Pages

Thursday, December 17, 2015

উম্মুল মু‘মেনীন হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ(রাঃ)

এখন আর কোন বাধা ছিল না। তাই তিনি হযরত যায়েদকে বললেন, তুমি যাও এবং যয়নবকে আমার বিয়ের পয়গাম পৌছাও। হযরত যায়েদ হযরত যয়নবের গৃহে গিয়ে বললেন যে, রাসুলুল্লাহ তোমাকে বিয়ে করতে চান। তিনি বললেন, যহেতু আল্লাহর নিদের্শ, তাই আমার কিছু বলার নেই। এ জবাবের পর তিনি মসজিদের পথে রওয়ানা হন। এ সময় আল্লাহ্ তা’আলা নিম্মোক্ত আয়াত নাযিল করেন ঃ
অতঃপর যায়েদ যখন দার কাছ থেকে হিস্যা পূর্ণ করে তখন আমি তাকে তোমার নিকট বিয়ে দিলাম, যাতে হিস্যা পুরা করার পর মুখ ডাকা পুত্রদের স্ত্রীদের ব্যপারে মোমেনদের উপর কোন দোষারোপ না চলে। আল্লাহর ইচ্ছা তো পুরণ হবেই। (সূরা আহ্যাব: ৩৮)
যখন খোদার হুমুম নাযিল হয়েছে। তাই বিবাহ সম্পন্ন হতে আর কোন বাধা ছিল না। নবীজী হযরত যয়নবের অনুমতির অপেক্ষা না করেই তার কাছে যাতায়াত শুরু করেন। ওলীমার গোশ্ত-রুটীর ব্যবস্থা করা হয়। মুসলমানরা তৃপ্ত হয়ে তা খান। ওলীমার পরই পর্দার আয়াত নাযিল হয়। এর কারন দাঁড়ায় এই যে, খাওয়ার পর লোকেরা বসে কথা-বার্তায় মশগুল ছিল। নবীজী তখন হযরত যয়নবের গৃহে অবস্থান করেন। এদের কারণে তাকে বারবার আসতে যেতে হয়, কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে মুখে কিছু বলছিলেন না। তখন এ আয়াত নাযিল হয় ঃ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে কোন খানার জন্য ডাকা ছাড়া নবীর ঘরে প্রবেশ করবে না। (আর ডাকা হলেও) বরতনের দিকে তাকিয়ে থাকবে না। এজন্য তোমাদেরকে ডাকা হলে তখন প্রবেশ করবে আর খাওয়া শেষ হলে চলে যাবে, কথায় মত্ত হয়ে থাকবে না। কারণ, তোমাদের এ কর্ম নবীকে কষ্ট দেয় আর তিনি তোমাদেরকে লজ্জা করেন (তাই কিছু বলেন না), আর আল্লাহ্ সত্য বলতে লজ্জা করেন না। আর তোমরা তার কাছে কোন কিছু চাইলে তা চাইবে পর্দার আড়াল থেকে। তোমাদের এমন কাজ তোমাদের নিজেদের এবং স্ত্রীদের অন্তরের জন্য অতি পবিত্র। রাসুলকে কষ্ট দেয়া তোমাদের জন্য সাজেনা আর অতঃপর তার স্ত্রীদেরকে কখনো বিয়ে করা যাবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্র নিকট এটা বিরাট গুনাহের কাজ। (সুরা আহযাব:৫৩)
অতঃপর নবীজী দরজায় পর্দা ঝুলিয়ে দেন। লোকদের ভিতরে  যাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনা হিজরী ৫ম সালের যিলকদ মাসের।
ইবনে আসীর লিখেছেন যে, অন্যান্য স্ত্রীর তুলনায় হযরত যয়নব তার বিয়ের জন্য গর্ব করতেন এই বলে যে, আল্লাহ্ তা’আলা আসমানে আমার আকদ সম্পন্ন করেছেন আর আমার বিয়েতেই নবীজী গোশ্ত-রুটি দ্বারা ওলীমার ব্যবস্থা করেছেন।
ইবনে সা’আদ এ ওলীমার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন,
নবীজী তার কোন স্ত্রীর ওলীমা হযরত যয়নবের মতো এতো শান-শওকতের সাথে করেননি । বকরীর গোশ্ত দিয়ে তিনি এ ওলীমা করেন।
মুহাম্মাদ ইবনে উমর বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত যয়নব নবীজীকে বললেন, ইয়া  রাসুলুল্লাহ! আমি আপনার অন্য স্ত্রীদের মতো নই। তাদের মধ্যে একজনও এমন নেই,  যার বিয়ে পিতা-ভাই বা বংশের অন্য কারো অভিভাবকত্বে সম্পন্ন হয়নি। একমাত্র আমিই ব্যতিক্রম। আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে আসমান থেকে আপনার স্ত্রী করেছেন।
উপরের বর্ণনায় হযরত যয়নবের বিয়ের বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। এতে অন্য কেউ তার শরীক নেই। এ কারনে হযরত আয়েশা হযরত যয়নব সর্ম্পকে নলতেন ঃ
আর সত্য কথা এই যে, এ দাবি করার তার  অধিকারও ছিল। কারণ তার এ বিয়ে দ্বারা জাহেলী যুগের একটি প্রথার বিলোপ ঘটেছে। যেমন আগে ধারনা করা হতো যে, পালক পুত্রও আসল পুত্রের মতই। আল্লাহ তা’আলা তার শেষ নবীর মাধ্যমে এ ধারণার বাস্তব সংস্কার সাধন করেছেন। আযাদ আর গোলামের পার্থক্য তিরোহিত হয়েছে। আর হযরত যায়েদকে বনু হাশেম বংশের মধ্যে সাম্যের প্রতীক করা হয়েছে। পর্দাহীনতার ঘৃণ্য প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে এবং মুসলমানদেরকে পর্দার সাধারণ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
চরিত্র-মাধুর্য
হযরত যয়নবের মধ্যে যেসব বৈশিষ্ট পাওয়া যায়, খুব কম স্ত্রীই এ ব্যাপারে তাঁর শরীক ছিলেন। এ কারনে হযরত আয়েশার সাথে সব সময় প্রতিযোগিতামুলক দ্বন্দ্ব চলতো। মানব প্রকৃতির দাবি অনুযায়ী অনেকাংশে ঈর্ষা এবং প্রতিদ্বন্দ্বীতার সম্পর্কও ছিল। কিন্তু ইফ্ক (অপবাদের) ঘটনায় হযরত আয়েশা সম্পর্কে তার অভিমত চাওয়া হলে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, আমি তার মধ্যে ভালো ছাড়া অন্য কিছু দেখি না। চিন্তা করলে দেখা যায়, নারীর মতো দুর্বল প্রকৃতির লোকের জন্য এটা ছিল একটা নাযুক সময়, বলা চলে এক দুর্লভ মুহূর্ত। এ ছাড়াও হযরত যয়নবের এক বোন ’হামনা’ ও এ ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল। কিন্তু আল্লাহ্ তা’আলার অভিপ্রায় ছিল হযরত আয়েশার কলুষমুক্তার সাথে সাথে হযরত যয়নবের নিরপেক্ষ সত্যবাদিতা প্রকাশ করে দেয়া। হাফেজ ইবনে হাজার তার বিশ্ববিশ্রুত গ্রন্থ আল-এছাবা’য় লিখেন ঃ
وقد وصفت عائشة زينب بالوصف الجميل فى قصة الأفك
-ইফকের ঘটনায় হযরত যয়নব হযরত আয়েশার ভূয়শী প্রশংসা করেন।
তিনি ছিলেন অত্যন্ত উদার, দরায হস্ত, দানশীলা, খোদার উপর নির্ভরশীলা এবং অল্পে তুষ্ট। এতিম, মিসকীন এর অভিভাবক এবং ফকীরদের সহায়।
ইবনে সা’আদ বলেন,
যয়নব ইবনেতে জাহাশ দীনার-দিরহাম কিছুই রেখে যাননি, যা কিছু সম্ভব, ছদকা করে দেন।

No comments:

Post a Comment