Pages

Thursday, December 17, 2015

শাসক চাই ওমরের মতো

কেউ যখন রাজা হয় তার কি কোন কিছুর অভাব থাকে?  থাকেনা। একজন রাজার থাকে উজির-নাজির, পাইক-পেয়াদা। থাকে দাস-দাসী। অন্যদিকে থাকে অট্টালিকা, বালাখানা। রাজ্যের সমস্ত ধন-সম্পদের মালিক হয়ে যায় তখন রাজা। যত রকমের সুযোগ সুবিধা সব নিজের জন্যে। ছেলে-মেয়েদের জন্য আর তার নিজের লোকদের জন্য।
কিন্তু আমরা বলছি এমন এক রাজার কথা কথা। যার ছিলনা কোন বালা খানা। ছিলনা সুরম্য রাজ প্রাসাধ। খেজুর পাতার বিছানা ছিল তার নিত্য সঙ্গী। নিজের সরকারী সস্পত্তি অন্যায়ভাবেতো দুরের কথা প্রাপ্য অংশটাও ভোগ করতেন না। আর কাউকে তা ভোগ করতেও দিতেন না। তিনি হলেন ফারুকে আযম হযরত ওমর ফারুক।
একবার তার ছেলে একটি উট কিনে ছিলেন। উটটি দেখতে তেমন ভাল ছিলনা। দূর্বল উট। তার হাড়ঁগুলো গোনা যেত। আর এরকম একটা শুকনো উটের দামই বা কত? খুবই কম দাম দিয়ে এটি কিনে নিয়ে আসেন আবদুল্লহ। কিন্তু এরকম দুর্বল উট দিয়ে কি হবে। তিনি ভাবলেন এটাকে মোটাতাজা করতে হবে। তাই তিনি সরকারী খামারে কিছু দিনের জন্য উটটাকে ছেড়ে ছিলেন। কিছুদিন সরকারী খামারে ভাল খাবার পেয়ে উটটি মোটা তাজা হয়ে উঠলো। দেখতেও খুব সুন্দর হলো।
P14-1
একদিন আবদুল্লাহ এই মোটাতাজা উটটিকে বিক্রি করতে নিয়ে গেলেন। হযরত ওমর ছিলেন তখন সেখানে। তিনি দেখলেন তার ছেলে সুন্দর একটি উট বিক্রি করছে। তিনি এগিয়ে গিয়ে তার ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন: এই উট তুমি কোথায় পেলে? আবদুল্যা জবাব দিল এটি আমি কিনেছিলাম। খুব দুর্বল ছিল। দামও ছিল কম। ওমর বললেন কই আগেতো দেখিনি? আবদুল্লা জবাব দিল এটিকে আমি কিছু দিনের জন্যে সরকারী খথামাওে ছেড়ে দিয়েছিলাম। ওখানে ভাল খাবার পেয়ে এমন বলিষ্ঠ ও সন্দির হয়েছে। হযরত ওমর তখন আর তাকে কিছু বললেন না। উটটা খুব ভাল দামে বিক্রি হয়ে গেল। বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর হযরত ওমর তার ছেলেকে ডেকে বললেন: “উটের আসল দাম রেখে বাকী টাকা তুমি বায়তুল মালে জমা দিয়ে দাও” কারণ হযরত ওমর জানতেন সরকারী খামারে আবদুল্লাহর অধিকার নেই। সে উটটিকে ওখানে ছেড়ে দিয়ে যে লাভবান হয়েছে ওটা তার হতে পারেনা। এই হলেন শাসক। এই হলেন অর্ধজাহানের খলীফা। আমীরুল মোমেনীন হযরত ওমর ফারুক (রা:)।
লিখে দাও ওমরের কাছে আমার কোন দাবী নাই
হযরত ওমর একদিন হেটে কোথাও যাচ্ছিলেন। কিছু দুর যাওয়ার পরই দেখলেন এক বৃদ্ধাকে। বৃদ্ধা কি যেন বিড় বিড় করছে। হযরত ওমর তার কাছে গেলেন। তার খোঁজ-খবর নিলেন। জিজ্ঞাসা করলেন: আচ্ছা বুড়ি মা, খলীফা ওমর সম্পর্কে তোমার ধারনা কি? বুড়ি হযরত ওমরকে আগে কখনো দেখেনি। তাই তাকে সে চিনতে পারেনি। বুড়ি হযরত ওমর এর কথা শুনে কিছুটা বিরক্ত হলো। বললো: ওমর টোমর দিয়ে আমি কি করবো। আমার কি এমন ঠেকা পড়লো যে তার খবর আমাকে নিতে হবে। নিজের চিন্তায় বাঁচিনা। বুড়রি কথায় ছিল রাগ আর অসন্তোষের ছাপ। হযরত ওমর আবার তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। বুড়ি মা, ওমরের উপর তোমার এতো রাগ কেন? বুড়ি চেঁচিয়ে জবাব দেয়: রাগ হবেনা কেন? এই যে খলীফা হয়েছে সে, তো আমায় একটি পয়সাও দিয়েছে? নাকি কোন দিন আমার খোজ-খবর নিয়েছে যে আমি কি হালতে আছি। ও মানুষনা।
হযরত ওমর বুড়ির কথা শুনে বড়ই চিন্তিত হলেন। ঠিকইত আমি তো তার তোন খোঁজ-খবর নিতে পারিনি। তিনি কিছুটা নরম হয়ে বুড়িকে আবার বললেন: আচ্ছা তুমি কি অবস্থায় আছো ওমর কি কওে জানবে? তুমি গিয়ে ওমরকে সব জানিয়ে আসলেই তো পারতে। বুড়ি জবাব দেয় কেন? আমি জানাতে যাব কেন? ওমরইতো আমীরুল মোমেনীন। সে-তো সবার খোঁজ-খবর নিবে বলে রাষ্ট্রের দায়ীত্ব গ্রহণ করেছে। প্রত্যেকের খোঁজ-খবর রাখার দায়িত্ব তো তারই। রুক্ষ ভাষায় বৃদ্ধা জবাব দিল। হযরত ওমর শান্তভাবে আবার বললেন- আচ্ছা “ওমর ফলীফা হওয়ার পর তুমি যে কষ্ট পেয়েছ, সে কষ্টের বিনিময়ে তুমি কত টাকা পেলে ওমরকে মাফ করে দিবে?” বৃদ্ধার সাথে এসব কথা চলছে। এমন সময় হযরত আলী ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) এসে হাজির হলেন। তারা হয়তো কোথাও যাচ্ছিলেন। এসেই সালাম দিলেন। আস্সালামু আলাইকুম ইয়া আমীরুল মু’মিনীন! আগন্তুক দুই ব্যক্তির মুখে আমীরুল মু’মিনীন শব্দ শুনে বৃদ্ধা তাজ্জব হয়ে গেল। সে ভয়ে কাঁপতে লাগলো। আর ভাবতে লাগলো সে হযরত ওমরের সামনেই তাকে এত গালমন্দ করেছে। দারুন অনুতপ্ত হলো বুড়ি। হযরত ওমর বৃদ্ধাকে শান্তনা দিলেন। আর বৃদ্ধার হাতে পচিশটি স্বর্ণ মুদ্রা দিয়ে বললেন: “বুড়ি মা! তুমি এই চামড়ায় লিখে দাও যে কেয়ামতের দিন ওমরের কাছে আমার কোন দাবী নাই”। বৃদ্ধা তখন তাই করলো। চামড়ার উপর তা লিখে দিল বৃদ্ধা। আর হযরত আলী (রা:) সাক্ষী হিসেবে তাতে উপর দস্তখত করলেন।

No comments:

Post a Comment