সাধারণ অবস্থা:
হযরত উম্মে সালমার বিয়ের ঘটনার মধ্যে
এটা বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বিয়ের দিনই তিনি নিজ হাতে খানা তৈরি করেন।
ইতোপূর্বে উম্মুল মু’মেনীন হযরত যয়নব ইবনেতে খোযায়মার ইন্তেকাল হয়েছে।
ঘরে তুলে নেওয়ার পর তাকে সে গৃহে অবস্হান করতে দেওয়া হয়। ঘরের প্রয়োজনীয়
জিনিস পত্র আগে থেকেই বর্তমান ছিল। হযরত উম্মে সালমা একটি পাত্র থেকে কিছু
চর্বি বের করে খানা তৈয়ার করেন। নবীজী এবং তাঁর নব পরিণীতা স্ত্রী বাসর
রাত্রে এ খাদ্যই গ্রহণ করেন। (তাবাকাত ৮ম খÊ)
হোদায়বিয়ার সন্ধি উপলক্ষ্যে নবীজীকে
তার যথার্থ পরামর্শ দান অতি প্রসিদ্ধ ঘটনা। বুখারী শরীফে উল্লেখ আছে যে,
সন্ধির পর আল্লাহর রাসূল হোদায়বিয়ার কুরবানী করার জন্য বলেন। সন্ধির
শর্তবলী যেহেতু বাহ্যত মুসলমানদের বিরুদ্ধে ছিল তাই সাধারণত হতাশা বিস্তার
করেছিল। নবীজী তিনবার নির্দেশ দেওয়ার পরও কেউ নির্দেশ মানতে এগিয়ে
আসেননি। ঘরে ফিরে এসে তিনি উম্মে সালমার নিকট খুলে বলেন। তিনি বললেন আপনি
কাউকে কিছু না বলে বাইরে গিয়ে নিজেই কুরবানী করুন এবং এহরাম ভাঙ্গার জন্য
মাথা মোড়ান। তিনি তাই করলেন। যখন সকলে কুরবানী করলেন এবং এহরাম খুলে
ফেললেন। (সহীহ বুখারী) হযরত উম্মে সালমার এ অভিমত যথার্থ বলে সকলে স্বীকার
করেন।
বিদায় হজ্জের সময় হযরত উম্মে সালমা
অসুস্হ ছিলেন। কিন্তু তাই বলে দ্বীনি ফরয আদায় থেকে বিরত থাকা তাঁর পছন্দ
ছিল না। তাই যথার্থ ওজর থাকা সত্ত্বেও তিনি নবীজীর সাথে আগমন করেন।
তাওয়াফ সম্পর্কে নবীজী বলেন, উম্মে সালমা ফজরের নামায চলাকালে উটের পিঠে
সাওয়ার হয়ে তুমি তাওয়াফ করবে। ( সহীহ বুখারী)
নবীজীর অসুস্হতা বেড়ে গেলে তিনি যখন
হযরত আয়েশার গৃহে স্হানান্তরিত হন, তখন অধিকাংশ সময় উম্মে সালমা তাকে দেখতে
আসেন। একদিন তাঁর অসুস্হতা দেকে নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে তিনি চিৎকার
করে উঠেন। নবীজী তাকে বারণ করে বলেন, এটা মুসলমানদের সাজে না। (তাবাকাত
৮ম খণ্ড)
পঞ্চম হিজরীতে বনু কোরায়যার অবরোধকালে
ইয়াহুদীদের সাথে আলোচনা করার জন্য দরবারে রেসালত থেকে যখন হযরত আবু
লুবাবাকে প্রেরণ করা হয়, তখন হযরত আবু লুবাবা পরামর্শ চলাকালে হাতের
ইঙ্গিতে তাদেরকে বলে দেন যে, তোমাদেরকে হত্যা করা হবে। কিন্তু এটা গোপন
তথ্য ফাঁস মনে করে এতটা লজ্জিত হন যে, মসজিদের খাম্বার সাথে নিজেকে বেঁধে
রাখেন এবং এ অবস্থায় অনেক দিন কাটান।
একদিন সকালে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হেসে হেসে হযরত উম্মে সালমার গৃহে প্রবেশ করলে তিনি বলেন,
আল্লাহ আপনাকে সদা হাস্যোজ্জ্বল রাখুন। এখন হাসার কি কারণ দেখা দিয়েছে?
বললেন, আবু লুবাবার তাওবা কবুল হয়েছে। হযরত উম্মে সালমা অনুমতি চাইলেন তার
এ সুসংবাদ পৌঁছে দেওয়ার। তিনি বললেন, ইচ্ছে হলে তা করতে পার। তার গৃহ
মসজিদে নববীর এত কাছে ছিল যে, ঘর থেকে আওয়াজ দিলে মসজিদ থেকে শুনা যেত।
অনুমতি পেয়ে হুজরায় দাঁড়িয়ে ডাক দিয়ে বললেন, আবু লুবাবা! তোমায়
মোবারকবাদ। তোমার তাওবা কবুল হয়েছে। এ আওয়াজ কানে পৌঁছতেই সারা মদীনায়
আনন্দ বয়ে যায়। (যুরকানী ২য় খণ্ড ১৫৩ পৃষ্ঠা)
ঈলা’র ঘটনায় হযরত আবু বকর এবং হযরত ওমর
যখন স্ব-স্ব কন্যাদের বুঝান, আর হযরত ওমর হযরত উম্মে সালমার কাছেও আসেন এবং
এ বিষয়ে আলোচনা করেন, তখন হযরত উম্মে সালমা একটু কড়া সুরে বলেন:
عجبا لك يا ابن الخطاب ، دخلت في كل شيء حتى تبغي أن تدخل بين رسول الله و أزواجه
হে খাত্তাবের পুত্র! অবাক কাণ্ড, তুমি
সকল বিষয়ে হস্তক্ষেপ কর। এমনকি এখন নবীজী এবং তাঁর স্ত্রীদের ব্যাপারেও
হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেছ। (সহীহ মুসলিম)
হযরত ইমাম হোসাইনের শাহাদাত সম্পর্কে
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগেই হযরত উম্মে সালমার নিকট
ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। হযরত ইমাম হোসাইন যখন সিরীয় বাহিনীর কবলে পড়ে
বীরবিক্রমে জীবনের শেষ মুহূর্তে অতিক্রান্ত করছিলেন, আর সর্বশক্তি দিয়ে
লড়ছিলেন, ঠিক সে সময় হযরত উম্মে সালমা স্বপ্নে দেখেন যে, আল্লাহর রাসূল
আগমন করেছেন। তিনি অত্যন্ত পেরেশান, চুল দাড়ি ধুলা-বালি মাখা। তিনি
জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কি অবস্হা? বললেন, হোসাইনের হত্যাস্হান
থেকে ফিরে আসছি। চোখ খুলে কেঁদে ফেলেন। এ অবস্হায় মুখ থেকে নির্গত হয়,
ইরাকবাসীরা হোসাইনকে হত্যা করেছে। আল্লাহ তাদেরকে লানত করুন। (মুসনাদে
ইমাম আহমদ)
No comments:
Post a Comment