Pages

Thursday, December 17, 2015

উম্মুল মু‘মেনীন হযরত উম্মে সালমা (রা.)

54-BANG FEB7
সন্তানাদী
হযরত উম্মে সালমার সব সন্তানই ছিল প্রথম পক্ষের। নবীজীর ঔরসে তার কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করেনি। এদের সম্পর্কে ইল-এছাবাহ, উসুদুল গাবাহ এবং তাবাকাত গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে, সালমা এবং উমর নামে তার দু’পুত্র এবং যয়নব নামে এক কন্যা ছিল। সহীহ বুখারী শরীফে দোররা নামেও এক কন্যা সন্তানের উল্লেখ দেখা যায়। এ হিসেবে তার সন্তানের সংখ্যা চার। এদের সম্পর্কে এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হচ্ছে।
হাবশা বা আবিশিনিয়ায় সালমার জন্ম হয়। হিজরত কালে সালমা কোলে ছিল। নবীজী হযরত হামযার কন্যা উসামার সাথে তার বিয়ে দেন।
নবীজীর সাথে উম্মে সালমার বিয়ে হয় তার পুত্র উমরের উদ্যোগে। হযরত আলীর শাসনামলে তিনি ফরেস এবং বাহরাইনের শাসনকর্তা ছিলেন।
 হযরত আবু উমাইয়্যা নবীজীর দুধ ভাই। একবার হযরত উম্মে হাবীবা নবীজীকে বললেন, আমি শুনেছি আপনি দোররাকে বিয়ে করতে চান। নবীজী বললেন, এটা কি করে হতে পারে? তিনি আমার পালক কন্যা না হলেও এটা কিছুতেই হালাল হতো না। কারু সে তো আমার দুধ ভাইয়ের কন্যা।
যয়নব সম্পর্কে যরকানী লেখেন যে, আগে তার নামা ছিলো বাররা। নবীজী তার নাম রাখেন যয়নব।
চরিত্র মাধুর্য
হযরত উম্মে সালমার গোটা জীবনটাই ছিল একজন দুনিয়াত্যাগীর জীবন। দুনিয়ার ধন-দৌলতের প্রতি তার কোন মোহ ছিল না। একবার তিনি একটি হার গলায় দেন। এতে কিছু স্বর্ণও ছিল। নবীজী আপত্তি করলে খুলে ফেলেন। (২৮) প্রত্যেক মাসে সোমবার, বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার রোযা রাখতেন। (২৯) প্রথম পক্ষের সন্তান সাথে ছিল। অতি আদর-যতেœর সাথে লালন-পালন করতেন। একদা তিনি হযরতকে জিজ্ঞেস করেন, এজন্য আমি কি কোন সাওয়াব পাবো? তিনি বললেন, অবশ্যই পাবে। (৩০) আদেশ-নিষেধের প্রতি তিনি খব লক্ষ্য রাখতেন। কিছু লোক নামাযের মোস্তাহাব সময় ত্যাগ করতেন, হযরত উম্মে সালমা তাদেরকে তাকীদ করে বলেন, নবীজী যোহরের নামায জলদী পড়তেন, আর তোমরা আসরের নামায জলদী পড়। (৩১)
তিনি নিজেও অত্যন্ত দানশীলা ছিলেন, আর অন্যদেরকেও এ জন্য উৎসাহিত করতেন। একবার কয়েকজন ফকীর তার দরজায় হাজির হয়ে অতিশয় কাতর কণ্ঠে সাওয়াল করতে থাকে। তার কাছেই বসা ছিল উম্মুল হোসাইন। তিনি বাধা দিলেন। কিন্তু উম্মে সালমা তাকে বারু করে বললেন, এমনটি করতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। অতঃপর দাসী বললেন, এদেরকে কিছু দিয়ে বিদায় করো। কিছু না থাকলে একটা করে খেজুর হলেও তাদের হাতে দাও। (৩২)
একদা হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ তাঁকে বললেন, আম্মা! আমার কাছে এতটা সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়েছে যে, এখন ধ্বংসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি বললেন, বৎস! ব্যয় করো। হযরত বলছেন, এমন অনেক সাহাবা আছে যারা আমাকে কখনো দেখবে না। (৩৩)
অন্যদের আরাম-আয়েশের প্রতি তিনি খুব লক্ষ্য রাখতেন। যতদূর সম্ভব, ভালো কাজে কুণ্ঠাবোধ করতেন না। ভালোবাসার দাবী অনুযায়ী নবীজীর চুল মোবারক নিজের কাছে সংরক্ষণ করে রাখতেন বরকত স্বরূপ। সহীহ বুখারীতে আছে, একটা রূপার কৌটায় তিনি ইহা হেফাযত করে রাখেন। সাহাবীদের মধ্যে কারো কোন অসুবিধা দেখা দিলে তিনি তা একটি পাত্রে নিয়ে তাদের কাছে আনতেন। তিনি তা বের করে পানির পাত্রে নাড়াতেন। এর বরকতে সে অসুবিধা সেরে যেতে।
নবীজীর আরাম-আয়েশের প্রতি তিনি এতটা লক্ষ্য রাখতেন যে, হযরত সকীনা, যিনি ছিলেন নবীজীর খাদেম কিন্তু মূলতঃ গোলাম, তিনি এ শর্তে তাকে আযাদ করেছেন যে, যতদিন নবীজী বেঁচে থাকবেন, তাঁর খেদমত হাজির থাকবে। (৩৪)
তাঁর মধ্যে আত্মমর্যাদা বোধ ছিল। নবীজী ইন্তিকালের পূর্বে হযরত ফাতিমার কানে কানে যে কথা বলেন, হযরত আয়েশার মতো বহুগুণের অধিকারীনি স্ত্রী অস্থির হয়ে তখনই হযরত ফাতিমাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। অবশ্য জবাব না পেয়ে তাঁকে লজ্জিত হতে হয়েছে। কিন্তু হযরত উম্মে সালমা অস্থির হয়ে তখনই এ সম্পর্কে  জিজ্ঞেস না করে বরং অপেক্ষ করেন এবং নবীজীর ওফাতের পর জিজ্ঞেস করেন। (৩৫)

আহলে বাইত, আল্লাহ তাআলা অপবিত্রতা দূর করে ভালোভাবে তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান, এ আয়াতটি তার গৃহেই নাযিল হয়। অর্থাৎ আয়াতে তাতহীর বা পরিচ্ছন্নতার আয়াত যখন নাযিল হয়, তখন নবীজী তাঁর গৃহে ছিলেন। আয়াতটি নাযিল হলে নবীজী হযরত ফাতেমা, হযরত আলী, হযরত হাসান এবং হযরত হুসাইন (রা.)-কে ডেকে পাঠান এবং বলেন, এরাই আমার আহলে বাইত। হযরত উম্মে সালমা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি আহলে বাইত নই? তিনি জবাব দিলেন …অবশ্যই যদি আল্লাহ চান। (৩৬)
তিরমিযী শরীফের কিছুটা পরিবর্তনসহ এ হাদীসটি উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয় যে, নবীজী এদেরকে ডেকে একটা কম্বলে জড়িয়ে নিয়ে বলেন, পরওয়ারদেগার, এরাই আমার আহলে বাইত। এদেরকে মাফ কর। এ দোয়া শুনে হযরত উম্মে সালমা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমিও কি তাদের অন্তর্ভূক্ত? বললেন, তুমি তোমার স্থানে আছ এবং ভালো আছ। (৩৭)
এখানে বর্ণনা দু’টির উল্লেখ করা হয়েছে এ জন্য যে, যাতে ভালো কাজে হযরত উম্মে সালমার আকাঙ্খী হওয়া সম্পর্কে অনুমান করা যায়।

No comments:

Post a Comment