্যুর পরও এভাবে পরস্পরের হাত ধরে থাকাই আমাদের বুঝতে শেখায় ভালোবাসার মানবিক বাস্তবতা।

 
ঘটনা – ৬:
টেইলর মরিস ও ডেনিয়েল কেরি। একসঙ্গে হাইস্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকান। পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে পরস্পরের প্রেমও বেড়ে চলে সমান গতিতে। কিন্তু হঠাৎই যেন ঝড় আসে দু’জনের ভালোবাসার সম্পর্কে। ২০০৭ সালে মার্কিন নেভিতে কর্মরত মরিস এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হলে তার দুই হাত আর পা কেটে ফেলতে হয়; কিন্তু তাতে কি ভালোবাসা কমে! এখন সমুদ্র সৈকতে কেরির কাঁধে চড়ে সমুদ্র দেখে মরিস। নিজের ভালোবাসার মানুষের সেবা-শুশ্রƒষায় বেশ ব্যস্ত দিনই পার হয়ে যায় কেরির। এদিকে টিম ডট নামের এক ফটোগ্রাফার হেরি-মরিস যুগলের ভালোবাসার ছবিগুলো তুলে ছড়িয়ে দেন বিশ্বময়, যা এই প্রেমিক যুগলকে পরিচয় করিয়ে দেয় গোটা দুনিয়ার সঙ্গে।

 
ঘটনা – ৭:
যদিও আকাশ কুয়াশায় ম্রিয়মাণ, তোমার জন্য লিখছি প্রেমের গান! ৯৬ বছর বয়স্ক ফ্রেডের জীবনের গল্পটা যেন এই গানের মতোই। লরিনকে নিয়ে তার সংসার ৭৫ বছরের। এতগুলোদিন একসঙ্গে থাকার পর হঠাৎ ভালোবাসার মানুষটি যদি চলে যান, তাহলে তো আকাশ মেঘ কালো করবেই। হারানো প্রেমিকার স্মৃতির উদ্দেশে গান লিখতে বসেন মার্কিন নাগরিক ফ্রেড। পরে এক বিজ্ঞাপন দেখে লেখা গানটি মেইল করেন এক প্রতিষ্ঠানের কাছে। ওই প্রতিষ্ঠানেরও পছন্দ হয় ফ্রেডের লেখা গান। পরে গানটি রেকর্ডিংও হয় ‘এ লেটার ফ্রম ফ্রেড’ শিরোনামে।


ঘটনা – ৮:
আমেরিকার অধিবাসী ডোনাল্ড ফিদারস্টোন ও ন্যান্সি। যখন কারও জামা-কাপড়ের দরকার হয়, দু’জন একসঙ্গে মিলে কাপড়ের দোকানে যান। তারপর দু’জনের জন্য এক রঙের, এক ধরনের কাপড় কেনেন। ৩৫ বছর ধরেই এ কাজ করে আসছেন এ দম্পতি। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা আর তীব্র আবেগ প্রকাশের জন্যই এ ব্যবস্থা।

 
ঘটনা – ৯:
বন্ধুত্বের মাঝে আমাদের ভালোবাসার বোধ মাখামাখি করে থাকে। এ গল্পটা তেমনই। চীনের হেবাইতে ১৬ বছরের এক কিশোর লুই সি চিং। লুই গত আট বছর ধরে সে তার বন্ধুকে কাঁধে করে স্কুলে পৌঁছে দেয়। কেননা ওর বন্ধু লু সাও যে হাঁটার সক্ষমতা রাখে না। আট বছর আগে, এক ঝড়-জলের দিনে মাটিতে পিছলে পড়ে যায় লু সাও। সেই থেকে প্রতিদিন কাঁধে করে বন্ধুকে স্কুলে আনা-নেয়া করে লু। আর সাও ডায়েরিতে টুকে রাখে বন্ধুত্বের নিস্বার্থ দানের গল্প।

 
ঘটনা – ১০:
১৬ বছর প্রেম করার পর সংসার গড়ার জুটি পৃথিবীতে বিরল। আর এমনি ঘটনা ঘটেছে পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায়। দীর্ঘ ১৬ বছর এক নাগারে প্রেম করার পর পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘটনার নায়ক হলেন, পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের মালিগছ গ্রামের খোকন প্রধানের দ্বিতীয় পুত্র মোনায়েম প্রধান রাসেল। নায়িকা একই উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের খাটিয়াগছ গ্রামের মাহাবুব আলমের তৃতীয় কন্যা মর্জিনা আক্তার। দুজনই সদ্য মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। সম্পর্কের শুরু সেই উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে। উভয়ে তখন সবে মাত্র ভজনপুর দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ শ্রেণীতে পড়ে। প্রেম শুরুর কয়েক দিনের মধ্যেই সবার কাছে তাদের প্রেমের খবর পৌছে যায়। তবে তাদের পবিত্র ভালোবাসায় কেউ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। না কোন সহপাঠী, না শিক্ষক আর না অভিভাবক। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া, এক সাথে মাঠে বসে দীর্ঘক্ষণ গল্প করা, ঘুরে বেড়ানো ভালোভাবেই তাদের দিন কেটে যায়। মাঝে মাঝে ঝড়গা আবার মিলন। এরপর পরিবারের পক্ষথেকে আসে কঠিন নির্দেশ। জুড়ে দেয়া হয় শর্ত। সম্পর্ক মেনে নেয়া হবে তবে উভয়কে ভালোভাবে লেখাপড়া সম্পন্ন করতে হবে। এরপর থেকে শুর“ হয়ে তাদের নতুন অধ্যাবসায়। প্রেমের সাথে সাথে চলল লেখাপড়া। রাসেল মাধ্যমিক পাশ করে ভজনপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, দিনাজপুর আইন কলেজ থেকে এল এল বি, ও রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। মর্জিনা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর রাসেলের সাথে একই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও অনার্স- মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। দুজনেই তাদের জীবনের লক্ষে ও প্রেমকে সার্থক করার লক্ষে ছিলেন অটুট। তাই মাস্টার্স পাশের পর পরই অভিভাবকরাও তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন। দিয়েছেন তাদের পারিবারিক স্বীকৃতি। মহা ধুমধামে এই প্রেমিক জুটির বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।

 
ঘটনা – ১১:
মুকেশ কুমার পেশায় একজন কৃষক। বাড়ি ভারতে হরিয়ানার ভারতে। আর আদ্রিয়ানা পেরাল এর বাড়ি সদূর আমেরিকা। ৪১ বছরের আদ্রিয়ানা পেরালের জীবনটা কাটছিল আর বাকি পাঁচজন হাইপ্রোফাইল গৃহস্থ মার্কিন মহিলার মতই। অফিসে রিসেপসনিস্টের কাজ, তারপর সন্ধ্যায় জিম, রাতে নাইটক্লাবে দেদার নাচ। এভাবেই দিন কাটত পেরালের। অফিসে ফেসবুকের সামনে মাঝে মাঝে বসার সুযোগ পেতেন। তখনই পরিচয় হয় হরিয়ানার ২৫ বছরের মুকেশ কুমারের সঙ্গে। মুকেশের সঙ্গে কথা বলতে বেশ লাগত পেরালের। মুকেশের সঙ্গে মিশেই জীবনের মানে খুঁজে পেতে শুরু করেন পেরাল। মুকেশের কথা পেরাল জানান তাঁর মেয়ে ওবন্ধু বান্ধবদের। পেরালের আত্মীয়-বন্ধুরা বলেন, ‘ফেসবুকে অনেক ভুয়ো অ্যাকাউন্ট থাকে। ওই নামের আসলে কেউ নেই, তোমায় কেউ ঠোকাচ্ছে।’ জেদ চেপে বসে পেরালের। মুকেশের কাছ থেকে ঠিকানা চেয়ে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে প্লেনে চড়ে দিল্লি। দিল্লি এয়ারপোর্টে তখন পেরালের জন্য অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে মুকেশ। যা দেখে চোখে জল চলে এল পেরালের। পেরালের মেয়ের ও দারুণ পছন্দ হয়ে যায় মায়ের প্রেমিক মুকেশকে। এরপর আর কী.. সাত পাকে বাধা। তার সংসার জীবন.. ক্যালিফোর্নিয়ার সেই পাঁচতারা জীবন ছেড়ে হরিয়ানায় একতারা জীবনে পাড়ি। এখন নিজে হাতে রুটি করেন, লাঙল দেন, মুকেশকে চাষের কাজে সাহায্য করেন। শ্বাশুরির কাছে রামায়ণ-মহাভারতের গল্পও শোনেন।

ঘটনা - ১২:
পল ম্যাসনের ওজন ছিল ৯৮০ পাউন্ড। বিশ্বের সবচেয়ে ভারী মানুষ ছিলেন তিনি। ওজনের ভারে উঠতে পারতেন না পর্যন্ত। সেই পলের জীবনেই ক মাস আগে বদল আসে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে একজন পলের জীবন বদলে দেয়। সেখানেই মনের মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। নিজের পরিচয় দিয়ে পল তার প্রিয় পছন্দের মানুষটিকে বলেছিল, ‘তুমি সঙ্গে থাকলে আমি সব ভার বইতে পারব। সেই ৯৮০ পাউন্ডের মানুষ পল ম্যাসনের প্রেম কাহিনি আজ নতুন পথ দেখাল বিশ্বের তাবৎ মোটা মানুষদের। প্রেমের টানে ৬৭২ পাউন্ড ওজন কমালেন তিনি!  ৫২ বছর বয়সী পলের এই প্রেমিকার নাম রেবেকা মাউন্টেন। রেবাকাকে প্রথমবার মুখোমুখি দেখে কেঁদে ফেলে পল বললেন, থ্যাঙ্ক ইউ আমার পাশে থাকার জন্য। পলের প্রেমিকা রেবেকাও নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। এই রকম একটা অন্য ধরনের প্রেমকাহিনি দেখে সবাই অবাকও বটে। যে মানুষটা ক মাস আগেও শরীরের ভারে উঠতে পারতেন না, তিনিই আজ ওজন কমিয়ে প্রেমে মজেছেন।

 
ঘটনা - ১৩:
কারলি ওয়াটস হলেন একজন বিকিনি মডেল তারকা। নগ্নতাই ছিল তার মডেলিং পেশা। কিন্তু সেই কারলি ওয়াটস এখন রীতিমতো হিজাব পরতে শুরু করেছেন। এমনকি ইসলাম ধর্মেও দীক্ষিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ২৪ বছর বয়সী এই আমেরিকান মডেল তারকা। আর কিছু নয় শুধুমাত্র প্রেমের টানেই তার এই পরিবর্তন।

তিউনিশিয়ায় ছুটি কাটাতে গিয়ে সেখানকার মুহাম্মদ সালেহর দেখা পান কারলি ওয়াটস। পরিচয় থেকে ভালোলাগা, তারপর ভালোবাসা।

 কারলি ওয়াটস জানান, তিনি এতোদিন মডেলিং করেছেন।  সারা রাত নাইটক্লাবে নগ্ন হয়ে নেচেছেন। কিন্তু মুহাম্মদকে ভালোবাসার পর থেকে তার বিশ্বাস বদলে যেতে থাকে। তিনি জানান, মুহাম্মদ খুব ভালো মানুষ। তিনি আমাকে খুব ভালোবাসে। বাকি জীবনটা তাই মুহাম্মদের সঙ্গেই কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারলি। 

 
ঘটনা - ১৪:
দীর্ঘ ২৭ বছর স্ত্রীর কবরের পাশে কাটিয়েছেন তিনি। পারিবারিক চাপে স্ত্রীর কবর ছাড়লেও বাড়িতে ফেরেননি। গত ৬ বছর থেকে বাড়ির বাইরে কবরের আদলে তৈরি করা ঘরে অবস্থান করছেন। স্ত্রীর আত্মার সান্নিধ্য লাভের আশায় পার্থিব জগতের আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস আর চাওয়া-পাওয়া ত্যাগ করেছেন তিনি। সহধর্মিনীর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার বেদনা বিধুর অমলিন স্মৃতিকে ধরে রাখতেই তার এই আত্মত্যাগ। ভালোবাসার এই ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়নের বাকপুর গ্রামের মৃত বরকত আলী মিয়ার পুত্র হাফিজউদ্দিন (৮১) এখনও সাধনায় আছেন স্ত্রীর আত্মার সান্নিধ্যের আশায়।
বিয়ের ১৯ বছরের মাথায় স্ত্রী বিয়োগে কাতর হাফিজউদ্দিন দীর্ঘ ২৭ বছর নির্জন গোরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে জীবিত লাশ হয়ে সহাবস্থানের চেষ্টায় রত ছিলেন। এমন বিরল ঘটনা পৃথিবীতে সম্ভবত এটিই প্রথম। ভালোবাসার জন্য জীবন্ত লাশ হয়ে নির্জন গোরস্থানে স্ত্রীর কবরের কাছে সময় কাটানোর কঠিন এ ব্রত সম্রাট শাহজাহানের ভালোবাসার নিদর্শনকেও হার মানিয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের ২বছর পর পারিবারিক ব্যবস্থায় বাড়ির পাশেই বিয়ে করেন। কনে ৬ বছরের শুকুরী বিবিকে। বিয়ের পর ৭/৮ বছর স্ত্রী শুকুরী ছিলেন হাফিজউদ্দিনের মা সূর্য্য বানু বিবি’র সঙ্গে। এরপর ১৯৫৬ সালের দিকে দু’জনের সংসার শুরু হয়। প্রেম-ভালোবাসা আর আবেগমথিত রোমান্টিক জগতে অবগাহন করে হংস-মিথুনের আনন্দেই কেটে যাচ্ছিল হাফিজ-শুকুরীর সংসার জীবন।
এভাবে কেটে যায় ১৯ বছর। এরপর হঠাৎ করেই পরকালের ডাকে ইহলোক ত্যাগ করেন শুকুরী। এভাবে তার অসময়ে চলে যাওয়াকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি হাফিজ। শোকে-দুঃখে কাতর হয়ে পড়েন।

ঘটনা - ১৫
ভারতের উত্তরপ্রদেশের বুলান্দশাহর গ্রামের ফাইজুল হাসান কাদরি তার স্ত্রী তাজামুল্লি বেগমের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তাজমহল নির্মাণ করেছেন। ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে স্ত্রী মারা গেলে শোকে কাতর হয়ে পড়েন ফাইজুল। এরপরই এটি নির্মানের উদ্যোগ নেন। নিজের বাগানে তাজমহল গড়েছেন তিনি। আকারে ছোট হলেও এটি দেখতে হুবহু আগ্রার তাজমহলের আদলে তৈরি।মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ প্রচুর অর্থ ব্যয় করে তাজমহল বানিয়েছিলেন। এতো অর্থ ব্যয় করা সাধারণ কোনো মানুষের পক্ষে হয়তো সম্ভব নয় কিন্তু ভালোবাসার স্বরূপ তো সব প্রেমিকের ক্ষেত্রে একই। আর তাই ৭৭ বছর বয়সী ফাইজুল বানিয়েছেন ৫০/৫০ ফুট এই তাজমহল।
তাজমহলের এই নতুন সংস্করণ তৈরি করা দরিদ্র ফাইজুলের পক্ষে খুবই কঠিনসাধ্য একটি কাজ ছিল। নিজের সারাজীবনের সঞ্চয় ১০ হাজার ৫০০ টাকা এবং পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া সম্পত্তি বিক্রি করে অবশেষে তিনি নির্মান করেন পাঁচ হাজার স্কয়ারফিটের সমাধিসৌধটি।
ফাইজুল হাসান বলেন, আমাদের কোনো সন্তান নেই। স্ত্রীর মৃত্যুর সময় তার বিছানার পাশে আমিই ছিলাম। তখন সে আফসোস করে বলেছিল, দেখো আমাদের সবাই ভুলে যাবে। আমাদের তো কোনো বংশধর নেই যে আমাদের নাম ভবিষ্যতে টেনে নিয়ে যাবে। সেদিনই আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তার কবরের ওপর তাজমহলের মতো একটি সৌধ গড়ে তুলব। যা পৃথিবীর মানুষ দীর্ঘদিন মনে রাখবে।

 
ঘটনা - ১৬:
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় এক দম্পতির জন্ম হয় ১৯১৮ সালের একই দিনে।  স্কুলে পড়তে পড়তে একে অপরের প্রেমে পড়েন। পরিবার বাধা দিলে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, পালিয়ে বিয়ে করবেন। বয়স তখন ১৮ বছর। যেই কথা সেই কাজ। এভাবেই চলছিল বেশ। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁরা ৭৫তম বিবাহবার্ষিকী পালন করে পরিবারকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ভালবাসার অর্থ।  ২০১৩ সালে ছেলে লেস ব্রাউন জুনিয়র জানালেন ১৬ জুলাই তাঁর মা হেলেন ব্রাউন মারা যান। আর কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে মারা যান বাবা লেস ব্রাউন। কয়েক ঘণ্টার তফাতে তাঁদের মৃত্যু হয়। দুইজনের বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।

 
ঘটনা - ১৭
আজহারের বাড়ি পাকিস্তানে এবং নাগিতা রমেশ এর বাড়ি ভারতে। একে তো দুই দেশ চিরপ্রতিদ্বন্ধী, তার উপর দুজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী। ফেসবুকে এই প্রেমিক যুগলের পরিচয় হয়। একসময় এই পরিচয় প্রণয়ে রূপ নেয়। একসময় ভারতীয় নাগিতা রমেশ হিন্দু ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। প্রেমিকের সাথে দেখা করার জন্য ভারত থেকে পাকিস্তানে ছুনে যান নাগিতা রমেশ। কিন্তু বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ধরা পড়েন পুলিশের হাতে। এদিকে প্রেমিকাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে এসে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন পাকিস্তানি প্রেমিক আজহারও।

 

ঘটনা - ১৮
এটি বাংলাদেশের একটি ঘটনা। শিমুল ও সমি দুজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী। সমির বাড়ি হবিগঞ্জে এবং শিমুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। কাকতালীয়ভাবে দুজনের নানাবাড়ি পাশাপাশি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সাতবর্গ গ্রামে। শিমুলের নিজের বাড়িও একই গ্রামে। নানাবাড়িতে প্রায়ই বেড়াতে যেতেন মাধবপুর সদরের শংকর চক্রবর্তীর মেয়ে সমি। কয়েক বছর আগে নানাবাড়িতে যাওয়ার পথে শিমুল চৌধুরীর সঙ্গে তার পরিচয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে একসময় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে তৈরি হয় ঘনিষ্ঠতা। একসময় শিমুলকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন রূপসী সমি। তখন বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় ধর্ম। একে তো হিন্দু তার ওপর ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম। অভিভাবকদের কোনভাবেই রাজি করাতে পারছিলেন না সমি। ততদিনে তাদের প্রেম প্রশান্ত মহাসাগরের মতো গভীরতায় রূপ নেয়। অবশেষে প্রিয়জনের হাত ধরে ডিঙান ধর্মীয় বাধার দেয়াল। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে পাল্টে ফেলেন ধর্মীয় পরিচয়। সমি চক্রবর্তীর বদলে নতুন নাম রাখেন আয়েশা আক্তার সুমি। ওই দিনই তাকে বিয়ে করেন শিমুল। এদিকে শিমুলের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন সমির পিতা শঙ্কর চক্রবর্তী। মামলার পর গ্রেপ্তার করা হয় প্রেমিক যুগলকে। কিন্তু প্রেমের কাছে চূড়ান্তভাবে হার মানে রক্তের বন্ধন। এখন তারা দিব্যি সুখে সংসার করছেন।

 

ঘটনা - ১৯
এই পৃথিবীতে মিলনের সম্ভাবনা না থাকায় পরপারে মিলনের আশায় দু`জনের শরীর একই সঙ্গে বেঁধে আত্মহুতি দিলেন প্রেমিক জুটি। রমজান আলী (২০) ও সুখী আকতার (১৬) `র বাড়ি ছিল পাশাপাশি। সম্পর্কে বেয়াই-বেয়াইনও। পাশাপশি বাড়ি হওয়াতে প্রতিদিনই দু`জনের দেখা হতো। কথা হতো। এভাবেই দু`জনের মধ্যে ভাললাগার জন্ম নেয়। এই ভাল লাগা থেকে প্রেম। এক সময় ঘর বাঁধার স্বপ্নে বিভোর হয় দু`জন। কিন্তু দুই পরিবারের মধ্যে পূর্বের একটি দ্বন্দ্ব থাকায় তাদের ভালবাসাটাকে তাদের পরিবার স্বাভাবিকভাবে মেনে নিবে কিনা এই নিয়ে দু`জনের মধ্যেই সন্দেহ দেখা দেয়। পূর্বের দ্বন্দ্বটিও ছিল প্রণয়ঘটিত কারণেই। তিন বছর আগে রমজানের বড় ভাই আজগর আর সুখীর বড় বোন লাকী ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। এ সম্পর্ক এখনো মেনে নেয়নি দুই পরিবার। এ বিষয়টি তাদের দু`জনকে বেশ হতাশ করে তোলে। তাদের মিলন অনিশ্চিত ভেবে তারা সহমরণের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে ভালবাসার আরেক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেলেন।
দুই তরুণ-তরুণীর আত্মহননের আগে একটি চিরকুটে লিখে গেছেন, ‘আমাদের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। সবার কাছে আমাদের একটাই অনুরোধ। আমাদের দেহগুলো দয়া করে কাটতে দেবেন না। পাশাপাশিই আমাদের কবর দেবেন। আর সবাই আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। আমরা একজন আরেকজনকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। তাই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলাম। বেঁচে থাকতে তো কেউ আমাদের এই সম্পর্ক মেনে নেবে না। বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে তাদের মনেও কষ্ট দিতে পারব না। তাই এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হলাম দুজন। ইতি: রমজান + সুখী। (চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়ার চৌধুরীহাটে ঘটনা এই ঘটনাটি)

আমার কথা।

ক্ষনস্থায়ী এ জীবনের অনভূতি কত বিচিত্র। কত তুচ্ছ কারনে চোখ ঝাপসা হয়ে যায়, আবার ওলট-পালট করা ঝরেও কী শান্ত, কী স্থির মানুষের হৃদয়। 

ভালোবাসার গল্পগুলোতেও তাই ছড়িয়ে খাকে রহস্যময়তা, বৈচিত্রতা। সে সব গল্প ঢেউ তোলে প্রেমিক হৃদয়ে, মনে পড়ে যায় ফেলে আসা দিন, অন্তবিহীন... 
তুলে আনুন জীবনের পরতে পরতে জমে থাকা সেই সব খন্ড খন্ড নষ্টালজিক স্মৃতি, ছড়িয়ে দিন বন্ধুদের মাঝে...

আসুন আমাদের ভালবাসাটাকে আরেকটু ছড়িয়ে দিই। আমরা এখন থেকে গল্পগুলোকে শুধুমাত্র প্রেমকেন্দ্রিক না রেখে চেষ্টা করবো, সেটা যাতে ভালবাসা কেন্দ্রিক হয়। গল্পে গল্পে আমাদের ভালবাসাটুকু ছড়িয়ে পড়ুক প্রিয় মানুষটার জন্য,বাবা-মার জন্য, বন্ধুদের জন্য, দেশের জন্য আর নাম না জানা ওই শালিকটার জন্য।

একটু সময় হয়তো লাগবে, তারপরও আপনারা সব সময় পাশে ছিলেন বলেইতো এতো দূর। পাশে থাকুন। শুভকামনা রইলো...

আরেকটা কথা,

আমাদের কিছু ফটোগ্রাফার বন্ধুও আমাদের সাথে যোগ দিয়েছেন। তাদের তোলা অসাধারণ কিছু ছবি আমরা পোস্ট করবো এখানে।

আমাদের গল্প নিয়ে যে 'স্বপ্নের সংকলন' টা আমারা প্রতিবছর প্রকাশ করেছি , সেটা আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। আপনার পাশে আছেন বলেই, আমরা সাহস পাই । সামনেও থাকবেন এটিই প্রত্যাশা...

সুবিন্যস্ত ভাবে গল্পের প্রাপ্তি স্বীকার, মেইলের রিপ্লাই দেয়া এবং পেইজের ওয়ালপোস্টের জবাব দেয়ার জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। টাইমলাইন সিস্টেমের কারণে পেইজে ইনবক্স যুক্ত হয়েছে । আগে শুধু মেইলে গল্প পেতাম। এখন একই সাথে দু’তিন জায়গায় গল্প জমা হওয়ার কারণে অনেক গল্প চোখে পড়ছে না, কিংবা মেইলের ভীড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই “মেইল আইডি” , “পেইজ ইনবক্স” ও “পেইজ ওয়াল” তিনটি ভিন্ন কাজের জন্য ভাগ করে দেয়া হবে । চেষ্টা করুন এই নিয়মটা ফলো করতে । এতে স্বল্পতম সময়ে রেসপন্স করা আমাদের জন্য যেমন সহজ হবে,আপনাদের কোন জিজ্ঞাসা থাকলে তার জবাবও অতি দ্রুত আমরা নিশ্চিত করতে পারবো ।

১। আপনার গল্প    farukkhan06068@gmail.com   এই মেইল আইডিতে পাঠান । মাইক্রোসফ্‌ট ডকুমেন্ট আকারে না পাঠিয়ে গল্প কপি-পেস্ট করে পাঠালে ভালো হয় । অনেক সময় লেখক গল্পের টাইটেল অথবা গল্প শেষে তার পরিচিতি উল্লেখ করতে ভুলে যান । এতে পেইজ নোটসে্‌ গল্প দেয়ার সময় সমস্যা দেখা দেয় । গল্পে এই দুটি ব্যাপার উল্লেখ থাকা বাঞ্ছনীয় ।

২। পেইজ সংক্রান্ত সকল জিজ্ঞাসা “পেইজ ইনবক্সে” জানান ।

৩। পেইজ নিয়ে আপনার মতামত,ভালো লাগা/মন্দ লাগা কিংবা কোন সাজেশন “পেইজ ওয়ালে” পোস্ট করুন ।

৪। যারা মেইলে গল্প পাঠানোর ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন, কিংবা সেলফোনে গল্প টাইপ করছেন, শুধুমাত্র তারা "পেইজ ইনবক্সে" গল্প পাঠাতে পারেন । একই সাথে দু'তিন জায়গায় গল্প না পাঠানোই শ্রেয় ।

৫। গল্পে বিভিন্ন পেইজগুলো লাইক চেয়ে অ্যাড দিয়ে থাকেন । এই ব্যাপারগুলো চোখে পড়ার সাথে সাথে কমেন্ট ডিলিট করা হবে । তিনবারের বেশি একই পেইজ থেকে অ্যাড আসলে সেটিকে ব্যান করা হবে । গল্প পড়ুন, মতামত জানান কিন্তু যেকোন প্রকার অ্যাড শুধুমাত্র পেইজ ওয়ালেই সীমাবদ্ধ রাখবেন । গল্পে কোন প্রকার অ্যাড কাম্য নয় ।

৬। আমরা নীতিগতভাবে কোন পেইজ প্রোমোট করি না। তাই বারবার পেইজ প্রোমোটের অনুরোধ জানিয়ে বিব্রত না করতে অনুরোধ করছি ।

৭। অনেক লেখকই এক সাথে কয়েকটি পেইজে লেখা পাঠিয়ে থাকেন । এক্ষত্রে অনুরোধ থাকবে, আমাদের কাছে পাঠানো গল্প বিভিন্ন পেইজে, কিংবা অন্য পেইজে পাঠানো গল্প আমাদের কাছে না পাঠানোর জন্য । এমনটি সামনে হলে, লেখকের সব রকমের লেখা প্রকাশ থেকে পেইজ বিরত থাকবে ।

সবার সহযোগিতা কামনা করছি ।

ভালো থাকবেন সবাই।

life

অপূর্ব সুন্দর চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে ঘর। আটপৌরে মশারীর শরীর গলে সেই আলো চুইয়ে এসে পড়ছে বিছানায়। তার পাশে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকা রুপার মুখটা জোছনার আলোতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে দ্বীপ। পালিয়ে যাবার আগের রাতে হয়তো কোন মানুষই ঘুমাতে পারেনা।

হ্যাঁ, আগামীকাল সন্ধ্যায় পালিয়ে যাবে দ্বীপ। চলে যাবে এই মায়ার বাঁধন ছেড়ে। বড় পলকা হয়ে গেছে এই বাঁধন। নিজ থেকে কোন সময় ছিঁড়ে গিয়ে কিছু তিক্ততা সৃষ্টি করার আগেই পালিয়ে যাচ্ছে সে। যদিও সে নিজে ছাড়া ব্যাপারটা আঁচ করতে পারছেনা কেউই। সব কিছুই চলছে ঘড়ির কাঁটা ধরে নিখুঁত ভাবে। নিজে কিছুটা এলোমেলো চললেও তার আশপাশটা গুছিয়ে রাখার, সামলে চলার চেষ্টা করে সে। কিছু কিছু পরিকল্পনা ঠাণ্ডা মাথায় বাস্তবায়ন না করলে বড় ধরণের ভুল থেকে যাবার সম্ভাবনা থাকে, এক্ষেত্রে সে কোন ভুল করতে চায় না। তাই গত এক বছরে একটু একটু করে সে এগিয়েছে তার প্লান মাফিক। আগামীকাল সেই প্ল্যানের চূড়ান্ত দিন।

ভালবাসা অদ্ভুত এক বাঁধন। অজানা অচেনা একটা মানুষকে কি ভয়াবহ আকর্ষণে কাছে টেনে আনে ভালবাসা। তার কাছে মন খুলে সব কিছু বলা যায়, পরম নির্ভরতায় ধরা যায় তার হাত। নিজের সুখটা গৌণ হয়ে দাঁড়ায় তখন, তার জন্য কিছু একটা করতে পারলে জীবন সার্থক মনে হয়। পাগলের মত তার মায়াভরা মুখটা, হাসিটা, চোখের তারায় ভালবাসাটুকু দেখতে ইচ্ছে করে। মনে মনে অস্ফুটে হাজারবার বলতে ইচ্ছে করে – ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি ...

প্রথম দেখায় কি প্রেম হয়? হয় না আসলে। শুধু আকর্ষণ জন্মে, মায়া তৈরি হয়। ডিমের ভেতরের কুসুমের মত, তুলতুলে গাঢ় মায়া। তার চারপাশে তখনও অনিশ্চয়তার মেঘ। হয়তো ভালবাসা হবে, হয়তো না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম দেখার ভাল লাগাটুকু অব্যক্তই থেকে যায়। কিছুদিন মন অশান্ত থাকে, পরে এক সময় এই সময়র কথা চিন্তা করে হাসি পায়। ঠিক এমনটাই কিন্তু হতে পারতো দ্বীপের জীবনে। কিন্তু হয়েছে তার উল্টোটা। প্রথমবার রুপাকে দেখার পর তার মাঝে কোন প্রতিক্রিয়াই তৈরি হয়নি। আর দশটা সদ্য পরিচিত মেয়ের বাইরে কিছুই মনে হয়নি সাদা জামা পড়া, লিকলিকে মেয়েটাকে। স্বভাব সুলভ ভাবে দূরত্ব বজায় রেখে গেছে, কথাও বলেনি বেশী। কিন্তু পরিচয়ের কয়েকদিনের মাথায় দ্বীপের মনে হয়েছে এই মেয়েটা ভেতর ভেতর অনেক একা। তার সাথে থাকা চটপটে আধুনিক মেয়েগুলোর মত প্রগলভ নয় সে, নয় জামা কাপড়ে উগ্র আধুনিকা। তবুও কেমন যেন একটা স্নিগ্ধতা ঘিরে থাকে রুপাকে। এখনও সেই স্নিগ্ধতাটুকু ঘুমন্ত রুপার মুখে এখনও দেখে দ্বীপ। তার খুব ইচ্ছে করে রুপার গোলাপ ঠোঁটে একটা চুমু খায়, কিন্তু না, সেদিনের সেই রুপা আর আজকে তার ঘুমন্ত স্ত্রী রুপার মাঝে যোজন যোজন তফাত।

কি আশ্চর্য সুন্দর ছিল সেই সময়গুলো। প্রতিদিন খুব সকালে উঠে গোসল সেরে বেড়িয়ে যাওয়া। এরপর এক সাথে ব্রেকফাস্ট করে রুপাকে ক্লাসে পৌঁছে দিয়ে ক্লাসে যেতো দ্বীপ। যার আগে ক্লাস শেষ হতো, সে অপেক্ষা করতো অন্যজনের জন্যে। ক্লাসমেটরা খেপাতো দুজনকেই। তাতেও লজ্জা মাখা আনন্দ ছিল। প্রতিটা দিন যেন নতুন আনন্দে ভরে থাকতো। সবার চোখ এড়িয়ে হাত ধরা, পাশাপাশি হাঁটার সময় একটু বেশী কাছে চলে আসা। দ্বীপের হাত জড়িয়ে ধরে নিশ্চিন্ত পদক্ষেপে চলা রুপার অস্তিত্ব, রুপার সুগন্ধ খুব বেশী ভাল লাগতো তখন। এখনও লাগে, এখনও সদ্যস্নাতা রুপাকে সুযোগ পেলেই জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে দ্বীপ, ফলাফল বেশীর ভাগ সময়েই – এক ধাক্কায় কুপোকাত। নাহ ... রুপাকে সে কিছুই বুঝতে দেয়নি। মেয়েটা জানতেও পারেনি কত বড় ক্ষতি সে করে ফেলেছে।

সম্পর্কের ছয় মাসের মাথায় যেদিন রুপা ওকে বললো “চলো বিয়ে করে ফেলি”, শুনে দ্বীপ কেমন যেন একটা ধাক্কা খেয়েছিল মনে মনে। প্রেম আর বিয়ের মধ্যে অনেক তফাত। প্রেম তো শুধু মুক্ত বিহঙ্গের মত ওড়া উড়ি, আর বিয়ে অনেক বড় একটা দায়িত্ব। আমাদের সমাজে নিজের পছন্দের ছেলে বা মেয়ের ব্যাপারে বাবা মাকে রাজী করানোটাই দূরহ ব্যাপার। কোন এক অজানা কারণে বাবা মা সব সময়েই ধরে নেন যে তার সন্তানের পছন্দের ছেলে বা মেয়েটি মোটেও ভাল না। এই অবস্থা থেকে তাদের রাজী করানোতে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়। তারপর শুরু হয় আত্মীয়স্বজনের আজব সব যুক্তি দিয়ে বিয়ে বন্ধ করবার পায়তারা। কখনও মেয়ের বাবার দূর সম্পর্কের ভাইয়ের মাথা খারাপ ছিল, কখনও ছেলের ফ্যামিলিতে একজন হত-দরিদ্র মানুষ আছেন – এই ধরনের আজব সব ইতিহাস বের হয়ে আসে তখন। সবার ক্ষেত্রেই মোটামুটি এমনটাই ঘটে। তাই “বিয়ে করে ফেলি” বলাটা যত সহজ, সেটাকে কাজে পরিণত করাটা তার চাইতে শতগুণ বেশী জটিল।

কয়েকদিন পরে রুপাই বলেছিল ওর রুমমেট অলরেডি বিয়ে করে ফেলেছে, কিছুদিনের মধ্যেই আলাদা বাসা নিয়ে হল ছেড়ে দেবে ওরা। শুনে বেশ সাহস পায় দ্বীপ। আসলে একটা বয়স থাকে, যখন নিয়ম ভাঙ্গাটাই আনন্দের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আর ভালবাসার মানুষটাকে কাছে পাবার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষাটা তো আছেই। ব্যাপারটা সবটুকুই শরীর নির্ভর নয় অবশ্যই। ভালবাসার মানুষটির সাথে সারাক্ষণ থাকাটাই মুখ্য।

এরপর কত হিসেব নিকেশ করে, বুঝে শুনে, স্বপ্ন বুনতে বুনতে একদিন ওদের বিয়েটাও হয়ে গেল। সেদিন কোর্টের হলফ নামায় সাইন করার সময় ওদের প্রিয় বন্ধুরা সাথেই ছিল। দ্বীপ সাইন করে দিয়েছিল সাথে সাথেই, রুপাই যেন থমকে গিয়েছিল কলম হাতে নিয়ে। ওর চোখে মুক্তোর মত জমেছিল অশ্রু, গড়িয়ে পড়েছিল গাল বেয়ে। বন্ধুবান্ধব সবাই সরে গেল এই দৃশ্য দেখে, পার্কের বিশাল ছাতার নীচে তখন রুপা আর দ্বীপ, সামনে অনাগত অদেখা ভবিষ্যৎ, ভরসা শুধু – দুজনের চলার পথটা এক।

সেদিন বিকেলে মসজিদের ইমাম সাহেবের বাসায় গিয়ে যখন ধর্ম মতে বিয়েটা পড়ানো হলো, তখন রুপা একেবারে নববধূ। লজ্জা মাখা চাহুনী, মাথায় ঘোমটা টেনে হয়ে উঠেছিল এক্কেবারে নতুন একটা বউ। দ্বীপ তখন এক আকাশ আনন্দে ভাসছে, নিজেকে হটাতই খুব পরিণত আর দায়িত্ববান বলে মনে হচ্ছিল ওর। এরপর সবাই মিলে একসাথে ডিনার করতে যাওয়া। খুব আনন্দ করা হয়েছিল সেদিন। ডিনার শেষে হোটেলের ছোট্ট রুমে বাসর। রুপার বান্ধবীরা পাঁচ মিনিটে ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিল বিছানাটা। গায়ে হলুদের রঙ পড়েনি ওদের গায়ে, সাজানো স্টেজে গয়না মোড়া বউ হয়েও বসতে পারেনি রুপা, ওর বিয়ের উপহার ছিল ছোট্ট একটা স্বর্ণের নাক ফুল আর এত্ত এত্ত ভালবাসা।

বিয়ের পর সব কিছুই হয়তো বদলে যায়। আর এই বদলে যাওয়াটাই এক সময় খুব প্রকট হয়ে ধরা দেয় চোখে। আশাহত হয় দুজনেই। কিন্তু এটাই নিয়ম, এটা অবশ্যম্ভাবী, এটাই হয়, সবার ক্ষেত্রেই হয়। বিয়ের আগে প্রেমের মুহূর্তগুলো কাটে স্বপ্নে স্বপ্নে, বিয়ের পর সেই স্বপ্নটা ফিকে হতে থাকে। আসলে – বিয়ের আগে তীব্র একটা চাওয়া থাকে দুজন দুজনকে কাছে পাবার। যতবার দেখা হয়, সুন্দর পোষাকে সেজে গুজে আসে দুজনেই। নিজেদের ছোটখাটো দোষ ত্রুটি গুলো লুকিয়েই রাখে তারা। ছোট ছোট উপহারে একে অন্যকে চমকে দিতে পছন্দ করে। আর বিয়ের পর সকালে জেগে উঠে ঘুমুতে যাওয়া পর্যন্ত আটপৌরে মানুষ দুটো থাকে এক সাথে। ক্রমে ক্রমে কমে আসে ভালবাসার সেই তীব্রতা। জন্ম হয় আজীবন পাশে থাকার, নির্ভরতার, বিশ্বাসের একটা নতুন অধ্যায়। ছেলেরা চিন্তা চেতনায় আর দৈনন্দিন জীবনে ব্যস্ত হয়ে যায় সংসার চালানোর খরচ যোগাতে, আর মেয়েরা তখন হয়ে ওঠে পুরোদস্তর গৃহিনী। সকালে নাস্তা কি দিয়ে হবে, বাজার থেকে কি আনতে হবে, কি রান্না হবে, এসব প্র্যাক্টিকাল বিষয় গুলো প্রাধান্য পেতে থাকে জীবনে। ফলে ভালবাসার সময়ের সেই কপোত কপোতী ভাবটা আগের মত আর থাকে না। একটা সময় দুজনেই খেয়াল করে, তাদের জীবনটা কোথায় যেন থেমে গেছে। দুজনেই অনুভব করে – ভালবাসাটা আর আগের মত নেই। শুরু হয় অভিযোগ, জন্ম নেয় অভিমান। আসলে বদলে গেছে দুজনেই। নিজের পরিবর্তনটা চোখে পড়েনা কারওই।

রুপা আর দ্বীপের জীবনেও ঠিক এমনটাই ঘটতে লাগলো। বুকের মাঝে অভিমানের পাহাড় গড়ে দুজনেই পথ চলতে লাগলো। এক রাতে এক কথা দু’কথায় বেড়িয়ে এলো রুপার চাঁপা অভিমান। স্তব্ধ হয়ে শুনে গেল দ্বীপ। অনুভব করলো, রুপার বলা কথা গুলো মোটেও মিথ্যে নয়। তবুও মুখ ফুটে বলতে পারলো না রুপার ব্যাপারে জমে ওঠা তার অভিমানের কথা। মায়া বড় আজব অনুভূতি। রুপার অভিযোগ গুলো শুনে ওর যেমন কষ্ট লাগছে, সে চায়নি রুপাকেও ঠিক এভাবে কষ্ট দিতে। বরং এর পরের সময়গুলোতে সে চেষ্টা করেছিল নিজেকে বদলে ফেলার, আবার আগের মত সুন্দর সময়টাকে ফিরিয়ে আনবার।

সবার জীবনেই কিছু অতীত থাকে, যেটা মেনে নিতে হয়। ওদের দুজনেরই হয়তো ছিল, ওরা মেনেও নিয়েছিল সব। কিন্তু একদিন – সেদিন রুপা ছিল ইউনিভার্সিটিতে, ওর ফেরার সময় পেড়িয়ে যাওয়ায় দ্বীপ হাটতে হাটতে এগুচ্ছিল ইউনিভার্সিটির দিকে, এমন সময় রুপাকে সে দেখতে পেলো বড় দিঘীটার পাড়ে, একা। দ্রুত হেঁটে রুপার কাছে গিয়েই দেখে ওর চোখ ভরা জল। দ্বীপের পৃথিবীটা এলোমেলো হয়ে গেল যেন মুহূর্তেই। যে মেয়েটা পরম নির্ভরতায় তার হাত ধরে তার সাথে চলে এসেছে, তার চোখে অশ্রু আসবে কেন? কি করেছে দ্বীপ? সে তো চেষ্টা করেই যাচ্ছে আগের মত করে রুপাকে সময় দেবার, নিজের ভুল গুলো শুধরে নেবার।

সেদিন রাতে কিচ্ছু খায়নি রুপা। বিছানায় বসে বসে কেঁদেছে শুধু। এক সময় বলেছে তার মন খারাপের কারণ। যে ছেলেটাকে রুপার ভাল লাগতো, সে ভার্সিটি ছেড়ে যাবার সময় রুপাকে তেমন কোন আশ্বাস দিয়ে যায়নি। ওদের মাঝে সম্পর্কটা ফরমাল হতে হতেও হয়নি তখন, শুধু দুজনেই জানতো – ওরা দুজন দুজনকে ভালবাসে। কাজেই এক্ষেত্রে কমিটমেন্টের কিছু ছিলও না হয়তো। সেই ছেলেটা চলে যাবার পর রুপার সম্পর্ক ও বিয়ে হয়ে যায় দ্বীপের সাথে। এটা রুপার খুব ক্লোজ কিছু বন্ধুবান্ধব ছাড়া আর কেউ জানতো না। যা হোক, আজ প্রায় এক বছর পেড়িয়ে যাবার পর সেই ছেলে চিঠি দিয়েছে রুপাকে। ছেলেটা ভাল একটা জব পেয়েছে। এখন সে তৈরি রুপাকে বিয়ে করে ঘরে নেবার জন্য। সে কারণে রুপার ভাষায় – তার ‘মরে যেতে’ ইচ্ছে করছে এখন।

ভালবাসার মানুষকে আর যাই হোক, কারও সাথে শেয়ার করা যায় না, এক বিন্দুও না ...

দ্বীপ আচমকা খুব বড় একটা আঘাত পেয়েছিল সেদিন। কিন্তু কিছুই বুঝতে দেয়নি রুপাকে। সারাটা রাত ওকে জড়িয়ে ধরে বসে ছিল। কারণ দ্বীপ জানে, রুপা তো এখন তার। ছেলেটা রুপার অতীত। যে গেছে, সে চলেই গেছে, সে আর রুপার জীবনে ফিরে আসবে না।

পরবর্তী দিনগুলোতে দ্বীপ চেষ্টা করে গেছে রুপাকে আরও বেশী ভালবাসায় ভরিয়ে দেবার। একটা সময় সে ভেবেছে যে ওই ছেলেটার ছায়া সরে গেছে রুপার মন থেকে।

এরপর অনেক ঘটনায় অনেকটা সময় পেড়িয়ে গেছে। না না ঝামেলা করে দুজনার পরিবারকে রাজি করানোও গেছে। কোন এক শুভ মুহূর্তে রুপাকে সে তুলে এনেছে তার ঘরে। রুপা এখন তাদের বাসাতেই থাকে। কিন্তু চাকুরীর কারণে দ্বীপকে চলে যেতে হয়েছে অন্যখানে। নতুন চাকুরী, যে বেতন দেয় তা দিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকা সম্ভব নয় বলে একাই গেছে যে। তবুও প্রতি সপ্তাহে বাসায় আসে দ্বীপ, আর লক্ষ্য করে রুপা কেমন যেন বদলে গেছে, বদলে যাচ্ছে আরও। কারণে অকারণে রুপা অনেক বেশী রিএক্ট করে এখন। খুব বেশী রাগ করে আর কেমন যেন আনমনা থাকে সারাক্ষণ।

ক্রমে ক্রমে অবস্থাটা এমন হয়ে দাঁড়ায়, দ্বীপ সময় গোনে, রুপা ঠিক কতক্ষণ ওর সাথে রাগারাগি করেনি। সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকে সে, এই বুঝি রুপা রেগে গেল। সপ্তাহ শেষে ফিরে যাবার সময় হলে দ্বীপ যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। রুপার কাছ থেকে দূরে গিয়েই যেন ভাল থাকে। যতক্ষণ ফোনে কথা হয়, ততক্ষণ রুপা সেই আগের মতই, তার লক্ষ্ণী বউটা হয়ে থাকে। কিন্তু কাছে এলেই সব ওলট পালট হয়ে যায়।

দ্বীপ যেটা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করেনি, সেটাই ঘটলো এক সময়। পর পর দু তিন দিন রাতের বেলা ফোন দিয়ে দ্বীপ রুপার ফোন বিজি পায়। বাসায় এসে একদিন দেখে অনেক রাতে রুপা উঠে গিয়ে বারান্দায় এক কোণে বসে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে। আগে ও এমনটা করেনি, কিছু যেদিন করলো, সেদিনই দ্বীপ টের পেয়ে গেল কিছুটা। কয়েক ঘণ্টা পর রুপা বাথরুমে গেলে দ্রুত হাতে দ্বীপ টুকে নিলো লাস্ট কলের নম্বরটা। পরের দিন ওই নম্বরে কল দিয়ে জেনে গেল এটা সেই ছেলেটার নম্বর, যার সাথে রুপার সম্পর্ক হতে হতেও হয়নি।

এরপরের দিনগুলো দ্বীপের জন্য ছিল চরম যন্ত্রণাদায়ক। নিজেকে অনেক বুঝিয়েছে সে, বুঝিয়েছে রুপা এখন তার বিবাহিতা স্ত্রী। নিজের স্ত্রীর উপর অবিশ্বাস করবার কারণে আত্মদহনটাও নেহাত কম ছিল না। তবুও এ জ্বালা বড় বেশী কষ্টদায়ক। সে বার একদিন ছুটি নিয়ে আগেভাগেই বাসায় চলে আসে দ্বীপ, এক সময় রুপাকে জিজ্ঞেস করে ওই ছেলেটির কথা। রুপা স্পষ্টতই এড়িয়ে যায়, বলে – সেই ছেলের সাথে ওর কোন যোগাযোগ নেই। উলটো দ্বীপকে পুরনো কথা মনে করেছে বলে না না কথা শুনিয়ে দেয়, প্রচণ্ড রাগে এক সময় বাসা ছেড়ে চলে যাবার হুমকিও দেয় রুপা। দ্বীপ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। বুঝতে পারে, সে আর তার পুরনো অবস্থানে নেই। তার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে তৃতীয় একজন ওদের জীবনে ভাল ভাবেই ঢুকে পড়েছে।

ছেলেদের মধ্যে দুই ধরনের মানুষ থাকে। একদল কেড়ে নিতে পছন্দ করে, আরেকদল করে না। ওরা দেবতার মত, সঠিক নৈবদ্দ্যে তুষ্ট। প্রয়োজনে কিছুই নেবে না, তবুও হাত পাতবে না কারও কাছে। দ্বীপ দ্বিতীয় দলের মানুষ। রুপার এই পরিবর্তনে ওর ভেতরটা ভেঙ্গে চুড়ে গেলেও সে কাউকেই কিছু বুঝতে দেয় না, রুপার প্রতি স্বামী হিসেবে, প্রেমিক হিসেবে তার কর্তব্যতে একচুল পরিবর্তন আসে না। শুধু মনে মনে সে জানে, এক বিছানায় ঘুমিয়েও রুপা চলে গেছে শত মাইলের দূরত্বে।

প্রতি সপ্তাহে দ্বীপ বাড়ী ফেরে, একটু একটু করে রুপার বদলে যাওয়া দেখে। রুপা এখন প্রতি রাতে কয়েক ঘণ্টা কথা বলে ওই ছেলেটির সাথে। যেন লুকোচুরির আড়ালটাও ভেঙ্গে গেছে। যদিও দ্বীপকে সে বলে, দ্বীপের অনুপস্থিতির কারণে বন্ধু বান্ধবের সাথে কথা বলাটা তার অভ্যেস হয়ে গেছে, তবুও দ্বীপ তো জানে সত্যিটা। সেই সময় থেকেই দ্বীপের পালিয়ে যাবার পরিকল্পনা।

দূরের কোন মসজিদের আজানের শব্দ ভেসে আসে। আর কয়েক ঘণ্টা পরেই দ্বীপ তার চেনা পরিবেশ ছেড়ে চলে যাবে অনেক দূরে। সবাই জানে বাইরের দেশে পড়তে যাচ্ছে সে। কিন্তু সে নিজে জানে, আর কোন দিনই তার ফেরা হবে না এদের কাছে। দূরে চলে গিয়ে সে এক সময় মুক্ত করে দেবে রুপাকে। কাছে থেকে এই কাজটা করা অসম্ভব। অনেক বেশী ভাল সে রুপাকে বাসে। কিন্তু রুপা ... যে তার এই ভালবাসার বাঁধনে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে পারেনি, বরং জড়িয়ে গেছে অন্য একটা মোহের জালে, তাকে ডেকে ফেরানো অসম্ভব। ভাঙ্গা আয়নার মত ভাঙ্গা সম্পর্ক বয়ে বেড়ানোর কোন মানে হয় না।

কিছু কিছু মানুষ এমন হয়। তারা জানে যে তারা ভুল করছে। তুচ্ছ কারণে দিচ্ছে অনেক বড় মূল্য। নিজের হাতে নষ্ট করতে যাচ্ছে তার নিজের জীবন। তবুও ... তারা কিছুতেই ফেরাতে পারেনা নিজেকে।

কিছুতেই না ...

---------------- সমাপ্ত ------------------

এটা কী জীবন।

এই সাতসকালেই আমার বন্ধু মিথিলা আমার দিকে হিংস্র বিলাইয়ের মত তাকিয়ে দাত কিরমির করে বেশ গালাগালি করলো।আমি শুধু শুনলাম "হালুম হালুম হালুম"।বুঝলামনা মেয়ে এত চেতলো কেন।আমি এমন কি বললাম?ওর কাছে এক ছেলে নিয়মিত কুরিয়ার করে হাবিজাবি পাঠায়, আমারে এ কথা জানালে আমি ওকে শুধু বলছিলাম “ভালোইতো।আমাকে কিছু দিয়া দিস”"।এই সামান্য কথায় এতগুলা গালি খেলাম মেয়ের কাছে!

আসলে আমি নিজেও মনে হয় একটু নির্লজ্জ হয়ে গেছি।প্রতিদিন ক্লাসে আসার পর থেকে বাসায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওর গালি খেতে খেতে আমি অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি।ও যখন আমাকে গালাগালি শুরু করে আমি সুন্দর করে তা হজম করি এবং মাঝেসাঝে প্রতিবাদ করতে যেয়ে একটু মিউ ধ্বনি দেই-এই আর কী।তবে মেয়ের দিল একেবারে হুইল পাউডারের মত সাদা।ব্রেক টাইমে প্রায়ই সে আমাকে এইটা সেইটা খাওয়ায়।যদিও এইখানেও ঘটনা আছে।সে আমাকে যাহাই খাওয়ায়, বলে ওইটা তার নিজের হাতে বানানো।কিন্তু ওগুলা যে ওদের কাজের বুয়া বা বাসার পাশের খাবার দোকান থেকে কেনা এইটা আমি বাথরুম করতে যেয়ে ভালোই বুঝতে পারি।সমস্যা একটাই, মেয়েকে আমি বেশ ডর খাই।তবুও কিভাবে যেন আমরা বেশ ভালো বন্ধু।
পাঠকেরা, সারা জীবন হয়তো শুনে আসছেন লেকচার ক্লাসে মেয়েরা সবচেয়ে মনযোগী হয়।স্যারের লেকচার সুন্দর করে খাতায় তোলার জন্য মেয়েদের কোন বিকল্প নেই।কিন্তু মিথিলার কেসটা একটু ডিফারেন্ট।সে আমারে দিয়ে লেকচার লেখায় নেয় আর নিজে ঘুমায়।
আজকে শ্রাবণ বারিধারা মাথায় করে ক্লাসে এসে এমন ঘুম পেলো যে আমি লেকচার তোলার কথা ভুলে ক্লাসের পিছনে যেয়ে নাক ডাকা শুরু করলাম।লেকচার শেষ, ঘুমও শেষ।মিথিলা আমারে এসে বলে, “দেতো তোর খাতাটা।কি অগামগা লিখছিস দেখি”"।
আমি অত্যন্ত বিনয়ী হয়ে বললাম, “মিথিলা দোস্ত আজকে তো কিছু তুলিনাই।ঘুম থেকে উঠছি মাত্র"”।
মিথিলা আমার দিকে নরম সরম দৃষ্টি দিয়ে বললো “লোভী কুকুর, তুই আরেকবার আমার সামনে আসিস।তোর এত ঘুম পাইলে আগে জানাস নাই কেন?আমি নিজেই আজকে লেকচারটা তুলতাম”"।
আমি ওকে মিউ মিউ করে বললাম, “গালি দিসনা।ক্ষিদা লাগছে, কিছু আনছিস বাসা থেকে বানায়?”
মিথিলা বিরক্ত হয়ে আমার সামনে থেকে দূরে সরে গেলো এবং একটু পর খাবার নিয়ে এসে বললো, “নে খা! খা!”
আমি আরাম করে খাবার খেয়ে থ্যাঙ্কস জানিয়ে ওর কুশলাদি জানতে চাইলাম।কালকে নাকি সে আবার গিফট পেয়েছে।এবার ওকে একটা ছোট্ট টেডি বিয়ার পাঠিয়েছে।আমি তো হাসতে হাসতে মারা।ওকে বললাম, “তুই এই বুইড়া বয়সে টেডি দিয়ে কি করবি?আমাকে দিয়া দে।আমি আমার ছোট্ট কাজিনরে দিয়া দিবো”"।
মিথিলা ভেংচি দিয়ে বললো, “যাহ! কি সুন্দর টেডি দিছেরে।আমার খুব পছন্দ হয়েছে।যাই বলিস না কেন ছেলে আমার পছন্দ বুঝে”"। আমি বিচকা হাসি দিয়ে বললাম, “চল কোন ছেলে এটা বের করি।তারপর ধইরা তোর সাথে বিয়ে করায় দেই”। মিথিলা লাজুক হয়ে বললো, “দেখনা আমার প্রাণসখাকে একটু খুজে পাস কিনা”"।
এমন সময় রিয়াদ ক্লাসে ঢুকে মিথিলা আর আমার কাছে এসে বললো, “দোস্তরা চাঙ্কু খবর আছে।আমার তো ফিট হয়া গেছে”"। মিথিলা ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, “ওই মেয়ে তোরে পছন্দ করলো?তোর মত ছেলের কি আছে?” রিয়াদ ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললো, “ওই ইনসাল্ট করবিনা।আমি টাইগার খাই, আমি স্মার্ট"”।
এরপর তিনজনে মিলে হাসাহাসি হই হুল্লোড় করে কাহিনী বের করলাম।ঘটনা খুব সাধারণ।রিয়াদ বহুদিন ধরে এক মেয়েকে পছন্দ করে।মেয়ে ওদের পাশের বিল্ডিং এ থাকে।প্রায়ই রিয়াদ জানালা দিয়ে উকিঝুকি মেরে মেয়ের কোমল মুখদর্শন করার ব্যর্থ চেষ্টা নেয় কিন্তু বদলে মেয়ে তার জানালার পর্দা টেনে দেয়।মাঝে মাঝে লুইচ্চা, হারামজাদা, ছ্যাচ্চোর বলে প্রশংসা বাণীও শুনতে পায়।কিন্তু সপ্তাহখানেক আগে মেয়ে ওকে খুব কড়া কথা বলে।ও যখন উকি ঝুকি মারছিলো, তখন মেয়ে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে চিক্কুর দিয়ে বলে “এই পিচকি তোমার লাজ শরম নাই।আরেকবার জানালা দিয়ে উকি দিলে বাসায় এসে থাবড় দিয়ে যাবো”"।
এই ঝাড়ি খেয়ে রিয়াদ তো পুরা ক্যারা খায়া বিছানায় পড়ে গেলো।সে এক বছর ধরে মেয়ের পিছনে ঘুরাঘুরি করে, মেয়ে বাসা থেকে বের হলেই তাকে দূর থেকে ফলো করে, মেয়ে ছাদে উঠলে সেও ছাদে উঠে। ছাদে উঠা নিয়ে একটা মজার ঘটনা আছে।কোন একদিন সে ভর দুপুরে ছাদে উঠছিলো দেখে আন্টি তাকে দরজার কাছে ধরে জিজ্ঞেস করে, “বাবা কই যাও”"। রিয়াদ এইভাবে ধরা খাবে তা তো বুঝেনাই।সে মাথা চুলকায় বলে “আম্মা ছাদে যাই”।
মায়েদের একটা মজার ব্যাপার আছে।তারা কি করে যেন ছেলে মেয়ের চোখের দিকে তাকালেই সব বুঝে ফেলে।আন্টি, রিয়াদের বিশিষ্ট মাতা এর ব্যতিক্রম না।সে বললো, “এই ভরদুপুরে ছাদে যেয়ে কি করবা আব্বাজী”"।
রিয়াদ এমনিতে ওর মাকে প্রচন্ড ভয় পায়।সেদিন ওর আম্মা যেভাবে ইনভেস্টিগেশন শুরু করলো তাতে সে আরো ভয় পেয়ে কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারছিলোনা।সে তবুও কোনরকমে থতমত খেয়ে বললো, “আম্মা ছাদে চুল শুকাইতে যাই"”।
এমন হাস্যকর উত্তর শুনে ওর আম্মা কি করছিলো সেইটা আমাদের রিয়াদ বলেনাই।তবে আমরা সবাই জানি ঝাড়ু দিয়ে কুংফু খেলায় কসম খোদার, কেউ রিয়াদের আম্মাকে হারাতে পারেনা।
যাই হোক মূল গল্পে ফিরে আসি।রিয়াদ তো মেয়ের কঠিন ঝাড়ি খেয়ে চ্যাগা হয়ে বিছানায় পড়ছে।ওর আব্বা আম্মা তো কিছুই বুঝেনা।জানি শুধু আমরা ওর বন্ধুরা।পুরো চারদিন সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আমার মরণ হয়না কেন বলে চিৎকার করতে থাকলো আর আমরা ওকে শান্তনা দেই, "বাস ট্রেন বারবার আসে, এদের পিছনে ছুটতে নেই"।
রিয়াদ শুধু বলে, "কিন্তু এমন এসি বাস আর লাক্সারী ট্রেন একবারই আসে গর্দ্ধভেরা"।
চার দিন কেটে যাওয়ার পর রিয়াদ যখন একটু নিজেকে সামলে নিলো, তখন তার লুইচ্চামী রোগ পুনরায় জেগে উঠে তাকে জানালার কাছে টেনে নিয়ে গেলো।সে উকি দিলো চোখ পিট পিটিয়ে, ভয়ে ভয়ে।উকি দিয়ে যা দেখলো তাতে তার আত্না খাচা ছাড়া হয়ে গেলো প্রায়।দেখে মেয়ে যুদ্ধংদেহী ভঙ্গী করে জানালায় দাঁড়িয়ে আছে।ওকে দেখে অবশ্য মেয়ে চুপ করে তাকিয়ে ছিলো।তারপর রিয়াদের থেকে যা শুনলাম তাতে মেজাজটা পুরা বিলা হয়ে গেলো।ভাবছিলাম সে আরো কিছু গালি খাবে, আমরাও একটু হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবো। কিন্তু রিয়াদ বললো যে মেয়ে নাকি ওকে দেখে বড়ই প্রেম শীতল কন্ঠে বলছে, "এই তুমি আর উকি দাওনা কেন, আমাকে কি মেরে ফেলবা?তোমার ফোন নাম্বারটা দাও তো দেখি!"
এইভাবেই আমাদের রিয়াদের অধঃপতন শুরু হলো।আমরা ওর প্রেম দেখি আর বলি, মারহাবা মারহাবা!
এইবার মিথিলার কাহিনী শুরু।আগে আপনাদের যা বলেছি তাতে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন সে কঠিন একটা চীজ।কিন্তু সমস্যা হলো মেয়ে তো, তাই প্রেম প্রীতির মত ব্যাপারগুলো কোন না কোন ভাবে মিথিলাকে হিট করবে আগেই জানা ছিলো।তাই রিয়াদের ঘটনার দু সপ্তাহ পরে যখন মিথিলা আমার কাছে এসে বললো যে সে প্রেম করছে, আমি খুব একটা অবাক হলাম না।কিন্তু ঘটনা হলো, কার সাথে।ও নিজেই বললো, ডিপার্টমেন্টের দুই বছর সিনিয়র মিশু ভাইয়ের সাথে।কিভাবে? সে জানালো, বাংলালিঙ্ক আছে না?
ঘটনা হলো, এই ছেলের প্রতি তার বহু আগে থেকেই কিছুটা দুর্বলতা ছিলো।সে আমাকে বন্ধুত্বের প্রথম দিকেই বলেছিলো যে ছেলেটিকে নাকি তার সাদা তেলাপোকার মত লাগে। আর মেয়েরা যখন কাউকে নিয়ে এমন কিছু বলে তখন বুঝে নিতে হয় ঘটনা খারাপ।১৪৩(আলাভু) এর ব্যাপার আছে।রিয়াদ একদিন মিশু ভাইয়ের সাথে ওর পরিচয় করায় দেয়।মিশু ভাই আর রিয়াদ আবার একই স্কুল কলেজের ছিলো, এই হিসেবে বেশ খাতির।আমি, মিথিলা আর রিয়াদ তিনজন মিশু ভাইয়ের কাছে প্রায়ই এই সেই নোটের জন্য যেতাম।মিথিলা অবশ্য কখনো লজ্জায় মিশু ভাইয়ের সাথে কথা বলতে পারতোনা।তবে এটা আমার কখনো মনে হয়নাই যে মিশু ভাইয়ের সাথে ওর সিরিয়াসলি এফেয়ার হয়ে যাবে।মিশু ভাই ওকে নাকি প্রপোজ করছে তিনদিন আগে।মিথিলা তাকে দুদিন ঝুলায় গতকাল হ্যা বলে দিছে।
আমি আর রিয়াদ বড়ই মর্মাহত হলাম।এত কিছু হয়ে গেলো, আমাদের সে কিছুই জানালোনা।তবে মুখে কিছু বললাম না।ও ওর প্রেম কাহিনী আমাদের বর্ণনা করে আমাদেরকে শেষমেষ জানালো, "দোস্তরা আজকে আমার প্রথম ডেট।তোরা একটু দোয়া রাখিস"।
আমি আর রিয়াদ একসাথে বললাম, "আগে কিছু খাওয়া"।
মিথিলা সাথে সাথে তার ব্যাগ থেকে টিফিন ক্যারিয়ার বের করে আমাদের দিকে এগিয়ে বললো, "হে হে! আমি জানি তোরা কোন জাতের ছুচো বিলাই"।
মিথিলা আর মিশু ভাই আজকে তাদের প্রথম ডেটিং করতে যাচ্ছে ধানমন্ডি লেকের রবীন্দ্র সরোবরে।আমি আর রিয়াদ আজকে তাই একসাথেই বাসায় ফিরছিলাম।রিয়াদ আমাকে জিজ্ঞেস করলো, "দেখলি কিভাবে দুইটা সেট হয়া গেলো"।
আমি হাসিমুখে বললাম "হ্যা।মিশু ভাইয়ের মত স্মার্ট, ভালো ছাত্রের সাথে সেট হবেনা তো কার সাথে হবে"।
রিয়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, "তাই তো, তাই তো!কিন্তু একদিক দিয়ে তোর ভালো হলো।মিথিলাকে আর গিফট পাঠাইতে হবেনা লুকায় লুকায়।বিগ মানি সেভ হবে"
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম "ঠিক!"
রিয়াদ মাথা চুলকাতে চুলকাতে শুধু বললো, সরি দোস্ত।
এরপর দুই সপ্তাহ কেটে যায়।মিথিলা আর মিশু ভাই বেশ ভালোই প্রেম করছে বলে মনে হলো।আমি নিজের মত করে ক্লাস,লেকচার সবই চালিয়ে গেলাম।সমস্যা হলো, যখন রাতে ঘুমাতে যাই।বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা প্রায় দুসপ্তাহ থেকে ঘুমাতে পারিনি।মনে হয় কি যেন নেই।ক্লাসে যখন মিথিলা কথা বলতে আসে আমি ওর সাথে আগের মতই স্বাভাবিক।শুধু আজকে কেন যেন মিথিলা দুপুরের ক্লাস ব্রেকে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, "কি হয়েছে তোর।চোখের নিচে তো কালি ফেলে দিছিস"।
আমি হাসতে হাসতে বললাম, "কলম কিনার টাকা নাই।এই কালি দিয়েই লিখালিখি করি"।
মিথিলা আমার দিকে আবার হাসিমুখে বললো, "আজকে মিশুর সাথে কড়াই গোশতে ইফতারী করবো।হে হে।ওইখানে হালিম খুব ভালো বানায়"।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বললাম, "রমজান মাসে এত খাই খাই করিস কেন"?
মিথিলা তার গা জ্বলানো হাসি দিয়ে বললো, "প্রেমে পড়েছি আমি প্রেমে পড়েছি, তাই দিনরাত শুধু খেয়েই চলেছি"।
আমি কিছু না বলে হাতের থেরাজার ইলেকট্রিক্যাল মেশিন বই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
মিথিলা নিজে থেকে আবার আমাকে বললো, "কিন্তু একটা সমস্যা হইছে বুঝছিস"।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কি?" "আমার কাছে আর গিফট আসেনা বুঝলি।আমার আগের গিফট প্রায় অনেকগুলা মিশুকে প্যাকেট করে রি-গিফট করে দিছি।এখন খুব বেশি আর বাকি নাই বুঝলি।পয়সা দিয়ে আবার গিফট কিনবো, এটা ভাবতেই বুঝছিস অনেক কষ্ট হচ্ছে।আমি বুঝতে পারছিনা ছেলে কি করে বুঝলো আমি আরেকজনের সাথে প্রেম করি?"মিথিলা প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকায়।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি, "হুম!"
মিথিলা তারপর আমার দিকে চালাক চালাক দৃষ্টিতে বললো, "আমি অবশ্য খুজে বের করছি যে ওই গাধাটা তুই ছাড়া আর কেউ না"।
প্রিয় পাঠকেরা একবার চিন্তা করুন, এহেন কথা শুনে আমার অনুভূতি কি হতে পারে। লজ্জা নাকি দুঃখ, ভয় নাকি হতাশা?সকল অনুভূতির সংমিশ্রণ নিয়ে আমি আমার পাগুলো সোজা করে দৌড়ানোর প্রস্তুতি নিলাম।হ্যা আমার কাছে তখন এটাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা বলে মনে হলো।
মিথিলা আমার দিকে ভুরু নাচিয়ে আবার বললো, "দেখলি আমি কত বুদ্ধিমান?জেমসের বন্ড আমাকে পেলে সব লুইচ্চামী ভুলে প্রেম করতো বুঝলি"।
আমি চিড়িয়াখানার মন খারাপ গন্ডারের মত করে ওর দিকে তাকিয়ে কথা শুনছিলাম।
মিথিলা আমাকে কানে কানে বললো, "সত্যি কথা বলি, গিফট পাঠানোর লুইচ্চামী যে তুই ছাড়া আর কেউ করিসনা এইটা আমি অনেক আগে থেকেই জানি।কিন্তু আমি মিশু ছাড়া কাউরে চিনিনা, বুঝিওনা।সো আমাকে আবার গিফট পাঠায় হেল্প কর দোস্ত"।
রাগে তখন আমার গা জ্বলছে।ও এইভাবে কথা বলছে কি করে আমি বুঝতে পারলাম না।নিজেকে আমার একটা জোকস মনে হলো।আমি বুঝতেও পারছিলাম না। সে আমাকে অপমান করছে নাকি ব্যাপারটাকে হালকা করে দেখছে।
আমি ওর দিকে জীবনে এই প্রথমবার রাগত ভঙ্গীতে তাকিয়ে বললাম, "যা ভাগ!"
ইফতারীর আগ দিয়ে রিয়াদ আমার বাসায় এলো।আমার দিকে তাকিয়ে তার সে কি হাসি।বুঝলাম মিথিলা আমার আজকের কাহিনী সব তাকে বলে দিয়েছে।আমি ওকে লাথি দিয়ে বললাম, "তোর আর তোর মিশু ভাইয়ের আমি গুস্টি কিলাই।আমার মিথিলারে নিয়ে তোরা গেম খেলিস।সময় আসুক একবার"।
রিয়াদের হাসি তো থামেনা।হাসতে হাসতেই বলে, দোস্ত তুই এমন একটা ছ্যাকা খাইলি।যায়া দেখ মিশু ভাইরে এখন মিথিলা যায়া তোর গল্প রসিয়ে রসিয়ে বলতেছে।আর তুই এমন ছাগলের মত বাসায় বসে আছিস কেন?ও প্রেম করে ফুর্তি করতেছে আর তুই এমন দেবদাস হয়ে মশা মারতেছোস।চল নিচে চল, একটু হেটে আসি"।
আমি মন খারাপ করে রিয়াদের সাথে হাটতে হাটতে গলির মাথায় এলাম।ওকে বললাম, "কি করে কি হয়ে গেলো বুঝছিস।মেয়ে এমন হুটহাট প্রেম করলো, কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না"।
রিয়াদ মুচকি হাসি দিয়ে বলে, "আরে আবাল, এইটা ২০১০।তোমার মত মজনু সেজে লাইলীর জন্য কেউ গোপনে উপহার পাঠায় প্রেম আশা করেনা।আমার মত মরদ হ"।
আমি বিরক্ত হয়ে খেকিয়ে বললাম, "কে যেন তোরে বাসায় এসে থাবড় দিবে বলছিলো"।
রিয়াদ বললো, "চুপ কর শালা।যে বলছিলো সে এখন আমার সতিসাধী বউ।আর তুই ছ্যাকা খাওয়া কলু মিয়া।বেশি কথা না বইল্যা চল মেন রোডের কফি শপে যাই।আজকে একসাথে ইফতারী করি চল"।
আমি আর কিছু না বলে ওর পিছ পিছ গেলাম।কফি শপের ভিতরে ঢুকে সে আমাকে বললো, "দোস্ত একটু দাড়া, আমি বাহির থেকে একটা কল করে আসি"।
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, "ইফতারীর আগেও বউ ছাড়া কিছু বোঝোনা"।
কফি শপের ইফতারী আমার খুব প্রিয়।প্রতি রোজাতেই আমি কফি শপে ইফতারী করি।খুব একটা ভীড় হয়না, ছিমছাম পরিবেশ।আর সব মামুগুলার সাথে বেশ ভালো খাতির আমার।সেদিন কফি শপে ঢুকে দেখি, মিথিলা বসে আছে মুখ কালো করে।বুঝলাম রিয়াদ ছাগলা মিথিলার সাথে মিলে নাটক সাজিয়েছে।
আমি মিথিলার কাছে যেয়ে বললাম, "তোর মিশু কই?"
ও আমাকে অচেনা হাসি দিয়ে বললো, "মিশু তো নাই।আজকে তোর সাথেই না হয় ইফতারী করি।"
আমি লক্ষী ছেলের মত ওর বিপরীতে বসে গেলাম।মিথিলা আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকলো।কখনো সে আমার দিকে এভাবে তাকায়নি।আমি লজ্জায় লাল্লু হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম "ঘটনা কি?"
মিথিলা তার রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বললো, "ঘটনা হলো তুই একটা ছাগল।কিন্তু আমি তো ছাগল না, তাই না?তুমি যে আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছো তা আগেই বুঝছি।গিফটের গায়ে যখন লিখালিখি করিস, তখন একবার মনে হয়নাই যে তুই গাধার থেকেই আমি ক্লাসের লেকচার তুলি?"
আমি ক্যাবলাকান্তের মত ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম।কিছুই মুখে আসছিলোনা।অবাক হচ্ছিলাম মেয়ে আমার সাথে এত স্বাভাবিকভাবে কি করে কথা বলে।
ওই আবার আমাকে বললো, "সাহসী হ বুঝলি,সাহসী হ!আমি আসলে তোকে বেল দিতাম না, কিন্তু পরে মনে হইলো এখনকার মডার্ণ যুগে সবই দুষ্টু ছেলের দল।তাই তোর মত ভ্যাবলা একটা ঝুলায় রাখাই ভালো।ভবিষ্যৎ নিরাপদ।"
আমি মূলা খাওয়া হাসি দিয়ে বললাম, "মাশাল্লাহ তোর কমন সেন্স ভালো।কিন্তু আমি এত ভ্যাবলা না তুই যতটা ভাবিস।"
মিথিলা বললো, "আমাকে ছেড়ে আর কারো সাথে টাংকিবাজী করবা নাকি?"
আমি এবার বেশ সিরিয়াসলি বললাম, "পাশের বাড়ির সুন্দরী তন্বীর কসম, আমি একজন ভালো প্রেমিক হয়ে আজীবন থাকবো"
পাঠক যে উৎকৃষ্ট গালি আমি এরপর খেয়েছি তা নাহয় উহ্য রাখি। ইফতারী শেষে মিথিলাকে যখন বাসায় নামিয়ে আসছিলাম, তখন ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছিলো।ছাতাহীন মোরা দুই এখনো না হওয়া প্রেমিক প্রেমিকা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গেলাম।আমি উঁকি মেরে বারবার মিথিলার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।বৃষ্টির পানিতে আমার সাড়ে তিন বছর ধরে ভালোবাসা মাখা মেয়েটি কেমন যেন আরো পবিত্র হয়ে উঠেছে।আমি শুনতে পেলাম ও আমাকে বললো, "হাতটা ধরো"।

Theis is life................

১। রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েটঃ

"Never was a story of love nor woe that of Juliet and her Romeo." সবাই-ই মেনে থাকেন এই জুটিই, প্রেমের ইতিহাস বা গল্পগুলোর মধ্যে সর্বাধিক প্রচারিত বা সবচেয়ে বেশী বিখ্যাত। যেন ভালোবাসার অপর নাম রমিও-জুলিয়েট। বিশ্ব বিখ্যাত ইংরেজ লেখক, William Shakespeare এর কালজয়ী ট্রাজেডি হল এই “Romeo and Juliet!” দুটি ভিন্ন পরিবারের পূর্ববর্তী রেষারেষি, বংশীয় অহংকার ভেদ করে দুজন তরুণতরুণীর প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়া। পরবর্তী তে পরিবারের বাঁধা, ভয় দেখানো, নানা মাসসিক সংশয়- টানাপোড়ন সব উপেক্ষা করে নানা নাটকীয়তার মাঝে তাদের বিয়ে করা। এবং সবশেষে, তথ্যগত ভুলবোঝা বুঝি জনিত কারণে বিষপানে দুজনের মৃত্যু!! সব মিলিয়েই, রোমিও- জুলিয়েট কাহিনী হয়ে গেছে অমর এক প্রেম গাঁথা! তাই পৃথিবীতে যখনই প্রেমের জন্য ত্যাগ- তিতিক্ষার কথা বলা হয়, সবার আগেই উঠে আসে এই যুগলের নাম! যুগে যুগে অসংখ্য নাটক, সিনেমা বানানো হয়েছে এই “timeless love” নিয়ে।

২। এন্টোনি অ্যান্ড ক্লিওপার্টাঃ

অনেকের মধ্যে অন্যতম আরেকটি অমর প্রেমগাঁথার নাম, মার্ক এন্টোনি- ক্লিওপার্টা। ঐতিহাসিক এবং একই সাথে দারুণ নাটকীয় এই প্রেম হয়, অনিন্দ সুন্দরী মিসরীয় রাণী ক্লিওপার্টা আর তাঁর প্রধান সেনাপতি এন্টোনির মাঝে। শক্তিশালী এবং ঐতিহাসিক চরিত্রদুটির মাঝের এই অমর প্রেম আকর্ষণীয়ভাবে আমাদের কাছে তুলে এনেছিলেন Shakespeare তাঁর যাদুকরী লিখনির মাধ্যমে। রাজকীয় ঘাত-প্রতিঘাত, জয়পরাজয় উপেক্ষা করে তাঁরা বিয়ে করেছিলেন। পরবর্তীতে রোমান দের সাথে যুদ্ধরত এন্টোনির মনোবল ভাঙার জন্য, তাঁকে যুদ্ধের ময়দানে মিথ্যে সংবাদ শুনিয়েছিলেন যে, শত্রুরা ক্লিওপার্টাকে হত্যা করেছে। তারপর এন্টোনি নিজ ছুরিতে মৃত্যুবরণ করেন, অন্যদিকে এন্টোনির মৃত্যুসংবাদ শুনে মিসরীয় রাণী ক্লিওপার্টাও নিজ ছুরিতে আত্মহত্যা করেন। Shakespeare তাঁদের জন্য বলেছিলেন, “great love demands great sacrifices!” 

৩। ল্যাঞ্ছলট অ্যান্ড গুইনেভারাঃ

আরেকটি রাজকীয় এবং সেই সঙ্গে ট্র্যাজিক লাভ স্টোরি গুলোর মধ্যে অন্যতম হল, এই আর্থারিয়ান প্রেম কাহিনী স্যার ল্যাঞ্ছলট অ্যান্ড লেডী গুইনেভারা। ইংলিশ কিং আর্থারের স্ত্রী, রাণী গুইনেভারার প্রেমে পড়েছিলেন সেই রাজ্যের বীর একজন নাইট, স্যার ল্যাঞ্ছলট। রাজা আর্থারের অবহেলা আর অবজ্ঞার কারণে, একসময় রাণী গুইনেভারাও তাঁর প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু একদিন, রাজা আর্থারের অপর নাইট স্যার আগ্রাভেইন, স্যার মোড্রেড এবং একদল সৈন্য এই যুগলকে বদ্ধ কামরায় আবিষ্কার করে ফেলে। পরকীয়ার অপরাধে রাণী গুইনেভারাকে আগুনে পুড়িয়ে মারার শাস্তি ঘোষণা করা হয়। স্যার ল্যাঞ্ছলট তাঁর প্রেমিকা লেডী গুইনেভারাকে যুদ্ধ করে বাঁচিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়, কিন্তু তাঁদের এই প্রেমের জন্য পুরো রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং অনেক মৃত্যুর জন্য তাঁরা নিজেদের দায়ী করে, নিজেদের মধ্যে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে তাঁরা দুজনেই দুটি ভিন্ন জায়গায় ধর্মের সেবক হয়ে যান।

৪। ট্রিস্টান অ্যান্ড অ্যাইসোলেইডঃ 

অনন্য এই প্রেমের কথা আমরা জানতে পারি, মধ্য ইংরেজিয় শাসন আমলে। আয়ারল্যান্ডের রাজকুমারী ছিলেন অ্যাইসোলেইড, তিনি ছিলেন ক্রনওয়ালের রাজা মার্কের বাগদত্তা। তিনি রাজকুমারী অ্যাইসোলেইডকে নিজ রাজ্য ক্রনওয়ালে ফিরিয়ে আনার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁর ভাইয়ের ছেলে ট্রিস্টানকে। কিন্তু সেই ভ্রমণে ট্রিস্টান অ্যান্ড অ্যাইসোলেইড একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। যদিও শেষ পর্যন্ত অ্যাইসোলেইড রাজা মার্ককেই বিয়ে করতে বাধ্য হন। কিন্তু তাঁদের প্রেমের কথা রাজ্যে গোপন থাকে না। রাজা মার্ক তাঁদের দুজনকেই মাফ করে দেন, এবং বিনিমিয়ে ট্রিস্টানকে রাজ্য ছেড়ে যেতে বাধ্য করেন। পরে ট্রিস্টান, অ্যাইসোলেইডের সাথে নামের মিল থাকার কারণে ইসেউল্ট নামক এক রমণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু, তাঁর আত্মার পুরোটা জুড়ে ছিল অ্যাইসোলেইডের প্রতি প্রেম। এক পর্যায়ে ট্রিস্টান, অ্যাইসোলেইডের বিরহে গুরুতর অসুস্থ হয়ে যান। তিনি অ্যাইসোলেইড কে শেষবারের মতো দেখতে একটি জাহাজ পাঠান। তাঁর স্ত্রী ইসেউল্ট কে বলেছিলেন, অ্যাইসোলেইড যদি আসে, জাহাজে যেন সাদা পতাকা লাগানো হয়। কিন্তু স্ত্রী ইসেউল্ট মিথ্যে বলে, জাহাজে কালো পাতাকা লাগিয়ে রাখেন। ট্রিস্টান ভাবলেন অ্যাইসোলেইড আর আসবেন না। পরে তিনি মারা যান। পরে তাঁর শোকে অ্যাইসোলেইড, তাঁরই রাজ্যে মারা যান। 

৫।প্যারিস অ্যান্ড হেলেনঃ

গ্রীক পুরাণের ফ্যাক্ট এবং ফিকশনের অপূর্ব এক সংমিশ্রণ হল, গ্রীকলেখক কালজয়ী হোমারের জগতবিখ্যাত এপিক “ইলিয়াড।” নাম করা সেই যুদ্ধের নাম হল, “Trojan War!” যে যুদ্ধে ধ্বংস হয়েছিল পুরো একটা শহর- ট্রয়! ইতিহাসে যা “war for Helen” কিংবা “Helen of troy” নামে বিখ্যাত। গ্রীক পুরাণ অনুযায়ী অনন্য এই সুন্দরী হেলেন ছিলেন, ট্রয় নগরীর পার্শ্ববর্তী, স্পার্টার রাজা মেনেলাসের স্ত্রী। ট্রয়ের ছোট রাজকুমার প্যারিস তাঁকে চুরি করে তাঁর রাজ্যে নিয়ে এসেছিলেন। এতেই বেঁধে গেল ১২ বছর ধরে চলা এক ঐতিহাসিক যুদ্ধ। স্পার্টার পক্ষে এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন রাজা এগামেমনন। এমনকি এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন গ্রীক দেব ও দেবীরা! ট্রয় রাজকুমার হেক্টর, প্যারিস, দেবতা অ্যাকিলিস, স্পার্টার রাজা মেনেলাস সহ অনেকেই নিহত হন। প্রেমের জন্য এত রক্তপাত আর ধ্বংস পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই। 

৬। অরফিয়াস অ্যান্ড ইরিডাইসঃ

এটিও একটি গ্রীক মিথ। সাহিত্যে তাঁদের কাহিনীকে স্বীকৃত দেয়া হয়, “tale of desperate love” বলে। গ্রীক পুরাণ মতে, স্বর্গের এক বিবাহিত পরী ইরিডাইসের প্রেমে পড়েন হারপুন নামক এক বাদ্যবাজক অরফিয়াস। কিন্তু দেবতা এরিসটেইয়াসের সাথে এই দুর্ঘটনায় অরফিয়াস, ইরিডাইসকে হারিয়ে ফেলে। তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়াহয় পাতালপুরীতে। কিন্তু অরফিয়াস তাঁর জাদুকরীএক বাদ্য মূর্ছনায় হারপুন বাজিয়ে দেব- দেবীর মন জয় করে ফেলে। তিনি তাঁর রাজ্য ফেলে ক্রমাগত হারপুন বাজিয়ে তাঁর ভালোবাসা ইরিডাইসের জন্য নানা জায়গায় অপেক্ষা করেছেন। অবশেষে সঙ্গীত দেবতা হেডস ও পারসিফোনের ক্ষমায় অরফিয়াস পাতালপুরীতে জান ইরিডাইসকে উদ্ধার করতে। কিন্তু শর্ত থাকে যে, অরফিয়াস পৃথিবীতে অবতরণের আগে ইরিডাইসকে পিছন ফিরে দেখতে পারবেন না। কিন্তু অরফিয়াস অতি আবেগে আর উৎকণ্ঠায় দেবতাদের শর্তের কথা ভুলে যায়, এবং ইরিডাইসকে দেখতে থাকে। ফলাফল, চিরতরের জন্য ইরিডাইসকে হারিয়ে ফেলে। বলা হয়ে থাকে, এই যে প্রেম কিংবা বিরহে সঙ্গীত ও মিউজিক অনেক বড় ভুমিকা থাকে, সেটা নাকি অরফিয়াস আর ইরিডাইসের প্রেমকাহিনী থেকেই অনুপ্রাণিত হওয়া। 

৭। নেপোলিয়ন অ্যান্ড জোসেপাইনঃ

মহাবীর নেপোলিয়ন ২৬ বছর বয়সে, বয়সে বড় তাঁর রাজ্যের এক ধনী মহিলা জোসেপাইনের প্রেমে পড়েন। তাঁরা দুজনেই তাঁদের সম্পর্কের বিষয়ে শ্রদ্ধাবোধ, এবং ত্যাগ বজায় রেখেছিলেন। অনেকটা রাজ্য শাসনের ভারে অনেকটা অগোচরেই ছিল এই প্রেম। যদিও তাঁরা সর্বদাই স্বীকার করতেন তাঁদের সম্পর্কের কথা। নেপোলিয়ন খুব চাইতেন জোসেপাইনের গর্ভে যেন তাঁর সন্তান হয়, কিন্তু মাতৃত্ব ধারণে অক্ষম ছিলেন জোসেপাইন। কিন্তু চিরজীবন তাঁরা তাঁদের প্রতি ভালোবাসা ধরে রেখেছিলেন। 

৮। ওডিসিয়াস অ্যান্ড পেনেলোপঃ

গ্রীক অন্যান্য প্রেমের গল্পের মতোই, এই জুটির প্রেমমেও ছিল, ত্যাগ আর বিসর্জন। প্রেমের ক্ষেত্রে গ্রীক পুরাণের বেশীর ভাগ কাহিনীরই মূলমন্ত্র হল, “Tragedy and sacrifice.” জুটি তাঁদের মিলনের জন্য অপেক্ষা করেছিল দীর্ঘ ২০ বছর! তাঁদের বিয়ের কিছু পরেই ওডিসিয়াসকে যুদ্ধে চলে যেতে হয়েছিল। কিন্তু স্বামীর প্রত্যাবর্তননের আশায় আশায় পেনেলোপ তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছিল ২০ বছর। এরমধ্যে তিনি ১০৮ জন রাজাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, অপরদিকে ওডিসিয়াসও স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্থ ছিলেন। তিনিও অনেক দেবীর প্রেম ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। Homer রচিত এই এপিকে তিনি প্রমাণ করেছেন, “ভালোবাসার অন্য নাম- অপেক্ষা!” তিনি বলেছেন, “remember that true love is worth waiting for!”

৯। পাউলো অ্যান্ড ফ্রান্সেসকাঃ

সত্য কাহিনী অবলম্বনে এই চরিত্র দুটি নেয়া হয়েছে বিশ্ব বিখ্যাত লেখক Dante-এর অমর সাহিত্য কর্ম হল “Divine Comedy” থেকে। ফ্রান্সেসকার স্বামী মালাটেস্তা ছিলেন একজন ভয়ানক অপরাধী। তাঁর ছোট ভাই পাউলোর সাথে মিলে ফ্রান্সেসকা Dante এর বই পড়ে সময় কাটাতেন। পরবর্তীতে দুজনের মধ্যে প্রেম জন্মে নেয়। ঘটনা জানাজানি হবার পর খুব স্বাভাবিক ভাবেই ফ্রান্সেসকার স্বামী দুজনকেই হত্যা করে। 

১০। স্কারলেট ও’হারা অ্যান্ড রেথ বাটলারঃ

বলা হয়ে থাকে বিখ্যাত লেখক Margaret Mitchell এর কালজয়ী ক্লাসিক “Gone with the Wind,” হল ভালোবাসা বাসি মানুষের জন্য এক বাইবেল! সিভিল ওয়ারের পটভূমি নিয়ে, এবং স্কারলেট-বাটলারের বাঁধন হারা-উন্মাতাল প্রেম, মানসিক টানাপোড়ন, চাওয়া- পাওয়ার হিসেব, দেশের অস্থির সময়—এই সব কিছু মিলিয়েই এটি হয়ে উঠেছে অমর এক সাহিত্য কর্ম। উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্কারলেট কখনোই কারও বাঁধনে নিজেকে বাঁধতে নারাজ ছিল। কিন্তু বাটলারের উন্মত্ত প্রেমকে সে কখনোই উপেক্ষা করতে পারেনি। সুখী জীবনের চিন্তায় বিভোর স্কারলেটের সুখ বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। তাঁর মনস্তান্তিক দ্বন্দ্ব রয়েই গেল। আর তাইতো শেষে স্কারলেট বলেছিল, “Tomorrow is another day!” 

১১। জেইন আয়ার অ্যান্ড এডওয়ার্ড রজেস্টারঃ

লেখক ‘’Charlotte Bronte” এর বিখ্যাত উপন্যাস “Jane Eyre” এর প্রধান চরিত্র জেইন ছিল এতিম এক মেয়ে, যে কিনা ব্যবসায়ী রজেস্টারের ঘর দেখভাল করার জন্য গভর্নেস হিসেবে আসে। বয়সে অনেক বড় আর প্রচণ্ড একা একটা মানুষ রজেস্টারের জীবনে জেইন যেন এক বসন্ত নিয়ে এসেছিল। বয়স কিংবা সামাজিক ব্যবধান কোন কিছুই তাঁদের প্রেমে বাঁধা হতে পারেনি। কিন্তু বিয়ের দিনে জেইন আবিষ্কার করে রজেস্টার পূর্ববিবাহিত। জেইন তাঁকে ছেড়ে চলে যায়। পরে জেইন জানতে পারে, রজেস্টার তাঁর অসুস্থ ও পাগল স্ত্রীর প্রতি কোন অবহেলা করেনি। শুধু তাঁকে হারাবার ভয়ে এই সত্যটা গোপন করেছিল। পরে যদিও ভয়াবহ এক অগ্নিকান্ডে রজেস্টার তাঁর বাড়ি, অসুস্থ স্ত্রী কে হারিয়ে ফেলেছিল। সে নিজেও তাঁর দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। অবশেষে দীর্ঘ বিরহের পর জেইন তাঁর কাছে ফিরে আসে। এই উপন্যাসের প্রতিটি বাক্য যেন এক একটি প্রেম প্রত্র!! প্রচণ্ড আবেগি সব লেখা পড়ে পাঠকের মন খুব সহজেই প্রবাবিত হয়।

১২। লায়লা এবং মজনুঃ

মধ্যযুগীয় ইরানী কবি “Nizami of Ganje” নামে যিনি পরিচিত, তিনি আরবীয় সামাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে রচনা করেন, “Layla and Majnun is a tragic tale about unattainable love.” প্রেমের ইতিহাসে, বিশেষ করে এই উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজে কালজয়ী হয়ে উঠে দুটি চরিত্র, লায়লা ও মজনু। স্বর্গীয় প্রেমের প্রতীক মানা হয় এই জুটিকে। বাল্যকাল থেকেই লায়লা আর মজনুর প্রেম গড়ে উঠে। কিন্তু দুজনের সামাজিক ব্যবধান বিপত্তি বাঁধাল। বলা আছে, লায়লার পিতা মজনুকে আহত করলে লায়লারও আহত হতো, এমননি ছিল তাঁদের সেই স্বর্গীয় প্রেম। মজনু কে মরুভূমিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে বেদুঈনের দল মজনুর হার না মানা ভালোবাসা দেখে তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। তাঁরা লায়লার বাবাকে যুদ্ধে হারিয়ে দেয়। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে যায়। লায়লাকে তাঁর পিতা জোর করে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। স্বামী মারা যাবার পর, যদিও লায়লা মজনুর কাছে ফিরে আসে, কিন্তু প্রচণ্ড দুঃখ আর অনাহারে মজনু মারা যায়। লায়লাও তাঁর ভালোবাসা মজনুর পথ অনুসরণ করে। “দুই দেহ এক আত্মা,” নামক বহুল প্রচলিত কথা এই যুগলের অনুপ্রেরণায় পাওয়া। 

১৩। লুইস অ্যান্ড বেলার্ডঃ

“A story of a monk and a nun,” যাদের চিঠিগুলোই সবচেয়ে বেশী বিখ্যাত। “লাভ লেটারস” বলে আমরা যে টার্ম টা ব্যবহার করি, তা এই যুগলের বদৌলতেই পাই। প্যারিসের বিখ্যাত নটরডেম স্কুলে পড়তে যায় পিটার বেলার্ড। তাঁর শিক্ষক বিখ্যাত দার্শনিক ফ্লোবার্ডের অনুরোধে, ভগ্নীকন্যা লুইসকে পড়াতে রাজী হয়। বেলার্ডের জ্ঞান, মেধা এবং বুদ্ধিমত্তার আকৃষ্ট হয়ে লুইস বেলার্ডের প্রেমে পড়ে যায়। তাঁরা গোপনে বিয়ের বাঁধনে আবদ্ধ হয় এবং লুইস গর্ভবতী হয়ে পড়ে। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ফ্লোবার্ড। তাঁর ভয়ে বেলার্ড, লুইসকে নিরাপদ জায়গায় রেখে আসে। কিন্তু এক রাতে ফ্লোবার্ডের অনুচররা ঘুমন্ত বেলার্ডের অঙ্গহানি করে। বেলার্ডের কষ্টে বাকী জীবন লুইস নান হিসেবে কাটিয়ে দেয়, এবং বেলার্ড হয়ে যায় একজন মঙ্ক (ধর্মীয় গুরু)! ইতিহাস হয়ে থাকে তাঁদের আত্মত্যাগ, আজও বিখ্যাত হয়ে আছে তাঁদের প্রেম পত্রগুলো।

১৪। রামোস অ্যান্ড থিইবীঃ

খুবই আবেগি আর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া আরেকটি রোমান প্রেম কাহিনী। বলা হয়ে থাকে, এই জুটি তাঁদের প্রেম দিয়ে প্রভু থেকে কথা নিয়ে রেখেছে যে, স্বর্গেও তাঁরা এক সাথে থাকবে! ব্যবিলনের সবচেয়ে সুন্দরী কুমারী থিইবীর বাল্যকালের বন্ধু ছিল সুপুরুষ রামোস। তাঁরা ছিল প্রতিবেশী। একই সাথে বেড়ে উঠতে গিয়ে একে অপরের প্রেমে পড়ে। কিন্তু তাঁদের পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নেয় না। তাই তাঁরা ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। সূর্যাস্তের সময় ঘর পার্শ্ববর্তী একটা ম্যালবেরী গাছের কাছে দুজনের দেখা করার কথা থাকে। থিইবী গোপনীয়তা রক্ষার্তে মুখে একটা কাপড় পরে (veil) রেমোসের জন্য গাছের নিচে অপেক্ষা করতে থাকে। হঠাৎ এক ক্ষুদার্ত সিংহ আসে থিইবীর কাছে। ভয় পেয়ে দৌড়ে অন্যজায়গায় আশ্রয় নেয়ার সময় তাঁর মুখের কাপড়টি খুলে পড়ে যায়। পরে রামোস এসে দেখে যে, সিংহের মুখে সেই কাপড়। সে ভাবে যে, সিংহ তাঁর থিইবীকে ভক্ষণ করেছে। সেও তাঁর ছুরি দিয়ে নিজের বুক কেটে ফেলে। অনেকক্ষণ পর থিইবী এসে মৃত রামোসকে দেখতে পায়। তারপর সেও সেই একই ছুরি দিয়ে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয়।

১৫। ডার্সি অ্যান্ড এলিজাবেথঃ

বিখ্যাত ইংরেজ উপন্যাসিক Jane Austen এর কালজয়ী প্রেমের গল্প হল “Pride and Prejudice” এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হল তৎকালীন ইংরেজ ধনী সমাজের এক তরুণ ডার্সি। উচ্চ শিক্ষিত, প্রচণ্ড আহঙ্কারি, স্বভাবে নাকউঁচু, আর বংশমর্যাদায় গর্বিত এই ডার্সি, ঘটনাচক্রে এবং নানা নাটকীটার মাঝে সাধারণ-মধ্যবিত্ত এক পরিবারের মেয়ে এলিজাবেথের সাথে পরিচয় হয়। এলিজাবেথ ছিল মিঃ অ্যান্ড মিসেস বেনেটের পাঁচটি মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। মিঃ অ্যান্ড মিসেস বেনেট সবসময় তাঁদের মেয়েদের প্রচণ্ড স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। নাকউঁচু ডার্সি সবসময় এলিজাবেথ কে তাঁদের সামাজিক এবং পারিবারিক অবস্থান নিয়ে ব্যাঙ্গ, অপমান করতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে এলিজাবেথের রূপ ও গুণে মুগ্ধ হয়ে সেটা ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ডার্সির অভিজাত পরিবার তা মেনে নেয় না, ওদিকে এলিজাবেথের পরিবারেরও ঘটতে থাকে নানা অঘটন। অবশেষে নানা নাটকীয়তার পরে ডার্সি- এলিজাবেথের মিলন হয়। নানা নাটকীয়তা, হাস্যরসে ভরা, তৎকালীন ইংরেজ সমাজের হরেক রকম দিক, লেখকের চমৎকার বর্ণনায় এই উপন্যাসটি হয়ে উঠেছে ইংরেজি সাহিত্যের অমর এক সৃষ্টি। 

১৬। সেলিম এবং আনারকলিঃ

মোঘল সম্রাট আকবর পুত্র সেলিম আর রাজ্যের নর্তকী অনিন্দ্য সুন্দরী আনারকলির প্রেম সম্পর্কে আমরা সবাই-ই জানি। প্রেমের জন্য এত বড় আত্মত্যাগ এই উপমহাদেশে আর কেউ দেখেনি। সম্রাট আকবর এই সম্পর্ক কখনোই মেনে নেন নি। কিন্তু সেলিম ও দমবার পাত্র নয়। আনারকলিকে পাবার জন্য নিজ পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু শক্তিশালী আকবর বাহিনীর কাছে সেলিম খুব সহজেই পরাজিত হয়। নিজ সন্তানের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেন আকবর। সেলিম কে বাঁচাতে আনারকলি তাঁর হার স্বীকার করেন, এবং নিজের জীবনের বিনিময়ে সেলিমের জীবন ভিক্ষা চান। অবশেষে, সেলিমের চোখের সামনেই আনারকলিকে জীবন্ত কবর দেয়া হয়!! 

১৭। পকাহন্টাস অ্যান্ড জন স্মীথঃ

ভারতীয় পাঠান রাজা পউহাতান ছিলেন আমেরিকার ভার্জিয়ানা অঙ্গরাজ্যের এলগনকুইন ইন্ডিয়ানস নামক সেনাদলের সদস্য। তাঁর কন্যা পকাহন্টাস প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে যায় আমেরিকান এক ছেলের- নাম জন স্মীথ। পকাহন্টাস তাঁর বাবার সৈন্যদলের হাত থেকে রক্ষা করে স্মীথ কে। সেই কৃতজ্ঞতা বোধ থেকেই এই প্রেমের শুরু। পরে তাঁরা একে অপরকে সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে নানাভাবে সাহায্য করে। দু পরিবারের মদ্ধেও সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু এক যুদ্ধে গানপাউডার দ্বারা আহত হয়ে স্মীথ যখন আমেরিকা ছেড়ে ইংল্যান্ডে চলে আসে, তখন পকাহন্টাসকে মিথ্যে বলা হয়, স্মীথ মারা গেছে! সাথে পকাহন্টাস কে গ্রেফতার করা হয়, তাঁর পিতার সৈন্যদলকে কাবু করার জন্য। অনেক বছর বন্দী থাকার পর, অনেক চড়াই উৎরিয়ে পকাহন্টাস খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে, এবং নাম পাল্টে রাখে “রেবেকা” (Rebecca)। ইতিমধ্যে সে জন রলফ নামে একজন কে বিয়ে করে। এবং প্রায় ৮ বছর পর লন্ডনে এসে রেবেকা জানতে পারে স্মীথ বেঁচে আছে। কাকতালীয় ভাবে দেখা হওয়া- ওটাই তাঁদের শেষ দেখা। 

১৮। শাহজাহান এবং মুমতাজঃ

১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে আরজুমান বানু নামক এক বালিকার সাথে ১৫ বছরের শাহজাহা্নের বিয়ে হয়। পরে যিনি কিনা মোঘল সাম্রাজ্য পরিচালনা করেন। শাহজাহান তাঁর ১৪ সন্তানের মাতা এবং প্রিয় স্ত্রীর নাম পাল্টে রাখেন মুমতাজ মহল। ১৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে মুমতাজের মৃত্যুর পর, স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি স্থাপত্য নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন। যাতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেছিল, প্রায় ১ হাজার হাতী ব্যবহার করা হয়েছিল, এবং প্রায় ২০ বছর লেগেছিল সেই স্থাপত্য নির্মাণ শেষ হতে। যদিও সেই অনিন্দ্য সুন্দর কালো মার্বেল পাথরের সৌন্দর্য তিনি সম্পূর্ণ দেখে যেতে পারেননি। নিজ পুত্র দ্বারা তিনি লাল আগ্রা ফোর্ট তিনি বন্দী ছিলেন অনেকদিন। যমুনাতীরে যেখানে “তাজমল” গড়ে ওঠেছিল, শেষ জীবনে শাহজাহান ওখানে একাকী সময় পার করেছেন। মৃত্যুর পর তাঁকে সেখানে সমাহিত করা হয়। তাঁর ভালোবাসার নিদর্শনে তিনি রেখে যান, পৃথিবীর সপ্তাচার্যের মাঝে একটি “তাজমল!”

১৯। মেরি অ্যান্ড পিয়েরি কুরীঃ

এই জুটির ছিলনা কোন লোকদেখানো, বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ। ছিল না কোন পুরাণিক ট্র্যাজেডি, দ্বন্দ্ব, যুদ্ধ, দেবদেবীর হস্তক্ষেপ, কিংবা ছিলনা কোন অবৈধ কাহিনী। আধুনিক আর দশটা মানুষের মতোই ছিল তাঁদের প্রেম কাহিনী। কিন্তু ছিল বিশ্বাস, এঁরা ছিলেন একে অপরের অনুপ্রেরণা! মানবতার কল্যাণে আর কাজের মধ্যেই এগিয়েছে তাঁদের প্রেম। তৎকালীন পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় নারীদের রিসার্চে অনুমতি দেয় নি বলে, ১৮৯১ সালে রিসার্চ করতে মেরী গিয়েছিলেন ফ্রান্সের সর্বরনে। মেধাবী মেরী কে লাইব্রেরী, ল্যাবরোটারি সবখানেই আবিষ্কার করেন আরেক মেধাবী, মেরীর ল্যাবরোটারি ডিরেক্টর পিয়েরি কুরী। কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর, ১৮৯৫ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। ১৮৯৮ সালে এই বৈজ্ঞানিক যুগল আবিষ্কার করেন পলোনিয়াম আর রেডিয়াম। পদার্থ বিদ্যায় এবং রেডিও-আক্টইভিটিতে অবদানের জন্য এই দম্পতি ১৯০৩ সালে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। ১৯০৪ সালে পিয়েরি কুরী মারা যাবার পর মেরী নিজের স্বামীর দেশেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নেন এবং কুরীর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার চেষ্টা করেন। অবশেষে ১৯১১ সালে মেরী কুরী পৃথিবীর একমাত্র নারী যিনি দ্বিতীয়বারের মতো এবং ভিন্ন বিষয়ে নোবেল অর্জন করেন। এবার তাঁর বিষয় ছিল কেমিস্ট্রি! ১৯৩৪ সালে লিওকিমিইয়ায় মারা যাবার আগ পর্যন্ত স্বামী পিয়েরি কুরীর বিভিন্ন রিসার্চ তিনি চালিয়ে যান। 

২০। কুইন ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড প্রিন্স আলবার্টঃ

হাজার বছরের পুরানো ইংরেজ সিংহাসন, আর তাঁদের হাজার হাজার প্রেম কাহিনীর ভিড়ে বলা হয়ে থাকে কুইন ভিক্টোরিয়া আর প্রিন্স আলবার্টের প্রেম কাহিনী অতুলনীয়। কুইন ভিক্টোরিয়া তাঁর স্বামী প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুর পর প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত তাঁর জন্য শোক করেছেন। ভিক্টোরিয়া তাঁর চাচা king William- iv এর মৃত্যুর পর ১৮৩৭ সালে ইংরেজ সিংহাসনের দায়িত্ব নেন। ১৮৪০ সালে কুইন ভিক্টোরিয়া তাঁর ফার্স্ট কাজিন প্রিন্স আলবার্ট কে বিয়ে করেন। প্রিন্স আলবার্ট ছিলেন জার্মান সংস্কৃতিমনা এক উদার, প্রাণোচ্ছল মানুষ। অনেকের অনেক কটু কথায় কান না দিয়ে তাঁরা সুখী একটা পরিবার গঠন করেছিলেন। তাঁরা একে অপরকে প্রচণ্ড ভালবাসতেন। তাঁদের ছিল ৯ জন সন্তান। ১৮৬১ সালে স্বামী আলবার্ট মারা যাবার পর, তিনবছর পর্যন্ত কুইন ভিক্টোরিয়া জনগণের সামনে আসেননি। পরে জনগণের চাপে এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন দিস্রাইলের নেতৃত্বে ১৬৮৮ তে নতুন পার্লামেন্ট ঘোষণা করেন। ১৯০১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, তিনি যেখানেই যেতেন, কালো কাপড় পরে যেতেন। ব্যক্তিগত শোককে শক্তিতে পরিণত করে, কুইন ভিক্টোরিয়ার শাসনামলই ছিল ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শাসনামল। ব্রিটিশ এই রাজত্বকে তখন থেকেই বলা হয়, “the sun never set.”





___________________________________________________
তথ্য ও ছবিঃ উইকি ও ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট। সেই সাথে সাহিত্যের ছাত্রী হবার সুবিধায় নিজের অল্পস্বল্প জ্ঞান!! 

বাছাইপ্রক্রিয়াঃ ইন্টারনেট থেকে পাওয়া এই বিশটি যুগল নির্বাচিত করা হয়েছে মূলত প্রাচীন এবং ইতিহাসে অপেক্ষাকৃত যারা আগে এসেছেন সেই ভিত্তিতে। তারপর দেখা হয়েছে, কাদের ঘটনা বহুলপ্রচলিত এবং বিশ্বের বেশীরভাগ মানুষ জানেন এমন সব কাহিনী। এমন নয় যে, ভালোবাসায় আর কেও বিখ্যাত হন নি। 

আরও অনেক কাহিনী, হাজারো সাহিত্যকর্ম যেমনঃ শেক্সপিয়ারের আরেকটি অসাধারণ ট্র্যাজিক সাহিত্য ওথেলো-দেসদিমোনা চরিত্র, পার্সিয়ান বিখ্যাত প্রেম কাহিনী শিরি-ফরহাদ, রামায়ণের রাম-সীতা, শরৎচন্দ্রের দেবদাস-পার্বতী, রবীন্দ্র ঠাকুরের "শেষের কবিতা" র অমিত-লাবণ্য চরিত্রের কথা পৃথিবীর সব বাঙালীর প্রিয়, ইংরেজ রাজা Edward-viii মিসেস ওয়ালিসের প্রেমে পড়ে রাজত্ব ত্যাগের কাহিনী, Emily Bronte এর বিখ্যাত উপন্যাস “Wuthering Heights” এর হেথক্লিফ-ক্যাথরিন জুটি, সহ আরও অনেক অনেক বিখ্যাত কাহিনী ও সাহিত্য কর্ম আছে, সেগুলোর মূলমন্ত্র ছিল- ভালোবাসা। যতদিন পৃথিবী থাকবে, ভালোবাসার জন্য যাঁদের আত্মত্যাগ সবাই স্মরণ করবে। 


পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রেমের তাঁরাই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন,কিংবা বিখ্যাত আর ঐতিহাসিক সাহিত্যকর্মের বেশীরভাগ কাহিনীতেই আছে ভালোবাসার জন্য ত্যাগ, কষ্ট, অপেক্ষা আর সেক্রিফাইস!! আবারো সেই পুরানো বিতর্ক সামনে চলে আসেঃ প্রেমের সার্থকতা কিসে? মিলনে নাকি বিরহে?