আপনার শিশুকে গল্প শোনান
জানুন শিশুদেরকে গল্প বলার নানা বিষয় ও কৌশল
 
শিশুদের
 জন্য মারাত্নক একটা জিনিষ ‘গল্প’। তাই গল্প পড়ুন, গল্প বানান, গল্প 
শোনান। শুধু কিছু পজেটিভ্ গল্প আপনার শিশুর ভেতর আনতে পারে দৃষ্টান্তমূলক 
পরিবর্তন। হোক সে গল্প সত্য বা মিথ্যা। যদি পজেটিভ্ সেন্স থেকে থাকে 
গল্পে,
তবে বিশ্বাস করুন, আপনি চোখের সামনেই আপনার শিশুর ভেতর পরিবর্তন দেখতে পারবেন।
(১) শিশুরা একটা বিষয়ে খুব ছাড় দেয় আর
 সেটা হলো এই যে, ওরা একই গল্প বারবার শোনে একই রকমের আগ্রহ নিয়ে। মোটেও 
বিরক্ত হয়না, বিরক্তি দেখায়না। কিন্তু তারপরও আমরা বড়রা গল্প বলায় 
কৃপণতা দেখাই। গল্পের ভান্ডার যদি কম থাকে তবে নিজের ছোট বেলার ঘটনা 
শোনাবেন। নিজের ছোটবেলা সম্পর্কে বলার মতো কিছু না থাকলে বাচ্চার নানা-নানী
 দাদা-দাদীর গল্প বলুন। তারা কি করতো, কেন করতো, কিভাবে করতো সেই সব মজা 
করে পরিবেশন করতে পারলে বাচ্চা আপনার গল্প শোনার ভক্ত হবেই হবে।
(২) একটু খেয়াল করে দেখুন আপনি আসলে অনেক গল্পই জানেন কিন্তু ভুলে গিয়েছেন বহুদিন গল্পবলার চর্চা করেননি বলে। সেগুলি মনে করুন।
(৩) ছোটদের গল্পের বই কিনে পড়ুন। তবে এখানেও বলে রাখা দরকার যে, অযথা রাক্ষস, ভুত, ঠাকুরমার ঝুলি ইত্যাদি পরিহার করুন।
(৪) ইসপের গল্প শোনাতে পারেন।
(৫) যদি তারপরো কাজ না হয়, তবে বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলুন। এখন প্রশ্ন হলো কেমন গল্প বানাবেন? কিভাবে গল্প বানাবেন?
 
বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলা।
(১) আমি প্রচুর বানিয়ে বানিয়ে গল্প
 বলি। সত্য মিথ্যা সব বলি। কি ভাই, চমকে গেলেন নাকি! শিশু লালন পালন নিয়ে 
এই আমি শিবলী এতো পজেটিভ্ কথা বলি, আর এই আমিই নাকি মিথ্যা গল্পও বলি! এটা
 কেমন করে সম্ভব, তাই না? সত্যিই ভালো হতো যদি যে, মিথ্যা গল্পগুলি বলি 
সেগুলি সত্য হতো। কিন্তু কিছু পজেটিভ লাভের আশায় কিছু কিছু মিথ্যা হয়তো 
ক্ষতিকর নয়। এটা আমার মতামত, যদি মনে করে থাকেন আমার চিন্তাটা সঠিক নয়, 
তবে আপনি এটা ফলো করবেন না। তবে এমন অনেক রুপকথা আছে যেখানে আজব আজব চরিত্র
 নেই কিন্তু মোরাল লেসন আছে, যদিও সেগুলিও মিথ্যা গল্প কিন্তু গল্প শুনে 
অনেক মোটিভেশন পাওয়া যায়।
 
(২) জরুরি
 নয়, সবকটা গল্প আপনার ছোট বেলার ঘটনার সাথে জড়িত করতেই হবে। তাই চাইলে 
অজানা কারো নামেও চালিয়ে দিতে পারেন। তবে যেহেতু সন্তানরা তাদের 
মা-বাবাকেই আইডল ভাবতে শুরু করে, তাই নিজের জীবনের বিভিন্ন অর্জন, 
প্রচেষ্টা, ব্যার্থতা ও আবার সেটা জয় করার ঘটনা, সাফল্য, আনন্দ, কান্না 
ইত্যাদির ঘটনা সন্তানের কাছে প্রকাশ করতে থাকুন। যদি বলা শুরু করেন তবে 
দেখবেন, রাক্ষস, ভুত, ঠাকুরমার ঝুলি, ঈসপ কাউকেই লাগছে না। আপনার নিজের 
জীবনটাই যথেষ্ট আপনার সন্তানকে গল্প বলার জন্য। এমন কি আপনার সন্তানও আপনার
 ছোট বেলার গল্প শোনার জন্য আকুল আবেদন জানাবে।
(৩) তাই বলে, অধিক সততা দেখাতে গিয়ে 
নিজের জীবনের অপকর্মগুলি আবার বলা শুরু কইরেন না (অবশ্যই এই কথাটা বলার 
প্রয়োজন ছিলোনা, সেটা আমি ভালো করেই জানি)। তবে হ্যা, যদি এমন কোন ঘটনা 
থাকে যেখানে আপনার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো কিন্তু আপনি সেটা ভুল 
করে করেছিলেন এবং পরে আপনি অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং সেই ক্ষতি পুষিয়ে 
দিয়েছিলেন, তবে সেই গল্প বলুন আপনার সন্তানকে, তবে অবশ্যই বুঝেশুনে যেন সে
 বিভ্রান্ত না হয়। মানে বিষয়টি আপনার উপস্থাপনের উপর নির্ভর করছে সে 
কিভাবে বিষয়টি গ্রহন করবে।
 
(৪)
 একটু উপরেই বলেছি ‘আপনার নিজের জীবনটাই যথেষ্ট আপনার সন্তানকে গল্প বলার 
জন্য।’ কেন বলেছি? দেখুন আমরা মানুষ আর আমাদের সন্তানটাও মানুষের বাচ্চা, 
তাই না? তো, আমাদের সন্তানতো আর রাক্ষস বা ভুতের দেখা পাবেনা বা গল্পের 
রাজকুমার/রাজকুমারীর জীবন পাবেনা বা অবাস্তব কাল্পনীক কিছু হবেনা। তাই অযথা
 ওর শিশুকালটা অবাস্তব অযৌক্তিক কাল্পনীক ঘটনায় মুড়িয়ে রাখার কি দরকার 
বলুন? আমাদের সন্তানতো এই সমাজের মাঝে থেকেই বড় হতে থাকবে, তাই না? তাহলে 
মানুষ কি করে, মানুষ কি করেছে, মানুষ কি করতে পারে, মানুষের মহানুভবতা, 
মানুষের ভালোবাসা, মানুষের প্রচেষ্টা, সফলতা, ক্ষমা ইত্যাদির গল্প বলাইতো 
অধিক কার্যকর হবে বলে মনে হয়, নয় কি? সুতরাং, ছুঁড়ে ফেলে দিন যতো সব 
অবাস্তব গল্প।
(৫) তবে, একটা দুটো ঠাকুরমার ঝুলির 
গল্পের বই রাখতে পারেন। কেন? অন্তত বইটা দেখিয়ে বলতে পারবেন যে, ঐ ধরনের 
গল্প শিশুদের না শোনাই ভালো। ওগুলি খুব একটা ভালো গল্প নয়। রাক্ষসের 
গল্পের বই কিন্তু আমার সন্তান দুটির আছে তবে আমি নিজে এই ৬ বছরে একটাও 
শোনাই নাই। বরং ঐ সকল গল্পগুলি যে কতোটা ভুল সেগুলি তাচ্ছিল্যের হাসিতে 
হেসে এমন করে উপস্থাপন করেছি যে ওরা বুঝেছে ওগুলি অবাস্তব কাল্পনীক আর 
আজগুবি সব গল্প। আর ওগুলি শুনতে ওরা আগ্রহ প্রকাশ করেনা বিন্দুমাত্র। 
উপকারো পেয়েছি। আমার গৃহকর্মী কোন এক সুযোগে ঐ ধরনের গল্প বলেছিলো বা বলতে
 চেয়েছিলো। আমার মেয়েরা মোটেও শোনেনি বরং উল্টা ওকেই বুঝিয়েছিলো, ওসব 
মিথ্যা আর ফালতু।
 
(৬)
 তাও যথেষ্ট আইডিয়া পাচ্ছেন না, তাই না? আসুন আরো আইডিয়া দেই। চলতি ঘটনা 
নিয়ে নানা গল্প বানাতে পারেন। যেমন ধরুন, এখন বর্ষা কাল। তো, বর্ষাকাল 
নিয়ে আপনার জানা সকল গল্প বলতে থাকুন। নদ, নদী, খাল, বিল, পুকুর, হাঁস, 
সাপ, ব্যাঙ, কেঁচো, মাছ, মাছ ধরার বর্শী, মাছ ধরার জাল, নৌকা, ভেলা, মাঝি, 
সাঁতার ইত্যাদি শতশত বিষয় চলে আসবে আপনার প্রতিদিনের বর্ষাকালের গল্পে। আর
 প্রতিটি গল্পে চাইলেই প্রচুর মজা আর শিক্ষনীয় ডায়লগ ডেলিভারী দিতে 
পারবেন।
(৭) দেশ নিয়ে গল্প বলবেন। আমাদের দেশ নিয়ে বলার মতো অনেক গল্প আছে। সো, আরো ডজন খানেক আইডিয়া পেয়ে গেলেন কিন্তু।
(৮) বিশেষ বিশেষ দিনে ঐ দিন নিয়েও গল্প 
বলতে পারেন। নববর্ষ, মে দিবস, ভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, 
ধর্মীয় দিবস, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দিবস, এই সকল বিষয়ে বলবেন। দেশ বিদেশের
 মহান মানুষদের নিয়েও গল্প বলবেন।
 
(৯)
 বিশ্ব নিয়েও কেনই বা বলবেন না বলেন। চারপাশে কতো কিছু আছে। আমাদের শিশুরা
 জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে অনেক কিছু অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে। সেই সবকিছু 
নিয়ে গল্প বলুন। আবার ভুলেও ভাববেন না যে, আমি রসকষ বিহীন একজন আর শিশুদের
 সুন্দর মজার গল্প শোনাবার বুদ্ধি দেবার বদলে দেশ, বিশেষ মানুষ, বিশেষ দিন 
যতো সব সিরিয়াস বিষয় টেনে আনছি। দেখুন আপনার যদি একটু ক্রিয়েটিভিটি থাকে
 তবে এই সব সিরিয়াস বিষয়গুলিও অতি মজার করে উপস্থাপন করতে পারবেন।
(১০) বিজ্ঞান, ধর্ম, আপনার লালিত পালিত 
বিশ্বাস, মূল্যবোধ, ইত্যাদি নানা বিষয়ে গল্প বলতে পারেন সুন্দর করে, মজা 
করে, নানা রঙে নানা ঢং-এ।
 
কিভাবে অনেক গল্পের বই পাবেন? 
(১) লাইব্রেরী: লাইব্রেরী শব্দটা 
পড়েই হয়তো এই পয়েন্টটা না পড়ে ২য় পয়েন্টে চলে যাবেন ভেবেছিলেন, তাই 
না? কারন, লাইব্রেরী নিয়ে কি বলতে পারি তাতো অনুমান করাই যায়, তাই না? 
আপনি কিন্তু ঠিকই ধরেছেন। আমি বলতে চেয়েছি লাইব্রেরী যান, সদস্য হোন, 
ছোটদের গল্পের বই বাসায় আনুন, পড়ে শোনান। কিন্তু আমি জানি সারাদিন অফিস 
করার পর আর ঘরের সারা কাজ সেরে আমাদের কারো হাতে সময় নেই সময় মতো 
লাইব্ররীতে যাবার। আমার একটা বুদ্ধি আছে, সেই বুদ্ধিতে ঘরে বসেই বই পেতে 
পারেন, নানা ধরনের বই। যদিও বই পাবার জন্য আমার মাথায় আইডিয়াটা এসেছিলো 
না। কিন্তু প্রায় ১৭০+ মতো বই পেয়েছিলাম একদম ঘরে বসেই। আজো সেই বইগুলি 
থেকে বাচ্চাদের গল্প পড়ে শোনাই। সেই বুদ্ধিটা পড়তে এখানে ক্লীক্ করুন 
(সময়ের অভাবে লেখাটা শেষ করতে পারিনি বিধায় এখন লিংকটা দিতে পারলাম না।)।
 
গল্প বলার সময়। কখন কখন গল্প বলা উচিত বা চাইলেই কখন কখন গল্প শোনাতে পারেন।
(১) সারাদিন না পারলেও রাতে ঘুমাবার 
আগে ছোট্ট (৫/১০ মিনিটেই বলা যায়) একটা গল্প শোনাবার অভ্যেস করবেন। বাই 
প্রোডাক্ট হিসাবে পাবেন এই যে, যদি আপনার গল্পের ভক্ত হয় বাচ্চারা তবে 
বিছানায় শুতেও যাবে ঐ গল্প শোনার লোভেই। আর ঘুমের আগে যে মেসেজটা ওর 
মাথায় দেবেন সেটা বেশ পোক্ত হয়। হয়তোবা সেই বিষয়ে সে স্বপ্নও দেখবে। আর
 তখন আপনার গল্পে দেয়া মেসেজটি খুব ভালো মতোই পোক্ত হবে। ঘুমের আগে গল্প 
বলার কিন্তু অনেক উপকারিতা আছে।
(২) যদি কোন কারনে বাচ্চার কাছে প্রমিজ 
করে থাকেন যে, আজ অমুক সময় গল্প বলবেন, তবে অবশ্যই শোনাবেন। খুব অসুবিধা 
ছাড়া বাচ্চার কাছে করা প্রমিজ ভাংবেন না একদম। (আমি কিন্তু বারবার এই 
কথাটা বিভিন্ন লেখায় বলি ও বলবো যে আপনার বাচ্চার কাছে যে প্রমিজ করবেন 
সেটা পারতপক্ষে ভাংবেন না। আর যদি কখনো অপারগতার কারনে ভাংতেই হয়, তবে 
সেটা সুন্দর করে বুঝিয়ে বলবেন আপনার বাচ্চাকে।)
(৩)  যানবাহনে বাচ্চাকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছেন, তখন শোনাতে পারেন গল্প। কারন হয়তো তখন আপনি চুপ করে বসেই আছেন বাচ্চাকে নিয়ে।
No comments:
Post a Comment